আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অহনা-০১ (হৃদয়ের টানে ছুটে চলা এক রমণী)

জিনাত রহমান, পেশায় একজন সাংবাদিক, কলামিস্ট, উন্নয়নকর্মী, ঔপন্যাসিক ও ছোটগল্পকার। সমসাময়িক ঘটনা, নারী ও শিশু নির্যাতন নিয়ে প্রচুর লেখা দেশের দৈনিক, পাক্ষিক ও মাসিক পত্রিকাগুলোতে প্রকাশিত হয়েছে। নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক উত্তর বাংলা, সভানেত্রী, দিনাজপুর লেখ

অহনা এক শিল্পপতির মেয়ে। সে প্রায় তার বান্ধবীদের বলতো, দেখিস ধনি-গরীব ভেদাভেদ ভুলে সমাজ ব্যবস্থা বদলে দেব আমি। আমি কোনদিন বড়লোকের ছেলেকে বিয়ে করবো না।

বান্ধবীরা হেসে উড়িয়ে দিত। তুই এতবড় শিল্পপতির মেয়ে তোর মুখে এসব কথা মানায় না। অহনার মধ্যে কোন অহংকার ছিল না। খুব সাধারণ জীবন যাপন করতো। একদিন পরিচয় অহনার সাথে একটি মেধাবী ছেলের।

সে গান জানে, কবিতা আবৃত্তি করে। অহনা ভাল তানপুরা বাজাতে পারে। কলেজের নাটক, আবৃত্তির অনুষ্ঠান করতে যেয়ে একটি ছেলে সাথে পরিচয় হয়। ছেলেটির নাম প্রবাল। এই ভাবে কবিতা শুনতে শুনতে অহনা আর প্রবাল প্রায় লং ড্রাইভে যায়।

জীবনের মোড় কখন যে কোন দিক এসে ঘুরপাক খায় কেউ বলতে পারে না। মনের অজান্তে এক সময় দু’জন দু’জনকে ভালবেসে ফেলে। একদিন কলেজের একটি নাটক করতে যেয়ে তারা বর বধু সেজে অভিনয় করে। এ ভাবেই সত্যি সত্যি ওরা পালিয়ে যেয়ে দুজনে বিয়ে করে ফেলে। প্রবাল প্রথমে বিয়ে করতে চায়নি।

এতবড় শিল্পপতির মেয়ে। যার সাথে আমার ঘর করা কী হবে? এসব ভাবতে থাকে। প্রবালকে অহনা বলে জান প্রবাল, তোমাকে আমি ভীষণ ভালবাসি। বড়লোকদের আমি ঘৃণা করি। মদ আর ক্লাব নিয়েই থাকতে দেখেছি।

তাই তোমাকে বিয়ে করে শান্তিতে থাকতে চাই। জান ওরা সুখ খুঁজতে চলে যায় ক্লাবে। আর মধ্যবিত্তরস্বামীরাসারা দিনের কর্মব্যস্ততার পর তারা স্ত্রীর কাছে এসে ভালবাসার কথা বলে। স্বর্গেরমত সুখ পায়। প্রবাল অহনার দিকে তাকিয়ে থাকে।

তুমি আমাকে বিয়ে করে ভুল করলে নাতো। আমি তোমাকে কিছুই দিতে পারবো না। কিছুই চাই না আমি। আগে তুমি পড়ালেখা করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে যাও। তাহলেই হবে।

অহনা এত ভালবাসে প্রবাল মুগ্ধ হয়ে যায় অহনার ভালবাসাকে স্বাগতজানায়। অহনাকে প্রভাতের ঝড়া বকুলের মালা দিয়ে অহনাকে জীবনের সঙ্গী হিসেবে বেছে নিল। প্রবাল ভার্সিটিতে একদিন মন খারাপ করে বসে আছে। কৃষ্ণচুড়ার গাছের নিচে। বাতাসে লাল পাপড়ি দিয়ে সবুজ ঘাসের বুক ভরে আছে।

অহনা দেখছে প্রবালকে ভীষণ ভাল লাগছে। প্রবালের কাছে যেয়ে বলে সাদা পাঞ্চাবিতে খুব মানিয়েছে তোমাকে। আজ তোমাকে নিতে এসেছি আমাদের বাসায়। কি বল তুমি তোমার মাথা খারাপ হয়েছে? তোমার বাবা-মা আছে না বাসায়। না ওরা দেশের বাইরে গেছে সবাই।

