৫ম সংশোধনী বাতিল এবং তৎপরবর্তী বিচারকদের পরামর্শ অনুযায়ী বাংলাদেশকে পুনরায় ৭২ এর সংবিধান অনুযায়ী ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষনা দেয়ার পথে কোন বাধাই থাকলো না। বর্তমান সরকার দেশকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার জন্য ইতিমধ্যেই চুড়ান্ত কার্যত্রুম হাতে নিয়েছে। সংবিধানের শুরুতে বিসমিল্লাহ, আল্লাহর উপর বিশ্বাস- আস্থা এ বিষয় গুলোও মুছে ফেলা হবে- ধারণা করা হচ্ছে। -বিষয়টিকে দেশের মানুষ কিভাবে গ্রহণ করে তা দেখার বিষয়।
ধর্মনিরপেক্ষতার ওয়াজেনরা দাবি করছেন, দেশকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করলে দেশে কোন বিশেষ ধর্মাবলম্বীদের প্রাধান্য থাকবে না, রাষ্ট্রীয় কার্যাবলীতে কোন ধর্মের প্রভাব থাকবে না, সর্বোপরী একটি অসাম্প্রদায়িক সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে (ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ভারতের সাম্পদায়িক দাঙ্গা দেখলে অসাম্প্রদায়িকতার স্বরূপ বোঝা যায়) আর অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নিষিদ্ধ হলেও ব্যক্তিপর্যায়ে ধর্ম পালনে কোন বাধা থাকবে না।
- কি করে এধরনের স্ববিরোধী এবং আজগুবি কথাটা মানুষকে তারা বিশ্বাস করানোর চেষ্টা করছেন আমার বুঝে আসে না।
ধর্মনিরপেক্ষতা অর্থ যদি বক্তিগত পর্যায়ে ধর্ম পালনের অধিকারই হয়ে থাকে, তবে আমার প্রশ্ন- ইসলাম বলছে, "আন আকিমুদ্দিন, ওয়ালা তাতাফাররাকু ফিহা.." অর্থাৎ দ্বীন বা আল্লাহ প্রদত্ত জীবন বিধান প্রতীষ্ঠা করো এবং এ ব্যাপারে মত পার্থক্য করো না।
একজন মুসলিম ব্যক্তিগত পর্যায়ে যখন ধর্ম পালন করতে যাবে আর সে যখন দেখবে তার ধর্ম বলছে আল্লাহ প্রদত্ত জীবন বিধান প্রতিষ্ঠিত করতে, তখন সে তার ব্যক্তিগত বিষয়গুলোতে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সে বিধান প্রতিষ্ঠা করতে যাবে। অথচ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র তাকে তা করতে দেবে না। একজন ব্যক্তি- রাষ্ট্রে আল্লাহর বিধান কার্যকর করার জন্য কোনরূপ আন্দোলন-সংগঠন করতে পারবে না।
- তাহলে একজন মুসলমানকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ধর্মীয় বিধান মেনে চলার সুযোগ কোথায় দেয়া হল?
ইসলাম একজন ব্যক্তিকে জীবনের সকল পর্যায়ে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠার জন্য সংগঠন প্রতীষ্ঠা করতে বলে। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র একজন মুসলমানকে সে অধিকার দেয় না। এ ক্ষেত্রে তার ব্যক্তিপর্যায়ে ধর্ম পালনের অধিকার কি করে বজায় থাকলো?
ইসলাম নারীকে হিজাব পরিধানের জন্য আদেশ করে। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে হিজাবের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, একজন মুসলমানকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ধর্ম পালনের সুযোগ কোথায় দিলো?
তাহলে প্রশ্ন হয় ইসলাম রাষ্ট্র, সমাজ, আইন, অর্থনীতি, সাংস্কৃতি পরিচালনার জন্য যে বিধান দিয়ে নিজেকে পুর্ণাঙ্গ জীবন-বিধান হিসেবে দাবি করছে, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র মুসলমানদের সে বিধান কার্যকর করার অধিকার না দিলে সেই ইসলামের আর কি প্রয়োজন?
আল্লাহ বলছেন, ''তোমরা আল্লাহর কিছু আয়াতকে মেনে নেবে আর কিছু আয়াতকে অস্বীকার করবে? তাহলে তোমাদের দুনিয়াবী জীবনে আসবে অপমান-লাঞ্ছনা আর আখিরাতে আসবে কঠোর শাস্তি। "
একজন মুসলিমকে নামায-রোযা সংক্রান্ত আল্লাহর আয়াত সমুহকে মানার সুযোগ দেয়া হবে অথচ রাজনীতি, আইন, অর্থনীতি সংক্রান্ত আয়াতসমুহ মানার সুযোগ না দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট কি করে বলছে ধর্ম পালনের অধিকার দেবে?
ধর্মনিরপেক্ষতার ওয়াজেনরা মুলত ধর্মনিরপেক্ষতার জিকির তুলে ইসলামকে কয়েদ করতে চায় (এদের চেয়ে শক্তিধররা এ চেষ্টা করেও অবশ্য ব্যর্থ হয়েছে)।
অন্য আট-দশটা ধর্মের মত (যাদের জীবনের সকল প্রর্যায়ে প্রদত্ত ধর্মীয় বিধান নেই) ইসলামকেও একটা বস্তা পচাঁ ধর্ম মনে করে। মুসলমানদের আল্লাহকে তারা- মানুষের কাছ থেকে রুকু-সিজদা, ভোগ-প্রসাদ গ্রহনকারী কুলাঙ্গার স্রষ্টা বানাতে চায় যে ঐ সকল ভোগ-প্রসাদে মত্ত হয়ে বসে থাকে আর তার সৃষ্টির (মানুষ) রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান দিতে অপারগতা প্রকাশ করে- আবার পরকালে তার বিধান না মানার শাস্তির ভয় দেখায়। ...... ইসলামকে কি এমন বস্তাপঁচা (ইউজ লেস) ধর্ম বানানো সম্ভব?
মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ট দেশে ধর্মনিরপেক্ষতা এবং গণতন্ত্র পারস্পর বিরোধী দুটি মতবাদ। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ মুসলমান। ৮৫ শতাংশ মুসলমান যদি কখনো ইসলামকেই তাদের রাষ্ট্র পরিচালনার ভিত্তি হিসেবে মেনে নিতে প্রস্তুত হয় সে ক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষতা অধিকাংশ জনগনের এই গণতান্ত্রিক অধিকারকে ভুলুন্ঠিত করবে।
তাই বাংলাদেশের মত একটি মুসলিম অধ্যুসিত দেশে ধর্মনিরপেক্ষতা অগণতান্ত্রিক।
এত কিছুর পরেও বর্তমান সরকার হয়তো সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতাকে প্রতিষ্ঠিত করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করতে কার্পণ্য করবে না। এ ব্যাপারে বলা হচ্ছে ধর্মের অপব্যবহার করে কোন কোন দল রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করছে। সরকার ধর্মের অপব্যবহারকারীদের দো্হাই দিয়ে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। তাহলে বলবো ধর্মের অপব্যাখ্যা ও অপব্যবহার করে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলকারীরা ভাবিষ্যতে যদি ধর্মনিরপেক্ষতার অপব্যবহার করে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে চায় তাহলে ধর্মনিরপেক্ষতাকে কেন নিষিদ্ধ করা হবে না?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।