আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কেন তুমি ’৭২ পর্যন্ত যেতে চাও, চল ’৪৬-এ চলে যাই’ -সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী এমপি



[ঢাকার বিখ্যাত সাপ্তাহিক পত্রিকা ''সাপ্তাহিক"-এর চলতি সংখ্যায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর একটি সাক্ষাৎকার ছেপেছে। ইন্টারেস্টিং এই সাক্ষাৎকারটি নিম্নে দেওয়া গেল] ‘কেন তুমি ’৭২ পর্যন্ত যেতে চাও, চল ’৪৬-এ চলে যাই’ -সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী এমপি সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী এমপি। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য। কথা বলেছেন সংবিধান সংশোধনী বিষয়ে। জবাব দিয়েছেন তার ওপর আসা নানা সমালোচনার।

সংবিধান সংশোধনী কমিটিতে বিএনপির অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে বলেনÑ ‘আওয়ামী লীগ শুধু ট্রেনে ওঠার কথা বলে। কিন্তু ট্রেন কোথায় যাবে সেটা বলে না। তেমনি সংবিধান সংশোধনীর বিষয় না বলে শুধু কমিটিতে আসতে বলে। এটা তো অস্পষ্ট আমন্ত্রণ। আমরা বিষয়টি পরিষ্কার না বুঝে হুট করে তো চলে যেতে পারি না।

’ আরো কথা বলেছেন যুদ্ধাপরাধ, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি, বিরোধী দলের প্রতি সরকারি দলের দৃষ্টিভঙ্গিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাহরাম খান সাপ্তাহিক : সংবিধান সংশোধনীর বিষয়টি নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কি? সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী : কি সংশোধনী আসছে এ বিষয়ে তো পরিষ্কার করে কিছু বলা হয়নি। আমরাও তো জানি না। শুধু শুনেছি সংশোধনী আসছে। কী আসছে? এটা কয় মাথার জন্য, কয় লেজের জন্য, কয় পদের জন্যÑ এটা তো কেউ জানে না।

শুধু ওড়া ওড়া কথা শুনছি। তিনটা বিষয় সরকারের মন্ত্রীদের মুখে শুনছি। একটা হলো তারা ’৭২-এর সংবিধানে ফিরে যাবে, দুই. হাইকোর্টের রায় কার্যকর করবে, আরেকটি হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পরিবর্তন। এই তিনটা বিষয় শোনা যাচ্ছে। কিন্তু আসলে কোনটা করবে সেটা তো বোঝা যাচ্ছে না।

তাই এখনো স্পষ্ট করে বলার সময় আসেনি। সাপ্তাহিক : আপনারা বিশেষ কমিটিতে না যাওয়ার সুনির্দিষ্ট কারণ কি? সাকা চৌধুরী : সুরঞ্জিত সাহেব নিজেই ’৭২-র সংবিধান স্বাক্ষর করেননি। তাকেই করা হয়েছে ’৭২-এর সংবিধানে ফিরে যাওয়ার জন্য কমিটির কো-চেয়ার। সমস্যা নেই। বর্ষাকালে ছাতা খুলেছেন।

গ্রীষ্মকালে ছাতা বন্ধ করছেন সেটা বুঝলাম। কিন্তু আমার কথা হলো ভিন্ন। আপনারা কী করতে চাচ্ছেন? এটা না বলে আপনারা বলছেন বিএনপি কমিটিতে আসছে না। আমাকে বলছে ট্রেনে উঠতে। কিন্তু ট্রেনটা কোথায় যাচ্ছে সেটা আর বলছে না।

তোমরা বল ট্রেনটা চট্টগ্রাম যাচ্ছে। তাহলে তো আমি টিকেট কাটি। তুমি গন্তব্য না বলে শুধু বলছ ট্রেনে চলতে। কিন্তু ট্রেন লাকসাম যাচ্ছে, সিলেট যাচ্ছে নাকি রাজশাহী যাচ্ছে সেটা বলা যাচ্ছে না। গন্তব্যটা না জানলে তো আমি সিদ্ধান্তই নিতে পারছি না।

বলা হচ্ছে যে সংবিধান তুমি সংশোধন হবে। কি সংশোধন হবে? আরে তুমি একটা ছাগলকে জবাই করবা নাকি বলি দিবা সেটা তুমি ঠিক কর। জবাই করলে আমি আছি। বলি দিলে আমি নেই। এসব কিছু না বলেই সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডের মতো এই ছাইরা দিল, ছাইরা দিলÑ তাড়াতাড়ি করে উঠেন গাড়িতে উঠেন, গাড়িতে উঠেন।

