আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এইসব দিনরাত্রি-২



প্রাইভেট কার সমাচার ভাগ্যক্রমে আমরা একখানা ব্যক্তিগত গাড়ির মালিক। সেই গাড়িতে করে প্রায়ই বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই। আসার সময় মিরপুর সুপার লিংকই আমার ভরসা। ব্যক্তিগত গাড়ি থাকার কারণে টিটকারি কম শুনতে হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসের কোনপ্রকার বদনাম করলে বা রাস্তার জাম সম্পর্কে কোন মন্তব্য করলে বন্ধুবান্ধব বলে, "তোমার তো গাড়ি আছে, তোমার আবার সমস্যা কী? বাসে চড়লে বুঝতা?" আমার বাসার কাছ দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন বাস যায় না।

বছরে পরিবহন খরচ বাবদ ১০৮০ টাকা দিলেও বাসে ওঠা হয় বছরে ৮ থেকে ১০ দিন। সেই বাসের অবস্থা ৭ নং বাসের চেয়েও খারাপ। ঠেলাঠেলি আর ভিড়ের দিক থেকে সবচেয়ে ব্যস্ত লোকাল বাসকেও হার মানায়। মোটাসোটা মানুষ, একটু শ্বাস নিতে নিতে বাসায় ফেরার জন্য মিরপুর সুপার লিংক বা দ্রুতি সার্ভিসের বাসে ৫ টাকার বিনিময়ে চড়ি। যথেষ্ট আরামে যাতায়াত করি।

তো একদিন শরীর প্রচণ্ড ক্লান্ত লাগার কারণে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত যেতে আলসেমি লাগছিল। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বাসে উঠলাম। সেই বাস আমার বাসার খুব কাছ দিয়ে গেলেও সেখানে থামে না। অপেক্ষাকৃত কাছের যাত্রীরা যাতে বাসে না উঠে সেজন্য এই ব্যবস্থা। বাসে ওঠার পর থেকে একের পর একের মানুষ উঠছেই।

অনেকেই কোনমতে হ্যান্ডেল ধরে বাইরে ঝুলছেন। তারা মূলত বাস কমিটির লোক। শেষমেশ আমার জায়গা হল ডাবল ডেকারের একতলা থেকে দোতলায় ওঠার সিঁড়িতে। কোনমতে চাপাচাপি করে দাঁড়িয়েছি। আগেই বলেছি আমি যথেষ্ট মোটাসোটা বড়সর একজন মানুষ।

আমার পেছনের এক ছাত্র আমাকে সাবধানে থাকতে বললেন। বাসের গতি পরিবর্তন হওয়ার সময়ে আমি তার ওপর পড়লে সে ঘটনাস্থলেই মারা যাবেন বলে আশঙ্কা করছিলেন। তার আশঙ্গা অমূলক নয়। জাম ঠেলে বাস ধীরে ধীরে এগুচ্ছে। রাস্তায় জামের কারণ সম্পর্কে অনেকেই প্রাইভেট কারকে দোষারোপ করছেন।

বাসে আরেকজন বললেন, "সুযোগ পাইলে তো তুমিও একখান গাড়ি কিনতা। " প্রাইভেট কার ঢাকা শহরে যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ। এটা একশত ভাগ সত্য কথা। প্রায়ই পাবলিক বাসে উঠলে শুনি মানুষ দেদারসে প্রাইভেট কারের মালিকদের গালাগাল করছেন। একজন তো একদিন বলে বসলেন, " এই যে প্রাইভেট কার দেখতেসেন।

সব কিন্তু ব্যাংকের। " ব্যাংকের টাকায় গাড়ি কিনে এখন অনেকেই চলে ফেরে। কথা ভুল নয় বরং সঠিক। প্রাইভেট কার যেখানে সেখানে পার্ক করে রেখে রাস্তাঘাটে যানজট সৃষ্টি করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে আরেকদিন আসার সময়ে শুনলাম এক বড় ভাই নিউমার্কেটের সামনে প্রাইভেট কার থামিয়ে যাত্রী নামানোর কারণে সেই গাড়িকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস দিয়ে "ঠুয়া" মারার কথা বলছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট কার ভাঙার ব্যাপারে বিপুল আগ্রহ। একবার এক রিকশা গতিরোধক থেকে নামার সময়ে ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র এগিয়ে এসে প্রথমেই বললেন, "কোন গাড়ি মারসে?" রিকশাওয়ালা ও আহত যাত্রীর অবস্থা জানার চেয়ে কোন গাড়ি ধাক্কা দিয়েছে সেটিই বিবেচ্য। এতে করে গাড়ি ভাঙার একটা প্রত্যাশিত সুযোগ পাওয়া যাবে। ব্যক্তিগত গাড়ির কারণে ঢাকা শহর যানজটগ্রস্ত এ কথা মেনে নিতে আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু বাংলাদেশে ব্যক্তিগত গাড়ির মত সুবিধা সম্পন্ন বাস সার্ভিস তো এখনও চালু হয় নি।

আমার বাবা-মার মত যারা সারা জীবন রিকশা/বাসে করে কর্মস্থলে গিয়ে ৫৫ বছর বয়সে নিজেদের ও সন্তানদের একটু স্বাছন্দ্যের জন্য ব্যক্তিগত গাড়ি কেনেন তাদের কথা কি বিবেচনায় রাখা হবে না? প্রাইভেট কারকে গালি গালাজ করে, তার মালিকদের গালমন্দ করাটা কোন সমাধান হতে পারে না। ঢাকা শহরকে রক্ষা করার জন্য প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রন করা জরুরি। কিন্তু এর বিকল্প ব্যবস্থা নিশ্চিত করেই কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যুক্তিসঙ্গত বলে মনে করি।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।