আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অপারেশন_রন্ধন (এই খাদ্যের নাম আমি জানি না!)

চুপ!
রন্ধন কর্মটি আমার বরাবরই বড়ই অপছন্দের। তাই মায়ের হেসেঁলে কখনো প্রবেশ করা হয় নি অথবা দূরদর্শনে পাকের ঘর জাতীয় অনুষ্ঠান দেখার আগ্রহও কম বোধ করেছি। তবে হ্যাঁ, রান্না-বান্না আমার যতটাই অনাগ্রহের, ঠিক ততটা আগ্রহ আমার রন্ধনকৃত বস্তুটির স্বাদ গ্রহণে। ভুল করে যদি কখনো রান্নার চ্যানেলে চলে যাই, যখন দেখি ঢঙ্গিলা উপস্থাপিকাটা সেই সুস্বাদু খাদ্যদ্রব্যের এক চিমটি মুখে দিয়ে বলছে- ইয়াম্মি, মেজাজটা গরম হয়ে যায় যাই হোক, বাইক্যা প্যাচাঁল বাদ- আসল কথায় আসি। এ হেন ভোজনবিলাসী আমাকে প্রায়শই খাদ্যরস থেকে বঞ্চিত থাকতে হয় ।

কারণ ঐ রস আস্বাদন করতে হলে তা আমাকে স্বহস্তে প্রস্তুত করতে হয় আর কখনো রন্ধন কর্মটি স্বচক্ষে অবলোকন না করায় ও এই বিদ্যা অর্জনে চরম অনাগ্রহের কারণে স্বপাক খানাটা যা হয়! ইয়াক!ইয়াক! মা কখনো রান্নার কথা বললে (কমই বলতেন, আমাকে তো চেনেন) দাম্ভিকতার সাথে বলতাম- রান্না হইল এক প্রকারের সরল রসায়ন। চাউলের সহিত স্বল্প পরিমাণ ডাউল মিশাইলেই তো রন্ধন হইয়া যায়। রসায়ন শাস্ত্র জানা থাকলে তাহা শিখিতে হয় না, এমনিতেই পারা যায়। আর বলার পরই সুন্দর করে একখানা বিস্তৃত হাসি দিতাম, যেন আমার সোনা মা রাগ করে আমায় গালমন্দ করতে না পারেন। আর আমার বাবা আমার সেই উক্তিতে প্রশ্রয়ের হেসে হাসি আজকের এই দুরবস্থার জন্য দায়ী হলেন।

শানে নুযুলটা একটু বেশীই লম্বা হয়ে গেল- সে যাকগে রন্ধনের প্রতি দুর্ভুক্তির কারণে গতকাল রাতে উপোস দিলেও সকালে আর সইতে না পেরে রান্না করার অমোঘ সিদ্ধান্তটি নিয়েই ফেললাম। ফ্রিজ খুলে দেখি আছে কেবল কয়েকটা শুকনো বরবটি আর আধখান কুমড়ো। এই রসদে অতি অল্পসময়ে কী বিক্রিয়া ঘটানো যায় তাই ভাবতে ভাবতে বিক্রিয়কগুলো কাটলাম টুকরো টুকরো করে। সাথে একটা পেয়াঁজ আর ৪টা মরিচ কুঁচি করলাম। কুমড়োতে যতই ভিটামিন থাকুক না কেন শর্করা না হলে পাকস্থলী বেটা একটু কান্নাকাটি করবে ভাবতেই ভাবতেই নজর গেল ম্যাগি নুডলসের প্যাকেটটার দিকে।

খুশী হয়ে সসপ্যানে তৈল ঢেলে তাতে পেঁয়াজ- কাঁচামরিচ দিয়ে হাতের কাছে যা যা গুড়াঁ মশলার কৌটা ছিল, একটু করে দিয়ে ফেললাম কিছুক্ষন ঢেকে রেখে ম্যাগির প্যাকেটটা খালি করে ফেললাম সস্প্যানের ভেতর (মাবুদ জানে কী ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে!!) নাড়াচাড়া করতে করতে ভাবছিলাম সুষম খাদ্য বানাতে বাকী থাকে কেবল আমিষ (আমি আবার খুব স্বাস্থ্য সচেতন , সারাদিনের পথ্য- আমিষ না থাকলে কেমন করে হয়!)। ফ্রিজে ডিম পেয়ে গেলাম, এবার ওই কুমড়ো আর নুডলসের মাঝে একখান আস্ত ডিম ভেঙ্গে ছেড়ে দিলাম। কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করার পর আমার সুষম খাদ্য প্রস্তুত হয়ে গেল (কেউ যেন আমাকে এই বস্তুখানির নাম জিজ্ঞেস করবেন না, অনেক ভেবেও নাম বের করতে পারি নি একটা ) ইয়াম্!ইয়াম্! বিশ্বাস করুন, খেতে খারাপ হয় নি (শুধু লবণ একটু কম হয়েছে , তবে আমি লবণ কম খাই ) আহ!! শান্তি...এই খানাদানার জন্যেই যে দুনিয়ার আর সবকিছু তা বুঝতে পারলাম। যেদিন আমার বাইরে খেতে যেতে আলসেমী লাগে সেদিনই আমার হস্ত থেকে এরকম সৃজনশীলতায় পরিপূর্ন খাদ্যদ্রব্যের জন্মলাভ হয়। আমার বাসার মানুষজন ইয়াক! থু! করলেও আমার নিকট কিন্তু তা অমৃততূল্য।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ কেহই যেন এই রেসিপি ট্রাই করিবেন না! (আমার মাইর খাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে )। অতি আগ্রহ হইলে অবশ্যই প্রলয়ংকরী ক্ষুধার সময় খাইবেন, কথায় নাকি আছে hunger is the best sauce!
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।