আরে আশ্চর্য কথা। কোনো গাড়িতে উঠব? আমাকে তো বলতে হবে। এসব কিছু তো বলছেন না। তাহলে আমি কীভাবে কথা বলব। তারা বলে বেড়াচ্ছে আমরা সহযোগিতা করছি না।

আপনি দেখেন না ১০ টাকায় চাল দিলে সহযোগিতা করি কিনা ঘরে ঘরে চাকরি দিলে, বিনামূল্যে সার দিলে দেখেন সহযোগিতা করি কি না। এগুলোতে আপনারা স্পষ্ট করে বলেছেন। এসব বিষয়ে আমরা সমর্থন দিতে চাই। সংবিধান বিষয়েও স্পষ্ট ভাষায় কথা বলুন তাহলে আমরা আমাদের কথা বা সিদ্ধান্ত জানতে পারব। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেলেই বলে সিন্ডিকেট হচ্ছে।

এই সিন্ডিকেট করছে কারা? যারা সরকারের সমর্থন পাচ্ছে। তাহলে এসব বিষয়ে আমাদেরকে ভয় দেখিয়ে লাভ কি? কথায় কথায় যুদ্ধাপরাধীর ভয় দেখায়। দশ মিনিট পরপর ফোন আসে আমাকে নাকি পুলিশে ধরে নিয়ে যাবে। আরে মিয়া মালিকুল মউত যে আসবে সেটা নিয়েই তো চিন্তা করি না তাহলে পুলিশ নিয়ে ভাবার কি আছে? মৃত্যু যে আসবে এ বিষয়ে তো কোনো সন্দেহ নেই। তাই বলি এসব বিষয় নিয়ে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।

সাপ্তাহিক : ঠিক এই মুহূর্তে সরকার বিষয়টিকে সামনে আনল কেন? এর পেছনে কি কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে বলে আপনি মনে করেন? সাকা চৌধুরী : চালের দাম এসেছে চল্লিশ টাকায়। গ্যাস সংযোগ দিতে পারছে না। বিদ্যুৎ নেই। সারাদেশে হাহাকার পরিবেশ। জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বাড়ছে।

এদিক থেকে মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ধাবিত করার আর তো কোনো পথ নেই। এ ধরনের ঢোল বাজাতেই হবে। বিডিআরের কেসটাতে যে চার্জশিট দিয়েছে সেই চার্জশিট যে জীবনেও কোনোদিন কার্যকর হবে নাÑ এটা তারা খুব ভালো করে জানে। এসব ইস্যু থেকে মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ধাবিত করার জন্য একটা চেষ্টা করছে। সাপ্তাহিক : শেখ হাসিনা বলেছেন অবৈধ শক্তি যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে সে জন্যই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

কথা হচ্ছে শুধু আইন দিয়েই কি অবৈধ শক্তি রোধ করা যাবে? সাকা চৌধুরী : অবৈধ শক্তি সংবিধানের সম্মতি নিয়ে আসে না। এটা তো প্রধানমন্ত্রী একটা হাস্যকর কথা বললেন। তারা যখন আসে তখন প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে অনুমতি নেয় না। যেমন বিডিআরের ঘটনার সময় তিন বাহিনীর প্রধানকে ওনার বাড়িতে বসিয়ে রেখেছিলেন। নিজের বাড়ির চারদিকে বালির বস্তা দিচ্ছিলেন।

কেন দিচ্ছিলেন। উনি তো সংবিধানসম্মত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। উনি নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন, এটার মাধ্যমেই বোঝা যায় সংবিধানের আইন দিয়ে অবৈধ শক্তিকে ঠেকানো যায় না। বরঞ্চ ঠেকানোর একমাত্র পন্থা হচ্ছে সুশাসন। সুশাসন যদি থাকে তাহলে কোনো অবৈধ শক্তি সাহস পায় না।

