আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক মুক্তিযোদ্ধার করুণ কাহিনী

বাঙ্গাল মানুষ
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়ী হলেও জীবন-যুদ্ধে পরাজিত তিনি। মুক্তিযোদ্ধা হলেও জীবন বাঁচানোর তাগিদে তাকে নামতে হয়েছে ভিক্ষা বৃত্তিতে। নাম আবদুল ওহাব পাইক। মুক্তিযুদ্ধের সময় ৯ নম্বর সেক্টরে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। ১৯৯৮ সালের ১লা জানুয়ারি তার কার্ড ইস্যু হয়।

কার্ড নম্বর ১৪৭১। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন সোসাইটি থেকে ইস্যু করা। গ্রামের বাড়ি বরিশালের গৌরনদী থানার টিকাসার। তিনি স্বাধীন বাংলা বেতারের শিল্পীও ছিলেন। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভিক্ষা করতে দেখা যায় এ মুক্তিযোদ্ধাকে।

প্রথম স্ত্রী খোদেজা বেগম চিকিৎসার অভাবে মারা যান। দ্বিতীয় স্ত্রী জোলেখা বেগমও প্রতিবন্ধী। মুক্তিযুদ্ধের সময় পায়ে আঘাত পান আবদুল ওহাব। এখনও ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারেন না। সর্বনাশা নদীভাঙন তার ঘরবাড়ি কেড়ে নিয়েছে।

জীবনযুদ্ধে পরাজিত এ যোদ্ধা গতকাল তার কষ্টের কথা বর্ণনা করেন মানবজমিন-এর কাছে। ‘দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি। আহত হয়ে প্রতিবন্ধী হয়েছি। কোন কাজকর্ম করতে পারি না। সরকারের পক্ষ থেকেও কোন ভাতা পাই না।

মাঝেমধ্যে না খেয়ে থাকতে হয়। গ্রামের বাড়িটি নদী ভেঙে নিয়েছে। থাকি সিদ্ধিরগঞ্জে। কোন পথ না দেখে ভিক্ষার পথ বেছে নিই। এখন ভিক্ষা করি আর খাই।

মানুষ অনুগ্রহ করে যা দেয় তা দিয়েই জীবন চালাই’। এভাবে কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিজের কষ্ট বর্ণনা করলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী আবদুল ওহাব পাইক। গতকাল তাকে দেখা যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে তার ত্যাগ এবং বর্তমান দুরবস্থার কথা বলে সাহায্যের হাত বাড়ানোর আহ্বান করেন। কেউ অনুগ্রহ এবং বিশ্বাস করে দু’-এক টাকা দেয়।

তারপরও তিনি তার জীবন বাঁচানোর জন্য মানুষের কাছে হাত পাতেন। ভিক্ষা করতে অপমানবোধ করেন না? অন্য কাজতো করতে পারেন। সরকারতো ভাতা দেয়। তারপরও ভিক্ষা করেন কেন? জিজ্ঞাসা করলে আবদুল ওহাব বলেন, ১৬ বছর আগে বরিশাল জেলার গৌরনদী থানার টিকাসার গ্রামের পিতৃবাড়ি নদীতে ভেঙে যায়। ঘরবাড়ি নদী নিয়ে গেলে নিঃস্ব হয়ে যাই।

চলে আসি নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে। কোন টাকা-পয়সা ছিল না। অনাহার-অর্ধাহারে জীবন কাটাই। এরমধ্যে স্ত্রী খোদেজা বেগম অসুস্থ হয়ে পড়ে। চিকিৎসার অভাবে কাতরাতে কাতরাতে সে মারা যায়।

পরে ওহাব বিয়ে করেন জোলেখা বেগমকে। এ ঘরে একটি সন্তান রয়েছে। জোলেখা বেগমও ওহাবের মতো প্রতিবন্ধী। তারা উভয়েই কোন কাজ করতে পারেন না। ফলে প্রায় দিনই না খেয়ে অনাহারে কাটাতে হয় তাদের।

মুক্তিযুদ্ধের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে আমি ৯ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করি। জীবন বাজি রেখে দেশের মুক্তির লক্ষ্যে যুদ্ধ করি। মুক্তিযুদ্ধে গিয়ে পায়ে আঘাত লাগে। এখনও পা ভাল হয়নি। ভাল করে হাঁটতে পারি না।

আজ আমি অসহায়। জীবনের তাগিদে মানুষের কাছে হাত পাততে হচ্ছে।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।