আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এ কেমন স্বামী?

সমাজকে বদলানোর জন্য নিজেকে আগে বদলানো প্রয়োজন। আসুন আমরা সবাই বদলে যাই সত্যের আলোয়।

আমি দারোগার সঙ্গে পালাইনি। পালিয়ে গেলে তো ফিরে আসার প্রশ্নই আসে না। ইকবাল আমাকে দিয়ে দেহ ব্যবসা করাতে চেয়েছিল।

তার নেশা মদ আর তাস (জুয়া) খেলা। টাকার জন্য সে আমাকে পরপুরুষের সঙ্গে বিছানায় যেতে বলতো। রাজি হইনি। চক্রান্ত করে আমাকে মদ খাইয়ে মাতাল করার চেষ্টাও করেছে। আমি মদ খেলেও মাতাল হইনি।

ঘটনার খারাপ দিক আঁচ করতে পেরে দরজা বন্ধ করে পাশের রুমে ঘুমিয়ে পড়তাম। এসব কারণে ইকবালকে ডিভোর্স দিয়েছি। তাই আমার বিরুদ্ধে অপবাদ ছড়াচ্ছে। ইকবাল একটা বদমাইশ। দেখতে হিরোইনচির মতো।

চরম ক্ষোভ নিয়ে একনাগাড়ে কথাগুলো বললেন, নারায়ণগঞ্জের বন্দর থেকে রূপগঞ্জ থানার এক সহকারী দারোগার সঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার দায়ে অভিযুক্ত শিল্পী আক্তার ওরফে শিলা। ওদিকে শিল্পীর স্বামী ভ্যানচালক ইকবালের অভিযোগ দারোগার সঙ্গে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতেই শিল্পী তাকে ডিভোর্স দিয়েছে। সে তা মানতে নারাজ। ওদিকে পত্রিকার প্রকাশিত রিপোর্ট নিয়ে শিল্পীর পুরো পরিবার পড়েছে বেকায়দায়। সামাজিকভাবে তাদের হেনস্তা করা হচ্ছে।

অনেকে ধিক্কার দিচ্ছে। কিন্তু শিল্পী ঘটনার সত্যতা যাচাই করে সামাজিকভাবে সম্মান নিয়ে বাঁচার দাবি তুলেছেন সমাজের কাছে। গতকাল দুপুরে সরজমিন বন্দরের কবরস্থান রোডে শিল্পীর বাসায় গিয়ে দেখা যায় তিনি ঘরের আসবাবপত্র গুছিয়ে নিয়েছেন অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য। কখনও ক্ষুব্ধ হয়ে আবার কখনও কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, ১৫ বছর ধরে ইকবালের সঙ্গে সংসার করছেন তিনি। তাদের সানি (১৩) ও সামান্থা (৭) নামে দুই সন্তান রয়েছে।

সানি ৬ষ্ঠ শ্রেণী ও সামান্থা প্রথম শ্রেণীতে পড়ছে। ইকবালের এ দেশে কোন আত্মীয়স্বজন নেই। বিয়ের পর কয়েক বছর ভাড়া থাকা অবস্থায় ভাড়ার টাকা পরিশোধ করতে না পারায় ঘরের জিনিসপত্র বিক্রি করে দিয়ে বন্দরের কবরস্থান এলাকায় শিল্পীর মায়ের দিক থেকে পাওয়া বাড়িতে চলে আসে শিল্পী ও ইকবাল। ইকবালের ঘোরতর নেশা মাদক সেবন আর তাস (জুয়া) খেলা। এ নেশার কারণে ঘরের নানা জিনিসপত্র বিক্রি করে দিয়েছে সে।

সর্বশেষ ছেলের পায়ের জুতাও বিক্রি করেছে। এক সময় টাকার জন্য পাগল হয়ে ওঠে কে। শিল্পী বলেন, টাকার নেশায় ইকবাল বাসায় নানা ধরনের লোক নিয়ে আসতো। তাদের সঙ্গে তাকে বিছানায় যেতে বলতো। রাজি না হওয়ায় ফন্দি করে মদ খাইয়ে মাতাল করার চেষ্টা করতো।

কিন্তু মাতালের অভিনয় করে আমি পাশের রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম। এভাবে দিনের পর দিন চলতে থাকে। শিল্পী জানায়, গত এক বছর ধরে ইকবালের অপকর্ম চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে যায়। তখন শিল্পী তাকে বলেন, দেহ ব্যবসা করতে হলে তোর কাছে থেকে করবো কেন? অন্যত্র গিয়ে করবো। তোর ভাত খাবো না।

শিল্পী আরও জানান, তিনি একটা মেস চালাতেন। তার আয়ের টাকা দিয়েই সংসার চলতো। মাস খানেক আগে বন্দর থানায় কর্মরত থাকাকালে এএসআই রফিকুল ইসলাম জমি সংক্রান্ত একটি মামলার তদন্ত করতে শিল্পীদের পাশের বাসায় আসেন। ওই সময় ওই দারোগাকে দেখে শিল্পীর ভাল লেগে যায়। শিল্পী তার স্বামীকে নেশা ও জুয়া খেলা থেকে ফেরাতে এএসআই রফিকের সাহায্য কামনা করেন।