আর যদি দুঃশাসনের মাধ্যমে সাংবিধানিক প্রক্রিয়াকে সরকারই ব্যাহত করে তাহলে বৈধ-অবৈধ কোনো শক্তি যে মাথাচাড়া দেবে না এর নিশ্চয়তা কি সংবিধান দিতে পারে? সাপ্তাহিক : তাহলে সুশাসন প্রতিষ্ঠার উপায় কি? সাকা চৌধুরী : সুশাসনে আসতে হলে প্রথমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করলেই অনেক বিষয়ে স্থিতিশীলতা আসবে। এই যে বিচারকরা যেসব বিচার এখন করছেন সরকারের ইঙ্গিতে, এসব মনোভাবের পরিবর্তন আনতে হবে। সরকারের মনোভাবের পরিবর্তন হতে হবে। বিচার বিভাগে যেন হস্তক্ষেপ না হয়।

সাধারণ মানুষ যাতে সুষ্ঠু বিচার পায়। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হলে বিরোধী শক্তিগুলোকে কথা বলার সুযোগ দিতে হবে। প্রতিবাদ করার সুযোগ দিতে হবে। বিরোধী দলগুলো যখন সাংবিধানিক পদ্ধতিতে প্রতিবাদ করার সুযোগ পায় না তখনই অসাংবিধানিক পদ্ধতি খোঁজ করার প্রয়াস পায়। সাপ্তাহিক : এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছা কতটুকু কার্যকর আছে? সাকা চৌধুরী : আসলে যারা বিরোধী দলে আছে তারাও সরকারে ছিল।

যারা সরকারে আছে তারাও বিরোধী দলে ছিল। এখানে সদিচ্ছার অভাব থাকার আমি কোনো কারণ দেখি না। সাপ্তাহিক : কারণ না থাকলে আমরা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে এক হতে পারি না কেন? সাকা চৌধুরী : এর অন্যতম কারণ হলো রাজনীতিতে তেলবাজদের সংখ্যা বেড়ে গেছে। এই জাতীয় মানুষের প্রভাবটা একটু বেশি বর্তমান সময়ে। তারা কিভাবে সরকার প্রধানকে খুশি করা যায় এই কাজে ব্যস্ত এবং সরকারপ্রধানও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

মানুষ থেকে দূরে সরে যায়। তিনি খবরও পান না দেশের কি অবস্থা। তিনি খবর পান সবার শেষে। যখন সব শেষ হয়ে যায়। এই তেলবাজরা আসল খবর সরকারপ্রধানের কাছে পৌঁছাতে দেয় না।

যেমন সংবিধান সংশোধন হচ্ছে। এই সংবিধান সংশোধন শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব করেছেন, জিয়াউর রহমান করেছেন, এরশাদ করেছেন, বেগম খালেদা জিয়াও করেছেন। সংবিধান যার শাসনামলে সংশোধন হয় এর কৃতিত্ব এবং দায়িত্ব উভয়ই কিন্তু যিনি করেন তার ওপরেই বর্তায়। যেমন চতুর্থ সংশোধনীর কৃতিত্ব এবং দায়িত্ব শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের। এভাবে যিনি যখন সংবিধান সংশোধন করেছেন সেগুলোর দায়িত্ব এবং কৃতিত্ব তাদের।

এখন শেখ হাসিনা সংবিধান সংশোধনের যে উদ্যোগ নিয়েছেন এর কৃতিত্ব বা দায়-দায়িত্ব আমার তিন বন্ধু নিতে পারবে না। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তও নিতে পারবেন না, রাশেদ খান মেননও নিতে পারবেন না, ইনু সাহেবেও নিতে পারবেন না। সবকিছু করতে পারবেন তারা। কিন্তু এর দায়-দায়িত্ব নেয়ার ব্যাপারে তাদেরকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। দায়-দায়িত্ব নিতে হবে শেখ হাসিনাকে।

সে জন্য খুব সতর্কতার সঙ্গে এই সংশোধনীর পথে এগুতে হবে প্রধানমন্ত্রীকে। কারণ এরা কিন্তু দায়-দায়িত্বের অংশীদার হবে না। খুঁজেও পাওয়া যাবে না। টেলিফোন বন্ধ থাকবে। বাড়িতেও থাকবে না।

