আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিকার-৩



আশফাক সাহেব একটি অফিসে বড় কর্মকর্তা কিন্তু আচার আচরণে তা বোঝার উপায় নেই। তার দু'টি মেয়ে পাশাপাশি দু'টি স্কুলে পড়ে। স্কুলগুলো তার অফিসের পথে পড়ে বলে তিনি কখনো কখনো তার মেয়েদেরকে স্কুলে পৌছে দেয়ার কাজটি করেন। তার স্ত্রীও চাকুরীজীবী তাই সাধারণত এই আনা-নেয়ার কাজটি করেন তার শ্বশুর। কি কারনে যেন গত কিছুদিন মেয়েদের স্কুলে পৌছে দেয়ার কাজটি আশফাক সাহেবের ঘাড়ে চেপেছে।

এনিয়ে আজ তৃতীয় দিনের মতো তিনি মেয়েদের স্কুলে নিচ্ছেন। প্রথমে বড়মেয়েকে নামালেন স্কুলে। তারপর ছোটমেয়েকে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এলেন তার স্কুলে। এখানে মেয়েকে স্কুলের গেটের ভিতর ঢুকিয়ে দিয়ে তিনি একটা রিক্সা খুঁজলেন। পেলেনও একটা।

জিজ্ঞেস করলেন, যাবে শেওড়াপাড়া? রিক্সাওয়ালা বললো- স্যার আমি ভাড়া জানিনা, আপনি ন্যায্য যা হয় দিয়েন। একথায় আশফাক সাহেব ভুললেন না। তিনি বললেন, এখান থেকে ১৫ টাকায় আমি যাই। তুমি যেতে চাও? রিক্সাওয়ালা তাতেই রাজি। যাইহোক, আশফাক সাহেবের নির্দেশনা অনুযায়ী রিক্সা এসে হাজির হলো তার অফিসের সামনে।

রিক্সা থেকে নেমে আশফাক সাহেব ভাড়া দিলেন। রিক্সাওয়ালা ভাড়া নিয়ে বিনীতভাবে বললো, স্যার একটা কথা বলতাম। আশফাক সাহেব ভদ্রতা করে বললেন, বলো। রিক্সাওয়ালা তার কোমর থেকে একটা কাগজ বার করে নিচুস্বরে বললো, স্যার, আমি আগে যোগালীর কাজ করতাম। কিছুদিন আগে আমি গুলশানে এক বিদেশীর বাসায় কাজ করলাম।

উনি আমাকে এই টাকাটা দিলেন বকশীশ হিসেবে। কিন্তু বিদেশী টাকা আমি কি করি তাই আপনি যদি এটা রাখেন আর আমারে আপনার যা মনে হয় দেন তাইলে ভালো হয়। আশফাক সাহেব সরল মানুষ। তিনি টাকাটা হাতে নিয়ে দেখলেন একটা ১০০ সৌদি রিয়ালের নোট যার বাজার মূল্য প্রায় ১৭০০/১৮০০ টাকা। তিনি বললেন, নারে ভাই আমি এটা তোমাকে ভাঙ্গিয়ে দিতে পারবোনা।

লোকটা খুবই কাঁচুমাচু হয়ে বললো- স্যার আমি এই টাকা দিয়ে কি করবো, আপনি কিছু একটা সাহায্য করেন। আশফাক সাহেবের মনে বড়ই দরদ। তিনি বললেন, ঠিকাছে, তুমি কাল এসো এখানে, আমি ভাঙিয়ে রাখবো। রিক্সাওয়ালা তাতেই বড় খুশি। বিকেলে বাসায় ফেরার পথে আশফাক সাহেব মানিচেঞ্জারের কাছ থেকে টাকাটা ভাঙিয়ে নিলেন।

তারপরদিন তিনি অফিসে আসলেন । তার কিছুক্ষণ পরে রিক্সাওয়ালাও এলো। তিনি ১৮০০ টাকা দিয়ে বললেন, এই নাও তোমার টাকা। লোকটা তার পায়ে পড়ে গেলো- ও স্যারগো, আপনি আমারে এতগুলো টাকা দিলেন। আপনার তো খরচ হয়েছে আপনিও কিছু রাখেন।

আশফাক সাহেবের দয়ার শরীর। তিনি হেসে বললেন, সমস্যা নেই, তুমি যাও এবার। কিন্তু লোকটা যায়না। সে আবারও আশফাক সাহেবের পা জড়িয়ে ধরে। বলে- স্যার আপনারে একটা কথা কই।

আশফাক সাহেব অবাক, আর কি কথা থাকতে পারে। লোকটা তখন পা ছেড়ে বলে, স্যার আমার কাছে এরকম আরো ৯৮০টা নোট আছে। আপনি ভাঙায়ে দেন। আপনি আপনার পছন্দমতো অংশ রেখে আমাকে কিছুটা দিলেও চলবে। আশফাক সাহেবের চক্ষু চড়কগাছে।

এতো প্রায় ১৮/২০ লক্ষ টাকার ব্যাপার। আশফাক সাহেবের মন বললো, তুমি ফাঁদে পড়তে যাচ্ছো। এখুনি ভাগাও এব্যাটাকে। আর তিনি তাই করলেন। দারোয়ান ডেকে বললেন, এব্যাটাকে কান ধরে বের করে দাও।

এরপর আর কোনদিন এ এলাকায় দেখলে সোজা পুলিশে দিয়ে দিবে। এরপর অনেকবার আশফাক সাহেব তার মেয়েদের নিয়ে স্কুলে গেছেন। এ লোকটাকে আর কখনো তার চোখে পড়েনি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।