এরপর রফিক যে কয়েকবার মামলার তদন্তে গিয়েছেন সে কয়েকবার শিল্পীর সঙ্গে তার কথা হয়েছে। বিষয়টি শিল্পীর স্বামী ভ্যানচালক ইকবাল আঁচ করতে পেরেও কিছু বলেনি। এদিকে ৩ মাস আগে এএসআই রফিক বদলি হয়ে রূপগঞ্জ থানায় যোগ দেন। এদিকে ১৪ই জুলাই আদালতের মাধ্যমে ইকবালকে ডিভোর্স দেন শিল্পী। ১৫ই জুলাই চলে যান টাঙ্গাইলে তার পিতার কাছে।

সেখানে তার পিতা দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে থাকেন। ১৭ই জুলাই শিল্পী যান ঢাকার কুড়িল বিশ্বরোডে তার মায়ের বাসায়। ১৮ই জুলাই নারায়ণগঞ্জের বন্দরে চলে আসেন। এরপর থেকে বাসায়ই থাকছেন তিনি। ওদিকে ইকবালের অভিযোগ, এএসআই রফিকের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর থেকে শিল্পী তাকে পাত্তা দেয় না।

২রা জুলাই শিল্পীর ভাইয়ের বিয়ে হয়। বিয়ের সকল কেনাকাটার সময় শিল্পীর সঙ্গে দারোগা রফিক ছিল। তারা বিভিন্ন মার্কেটে ঘুরেছে। বিয়ের পর ১০ই জুলাই শিল্পী তার ভাইয়ের স্ত্রীকে নিয়ে কুড়িলে তার মায়ের বাসায় যায়। কিন্তু সন্দেহ হওয়ায় ইকবাল ওই দিন কুড়িল গিয়ে দেখে শিল্পী বাসায় নেই।

বিকালে ইকবাল দেখতে পায় দারোগা রফিকের মোটরসাইকেলের পেছনে বসে শিল্পী আসছে। তখন শিল্পীকে নামিয়ে দিয়ে দারোগা দ্রুত চলে যায়। এ দৃশ্য দেখার পর শিল্পী তার ওপর চড়াও হয় বলে ইকবাল জানায়। এক পর্যায়ে তারা বন্দরের বাসায় চলে আসে। পরে ইকবালের অভিযোগে পঞ্চায়েতে বিচার বসে।

শিল্পী জানান, বিচারে ইকবাল কোন প্রমাণ দিতে না পারায় তাকে বেদম পিটুনি দেন বিচারকরা। তবে ইকবালের অভিযোগ, দারোগা রফিকের সঙ্গে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে শিল্পী তাকে ডিভোর্স দিয়েছে। তবে ডিভোর্সের কাগজ সে গ্রহণ করেনি। ইকবাল আরও জানায়, ১৯শে জুলাই দারোগা রফিকের সঙ্গে শিল্পী পালায়। পরে প্রশাসনের চাপে দারোগা রফিক রাত ৩টার দিকে শিল্পীকে ঢাকার কুড়িলে তার মায়ের বাসায় পৌঁছে দেয়।

শিল্পী জোর দিয়ে বলেন- তিনি ১৯শে জুলাই বাসায় ছিলেন। পালাননি। যদি পালাতেন তাহলে ফেরার প্রশ্নই আসে না। এক প্রশ্নের জবাবে শিল্পী জানায়, তাকে দিয়ে ইকবাল দেহ ব্যবসা করাতে চেয়েছিল। তাই ইকবালকে ডিভোর্স দিয়েছেন।

এর পেছনে অন্য কোন কারণ নেই। শিল্পীর এক প্রতিবেশী আসলাম-ও জোর দিয়ে বলেন, শিল্পী ১৯শে জুলাই বাসায়ই ছিল। শিল্পী আরও জানান, ইকবালের কারণে তার দুই ছেলেমেয়ের লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তারা লজ্জায় স্কুলে যেতে পারছে না। ইকবাল নানা অপবাদ দিয়ে পত্রিকায় রিপোর্ট করাচ্ছে।

শিল্পী বলেন, তার দুই সন্তানকে পিতার পরিচয় দিয়ে কেউ যদি তাকে বিয়ে করতে চায় তাহলে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করবেন। কিন্তু ইকবালের সঙ্গে আর না। এদিকে এএসআই রফিকুল ইসলাম গত ১৯শে জুলাই থেকে ৫ দিনের ছুটি শেষ করে কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেন, বন্দরে কর্তব্যরত থাকা অবস্থায় একটি মামলা তদন্ত করতে গিয়ে শিল্পী নামে ওই মহিলার সঙ্গে পরিচয় হয়। শিল্পী তখন তাকে বলেন, তার স্বামী মাদকাসক্ত।

নিয়মিত জুয়া খেলে। দুই সন্তান নিয়ে তিনি নানা সমস্যায় আছেন। আমি যেন তার স্বামী ইকবালকে একটু শাসিয়ে দেই। এ পর্যন্তই। এর বাইরে আর কোন কথা হয়নি।

সুত্রঃ মানবজমিন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.