সে জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দায়-দায়িত্ব নিয়েই অগ্রসর হতে হবে। সাপ্তাহিক : সাংবিধানিকভাবে বঙ্গবন্ধুর ছবি টাঙানোর বিষয়টি বাধ্যতামূলক হলে কেমন হবে? সাকা চৌধুরী : কথা হলো যদি কোনো ব্যক্তির রাজনৈতিক স্বীকৃতি সাংবিধানিকভাবেই দিতে হয় তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে সেই ব্যক্তির ভাবমূর্তিটা কি তর্কের ঊর্ধ্বে, নাকি তর্কের নিচে। এই প্রশ্নটা এসেই যায়। যে ব্যক্তির ভাবমূর্তি তর্কের ঊর্ধ্বে থাকবে তার ছবি টাঙানোর জন্য আইন করার প্রয়োজন হয় না। ভারতে মহাত্মা গান্ধীর ছবি টাঙানোর জন্য সাংবিধানিক কোনো আইন নেই।

তার জন্য সেটার প্রয়োজন পড়ে না। আজকে বাংলাদেশের জন্য এটা দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের মতো ব্যক্তির ছবি টাঙানোর জন্য আইনের প্রয়োজন হবে। আমি মনে করি এটা তো শুধু আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা নয়, শেখ হাসিনার ব্যর্থতা নয়, সংসদের ব্যর্থতা নয়, আমি মনে করি এটা আমাদের দেশের সংস্কৃতিরই ব্যর্থতা যে আমরা স্বীকৃতি দিতে লজ্জা পাই। কেন? কোন কারণে? যার যা প্রাপ্য তাকে সেটা দেয়া উচিত বলে আমি মনে করি। সাপ্তাহিক : তাহলে বঙ্গবন্ধুর মতো ব্যক্তিত্বের ক্ষেত্রে আপনার মূল্যায়নটা কেমন হবে? সাকা চৌধুরী : শুধু শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব কেন? এখানে জিয়াউর রহমান আছেন।

মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী আছেন, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক এদের মতো মানুষদেরকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য আবার আইন লাগবে কেন? মানুষের ভালোবাসার প্রতিফলন ঘটাতে আইনের প্রয়োজন আছে বলে তো আমার মনে হয় না। সাপ্তাহিক : জামায়াতের বিষয়ে বিএনপির বর্তমান অবস্থানকে অনেকে বলছেন কৌশলী অবস্থান। আসলে তাদের বিষয়ে আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গি কি? সাকা চৌধুরী : ১/১১-এর সময়ে এবং এর পরে জামায়াত আমাদের বিষয়ে যেভাবে সমর্থন দিয়েছে আমরাও ঠিক সেভাবেই সমর্থন দিচ্ছি। আর যদি আন্দোলন হয় সেটা তো শুধু জামায়াতকেন্দ্রিক হবে না। দেশের জনগণের সামগ্রিক সুবিধা-অসুবিধাকে কেন্দ্র করে হবে।

আন্দোলন তো বিভিন্ন রকম হয়। রূপটা কি দাঁড়ায় সেটা আগামী দিন নির্ধারণ করবে। সাপ্তাহিক : তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে যদি সংশোধনী আনা হয়। তাহলে আপনারা কি আন্দোলনে যাবেন? সাকা চৌধুরী : আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এসব বিষয়ে আন্দোলনে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ এসব বিষয়ে আওয়ামী লীগই আমাদের যথেষ্ট শিক্ষা দিয়ে গেছে।

তাদের কাছ থেকে যে কিছুই শিখিনিÑ এটা অস্বীকার করা যাবে না। তাদের যা ইচ্ছা করুক। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করতে চায় করুক। সমস্যা নেই। আমরা নির্বাচনে যাব না।

বেগম জিয়া ১৫ ফেব্রুয়ারির একটা নির্বাচন করেছিলেন। তেমন নির্বাচন যদি তারা করতে চায় তাহলে করুক না, সমস্যা নেই তো। সাপ্তাহিক : বিরোধী দলের প্রতি সরকারের মনোভাবকে কিভাবে দেখেন? সাকা চৌধুরী : সরকার তো মানববন্ধনই করতে দেয় না। মানববন্ধন করতে গেলে তারা বলে যুদ্ধাপরাধ বিরোধী। প্রশ্নটা হলো কারা করছে যুদ্ধাপরাধীর বিচার।

শেখ হাসিনা? শেখ হাসিনা তো আমার মতো দেশেই ছিলেন। বরঞ্চ আমি যতদিন বিদেশে ছিলাম তখনো শেখ হাসিনা বাংলাদেশেই ছিলেন। তো যুদ্ধাপরাধী কে উনি বলুক না। যারা হিন্দুস্তান যায়নি তারা যুদ্ধাপরাধী, সাত কোটি মানুষের মধ্যে ছয় কোটি মানুষই তো হিন্দুস্তান যায়নি। তাহলে তো সবাই যুদ্ধাপরাধী।

