আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাঘ মারলে ১২ বছর কারাদণ্ড, ৫০ লাখ টাকা জরিমানা



১৯৭৩ সালের বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন বাতিল করে নতুন আইন করছে সরকার। ইতিমধ্যে নতুন আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। সংসদের আগামী অধিবেশনে তা বিল আকারে উত্থাপন করা হবে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। প্রস্তাবিত আইনে কেউ ইচ্ছাকৃত বা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে বাঘ মারলে বা এর কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রির জন্য পরিবহন করলে ১২ বছর কারাদণ্ড অথবা সর্বনিম্ন ৩০ লাখ এবং সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। হাতি হত্যা করলে বা এর দাঁত বা অন্য অঙ্গ পরিবহন করলে সাত থেকে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং সর্বনিম্ন ১০ ও সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা যাবে।

চিতা বাঘ, লাম চিতা, উল্লুক, সাম্বার হরিণ, কুমির, ঘড়িয়াল, তিমি ও ডলফিন হত্যা ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পরিবহন করলে দুই থেকে ছয় বছরের কারাদণ্ড এবং সর্বনিম্ন সাত লাখ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে। আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি বিষটোপ দিয়ে বিপদাপন্ন পাখি বা পরিযায়ী পাখি বা বন্য প্রাণী হত্যা করে বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পরিবহন করে, তাহলে দুই থেকে ছয় বছরের কারাদণ্ড এবং সর্বনিম্ন তিন লাখ থেকে সর্বোচ্চ সাত লাখ টাকা জরিমানা করা যাবে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। নতুন আইনে বন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করার ক্ষমতা প্রস্তাব করা হয়েছে। বন্য প্রাণী সংরক্ষণের জন্য প্রণয়ন করা হলেও এই আইনে বন্য প্রাণীর আবাসস্থল রক্ষার বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

মোট ৮১ ধারা এবং তিনটি তফসিলের মাধ্যমে ঘোষিত বাংলাদেশে এই প্রথম কোনো আইনে পবিত্র উদ্ভিদ, কুঞ্জবন, জনগোষ্ঠীর মাধ্যমে সংরক্ষিত ঐতিহ্যগত বন, বনভূমির ওপর জনগোষ্ঠীর প্রথাগত অধিকার, ইকোপার্ক, আন্তর্জাতিক প্রাণবৈচিত্র্য সনদ (১৯৯২), আগ্রাসী ও এলিয়েন প্রজাতির গাছের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। পরিবেশ ও বন প্রতিমন্ত্রী হাছান মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, আইনটি প্রণয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে বন্য প্রাণী সংরক্ষণে যুক্ত সরকারি-বেসরকারি সব পক্ষের মতামত নেওয়া হয়েছে। সংসদে তোলার আগে যে কেউ এ ব্যাপারে আরও মতামত দিতে পারবেন। খসড়া আইনের পঞ্চম অনুচ্ছেদে বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকা, জাতীয় ঐতিহ্যবাহী, স্মারক ও পবিত্র বৃক্ষ সংরক্ষণের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। ‘স্মারক বৃক্ষ’ বলতে ঐতিহ্যবাহী বৃক্ষ বা পুরোনো বয়স্ক দেশীয় উদ্ভিদ বা শতবর্ষী বৃক্ষ বোঝানো হয়েছে।

বলা হয়েছে, এটা এমন উদ্ভিদ যার যথেষ্ট সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সংরক্ষণ মূল্য আছে। কিন্তু প্রাণবৈচিত্র্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পবিত্র বৃক্ষের তালিকা থেকে তুলসী ও বটের মতো পবিত্র বৃক্ষের কথা উল্লেখ নেই। নেই জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণকারী আদিবাসীদের কোনো প্রসঙ্গ। আইনের চতুর্থ অনুচ্ছেদের ১৭ এবং ১৮ ধারায় ‘বননির্ভর জনগোষ্ঠীর’ অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়েছে। এতে বনের ওপর তাদের প্রথাগত অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

আইনের চতুর্থ অনুচ্ছেদের ২১ ধারায় ‘সহ-ব্যবস্থাপনার’ প্রসঙ্গ উত্থাপন করা হয়। বলা হয়েছে, সরকার কোনো নির্দিষ্ট অভয়ারণ্যে প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বন বিভাগ ও স্থানীয় জনসাধারণের ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নিতে পারবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।