আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গুলশান-বনানী, ফ্যাশন-মডেলিং কিংবা একজন কাঁচা কিশোরীকে ঘষে-মেজে 'পণ্য' বানানো

রিজওয়ানুল ইসলাম রুদ্র

১. বিশ্বায়নের এই যুগে মানুষ কেবলই হাঁটছে উন্নয়নের দিকে। প্রগতির দিকে। অর্থ আর লালসায় আক্রান্ত মানুষ পরিব্যস্ত ফ্ল্যাটকেন্দ্রিক জীবনধারায়। ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে মূল্যবোধ। ক্ষয়ে যাচ্ছে বিবেক।

অর্থ প্রাপ্তির লোভে বিলাসি মানুষ পা বাড়াচ্ছে অন্ধকারের দিকে... অন্ধকারের স্বরূপ বুঝেও সে না বোঝার ভান করছে... হারাচ্ছে আলোর পথ! বিশেষত মেয়েদের কথাই বলছি। মিডিয়ায়, বিশেষত ফ্যাশন-মডেলিং এর আলোকিত জগতে একজন নারী কিংবা কিশোরি ব্রেইন ওয়াশড্ হয়ে কতটুকু যোগ্য সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকেন? একজন নারী লোলুপ ফটোগ্রাফার কিংবা প্রডাকশন হাউসের লাল কুত্তাদের মিছিলে কতটুকুই বা সংযত থাকবেন ... ২. এটা নিয়ে গভীরভাবে ভাবার সময় চলে এসেছে। বাংলাদেশ দ্রুত ফ্যাশন কিংবা মডেলিংয়ে প্রগ্রেস করছে। এতে কারো আপত্তি নেই। বিশ্ব চাচ্ছে নারী পণ্য হোক।

ম্যাগাজিন কিংবা পত্রিকার পাতায় অর্ধবসনা কিংবা নগ্ন নারীর ছবি। যেখানে হয়তো-বা মোবাইল ফোনসেট না, নারীই মূলত পণ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর বিনিময়ে হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে টাকা। কন্ট্রাক্ট পেপারে সাইন করিয়ে নিমিষেই রোবট বানিয়ে ফেলা হচ্ছে একজন কিশোরি কিংবা উঠতি মডেলকে! সেই মহার্ঘ্য চুক্তিপত্রে অনেক সময় ব্যক্তিগত সময় কাটানোর চুক্তিও উঠে আসছে... একজন মডেল হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে হলে হায়েনার খপ্পরে পড়ে সতীত্ব হারাবে নাকি নারী? নাকি অর্ধনগ্ন পোশাক পরে নিজেকে বিকিয়ে দিবে টাকার বিনিময়ে? তার মানে এই না বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকবে। তবে পণ্য হিসেবে মিডিয়ায় কেন নারীকে উপস্থাপন করা হবে পত্র-পত্রিকায়? আমি দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে বলতে পারি, কয়েকজন ছাড়া সবাই একটা স্বপ্ন নিয়ে মডেলিং এর রূপালি (নাকি অন্ধকার!) জগতে প্রবেশ করে।

কিন্তু মিডিয়ার গ্রেট পার্সোনালিটিদের নোংরামি দেখে নিজেও নোংরা হতে বাধ্য হয়। একটা মেয়ে যে কখনো হার্ড ড্রিংকস চেখে দেখেনি, সে অন্য মডেল কিংবা মিডিয়া পিপলদের দেখাদেখি ড্রিংক করবে কিংবা সিগারেট ধরাবে তার 'হট' কিংবা 'গর্জিয়াসনেস' গ্রো করার জন্য! এছাড়াও ঢাকা শহরে নিত্য-নতুন মিডিয়া হাউস, ফ্যাশন হাউসের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। মডেলিং এর ছদ্মবেশে কুরুচিপূর্ণ পোশাক পরিয়ে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারী পরিচিত হচ্ছে 'পণ্য' হিসেবে। নিঃসন্দেহে এটা দুঃখজনক! ৩. একজন বহুল সমালোচিত ফটোগ্রাফার তার স্টুডিওতে উঠতি বয়সী কিংবা মডেল হবার আশায় মগ্ন মেয়েদের নানাভাবে জিম্মি করে নগ্ন ছবি তোলেন এবং মেয়েটার শরীর পাওয়ার স্বার্থে তার ক্যারিয়ার গড়ার দায়িত্বও নেন! ইউরো কোলার চেয়ারম্যান এ ধরণের কুকীর্তি করে বিখ্যাত (!) হয়ে গেছেন। প্রশ্ন হলো- এটা কী ধরণের অসুস্থ মানসিকতা? আমরা তাহলে কীভাবে মেয়েদের নিরাপত্তা আশা করি? হট ড্যান্স শো, ডিজে পার্টি, ফ্যাশন, ইয়াবা-আইস পিল তো আধুনিকতার নাম দিয়েই চলে এসেছে! কিন্তু দুর্ঘটনা কিংবা মূল্যবোধের অবক্ষয় কি তাতে কমে গেছে? মোটেও না।

বরং বেড়েছে। সৌদি আরবে বোরকা পরে মেয়েরা ফ্যাশন শো করে। সেখানেও নারীত্বের অবমাননাই করা হয় বৈকি! মেয়েরা মিডিয়ায় ঢুকবে... নায়িকা হবে... একজন মডেল হবে... কিন্তু মিডিয়ায় মেয়েদের এভাবে ব্যবহার করে, ক্যারিয়ার গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার নগ্ন ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইল করাটা কবে দূর হবে? ৪. সাহিত্য যদি জাতির দর্পণ হয়ে থাকে তাহলে মিডিয়াও প্রতিনিধিত্ব করে একটি দেশের, একটি সভ্য জাতির। ক্রমশ ওয়েস্টার্নাইজড্ হতে থাকা বাংলাদেশ, রাজধানী ঢাকার মিশ্র সংস্কৃতি জেঁকে বসেছে তরুণ প্রজন্মকে। ফ্যাশন-মডেলিং কিংবা এডফার্মগুলোকে সঠিক ভাবে পরিচালিত করা দরকার।

প্রয়োজনে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ এই বিষয়টার সরকারের নেগলেজেন্সি ভালোই আছে। তাই হাবিজাবি ফটোগ্রাফার কিংবা ফ্যাশন হাউসের মালিকরা ব্যবসা করে খাচ্ছে! প্রয়োজনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকেও সতর্ক থাকতে হবে... ৫. এক ধরণের অসুস্থ মানসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠছি আমরা। রুম ডেট, ফোন সেক্স, থ্রি-এক্স, ড্রাগস... ইয়াবা! আর কত অবক্ষয়ের দিকে... পাশ্চাত্যের নোংরামির দিকে ঝুঁকবে এই প্রজন্ম? এই প্রশ্নের উত্তর কে দিবে?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।