শেখ হাসিনার উপদেষ্টাসহ বেশ কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব আছেন যারা ইয়াহিয়া খানের বেতন খেয়েছেন। শান্তি কমিটির মেম্বার তারা ছিল না? অনেকেই ছিল। পাকিস্তান সরকার তো শেখ হাসিনাকে এ্যারেস্ট করেনি। তিনি তো কারাবন্দি ছিলেন না। তার অর্থটা কি? এসব অনেক কথা যুদ্ধাপরাধীর বিচারের মধ্যে বেরিয়ে আসবে।

এখানে খোঁচাখুঁচি যত কম করা যায় তত ভালো। আমরাও তো কিছু তথ্য সরবরাহ করতে পারি। শাহরিয়ার কবির কথার ঢোল বাজালে সবাইকে নাচতে হবেÑ এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই। কথায় কথায় শুধু যুদ্ধাপরাধীর ধমকি দেয়। কাকে ধমকি দেয়? আমাদের শরীরের রক্ত এমন হয়ে গেছে এখন মশায়ও কামড় দেয় না।

রক্ত এত বিষাক্ত হয়ে গেছে যে, মশায় কামড় দিলেও মশা মরে যায়। খামাকা এগুলো আমাকে বলে তো লাভ নেই। জেল দেবে, ফাঁসি দেবে। এগুলো তো আমাদের দেশে অহরহ হচ্ছে। এগুলোর ভয় দেখিয়ে তো লাভ নেই।

রাস্তায় বের হলে মানুষকে ধরে নিয়ে গুম করে ফেলে। বিএনপির ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলমকে গুম করে ফেলেছে। কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। হঠাৎ করে তত্ত্ব উদ্ঘাটিত হলো বিএনপি তাকে লুকিয়ে রেখেছে। হাস্যকর আর কি হতে পারে।

বিচার করতে তো হয় না গুম করে দিলেই হয়। কয়েক দিন পর একজন মন্ত্রী বলবেন সালাহউদ্দিন কাদেরকে বিএনপি লুকিয়ে রেখেছে। দেশের মধ্যে যে অবস্থান চলছে তার জন্য তো ঐ সব ঢোল বাজানোর কোনো দরকার হয় না। সংবিধান সংশোধনীতে কমিটিতে নাম না দিয়ে বিএনপি নাকি অসহযোগিতা করছে। আমি বলি ভালো সংশোধনী আনুন।

তাহলে নাম দিতে হবে না। বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা দৌড়ে গিয়ে ভোট দিয়ে আসবে। তারা বলেছিল ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে। তারা এমন আইন করুক। আমি তো তাহলে খালেদা জিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকব না।

সংসদে গিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষে ভোট দিয়ে আসব। কারণ আমাকে ফটিকছড়িবাসী ভোট দিয়েছে তাদের স্বার্থকেই আমি আগে দেখব। যে আমার দেশের মানুষ ১০ টাকা কেজি চাল খাবে। বিনামূল্যে সার দেবে, প্রতি ঘরে চাকরি দেবে এসব বিষয়ে আইন করুক। আমাকে কোনো কমিটিতে রাখতে হবে না।

কারো কথা না শুনে আমি একা হলে সংসদে যাব ভোট দেব। কিন্তু আকাম করলে সাক্ষীগোপাল হতে রাজি না। এটাই হলো আমাদের অবস্থান। এখানে মুন্সিয়ানা করার কোনো সুযোগ নেই যে, কমিটিতে একজন রাখবে নাকি পাঁচজন রাখবে। তারা ক্ষমতায় আছে যা ইচ্ছে তাই করুক না কৃতিত্ব হলেও তারা পাবে।

আর ব্যর্থতায় দায়-দায়িত্বও তাদেরই নিতে হবে। সাপ্তাহিক : সরকার মানববন্ধন করতে দিল না, গণআন্দোলনের অনুমতি দিল না। বিএনপি বলছে হরতালের কথা। তাহলে আমরা আবার কি পুরনো রাজনৈতিক সংস্কৃতিতেই ফিরছি? সাকা চৌধুরী : এর উত্তর আওয়ামী লীগ ভালো দিতে পারবে। কারণ এর উত্তরটা আমার চেয়ে তারা ভালো জানেন।