প্রবালকে জোর করে নিয়ে যায় ঘরে ঢুকে প্রবাল অবাক হয়ে যায়। লাল গোলাপ দিয়ে সাড়া ঘর সাজানো। লাল নীল বাতিতে অপূর্ব লাগছে অহনাকে। শোন প্রবাল ভালবাসার একটি সুন্দর মন প্রয়োজন। তুমি আমার সেই মন।

প্রবাল অহনার হাত চেপে ধরলো। প্রবাল সম্পূর্ণ নিজেকে সপে দিল। ৭ দিন অহনার বাসায় থেকে প্রবাল চলে গেল হলে। রুপালী দ্বীপে নির্জন মনে খেলতে লাগলো স্বপ্নবিভোর দু’টি মন। ক’দিন আর দেখা নেই প্রবালের সাথে পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত।

অহনা ক’দিন ধরে খুব ভাবছে। বাবা-মাকে বিয়ের কথাটা জানাবে। একদিন সুযোগ বুঝে বলে ফেললো বাবা আমি বিয়ে করেছি। বাবা গর্জন করে উঠলো একি বলছো? ছেলে কে? কি তার পরিচয়? একটাই পরিচয় সে ভাল ছাত্র। দেখতে ভাল অহনা একরোখা কারও কথা সে শুনবেনা এটা ভাল করে জানে ওর বাবা।

অহনার বাবা চিন্তায় পড়ে যায়। বেশ কিছুদিন পর ফাইনাল পরীক্ষা হয়ে যায়। প্রবালকে জরুরীভাবে তার বাবা-মা দেশের বাড়ীতে যেতে বলে। অহনাকে প্রবাল বলে বাবা বাড়ি যেতে বলেছে। আমি ক’দিনের জন্য গেলাম, চলে আসবো।

অহনার ভীষণ মন খারাপ, কান্নাকাটি করে প্রবালকে বিদায় দেয়। প্রবাল বাড়ি যেয়ে দেখে তার বাবা প্রবালের বিয়ে ঠিক করেছে। মেয়েকে আংটি পড়িয়েছে তার বাবা-মা। প্রবাল যে নিজের পছন্দে বিয়ে করেছে যে স বাবা-মাকে বলতে পারেনি। এমন একটি পরিস্থিতি বাবা আমি তো সবে মাত্র মাষ্টার্স পড়ছি।

পড়ালেখা শেষ করে চাকুরী হোক তারপরে বিয়ে করবো। না এসব কথা তোমার ভাবতে হবে না। মেয়ের বাবাই চাকুরী দেবে। ওরা বাড়ি করে দেবে। একমাত্র মেয়ে চাকুরী করে।

বাবা-মায়ের মান-সম্মান তুমি রাখবে না। আমি কথা দিয়েছি মেয়ের বাবা-মাকে। প্রবাল যে নিজের পছন্দে বিয়ে করেছে সে কথা বাবা-মাকে আর বলতে পারেনি। মহা ভাবনায় পড়ে যায় মুখচোরা প্রবাল। তারপর আর ভয়ে কোন যোগাযোগ করেনি অহনার সাথে।

কি জবাব দেবে কী করবে? অহনা তার বাবা-মাকে জানায় সে মা হতে চলেছে। এটা শুনে অহনার বাবা-ম ভীষণ রেগে যায়। তোর এই বিয়ে মানি না। এই বাচ্চা কার পরিচয়ে বড় হবে বল। বাচ্চা নষ্ট করে ফেল।

সমাজের কাছে কী বলবো। বলবে আমার বিয়ে হয়েছে। আমার বর বিদেশে চলে গেছে। সমাজ তোমাকে বাঁকা চোখে দেখবে। ভেবে দেখ ব্যাপারটা।

অহনা ভাবে সেদিন প্রবালের সহজ-সরলতা ভাল ছাত্র দেখে তার উপর আস্থা রেখেই জীবনের এতবড় ঝুঁকি নিয়েছিলো। প্রবাল ওকে ভুলে গেল। জীবনের মাঝে আর একটি তুলতুলে ছোট জীবনের আগমন। এভাবে ভাবতে ভাবতে নয়টি মাস কেটে গেল। অহনা ভাবতে থাকে জীবনে কী ভেবেছিলাম আর জীবন আমায় কোথায় নিয়ে গেল।

অহনার ফুটফুটে একটি ছেলে হলো। যখন শুনলো অহনার ছেলে হয়েছে দেখতে একেবারে প্রবালের মত হয়েছে। বুকভরা বেদনা। বারবার মনে পড়ছে প্রবালের কথা। প্রবাল তুমি দেখলে না আমাদের ভালবাসার ফুল কত সুন্দর হয়েছে।

আমার কোলজুরে এসেছে। তুমি যদি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে কেন ভালবাসলে?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।