আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পয়সা নাই তো বাচ্চা বিয়ানোরও মুরোদ নাই। এই নষ্ট পৃথিবী তার নাগাল পাই নাই, কোনদিন পাইবেও না! নষ্ট পৃথিবী জিন্দাবাদ; পুঁজিবাদ জিন্দাবাদ!

''সংবাদপত্র যা ছাপে তার একটা বড় অংশই হলো 'লর্ড জোনস মারা গেছেন' ধরণের তথ্য। অথচ সেটি যাদের জানানো হয় সেই জনগণ খবরই রাখে না যে লর্ড জোনস বেঁচে ছিলেন''

'চিকিৎসা না পেয়ে প্রসব বেদনায় আত্মহনন!' স্রেফ একটি সংবাদ। প্রতিদিনের খসখসে 'কাগুজে ইতিহাসে' একটি ইতিহাসই বটে। কিন্তু 'সংবাদপত্রের ডেজ ইভেন্ট' মাত্র। ছয়টি শব্দে রচিত একটি শিরোনাম।

বিষ্ময়বোধক চিহ্নে যে সফল বাক্যের ঘটেছে এক করুণ সমাপ্তি। গত বোরবার রাতের অঘটন। প্রথম আলোর মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি রচেছেন সেই রোজনামচা। লজ্জা আর শরমের মাথা খেয়ে আমরা পড়েছি সংবাদপত্রের কোনায় লুকিয়ে থাকা সেই অভিমানি মরণ বারতাটি। ঢাকার সাভারে গত রোববার রাতের দৃশ্য।

ঈশ্বরের পৃথিবীতে তখন শান্ত নিস্তব্দতা। পুর্ণিমার আলোতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল ছিন্নমূল এক অন্তঃসত্ত্বা নারীকে। পেট ঢুলুঢুলু; প্রসব যন্ত্রণায় কাতর। খানিক পরেই বেরিয়ে এলো পেটের বাচ্চা। দশ মাস দশদিনের অন্ধ কুঠুরি যাপনের ইতি টেনে নবজাতক আসলো কবি সুকান্তের 'ছেড়ে দেওয়া স্থানে'।

কিন্তু ফুটওভারব্রিজ থেকে ঝাঁপ দেয়ায় নবজাতকসহ মায়ের ভবলীলা সাঙ্গ! প্রসব ব্যথা নিয়ে রোববার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ওই নারী যান সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ধর্ণা দিয়েও মন টলাতে পারেননি বদ্যি মশাইদের। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ শুনিয়ে বিদায় করা হয় তাকে। সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে ঘোরাফেরা করতে থাকে নারী। আসুন বাকিটুকু শুনি প্রথম আলোর ভাষায়... 'প্রসব ব্যথায় কাতর হয়ে একপর্যায়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি সম্ভবত সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের ফুটওভারব্রিজ থেকে নিচে ঝাঁপ দেন।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মা ও নবজাতকের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে গতকাল সাভার থানায় পুলিশ অপমৃত্যুর মামলা করেছে। সাভার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শেখ ফরিদ আহামেদ বলেন, মৃত ওই নারীর কাছে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি ব্যবস্থাপত্র পাওয়া যায়। সেটিতে তাঁর নাম লেখা রয়েছে খবিরন ও স্বামীর নাম লাবলু। তবে কোনো ঠিকানা উল্লেখ নেই।