এসব অগণতান্ত্রিক মনোভাবের ফলাফল কি তারা এটা সবচেয়ে ভালো জানে। কারণ এর ভুক্তভোগী আওয়ামী লীগই বেশি। সাপ্তাহিক : ধর্মভিত্তিক রাজনীতি তুলে দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। এর প্রভাব কি হতে পারে? সাকা চৌধুরী : আমার কথা হলো যে কোনো রাজনৈতিক আদর্শই উন্মুক্ত থাকা উচিত। যেমন কমিউনিস্ট পার্টি।

তাদের মাওবাদী আন্দোলন চলছে ইন্ডিয়াতে। কেন চলছে? এই মাওবাদী আন্দোলন দাবিয়ে রাখার যে প্রচেষ্টা সেটারই ফসল হলো তাদের আন্দোলন। যেখানে এই আন্দোলনের উৎপত্তি সেখানে এখন নেই। অথচ ইন্ডিয়াতে আছে। কারণ কি।

বুঝতে কষ্ট হয়? তাই বলব এমন কিছু করা উচিত হবে না। যে কোনো রাজনৈতিক আদর্শকে মাটির নিচে চাপা দিতে গেলেই সেটা বিস্ফোরিত হতে পারে। উন্মুক্ত রাখতে হবে। মৌলভিরা ফতোয়া দিয়ে যাবে। দিক না।

ভয় পাওয়ার কি আছে? তাদের কথাকে যদি কোনো গোষ্ঠী ভয় পায় তাহলেই মানুষ ভাববে যে, মৌলভীদের ফতোয়াতে নিশ্চই কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। ভালো আদর্শ আছে। বাধা দিলেই সমস্যা। বলুক না। তারা তাদের সংগঠন করুক না।

জামায়াতে ইসলামী কত শতাংশ ভোট পেয়েছে। এটাতেই যদি সেন বাবু-গুপ্ত-দাস বাবু-পাল বাবুরা...। তাহলে সমস্যা আছে। আরেকটা বিষয় হলো বার বার ’৭২-এর সংবিধানে ফিরে যাওয়ার কথা বলে। ’৪৬-এ চলে গেলে কি হয়? কেন তুমি ’৭২ পর্যন্ত যেতে চাও? চল ’৪৬-এ চলে যাই।

পশ্চাৎমুখী আমাদের যাত্রা এখন। আমি তো মনে করি একটি দেশের অগ্রগতি হবে সামনের দিকে চলার। কারবার চলতেছে সব পশ্চাৎমুখী। পেছনের দিকেই যদি যাত্রা তাহলে যাত্রা ’৭২-এর থাকবে কেন? আরো পিছিয়ে যাই সমস্যা কি? ভারতের মনিশঙ্কর রায় আমাদের দেশে এসে বলেনÑ ‘চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে না দিলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়ন সম্ভব না। ’ আরে বাবা এত ধমকি দেয়ার দরকার কি? ধমকি দেয়ার দরকার নেই তো।

বল যে আমরা এক হয়ে যাই। কারণ ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করার যে আলোচনা চলছে। তাতে বলতে হয় দেশটাই তো হয়েছিল ধর্মের ভিত্তিতে। তাহলে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ হওয়া এই সীমানা যদি থাকে তাহলে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করতে সমস্যা কোথায়। আর যদি ধর্মভিত্তিক রাজনীতিই তুলে দিতে হয় তাহলে তো ধর্মভিত্তিক সীমানাও তুলে দিলে হয়।

এই যে কামাল হোসেন, রফিকুল হক তারা এ দেশে এসেছিলেন কেন? রফিকুল হক তো এসেছিলেন ১৯৬৫-এর পরে। ঐখানে সুযোগ পায়নি। এখানে সুযোগ নেয়ার সন্ধানে এসেছিল। ১৯৪৭-এ দেশ বিভাগের সময় যারা এসেছিল তারা শরণার্থী হিসেবে এসেছিল। কিন্তু এরা তো ’৪৭-এ আসেনি।

’৪৭-এর পরে যেসব মুসলমান এখানে এসেছে সেগুলো সব সুযোগ সন্ধানী। সব হাইকোর্টের জজ হতে এসেছে। বড় বড় উকিল হতে এসেছে। আর আমাদেরকে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি শেখাতে এসেছে। ঐখানে (কলকাতাতে) ভাত পায়নি।

