আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাবলিক-প্রাইভেট ঝগড়া

salehin.arshady@gmail.com

সব চেয়ে বেশী যেই জিনিস টা মজা লাগছে সেটা হল এই তথাকথিত “ভ্যাট” বেপার টা নিয়ে আমরা ছাত্র রাই ২ভাগ হয়ে গেছি। পুরা দেশের রাজনৈতিক অবস্থার মত। পাবলিক- প্রাইভেট তো পরের কথা। আগে তো আমরা ছাত্র। এখন কোন ছাত্রের উপর যদি কোন ধরনের অন্যায় হয় তাহলে আমার সীমিত বুদ্ধি বলে তাকে সাপোর্ট করতেই হবে।

তখন আমি দেখব না সে পাবলিক না প্রাইভেট। লজিক এই ক্ষেত্রে আবেগের পরে আসবে। এতদিন জানতাম এটাই ছাত্রের বৈশিষ্ট্য - এই ভুলটা ভাংগানোর জন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ আমার এই নিয়া দুইটা কথা আছে। কাল থেকে অনেকের লেখা পড়লাম। একেক জন একেক এঙ্গেলে লিখেছেন।

কেউ ভ্যাট এর পক্ষে, কেউবা বিপক্ষে। তাদের লেখা পড়ে যা বুঝলাম (ভুল ও বুঝতে পারি, মাথায় আমার গ্রে মেটার এর পরিমান এল্যার্মিংলি কম)- যারা ভ্যাট এর পক্ষে লিখেছেন তাদের ভ্যাটের বেপারে আসলে কোনই মাথা ব্যথা নেই। তাদের মূল লক্ষ আর উদ্দেশ্য হইল প্রাইভেট দের ছোট করা। তারা যে মেধার দিক দিয়ে কতটা নিম্ন মানের সেটাই আসলে তুলে ধরার চেষ্টা। সরকারের লাভ বা লোকসান নিয়া এরা যে খুব ভাবতেসে তা না।

এই বিষয়ের ঘাড়ে উপর পঁচানির বন্দুক রাইখা চামের উপর একটু পচাঁইয়া নিতাসে। প্রাইভেটের উপর পাবলিকের পোলাপানদের কি ক্ষোভ থাকতে পারে এটাই বুঝতে পারলাম না। অপরদিকে যাদের ভ্যাট দিতে হচ্ছে তারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন এই বিষয়ে জনমত গড়ে তুলতে। তর্ক-বিতর্কে তারা ও সমান ভাবে পাল্লা দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু পাবলিকের কাছে তারা পেরে উঠছেন না, কারন পাবলিকের হাতে আছে কয়েকটি মোক্ষম হাতিয়ার ।

• বাপের টাকা আছে বলেই যোগ্যতা না থাকা সত্বেও তারা উচ্চ শিক্ষা নিচ্ছে • লেখাপড়া না করেই টাকা দিয়ে তারা একটি সার্টিফিকেট পাচ্ছে • প্রাইভেটে ভর্তি হইলেই পাশ-এখানে কেউ ফেল করে না • তারা মুরগীর বাচ্চা-সব কিছুতে ভয় পায় (এখানে হয়ত এটাই বুঝানো হচ্ছে। আর একটু গভীরে গেলে বলা যায় তারা মারপিট করতে পারে না। কথায় কথায় ধর্মঘট করতে পারে না। শিক্ষকদের জিম্মি করে রাখতে পারে না...ইত্যাদি। আমি বুঝতে ভুল ও করতে পারি ) এইসব কথা উঠলেই তারা লাযাওয়াব হয়ে যান।

কারন এই অভিযোগ গুলো প্রায় অনেক ক্ষেত্রেই সত্যি। এটা তারা ও জানেন। তাই তর্কে পেরে উঠতে পারছেন না। আমি এই "ভ্যাট ক্যাচালে " আর গেলাম না। অনেক পোষ্ট হয়ে গেছে।

