আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লাল ঘোড়া আমি

এই ব্লগের কোন লেখা আমার অনুমতি ব্যতীত কোথাও ব্যবহার না করার অনুরোধ করছি

খুব ছোটবেলায় যে বইটি পড়ে আমার সাহিত্যের প্রতি তীব্র অনুরাগ সৃষ্টি হয় তার নাম লাল ঘোড়া আমি। অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক রচিত এই মর্মস্পর্শী শিশুতোষ উপন্যাসটি পড়ে আমি দীর্ঘসময় কেঁদেছিলাম, আজও মনে পড়ে। একটি ঘোড়ার আত্নজীবনীমূলক এই উপন্যাসে লেখক দেখিয়েছিলেন একটি প্রাণীর চোখে মানুষের জীবনযাত্রাকে। তুলে এনেছিলেন মানুষের প্রতি ঘোড়ার আনুগত্যবোধ অথচ ঘোড়ার/গৃহপালিত পশুর প্রতি মানুষের অবজ্ঞা, অবহেলা আর অত্যাচার। ঠিক মনে নেই উপন্যাসটির সম্পূর্ণ বক্তব্য, শুধু মনে গেঁথে গিয়েছিল কিছু দৃশ্য, ভালো কোন বই পড়লে সবসময়ই চোখে নিজের মত করে কিছু সিনেমার দৃশ্যের মত দৃশ্য ভাসে আমার; এর মাঝে একটি ছিল ঘোড়াটিকে এক জায়গায় বিক্রি করে দেয়ার কথা।

খুব সম্ভবত টাকার প্রয়োজনেই দরিদ্র মালিক লাল ঘোড়াটিকে জমিদার বাড়িতে বিক্রি করে দেন এবং নতুন পরিবেশে গিয়ে পুরোনো মালিকের কথাই ঘোড়াটির মনে পড়তে থাকে। জমিদার বাড়ির বিশাল গোয়ালঘরে আরও বেশ কিছু গরু-ঘোড়ার মাঝে দাঁড়িয়ে লাল ঘোড়া ভাবতে থাকে মানুষ এত নিষ্ঠুর কেন? সত্যি কথা......মানুষ আসলেই খুব নিষ্ঠুর। নইলে টাকার প্রয়োজনে ঘোড়া বিক্রি হয়তো মেনে নেয়া যায়, টাকার প্রয়োজনে মানুষ বিক্রি কী করে মেনে নেয়া যায়? মানুষকে নিয়ে ব্যবসা কী করে মেনে নেয়া যায়? এই দেশে অসংখ্য মানুষ আছে যারা রাজনীতি নামক অসুস্থ এক চক্রের বেড়াজালে আবদ্ধ, তারা এই দেশের মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। এর বাইরেও আছে সীমাহীন নাগরিক সমস্যা, বেকার সমস্যা, অর্থনৈতিক সমস্যা, নিরাপত্তাজনিত সমস্যা.......সমস্যার শেষ নেই এই দেশে। যারা সামান্য উপার্জনের আশায় নিজের সর্বস্ব বিক্রি করে দিয়ে বিদেশে কাজ করতে যেতে চায়, পরিশ্রম করে সামান্য ভালোভাবে বাঁচতে চায়, এই দুঃসহ যন্ত্রণাময় নরকের মতো দেশ থেকে বাইরে গিয়ে একটু সুস্থ নিঃশ্বাস নিতে চায়, কতটা অমানুষ হলে মানুষ সেইসব হতভাগ্যদের বিক্রি করে দিতে পারে, তাদের টাকাপয়সা লুট করে নিতে পারে, তাদের মরুভূমির বুকে ছেড়ে দিয়ে আসতে পারে? কতটা অমানুষ হলে কেউ এটা করতে পারে? প্রবাস জীবন মনে হয় না খুব আরামের, অন্তত যাঁরা কাজ করতে বাইরে যান তাঁদের জন্য।

ইমদাদুল হক মিলনের লেখা পরাধীনতা উপন্যাসটা পড়ে আমার অন্তত তাই মনে হয়। এই কষ্ট তাঁরা স্বীকার করেন শুধু সামান্য ভালোভাবে বাঁচতে চাওয়ার জন্য। দেশ থেকে জমিজমা বিক্রি করে দেন টিকেট-ভিসা-কাগজপত্র ইত্যাদির টাকা জোগাড়ের জন্য। অনেকের দৃষ্টিতে ব্যাপারটি খুব বুদ্ধিমানের কাজ নয়, তবুও, যখন তাঁরা সেটা করেই ফেলেন, এই লোকগুলোর সাথে অন্তত ব্যবসা না করলে হয় না? এই লোকগুলোকে মরুভূমির বুকে মৃত্যুর মুখোমুখি ফেলে না আসলে হয় না? লাল ঘোড়াটির তবু মালিক বদল হয়েছিল, অন্য কিছু বদলায় নি। কিন্তু এই মানুষগুলো যে মানুষকে বদলে পশু করে দেয়?


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।