আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৮ কারণে উত্তপ্ত জাবি

আধারে দেখা বৃত্তান্ত আলোয় প্রকাশ

যৌন নিপীড়ন, সাধারণ ছাত্রদের অন্যায় বহিষ্কার, গ্রেফতার-নির্যাতন, সহাবস্থান বঞ্চিত ছাত্রদল, ছাত্রলীগের উপর প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টা, দলীয় বিবেচনায় শিক নিয়োগ, বিদ্যুৎ সমস্যা, নির্বিচারে গাছকাটা, এম. ফিল ও পি. এইচ. ডির ভর্তি ফি বৃদ্ধি ও প্রশাসনিক সেচ্ছাচারিতা - এ ৮ কারণে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে দানা বাঁধছে কঠোর আন্দোলন। উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ক্যম্পাস। জাতীয়তাবাদী শিক ফোরাম, নিপীড়ণের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগরের ব্যানারে প্রগতিশীল ছাত্র ও শিকবৃন্দ, সাংস্কৃতিক জোট, ছাত্রলীগ ও সাধারণ শিার্থীরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে এ আন্দোলন শুরু করতে যাচ্ছে। ২ আগষ্টে ধর্ষক প্রতিরোধ দিবসের মাধ্যমে আরো তীব্র হবে আন্দোলন। জানাগেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিকের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন নিপীড়নের অভিযোগের বিচার দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন শিক ও শিার্থীরা।

কিন্তু স¤প্রতি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক আব্দুল্লাহেল কাফীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রমানিত হওয়ার পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি প্রশাসন। বিশ^বিদ্যালয়ের চাকুরী বিধিতে যৌন নিপীড়নের অভিযোগের প্রমান পেলে বরখাস্ত করার কথা থাকলেও কাফীর ব্যপারে কোন সিদ্ধান্ত না নিয়ে অভিযোগ হাইকোর্টে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি হাইকোর্টে পঠিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা হানি করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া অভিযুক্ত অপর শিক নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের সানোয়ার হোসেন সানিকে অপরাধের তুলনায় লঘু শাস্তি দেয়া হয়েছে এবং বেতনসহ দু বছরের ছুটি দিয়ে তাকে বরং পুরস্কৃত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন শিকবৃন্দ। আর এ কারনেই জোরদার হচ্ছে নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলন।

এর অংশ হিসাবে গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয় প্রগতিশীল ও জাতীয়তাবাদী শিক- শিার্থীদের সংহতি সমাবেশ। এতে সাধারণ শিার্থীদের অংশগ্রহণও ছিল উল্লেখযোগ্য। এ সমাবেশে আন্দোলনকারীরা রাজপথে আন্দোলনের ডাক দেন। আগামী ১ আগষ্ট ঐক্যবদ্ধভাবে মানববন্ধনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ২ থেকে ৪ আগষ্ট পর্যন্ত ঘোষণা করা হয়েছে ৩ দিন ব্যপী ধর্ষক প্রতিরোধ দিবসের অনুষ্ঠান মালা।

এব্যাপারে অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, ‘নিপীড়নের সঠিক বিচার না করে উপাচার্য প্রতিশ্র“তি ভঙ্গ করেছেন। তাই আমরা আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছি। , উল্লেখ্য ১৯৯৮ সালের ২ আগষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষক প্রতিরোধের গণআন্দোলনের পর থেকে প্রতিবছর এ দিনটি পালিত হয়ে আসছে। এবছর যৌন হয়রানির ব্যাপারে প্রশাসনের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার কারণে ২ আগষ্টের আন্দোলন আরো জোরদার হয়ে উঠছে। এব্যাপারে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রজিব কর্মকার বলেন,‘বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার, গ্রেফতার-নির্যাতনের মাধ্যমে সাধারণ শিার্থীদের হয়রানি বন্ধ না করলে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো।

’ এদিকে গত ৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের উপস্থিতিতেই ছাত্রলীগের দুই গ্র“পের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর আ স ম ফিরোজুল হাসান সহ অর্ধশতাধিক ছাত্রলীগকর্মী আহত হয়। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে ১৯ জনকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেয়ার পরও ২ জনকে তালিকা থেকে বাদ দিয়ে ১৭ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি বিজ্ঞপ্তি দেয়। এছাড়া সংঘর্ষে জড়িত না থাকা সত্ত্বেও ছাত্র ইউনিয়নের সহ-সভাপতি ও সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মাহী মাহফুজকে বহিষ্কার করায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিরপেতা নিয়ে ক্যাম্পাসের সর্বমহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অপরদিকে সংঘর্ষের দিন রাতে পুলিশ হলে অভিযান চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তায় ১৫ জনকে গ্রেফতার করে। এরমধ্যে সাধারণ শিার্থী ইতিহাস বিভাগের হাসান বঙ্গ, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের আলমগীর ও নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের রিয়েলকেও গ্রেফতার করা হয় এবং তাদেরকে ছাত্রলীগ কর্মীদের সাথে দুইদিনের পুলিশী রিমান্ডে নেওয়া হয়।

এখানেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ক্যাম্পাসের সর্বমহলে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। এ সাধারণ শিার্থীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার ও গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগ এবং নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ একাধিকবার ক্যাম্পাসে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে। অবিলম্বে ওই ছাত্রদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার ও গ্রেফতারকৃত ছাত্রদের মুক্তি না দিলে কঠোর আন্দোলনের ঘোষনা দিয়েছেন ওই বিভাগের শিক ও শিার্থীরা। অপরদিকে সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মাহী মাহফুজকে বহিষ্কার করায় বামপন্থীসহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো অব্যাহত আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। অবিলম্বে অন্যায় বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা না হলে ওই সংগঠনগুলো আন্দোলন অব্যহত রাখবে বলে জানিয়েছেন সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন রিমন।

এতে ছাত্রলীগের সিনিয়র নেতারা কোন ভুমিকা না রাখলেও জুনিয়র কর্মীরা সাধারণ ছাত্রদের সাথে আন্দোলনে জড়ো হচ্ছে। বিগত বিভিন্ন কর্মসূচীতে বিভিন্ন হলের জুনিয়র কর্মীদের উপস্তিত থাকতে দেখা গেছে। এদিকে ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নিশ্চিত করার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল প্রশাসনকে সাতদিনের সময় বেধে দিয়েছিল যা ইতোপূর্বে শেষ হয়েছে। এব্যাপারে ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক জিয়াউল হক জিয়া বলেন আমরা দ্রুত কর্মসূচী দেব এবং গত এক সপ্তাহে আমাদের সহাবস্থানের জন্য কোন ব্যাবস্থা না নেয়ায় পরবর্তীতে যে কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্য প্রশাসন দায়ী থাকবে। এদিকে প্রশাসন সিন্ডিকেট সভায় বিরোধী দলের সদস্যদেরকে মত প্রকাশের সুযোগ না দিয়ে সেচ্ছাচারী ভাবে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়েও সমালোচিত হচ্ছে।

এব্যাপারে গত দুটি সিন্ডিকেট সভায় নিয়ম ভঙ্গ করা হয়েছে বলে লিখিত অভিযোগ করেছেন জাতীয়তাবাদী ফোরামের সিন্ডিকেট সদস্য এ কে এম রাশিদুল আলম। একারনে জাতীয়তাবাদী শিক ফোরামের শিকরাও আন্দোলন মুখী হয়ে পড়ছেন। স¤প্রতি জাতীয়তাবাদী শিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সহ প্রায় ২০ জন নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগরের সমাবেশে অংশ নিয়ে বক্তব্য রাখেন। এসময় তারা সকল আন্দোলনে অংশগ্রহনের ঘোষণা দেন। এছাড়া সরকার ও রাজনীতি বিভাগের মানববন্ধনেও জাতীয়তাবাদি শিকদের অংশগ্রহণ ছিল।

এর আগে দলীয়করণ, বিদ্যুত অব্যাবস্থাপনা ও ক্যাম্পাসের গাছকাটার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা। এদিকে ক্যাম্পাসে এম ফিল ও পি এইচ ডি কোর্সে ভর্তিচ্ছু শিার্থীরাও জানিয়েছেন ফি ও বেতন বৃদ্ধির অভিযোগ। জানাগেছে, প্রথম দিকে এমফিলে ভর্তি ফি ৮হাজার টাকা হলেও বর্তমানে তা বাড়িয়ে ২২ হাজার ১শত টাকা এবং মাসিক বেতন ১০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা করা হয়েছে। অপরদিকে, পিএইচডি কোর্সে ভর্তি ফি ১০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার ছয়শত এবং বেতন ১৫ টাকা থেকে ৭৫০ টাকা করা হয়েছে। এসব ব্যাপারে অধ্যাপক নাসিম আক্তার হেসাইন বলেন, এসব সমস্য সমাধান করার দায়িত্ব উপাচার্যের।

যদি তিনি দায়িত্ব পালন করতে না পারেন তাহলে গদি ছেড়ে দিন। ’

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।