আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অসৎ ও ভগবান

বিশ্ববিদ্যালয়ে জনৈক অধ্যাপক ক্লাস নিচ্ছিলেন । অধ্যাপক ছিলেন নাস্তিক প্রকৃতির । পড়াতে পড়াতে খানিকটা উপহাসের ঢঙ্গেই তিনি তার ছাত্রদের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন--- “যা কিছুর অস্তিত্ব রয়েছে তার সবই কি ভগবান সৃষ্টি করেছিলেন ?” সকল ছাত্র চুপ । শুধু একজন ছাত্র উত্তর দেওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াল । ছাত্র ১ – হ্যাঁ তিনিই সৃষ্টি করেছিলেন ।

ভগবানই সমস্ত কিছুর স্রষ্টা । অধ্যাপক ভ্রু কুঞ্চিত করে আবার জিজ্ঞাসা করলেন, “ভগবানই সব সৃষ্টি করেছেন ?” ছাত্র ১ – হ্যাঁ স্যার, ভগবানই নিশ্চিতরূপে সবকিছু সৃষ্টি করেছে । অধ্যাপক – ভগবান যদি সবকিছু সৃষ্টি করে থাকেন, তাহলে তিনি নিশ্চয়ই অসৎকেও তৈরী করেছেন, যেহেতু অসতের অস্তিত্ব রয়েছে । অতএব, আমরা যা করি আমরা তাই, কর্মের এ নীতি অনুসারে ভগবানকেও আমরা অসৎ রূপেই ধরে নিতে পারি । তাই না ? অধ্যাপকের এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক যুক্তিটি ছাত্রটি কোন উত্তর প্রদান করতে পারল না ।

চুপ করে গেল । সেই অধ্যাপক তখন যেন জিতে গেছেন এই মনোভাব নিয়ে বললেন, ধর্ম বিশ্বাস আসলে কতগুলো গল্পগাথা মাত্র – এই ধরনের কথা ছাত্রদের মধ্যে বলতে লাগলো । সেই সময় ক্লাসের অন্য একটি ছাত্র হাত তুলে উঠে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করল, “স্যার আমি কি একটি প্রশ্ন করতে পারি । ” “হ্যাঁ, হ্যাঁ, নিশ্চয়ই । ” অধ্যাপক সম্মতি দিলেন ।

ছাত্র ২ – স্যার, ঠান্ডার কি আদৌ কোন অস্তিত্ব রয়েছে ? অধ্যাপক – এটা আবার কি ধরণের প্রশ্ন ? নিশ্চয়ই ঠান্ডার অস্তিত্ব রয়েছে । কেন, তুমি কি কখনও ঠান্ডার অনুভব লাভ কর না ? ছাত্র ২ – প্রকৃতপক্ষে স্যার, ঠান্ডার অস্তিত্ব নেই । পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র অনুসারে আমরা যাকে বাস্তবে ঠান্ডা বলে মনে করি, সে হল উষ্ণতা বা তাপের অনুপস্থিতি । প্রতিটি দেহ বা বস্তুর বিচার্যের জন্য তখনই গ্রহনীয় হয় যখন তার মধ্যে শক্তি থাকে বা শক্তি তার মধ্য দিয়ে সঞ্চারিত হয় । আর তাপ বা উষ্ণতা হল সেই বস্তু যা দেহ বা বস্তুর মধ্যে থাকে বা দেহ বা বস্তুর মধ্যে শক্তির সঞ্চার ঘটায় ।

চরম শূণ্যতা (-৪৬০ ডিগ্রী ফারেনহাইট) হল সামগ্রিকভাবে তাপের অনুপস্থিতি । এবং সকল বস্তু সেই তাপমাত্রা নিস্ক্রিয় বা প্রতিক্রিয়া অসমর্থ হয়ে যায় । অতএব ঠান্ডার কোন আলাদা অস্তিত্ব নেই । আমরা এই শব্দটি সৃষ্টি করেছি শুধুমাত্র তাপহীনতায় আমরা কেমন অনুভব করি তা বর্ণনা করার জন্য । স্যার, অন্ধকারের কি কোন অস্তিত্ব আছে ? অধ্যাপক – নিশ্চয়ই আছে ।

