আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বর্ষাহত

seremos como el Che

সকাল ১০টা। ঢাকা এয়ারপোর্ট। মন খারাপ করে বসে আছে অর্ণব। জগতের সব সমস্যাগুলো কেন যে তার সাথেই হয় সে বুঝে পায় না। কাল তো বৃষ্টি হয়নি, কি দরকার ছিল আজ এত বৃষ্টি হওয়ার? কখন এই বৃষ্টি থামবে আর কখনই বা প্লেন ছাড়বে তা ভেবে আরও মন খারাপ হতে থাকে অর্ণবের।

বৃষ্টির দিকে দেখতে দেখতে অর্ণবের মনে পড়ে তুলির কথা। বৃষ্টি খুব পছন্দ করে ও। অনেক সময় ওকে মজা করে ‘বৃষ্টি’ নামে ডাকতো অর্ণব। বৃষ্টিতে ভেজা একদম পছন্দ করে না সে কিন্তু তুলির এতে ভীষণ উৎসাহ। তার জোরাজুরিতেই একবার ভিজতে হয়েছিল বৃষ্টিতে।

খুলনা শহরের বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে দু’জন ভিজে চুপচুপে। বাংলাদেশ ব্যাংক এর কাছে আসতেই তুলি বললো যে সে চা খাবে, ঝমঝম বৃষ্টির মধ্যে চা খেলে নাকি বৃষ্টির ফোঁটায় চায়ের পরিমাণ বেড়ে যায়। কি অদ্ভুত কথা রে বাবা! এমন কথা জীবনে এর আগে কখন শোনেনি অর্ণব। তুলি শুরু থেকেই একটু ডানপিটে টাইপের। মেয়ে বলে এটা করতে পারব না ওটা খেতে পারব না – এসব চিন্তাভাবনার ঘোর বিরোধী সে।

এই কিছুদিন আগেও চলাফেরা অনেকটা ছেলেদের মতনই ছিল তুলির। অর্ণব বেশ পছন্দও করত এটা। ওদের পরিচয় খুলনা কমার্স কলেজে। সেদিন তুলির প্রথম কথাটা মনে করে দুঃখেও হাসি পেল অর্ণবের। তুলি বলেছিল, অর্ণব তোমার মোবাইম নম্বরটা দাও তো, তোমাকে মাঝে মাঝে মিস্‌ কল দিলে কি তোমার অসুবিধা আছে? অর্ণব অপ্রস্তুত হয়ে বলেছিল, না না কোন অসুবিধা নেই।

মনে মনে ভেবেছিল, এ আবার কেমন মেয়ে, প্রথমেই মোবাইল নম্বর জানতে চায়। এরপর কেটে গেছে ৩ বছর। অনেক পরিবর্তন এসেছে অর্ণবের জীবনে, তুলির সাথে গড়ে উঠেছে ভালবাসার সম্পর্ক। একদিন দেখা না হলে, কথা না হলে খুব খারাপ লাগে তার। বাবা-মা এ সম্পর্ক কোনভাবেই মেনে নেননি।

হয়ত সমাজের ভয়ে কারণ আমাদের সমাজ অন্য ধর্মের কারো সাথে সম্পর্ক করাটাকে মোটেই ভাল চোখে দেখে না। তাই তার এই ইউ.কে. যাবার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা তুলির। অর্ণব কিছুতেই যেতে রাজী ছিল না, পরে ভেবে দেখেছে যে এই দেশে থাকলে ওদের সম্পর্কের কোন ভবিষ্যত নেই। অর্ণবের বাবা-মা অনেক চেষ্টা করেছেন তাকে বোঝাতে কিন্তু কোন লাভ হয়নি। একটি মেয়েকে ভালবাসতে হলে কেন যে ধর্ম দেখে তা করতে হবে সেটা কিছুতেই বুঝতে পারেনি সে।

পরে এসব ব্যাপার নিয়ে তুলি কাঁদত খুব আর অর্ণব নির্ঘুম কাটাত একেকটি রাত। অনেক বন্ধু-বান্ধবও ছিল যারা ওদের এই সম্পর্কটা মেনে নিতে পারত না- কেন যে কে জানে! অবশ্য এত কিছুর পরও ওরা দুজন বেশ ভালভাবেই টিকিয়ে রেখেছে সম্পর্কটা। দুজনের মনের জোরটা যেন বেড়ে গেছে এতসব প্রতিকূলতায়। আজ সকালে শেষবারের মত কথা হয়েছে তুলির সাথে। একশ’বার করে বলেছে পৌঁছে ফোন করতে।

ওকে নিয়ে টেনশন না করতেও বলল অনেকবার। ফোনটা রাখার আগে অবশ্য আর পারল না নিজেকে ধরে রাখতে, ফোঁপাতে শুরু করল। উফ্‌ কি যে খারাপ লাগল অর্ণবের। হঠাৎ বাইরে তাকিয়ে চমকে ওঠে অর্ণব। কাঁচের ওপাশে এক টুকরো সোনালী রোদের ফালি।

বোর্ডের দিকে তাকালো সে, তার ফ্লাইটের টাইম দিয়ে দিয়েছে। ব্যাগটি হাতে উঠিয়ে সামনে এগিয়ে যায় অর্ণব। অনেক বড় হয়ে ফিরতে হবে তাকে। নিজের কথা রাখার জন্য, ভালবাসার মানুষটার জন্য। উৎসর্গঃ অপু - কে গতকাল ৮ আগষ্ট ছিল ওর জন্মদিন।

অনেক অনেক শুভেচ্ছা আর শুভকামনা। এই লেখাটা ১ বছর আগে লেখা, গত বছর ওর জন্মদিনের ৮ দিন পর, তখন ওকে আমি চিনতাম না। কিন্তু আজ কেন জানি মনে হচ্ছে যে এই লেখাটা ওর জন্যই লিখেছিলাম। ( লেখক লেখক ভাব নিয়ে ফেললাম, হাঃ হাঃ হাঃ...) ১৬ই আগষ্ট, ২০০৯, খুলনা।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.