তর্ক-বিতর্ক করার অনেক জায়গা আছে। আমি নিজেও বেশ আগ্রহ নিয়ে ক্যাচাল গুলো পর্যবেক্ষন করে যাচ্ছি। আমার মাথায় কয়েকটা জিনিস কিছুতেই ঢুকছে না- যেমন এই কমেন্ট টা- প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির সব পোলাপান আবাল.... ১০ লাখ টাকা দিতে পারো তখন আন্দোলন কর না যেই সরকার কিছু চাইবো জনগণের জন্য তখনই আন্দোলন........................ আরে ব্যাটারা .... জোর থাকলে আন্দোলন কইরা সব প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিরে একই বেতনের আওতায় আন্‌। তা তো পারবি না.....। আর ভ্যাট তো দেয়ার কথা মালিক পক্ষের , তোদের না।

এইটা নিয়া আন্দোলন করস্‌ না ক্যান। খানা খদ্দর থেইকা উইঠা আইসা বাপের টাকার জোরে সার্টিফিকেট নিতাসস্‌ আবার মুখে বড় বড় কথা। গলিতে গলিতে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি না হইলে তো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়া লাগতো। আল্লাহর কাছে হাজার শুকর কর যে এমন আবাল একটা দেশে জন্মাইসোস যেখানে সরকারকে টাকা দিলেই ইউনিভার্সিটি খোলা যায়। নইলে যে কই যাইতি তোরা ?!!! • জোর থাকলে আন্দোলন কইরা সব প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিরে একই বেতনের আওতায় আন্‌।

তা তো পারবি না..... এইটা খুবই ভালো একটা কথা। এমন টা করা গেলে খুবই ভালো হয়। কিন্তু কথা হইল, এই আন্দোলন এর বেপার টা কি শুধুই প্রাইভেটের পোলাপান করব? মানলাম এইটা পাবলিকে পড়া কোন পোলাপানের মাথা ব্যথা না। কিন্তু যখন ভালো একটা কাজের জন্য প্রাইভেটের পোলা মাইয়া রা রাস্তায় নামব তখন কি আমরা যারা বিশিষ্ট পাবলিক আছি তারা খাড়ায়া তামাশা দেখুম?? • খানা খদ্দর থেইকা উইঠা আইসা বাপের টাকার জোরে সার্টিফিকেট নিতাসস্‌ আবার মুখে বড় বড় কথা। এইখানে কথা হইল বাপের টাকা থাকা টা পাপ কিনা? এখন পোলাপানরা আগের তুলনায় অনেক ভালো রেজাল্ট করে।

স্কুল থেকে কলেজে উঠার সময়ে অনেক পোলাপান ঝরে যায়। কারন কলেজে সিটের অভাব। কলেজ থেকে ভালো রেজাল্ট করে অনেকেই উচ্চ শিক্ষা নিতে পারে না এই সিটের অভাবে। পাবলিক পরীক্ষায় যতজন আজকাল A+ পায় ঠিক ততগুলো কি সিট আছে আমাদের পাবলিকে? মেডিকেল-ইঞ্জিনিয়ারিং-ঢাবি-রাবি-চবি...-কুয়েট-ঢুয়েট-চুয়েট সব কিছু ধরে সিট মোট কয়টা হবে? ধরে নেই ৩০হাজার। এটাই আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।

দেশের মেধাবী কি মাত্র ৩০ হাজার? এর বাইরে আর কেউ নেই?? ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করতে পারা না পারা টাই কি মেধাবী হওয়ার একমাত্র ডায়গ্নোসিস? • আল্লাহর কাছে হাজার শুকর কর যে এমন আবাল একটা দেশে জন্মাইসোস যেখানে সরকারকে টাকা দিলেই ইউনিভার্সিটি খোলা যায়। নইলে যে কই যাইতি তোরা ৩০ হাজারের পর বাকী যেই ২-৩লাখ ছাত্র-ছাত্রী আছে তাদের কথা এখানে বলা হয়েছে। যারা প্রতি বছর HSC পাশ করে জীবনের একটি বড় ভুল করে ফেলে। অফ চান্সে রেজাল্ট ভালো হয়ে গেলে তো আর কথাই নাই। বাপ-মার বুক গর্বে ফুলে উঠে।