ছাত্র ২ – স্যার, আবার আপনি ভুল করলেন । প্রকৃতপক্ষে অন্ধকারের কোন অস্তিত্ব নেই । বাস্তবে অন্ধকার হলো আলোর অনুপস্থিতি । আলোকে আমরা নিরীক্ষণ করতে পারি বা অধ্যয়ন করতে পারি, কিন্তু অন্ধকারকে পারি না । প্রকৃতপক্ষে আমরা নিউটনের রশ্মিদ্বারা (Prism) সাদা আলোকে ভেঙ্গে অনেক রঙে পরিণত করতে পারি এবং প্রতিটি রঙের বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্য (Wave length) অধ্যয়ন করতে পারি, পরিমাপ করতে পারি ।

কিন্তু আপনি অন্ধকারকে পরিমাপ করতে পারেন না । একটি সাধারণ আলোক রশ্মি অন্ধকার জগতকে ভেঙ্গে দিয়ে তা আলোকিত করতে পারে । কিন্তু আপনি কিভাবে জানবেন কোন নির্দিষ্ট জায়গাটি কতখানি অন্ধকার ? আপনি সেটা বিচার করবেন সেখানে আলোর পরিমানের উপস্থিতি বিচার করে । তাই নয় কি ? অন্ধকার শব্দটি মানুষ ব্যবহার করে, আলোর অনুপস্থিতিতে কি ঘটে তা বর্ণনা করার জন্য । এছাড়া আলাদাভাবে অন্ধকার বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই ।

স্যার, অসৎ’এর কি অস্তিত্ব রয়েছে । অধ্যাপক এবার কি বলবেন ঠিক ভেবে পেলেন না । অনিশ্চিত রূপে ইতস্ততঃ করে বললেন –হ্যাঁ নিশ্চয়ই, আমি ইতিমধ্যেই তা বলেছি । আমরা প্রতিদিনিই তা দেখতে পাচ্ছি, মানুষের প্রতি মানুষের অমানবিকতা পৃথিবীর সর্বত্র কত রকমের হিংস্রতা আর অপরাধ । এগুলি অসৎ’এর প্রকাশ ছাড়া আর কিছু নয় ।

ছাত্র ২ – না, স্যার, অসতের প্রকৃতপক্ষে কোন অস্তিত্ব নেই । অসৎ হচ্ছে ভগবানের অনুপস্থিতি মাত্র । এটা ঠিক অন্ধকার বা ঠান্ডার মতো একটি শব্দ, যা মানুষ সৃষ্টি করেছে, ভগবানের অনুপস্থিতি বর্ণনা করার জন্য । ভগবান অসতকে সৃষ্টি করেনি । যখন মানুষের হৃদয়ে ভগবানের প্রতি প্রেমের উৎসারণ বা প্রকাশ ঘটে না সেই অবস্থাটিকে বর্ণনা করার জন্য মানুষ অসৎ (Evil) শব্দটি সৃষ্টি করেছে ।

ঠিক যেমন তাপের অনুপস্থিতিতে ঠান্ডা বা শীতলতা আসে, আলোর অনুপস্থিতিতে অন্ধকার আসে, তেমনই ভগবানের অনুপস্থিতিতে অসৎ বা অশুভের আগমন হয় । ছাত্রটির কথা শুনে সেই অধ্যাপক চুপ করে বসে থাকলেন । এতক্ষণ যে ছাত্রটি তাঁর অধ্যাপককে এত কথা বলেছিল, তার নাম কি জানেন ? এই ছাত্রটি পরবর্তীকালে এক বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানিকরূপে খ্যাত হয়েছিলেন । তাঁর নাম, “অ্যালবার্ট আইনষ্টাইন” ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।