আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” ঘোষণার শর্ত -৩

O Allah! Please lead me from unreal to The Reality!!

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম আস সালামু আলাইকুম! [পূর্বের আলোচনার ধারাবাহিকতায়, যেগুলো এখানে রয়েছে: www.somewhereinblog.net/blog/peace55/29201656 www.somewhereinblog.net/blog/peace55/29202268 www.somewhereinblog.net/blog/peace55/29203093] ৫ম শর্ত: শাহাদার ৫ম শর্ত হচ্ছে সততা বা বিশ্বস্ততা - যা এখানে মুনাফিকী ও অসৎ চিত্তের বিপরীত অর্থ বহন করবে। এর অর্থ হচ্ছে, কেউ যখন “শাহাদা” উচ্চারণ করবে, তখন সে সত্যিই তা [mean করবে বা] বোঝাবে এবং তা mean করেই অন্তরের সার্বিক বিশ্বস্ততা সহকারে তা উচ্চারণ করবে [আমি একটা পশ্চিমা বইয়ে এই ব্যাপারটার একটা চমৎকার উদাহরণ সম্বন্ধে পড়েছিলাম। একজন সাদা-চামড়া পশ্চিমা অস্ত্র-ব্যবসায়ী ২০০১ সালের পট পরিবর্তনের পূর্ব পর্যায়ের আফগানিস্তানে গিয়েছিল কালোবাজারে অস্ত্র বিক্রির ব্যবস্থা করতে। হঠাৎই ওখানকার মুসলিম যোদ্ধারা তাকে ”কাফির” গুপ্তচর ভেবে মেরে ফেলবে কিনা তা নিয়ে নিজেদের মাঝে আঞ্চলিক ভাষায় আলোচনা শুরু করে - যা লোকটি তাদের ভাষা জানার সুবাদে বুঝতে পারে। সে তার প্রাণ বাঁচাতে সাথে সাথে “শাহাদা” উচ্চারণ করলে, ঐ যোদ্ধাদের মাঝে তা যাদু মন্ত্রের মত কাজ করে।

] । অর্থাৎ “শাহাদা” উচ্চারণকারী কাউকে প্রতারণা করতে বা বোকা বানাতে মিথ্যা মিথ্যা কেবল একটা “বুলি” উচ্চারণ করবে না। এ সম্বন্ধে রাসূল (সা.) বলেছেন : “এমন কেউ নেই যে, সে বিশ্বস্ততা সহকারে তার অন্তর থেকে সাক্ষ্য দিয়েছে যে, আল্লাহ্ ছাড়া উপাসনার (বা ইবাদতের) যোগ্য আর কেউ নেই – অথচ আল্লাহ্ তার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম করেন নি। ” (বুখারী) আমাদের বেশির ভাগই হয়েতো এমন সব মানুষজনের কথা জানি, যারা “শাহাদা” উচ্চারণ করে অথচ তা বিশ্বস্ততার সাথে উচ্চারণ করে না। আসলে তারা “শাহাদার” বক্তব্যে [বা statement-এ] বিশ্বাসই করে না।

তারা কেবল নিজেকে কিছু থেকে রক্ষা করতে বা কিছু লাভ করতে তা উচ্চারণ করে থাকে। এরাই হচ্ছে সত্যিকার অর্থে “মুনাফিক” যাদের কথা কুর’আনের শুরুতে আল্লাহ বলেছেন: وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَقُولُ آَمَنَّا بِاللَّهِ وَبِالْيَوْمِ الْآَخِرِ وَمَا هُمْ بِمُؤْمِنِينَ (8) يُخَادِعُونَ اللَّهَ وَالَّذِينَ آَمَنُوا وَمَا يَخْدَعُونَ إِلَّا أَنْفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُونَ (9) فِي قُلُوبِهِمْ مَرَضٌ فَزَادَهُمُ اللَّهُ مَرَضًا وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ بِمَا كَانُوا يَكْذِبُونَ “আর মানুষের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে যারা বলে ‘আমরা আল্লাহ্ ও আখেরাতে ঈমান এনেছি’, কিন্তু তারা মু’মিন না। আল্লাহ ও মু’মিনদের তারা প্রতারণা করতে চায়। অথচ তারা যে কেবল নিজেদের ছাড়া আর কাউকে প্রতারণা করছে না, এটা তারা বুঝতে পারে না। তাদের অন্তরে অসুখ রয়েছে।

অতঃপর আল্লাহ্ তাদের অসুখ বাড়িয়ে দিয়েছেন, তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি, কারণ তারা মিথ্যাবাদী। ” (সূরা বাক্বারা, ২ : ৮-১০) যারা এজন্য শাহাদা উচ্চারণ করে যে, তারা তাদের মুসলিম হওয়া থেকে লাভবান হতে চায় এবং এজন্য নয় যে, তারা সত্যি সত্যি ইসলামে বিশ্বাস করে – তাদের সেই “শাহাদা” আখেরাতে আল্লাহ্ প্রত্যাখ্যান করবেন। তাদের মিথ্যাচারের জন্য তারা কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে। ষষ্ঠ শর্ত: ষষ্ঠ শর্ত হচ্ছে, কেবল মাত্র আল্লাহর জন্য – ইখলাস সহকারে শাহাদা উচ্চারণ করা। এক্ষেত্রে তার উদ্দেশ্যের সাথে আর কোন উদ্দেশ্য মিশ্রিত থাকবে না।

এবং এখানে ইখলাসের বিশুদ্ধতা বলতে আমরা বুঝাচ্ছি শিরকের বিপরীত ব্যাপার। অর্থাৎ, কেউ কেবল আল্লাহর কথা ভেবেই মুসলিম হয় এবং মুসলিম থাকে। তাঁর ক্রোধ ও শাস্তি এড়িয়ে চলার জন্য এবং তাঁর রহমত ও পুরস্কার লাভ করার জন্য। আল্লাহ্ কুর’আনে বলেন : فَاعْبُدِ اللَّهَ مُخْلِصًا لَهُ الدِّينَ “…..দ্বীনকে তাঁর জন্য বিশুদ্ধ বানিয়ে আল্লাহর ইবাদত কর। ”(সূরা যুমার, ৩৯ : ২) وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذَلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ “তাদেরকে তো এছাড়া আর কোন হুকুম দেয়া হয়নি যে, তারা নিজেদের দ্বীনকে একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত করে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত করবে, সালাত কায়েম করবে ও যাকাত দেবে, এটিই যথার্থ সত্য ও সঠিক দ্বীন।

” (সূরা বাইয়্যেনাহ, ৯৮ : ৫) এছাড়া রাসূল(সা.) বলেছেন: “এমন কেউ যে বলে, ‘আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন ইলাহ্ নেই’ এবং যে তা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে বলে – আল্লাহ্ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দিয়েছেন। ”(মুসলিম) যেসব মুসলিম একটি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন ও বড় হয়েছেন, তাদের এই ব্যাপারটা নিয়ে বিশেষভাবে ভাবা উচিত। পিতামাতার জন্য, পরিবারের জন্য, বন্ধুদের জন্য, সম্পদের জন্য অথবা অন্য যে কোন পার্থিব লক্ষ্যের জন্য মুসলিম না হয়ে প্রত্যেকের নিজের অন্তরে এই ব্যাপারটা পরিস্কার হওয়া উচিত যে, তিনি কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য মুসলিম। তার মুসলিম হওয়ার শুরু আল্লাহর জন্য ও শেষও কেবল আল্লাহর জন্য। ফি আমানিল্লাহ্!! [চলবে ....... ইনশা'আল্লাহ্!]


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।