' রোববার সন্ধ্যায় হাসপাতালে উপস্থিত কয়েকজন রোগী অভিযোগ করেন, অন্তঃসত্ত্বা ওই নারীর কাছে কোনো টাকা ছিল না। প্রসব ব্যথায় কাতর হয়ে তিনি ওই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার জন্য কাকুতি-মিনতি করেন। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন। অভিযোগ অস্বীকার করে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নিখিল কুমার সাহা বলেন, প্রসব ব্যথা নিয়ে ওই নারী রোববার সন্ধ্যায় যখন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হতে আসেন, তখন তাঁর পেটের বাচ্চার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। তাই তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, ওই নারী শুধু অর্থের অভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে না পেরেই সম্ভবত আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। ' আচ্ছা, খবিরনের জীবনটা কি এইরকম হতে পারতো না- লাভলু নিজেই খবিরনরে গায়ের কাপড় ঠিক করে দিতে দিতে গ্রামের মেলায় যাত্রার মঞ্চে যদি চোখ রাখতো। কিংবা আধোঘুমের চোখ কচলাতে কচলাতে মধ্যরাতে খবিরন খবিরন বলে দরজার কাছে ডাক পরেতো লাভলু। দরজা খুলতেই হতবাক হয়ে যেতেন খবিরন। অপলক তাকিয়ে থাকা চোখে খবিরন বুঝতেন স্বামীর রাত জাগার কারণ।

চিৎকার করে ওঠে লাভলু বউ পিঠাতে ছুটে যেতো হয়তো। কিংবা 'আমার বাবা রে' বলে শিশু সন্তানটি কোলে টেনে নিতো কখনো। হয়তো বলতো 'আমার মতন বলদকে বেয়া কইরা তুই জীবনডা মাটি করলি বউ!' হয়তো মাস শেষে শহর থেকে টাকাও পাঠাতো স্বামী। আমার এইসব 'হয়তো'র গুষ্ঠি কিলিয়ে খবিরন তার পেটের বাচ্চা নিয়ে চলে গেছে। কারণ খবিরন ঠিকই বুঝেছে এই সমাজের মাটি তার যোগ্য নয়।

খবিরনের পয়সা নাই; তাই বাচ্চা বিয়োনোরও মুরোদ নাই। সমাজ এই খবিরনদের বাচ্চা পয়দা করার গ্যারান্টি দেয় নাই। দেশে রমজান লক্ষ টাকা খরচা করে পাঁচতারা হোটেলে ইফতারির আয়োজন চলছে। আর মরণ যাত্রায় এসব খবিরনদের ঠিকানাও উল্লেখ নাই। হয়তো সাভারের সেই ফুটওভারব্রিজ কিংবা সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের একটা ইতিহাস আছে।

কিন্তু পুঁজির নির্মম কষাঘাতে জর্জরিত যে নষ্ট পৃথিবীতে আসার জন্য অন্ধকার মাতৃগর্ভ হতে শিশুটি ক্রমেই বেড়ে উঠেছিল তার কোন ইতিহাস নাই। যে ধারাবাহিক অন্ধকার মাতৃগর্ভ হতে ধারণ করে দেহের অভ্যন্তরে লুকিয়ে খবিরন আর লাভলু একদিন পৃথিবীতে এসেছিল এবং যে অন্ধকার তারা সন্তানের মাংস আবেষ্টনীর মধ্যে গোপন রেখে গেল তার কোন ইতিহাস নাই। তা প্রাগৈতিহাসিক। এই নষ্ট পৃথিবী তার নাগাল পাই নাই, কোনদিন পাইবেও না! নষ্ট পৃথিবী জিন্দাবাদ; পুঁজিবাদ জিন্দাবাদ! ফুটনোট: ইহা একটি আলো ঝলমল চোখ ধাঁধাঁনো শান শওকতময় দুনিয়ার অন্তরালের বর্বর আদিম অন্ধকারে মধ্যে রচিত এক করুণ আখ্যান। যা 'মানবজীবন' নামক গতিশীল প্রক্রিয়ারূপে বহমান সময় ক্ষেপনের জন্যই রচিত।

লেখকের নির্জীব চরিত্রের অসহায় আত্মসমর্পন কিংবা বিষাদময়তায় ভারাক্রান্ত মধ্যবিত্ত আবেগ থেকে রচিত এই পোস্টের কোন বাজারি মূল্য নাই!

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.