এখানে এসে ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে গেছে। এগুলো আজব সব ব্যাপার। এসব কথা বললে ওনারা মনে কষ্ট পাবে। আর আমার কথায় নাকি তারা সহজেই মনে কষ্ট পায়। হাইকোর্টের এ্যাটর্নি জেনারেল আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন আমি কথা বললে আওয়ামী লীগের নেতারা মনে দুঃখ পান।

আমি তো কাউকে মনে কষ্ট দিতে চাই না। বাস্তবতা বলতে চাই। সাপ্তাহিক : ব্যারিস্টার রফিকুল হক সাহেব আপনিসহ তিনজনকে ১/১১-এর জন্য দায়ী করেছেন। এটা কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন? সাকা চৌধুরী : ব্যারিস্টার রফিকুল হক সাহেব মুরব্বি মানুষ। একজন ভালো আইনজীবী।

তার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক অনেক ভালো। বিএনপি শাসনামলে বিএনপির বাইরে আইন সংক্রান্ত ব্যাপারে বিচার বিভাগের ব্যাপারে সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ছিলেন ব্যারিস্টার রফিকুল হক। তার অজান্তে বিএনপি সরকারের এমন কোনো আইন প্রণীত হয় নাই যে আইনে ব্যারিস্টার রফিকুল হকের পরামর্শ নেয়া হয়নি। তাই বিএনপি সরকারের আমলে কি হয়েছে না হয়েছে এ ব্যাপারে বলার অধিকার তার আছে। ওনার সঙ্গে আলোচনা না করে তৎকালীন আইনমন্ত্রী এক পাও এগোননি।

ওনার পরামর্শ ছাড়া কোনো বিচারপতি নিয়োগ হয়েছে বলে আমার জানা নেই। কোনো এ্যাডভাইজারও তার পরামর্শ ছাড়া নিয়োগ হয়নি। উনি আমাকেও পরামর্শ দিয়েছেন। অস্বীকার করব না। আর এখন যদি উনি কাউকে দায়ী করেন তাহলে এর দায়-দায়িত্ব তাকেও নিতে হবে।

উনি নিজেই স্বীকার করেছেন বিচারপতি হাসানকে নাকি প্রধান উপদেষ্টা করার জন্যই নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। তিনি বলেছেন এটা না করলে ১/১১ আসত না। আবার নিজেই বলছেন হাসান সাহেব খুব ভালো মানুষ। উনি কোনো অন্যায় কাজ করতেন না। একজন ভালো মানুষকে যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করার জন্য কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়ে থাকে তাহলে অন্যায়টা কি হয়েছে? এ প্রশ্নটা যদি করি।

উত্তরটা কি হবে। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমি নাকি বয়সের তালিকা দেখেছি। আচ্ছা আমি সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী। সরকারের যদি কেউই না হই তাহলে জজ সাহেবদের বয়সের তালিকা জানতে ব্যারিস্টার রফিকুল হকের কাছে যাইতে হয় আমার। উনি মুরব্বি মানুষ।

উনি স্বেচ্ছায় আমাকে অনেক কিছু দেখিয়েছেন। আমিও স্বেচ্ছায় অনেক কিছু দেখিয়েছি। সেদিনও ওনার সঙ্গে ফোনে কথা হলো। তিনি জানতেন না ’৭২-এর সংবিধানে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সই করেননি। আমি জানিয়েছি।

সেটা তিনি বলেননি। কিন্তু অভিযোগটা ঠিকই করেছেন। এখন বলতে হয় তিনি কি তদ্বির করে বিচারপতি নিয়োগ দেননি, তদ্বির করে উপদেষ্টা নিয়োগ দেননি। আমি তো বলব না কাকে এ্যাডভাইজার বানিয়েছেন, কাকে বিচারপতি বানিয়েছেন। এমনকি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও এ্যাডভাইজার নিয়োগের ব্যাপারে তার তদ্বির ছিল না? ছিল তো।

কিন্তু আমি তা বলব না। সাপ্তাহিক : আপনি বললে সবাই জানতে পারত... সাকা চৌধুরী : না না। উনি মুরব্বি মানুষ। তার সঙ্গে একটা ভালো সম্পর্ক আছে। এসব বিষয় আর আলোচনায় আনতে চাই না।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।