আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যখন জেনে গেলাম আমিই লোকালটক

one1man@gmail.com

সকাল বেলা মেইল পাওয়ার পর থেকেই গলা শুকানো শুরু হলো। সে কি টান-টান উত্তেজনা। বিশ্বাস করুন, আন্ডারওয়্যার ছাড়াই প্যান্ট পরে বেরিয়ে গেলাম ঢাকার রাজপথে। আজ এই মহান দিনে ঢাকা শহরকে মনে হচ্ছে শশুর বাড়ির গাব বাগান। পাকনা গাবের গন্ধ আর মোটা চিকন গাছ পেরিয়ে যখন পল্টন ময়দানের কাছাকাছি, উহ্! গলাটা তখন শাশুড়ী আম্মার মাটির চুলার জ্বলন্ত মাটি।

হাঁটু, বুক সমান তালে কেঁপে যাচ্ছে। পল্টন ময়দান এবং তার আশপাশের সড়কগুলোয় লোকে লোকারণ্য। অথচ এত দূর থেকেও সেই পল্টন ময়দানের মাঝখান থেকে কার টাকের উপর রোদ পড়ে তার ঝিলিক এসে চোখে লাগছে। আমি ঠাওর করলাম, এ টাকলু কৌশিক ছাড়া আর কেউ না। রোদের ঝিলিকের সাথে নাকি আলাদা বুঝিনি, ‌’এই রামিয়া, এই সামিয়া দেখো দেখো তোমাদের ছবি উঠিয়েছি’ উহু! সেকি চিৎকার।

আন্দাজটা ঠিকই হলো, এতো আমাদের কালপুরুষ দা। ততক্ষণে মেইলের বিষয় মনে করার চেষ্টা করলাম। হু... বিষয়তে স্পষ্ট লেখা ছিলো, “আজ মহান ব্লগার লোকালটক ওরফে ফিউশন ফাইভের পর্দা উম্মোচন করা হবে”। আমিও একজন সম্মানিত অতিথি। লোকজন ঠেলে আস্তে আস্তে ভেতরে ঢুকছি।

তখন মাইকে বেজে চলছে, “আমরা দেখতে পাচ্ছি, লোকালটক ধীরে ধীরে উম্মোচন স্থলের দিকে এগিয়ে ...”। ভাবলাম যাক শ্লা, সময় মতোই আসলাম। আরেকটু হলতো মিস করতাম। এ মাহেন্দ্রক্ষণ। দেখি আবুলটা কেমন? “লোকালটক নিজেও জানেন না, তিনি আসলে কে? আজ তাঁকেও জানিয়ে দেয়া হবে আসল কাহিনী।

“ ভাবলাম- কাহিনী কি? লোকালটক নিজেও জানে না মানে? ময়দানের মাঝখানে মঞ্চ। ভাষ্যকারের পেছনে একটি বড় ছবি টাঙানো। খুব চেনা চেনা লাগছে। কিন্তু একি! একি! মঞ্চের কাছে যেতেই দু’জন মানুষ পাঁজাকোলে করে আমাকে মঞ্চে উঠিয়ে দিলো! আমিতো বিশেষ অতিথি না, আমাকে কেন মঞ্চে উঠালো! হাবাগোবা নতুন জামাইয়ের মত দাড়িয়ে রইলাম। কিছুই বুঝতেছিনা।

মাইকে জোরে জোরে বলা হচ্ছে “মঞ্চের মাঝখানে দাড়িয়ে থাকা লোকটিই বহুল প্রত্যাশিত লোকালটক”। ডানে বায়ে তাকিয়ে দেখি আমি ছাড়া আর কেউ নাই। ধীরে ধীরে বাস্তবজ্ঞান পাচ্ছি। আস্তে আস্তে ঠোটের কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠছে। ভালোও লাগছে, ভাবও আসছে।

ঘাড়টাকে বাম পাশে কিঞ্চিত নাড়িয়ে সোজা হয়ে দাড়াই। মাইকে আবারো বলার সময় মাথা নুইয়ে, পাছা পিছনে নিয়ে সবাইকে সম্মান জানিয়ে জানান দিলাম “আমিই লোকালটক”। ভাগ্য ভালো যে আয়োজক কমিটি আমার জন্য কয়েকজন সেক্রেটারি রেখেছে। নাহলে এতোগুলো ফুলের মালা কার কাছে দিতাম। আহ! ভাবতেই ভালো লাগছে... আরাম লাগছে...।

কিন্তু যাবার ব্যবস্থা কি করেছে? সে বিষয়ে জিজ্ঞেস করা কি ঠিক হবে? লোকাল বাসে চড়ে আসায় আসতে ভিড় ভাট্টাও খারাপ লাগলো না। মানুষের ঘামের গন্ধে এসিআই কম্পানির এয়ার ফ্রেশনারের ঘ্রাণ। সবগুলো মানুষ ভালো। পাশের সীটের মানুষটার পুরোটাই ভালো, কেবল পা ছাড়া। একটা পায়ের উপর আরেকটা উঠিয়ে এমন ভাবে বসছে, মনে হয় সেই লোকালটক।

বেচারা! যদি জানতো যে সে এখন লোকালটকের পাশে বসে আছে! ভাবতেই মজা পাচ্ছি। মদনাটা এতো বিখ্যাত লোকের সাথে বাসে চড়েও ঘূর্ণাক্ষরেও টের পেলো না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।