আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আলো ছড়ায় আলেকজান্দ্রিয়া



মিসরেরদ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী আলেকজান্দ্রিয়ায় রয়েছে দুটি সূর্য-- একটি প্রাকৃতিক, অন্যটি কৃত্রিম। দিনের বেলায় ভূমধ্যসাগরের নীল পানিতে যখন প্রাকৃতিক নিউকিয়ার ফার্নেস নামে পরিচিত সূর্য তাপ ছড়ায়, আশেপাশের পরিবেশ তখন অদ্ভুত ঠেকে। কিন্তু বিবিলিওথেকা আলেকজান্দ্রিয়া নামের অত্যাধুনিক লাইব্রেরি দিনেরাতে সমানে আলো ছড়ায়। এটার ভূগোলে জ্ঞানমণ্ডল ছাড়া অন্য কোনো মেরু নেই। ভূমধ্যসাগর থেকে মাত্র ১৩০ ফুট দহৃরে আলেকজান্দ্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিক সামনেই বিবিলিওথেকা আলেকজান্দ্রিয়ার দালিলিক পুনর্জন্ম হয়েছে ১৯৭৪ সালে।

তবে ২০ কোটি মার্কিন ডলার (১৪ শ' কোটি টাকা) ব্যয়ে অত্যাধুনিক ভবন নির্মাণ শেষ হয়েছে ২০০২ সালের ১৬ অক্টোবর। গ্রিক শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত এ প্রাচীন লাইব্রেরি যেভাবে বিশ্ব জুড়ে জ্ঞানের আলো ছড়িয়েছে, জ্ঞানী-গুণীদের হাতছানি দিয়ে ডেকেছে, নতুন লাইব্রেরিটিও একই ভাবে বিশ্বের জ্ঞানপিপাসুদের কাছে টানবে -- এমনই প্রত্যাশা মিসরবাসীর। ৭০ হাজার বর্গমিটার জুড়ে ৭ তলা এ ভবনের তিনটি ছাড়া বাকি তলাগুলো সমুদ্র সমতলের নিচে অবস্থিত। জলপ্রপাতের অবিরাম ছুটে চলার তরঙ্গায়িত আদলে সিলেন্ডারাকৃতি ভবনটির তলাগুলোর বিন্যাস। দাবি করা হয়, আধুনিক স্থাপত্যবিদ্যার অনন্য নির্দশন হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি অপেরা হাউস আর স্পেনের বিলবাও এলাকার গুগেনহেইম মিউজিয়ামের পরই বিবিলিওথেকা আলেকজান্দ্রিয়া ভবনের নান্দনিক অবস্থান।

বর্তমানে এতে রয়েছে ৮০ লাখ বই। এর মধ্যে ফ্রান্স একাই দিয়েছে ৫ লাখ বই। প্রাচীন নথি অনুসারে প্রাচীন লাইব্রেরিটিও নাকি একই জায়গায় অবস্থিত ছিল। নিজের জাহাজগুলো পোড়ানোর সময় গ্রিক বীর জুলিয়াস সিজার নাকি ভুল করে লাইব্রেরিটি প্রথমবারের মতো জ্বালিয়ে ফেলেন। এর পরও নাকি এটা ৫ বার ধ্বংস হয়েছে।

মূল লাইব্রেরি ভবনে রয়েছে ৮টি বিভাগ -- প্রধান পাঠক, মাল্টিমিডিয়া লাইব্রেরি, তাহা হোসাইন লাইব্রেরি (অন্ধ ও দৃষ্টিহীনদের জন্য), বিরল বইয়ের লাইব্রেরি, শিশু লাইব্রেরি, তরুণ প্রজন্ম লাইব্রেরি, ইন্টারনেট আর্কাইভ ও বই সংরক্ষণাগার। মূল ভবনের সঙ্গে রয়েছে প্লানেট্যারিয়াম সায়েন্স সেন্টার। আবার জাদুঘর বিভাগে রয়েছে পাণ্ডুলিপি মিউজিয়াম ও এন্টিকস মিউজিয়াম। ছোট বড় ৯টি অডিটরিয়ামের পাশাপাশি রয়েছে ৪টি কনফারেন্স হল। আমেরিকার লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের সহায়তায় গড়ে তোলা হয়েছে অত্যাধুনিক ডিজিটাল লাইব্রেরি।

লাইব্রেরির জনৈক চটপটে তরুণী ইন্সট্রাক্টর চোস্ত ইংরেজিতে বললেন, 'আমরা শুধু বিবিলিওথেকা আলেকজান্দ্রিয়া নামের প্রাচীন লাইব্রেরিটির পুনর্জন্মই ঘটাইনি, প্রখ্যাত মুসলিম দার্শনিক ও সমাজবিজ্ঞানী ইবনে খালদুনকেও কবর থেকে টেনে তুলেছি। তাঁর বিশ্বখ্যাত 'দি মেডিটারেনিয়ান ইন দি ফোরটিন্থ সেঞ্চুরি : দি রাইজ অ্যান্ড ফল অব দি এম্পায়ারস' বইটিও অনুবাদ করিয়ে নিয়েছি। ' অনেকটা যান্ত্রিক কায়দায় এক নিঃশ্বাসে লাইব্রেরির নানা অংশের বর্ণনার ফাঁকে ফাঁকে তরুণী ইন্সট্রাক্টর লাইব্রেরির পুনর্জন্ম ইস্যুতে বললেন, 'আসলে আমরা প্রাচীন লাইব্রেরি গড়ে তুলছি না। বরং প্রাচীন এ লাইব্রেরি যেভাবে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিয়েছিল বিশ্বের নানা প্রান্তে, সেই চেতনাটি ধারণ করতে চাইছি, জ্ঞানের উত্তরাধিকারের মঞ্চ তৈরি করতে চাইছি। মনে রাখবেন, একটি লাইব্রেরি তার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনে কমপক্ষে দুশো বছর সময় নেয়।

' পরক্ষণেই ছুড়ে দেন সেই একঘেয়ে প্রশ্ন, ম্যান ডু ইউ হ্যাভ এনি কোয়েশ্চেন? যিশু খ্রিস্টের জন্মেরও তিনশ' বছর আগে টলেমি রাজবংশের আমলে এ লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠিত হয়। খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ সালে ইতিহাসবিদ প্লুটার্ক নিজেই এ লাইবেরির জৌলুস দেখেছেন বলে লিখে গেছেন। এরিস্টটলের ছাত্র ড্রিমিট্রিয়াসও প্রাচীন এ লাইব্রেরির বর্ণনা দিয়েছেন। বলা হয়ে থাকে, প্রাচীন লাইব্রেরিটির মূল ভবনের গায়ে খোদাই করা ছিল একটি বাক্য : 'এটা সেই জায়গা যেখানে আত্মার পরিশুদ্ধি ঘটে'। মিসরীয়রা গর্বের সঙ্গেই বলেন, সূর্য যতদিন থাকবে, এ লাইব্রেরিও থাকবে ততদিন।

ক্যাপশন : অালেকজান্দ্রিয়ায় বাদশা ফারুকের বাসভবনের সামনে ব্লগক

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।