তারা নতুন আশায় বুক বাধে...ঐ ২-৩লাখ পোলাপান ও নতুন আর নিষিদ্ধ এক স্বপ্ন দেখা শুরু করে। আসলেই তাদের ভাগ্য ভালোই বলতে হবে। আল্লাহ তাদের বাপের পকেটে টাকা দিয়ে এই আবাল দেশে পাঠাইসেন। এইসব কথা চিন্তা করলে কয়েক টা বিষয় মাথায় আসে- আমরা নিজেদের মধ্যে কথা কাটাকাটি, পালটা পালটি পোষ্টবাজি করছি কেনো? ঝগড়া টা যদি “শিক্ষা ক্ষেত্রে ভ্যাট” নৈতিক না অনৈতিক এই বিষয়েই সীমাবদ্ধ থাকত তাহলে আর আমার এই পোষ্ট দেয়ার কোন প্রোয়োজনই পরত না। প্রাইভেটে যেসব অনিয়ম চলছে এর জন্য আসলে দায়ী কে? এসব জায়গায় ভর্তি হওয়া ছাত্র-ছাত্রী? তাদের অভিভাবক?? সেই সব ইউনি?? নাকি সরকার?? সরকারী অফিসে যখন কোন কাজ করতে যাই তখন দায়িত্ববান অফিসার যেই ঘুষ টা খান সেটার জন্য দায়ী কে? যে ঘুষ নিল?? যে ঘুষ দিয়ে কাজ টা শেষ করিয়ে নিল?? নাকি সরকার??.........।

যে এসব অনিয়ম দেখেও চুপ করে আছে। অনিয়ম তখনই হয় যখন সেটাকে প্রশয় দেয়া হয়। সরকার যদি আজকে কঠোর হত তাহলে কি আর এই অনিয়ম গুলো থাকত? এখন এইসব অনিয়ম গুলোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হবার দায় কি শুধুই প্রাইভেটের পোলাপানদের?? এই সব অনিয়মের ফলে কি আমাদের দেশের ক্ষতি হচ্ছে না?? আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা নষ্ট হচ্ছে না?? এর দায় কি শুধুই প্রাইভেট পড়ুয়াদের? এইসব অনিয়ম রুখতে আমরা কেনো একজোট হতে পারব না?? একসাথে কাধে কাধ মিলিয়ে আন্দোলন ক্রতে পারব না? কেউ যদি কোন অন্যায়ের বেপারে সোচ্চার হয় কেন আমরা তাকে সাপোর্ট করে তার পাশে গিয়ে দাড়াব না?? তার মেধা কম বলে কি তাকে হেয় করব? এটাই কি আমাদের শিক্ষা?? শিক্ষা আমাদের বিবেকবান করে বলে শুনেছিলাম। এটাও ভুল ছিল। এখন দেখছি শিক্ষা আমাদের চরম স্বার্থপর বানিয়ে দেয়।

মানুষ কে অযথাই ঘৃনা করতে শিখায়...হায়রে। কাউকে আঘাত করার জন্যে এই পোষ্ট টা দেই নি। আমরা একটি সামান্য ব্যাপারে একমত হতে পারছি না দেখে খুব খারাপ লাগল। এই এক ভ্যাটের ব্যাপারেই যখন নিজেদের মধ্যে এত ক্যাচাল তখন বড় বড় ইস্যু আসলে কি যে হবে আল্লাহই জানে। পরিশেষে বলতে চাই, আমরা সবাই একসাথে হয়ে যথাযত শিক্ষা নিয়ে এই দেশ থেকে সব অনাচার দূর করব- এটাই আমার আহ্বান।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।