সজলের বাংলা ব্লগ।
এই পোস্টটা প্রথম প্রকাশ হয় আমার ব্লগস্পটের ব্লগে। এখানেও লিখলাম। সবাই যাতে পড়তে পারে। br />
আনেকে হয়তো খেয়াল করবেন বর্তমানে যারা হাইকিং এবং ক্যাম্পিং এর মত আউট ডোর স্পোর্ট গুলা করে তারা নিজেদের খাবার দাবার নিজেরাই রান্না করে।
কেউ হয়তো শুকনো কাঠ পুড়িয়ে কেউ কেউ ছোট্ট পকেট সাইজের চুলা দিয়ে। বাংলাদেশেরই অনেক হাইকার এবং ক্যাম্পার এ চুলা অনেকদিন ধরে ব্যাবহার করে আসছে। আর এ চুলাটা এখন অনেক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে এর ছোট সাইজ আর হালকা ওজনের জন্য। এটি নিজে নিজেই বানানো যায়। আজ এ পোস্ট আমি শেখানোর চেস্টা করবো কিভাবে এটা আপনি বানাতে পারবেন।
প্রথমে যা যা লাগবেbr />
১/ দুটা সোডা / কোক বা বিয়ারের খালি ক্যান।
২/ একটা সিজর বা কেচি।
৩/ একটা রঙ্গিন মার্কার।
৪/ একটা প্লায়ার্স।
৫/ কাগজ লাগানোর জন্য নোটিশ বোর্ডে ব্যাবহার করার একটা পিন।
ক্লিপ বোর্ড পিন।
৬/ সিরিজ কাগজ। লোহার জং ঝরানোরটা।
কিভাবে বানাবেনbr />
প্রথমে খালি ক্যান দুটি পানি দিয়ে ভাল করে পরিস্কার করে ফেলুন। খালি না থাকলে দ্রুত খেয়ে খালি করে ফেলুন ।
ছবি:- খালি ক্যান পরিস্কার করা হচ্ছে।
এর পর ক্যান দুটি মার্কর দিয়ে মার্ক করতে হবে ঠিক যেখানে কাটতে চান। সাধারণত ক্যানের নিচের অংশের ৩.৫ মিলিমিটার বা ১.৫ ইন্চি কাটা হয়। কিন্তু আমি ওতো মাপটাপ দিতে পারিনা বাপু। আমি করি কি একটা কস্টেপ/সাদা টেপের উপর মার্কারটা চেপে ধরে মার্কারের মাথার সাথে ক্যানটা লাগিয়ে ঘুরাই।
ফলে ক্যানের মধ্যে একটা দাগ পড়ে সমান ভাবে। এভাবে দুটা কেনেই একি ম্যাপে দাগ দেওয়া হয়।
ছবি:- ক্যানে এভাবেই দ্যাগ দিতে হবে।
ছবি:- দুটাতেই দাগ দেওয়া হয়ে গেল।
এখন দাগ বরাবর কেটে ফলতে হবে।
এ কাজটা একটু সাবধানে করতে হবে। যেন দাগ বরাবর সমান কাটা হয়। বাকা বা অসমান কাটা হলে এটি একটার সাথে অন্যটা পরে ঢুকাতে কষ্ট হবে। নষ্টও হয়ে যেতে পারে। সিজর বা ক্যাচি দিয়ে সমান ভাবে কেটে ফেলুন।
চিকন সিজর বা কেচি হলে ভাল হয়। আমি এই পোস্টে সিম্পল স্টোভটা বানাবার টিউটোরিয়াল দিচ্ছি। তাই চুলাটা একেবারে সাধারণটা। এটার ভেতরে কোন রিং বা স্পন্জ দেবনা। তাই ক্যানের একটু উপর থেকে কাটা শুরু করলাম।
যাতে কাটা সহজ হয়। যদি সিম্পলটা না বানাতাম তবে এত ওপর থেকে কাটতাম না। কারণ ওই অংশটা মাঝখানে রিং হিসাবে ব্যাবহার করতাম। নিচের ছবি দেখুন br />
ছবি:- এভাবে একটু উপর থেকে কাটলে সমান ভাবে কাটতে পারবেন।
ছবি:- এভাবে সমান করে কেটে ফেলুন।
এরপর একটা প্লায়ার্স দিয়ে যে ক্যানের কাটা অংশটাকে আপনি উপরে রাখবেন এবং ফুটো করবেন সেটাকে হালকা ভাবে নিচরে কাটার দিকটা মুচড়ে নিতে পারনে। নিচের ছবির মত। এতে অন্য কাটা অংশটায় সহজে ঢুকাতে পারবেন। একটা ক্যান অন্যটার উপর বসিয়ে একটা কাপড় দিয়ে ধরে আস্তে আস্তে করে চেপে একটাকে ওন্যটার উপর ঢুকিয়ে দিন।
ছবি:- এভাবে।
ছবি:- চেপে চেপে একটার ভেতর অন্যটা ঢুকিয়ে দেওয়া হলো।
চুলা বানাননো প্রায় শেষ। এখন পেপার পিন / ক্লিপ বোর্ড পিন দিয়ে ছিদ্র করে নিন। ছিদ্র আপনি যদি চান আস্তে আস্তে খাবার না পুড়িয়ে রান্না করতে তাহলে অল্প মাত্র ৯টা করলেই হবে। আর টপ বা ফুয়েল দেয়ার জন্য মাঝখানে ৩টা।
কিন্তু যদি চান বেশি তাপ। এবং দ্রুত রান্না। তাহলে বেশি ছিদ্র করতে পারেন। ছিদ্র করার সময় অবশ্যই একটা ছিদ্র হতে অন্য ছিদ্রটার দুরত্ব যেন সমান হয়। এটা ইম্পটেন্ট।
এজন্য আপনি চাইলে ছিদ্র করার আগে একটা মার্কার দিয়ে মার্ক করে তার পর ছিদ্র করুন।
ছবি:- ক্লিপ বোর্ড পিন।
এরপর আমি যেটা করি সেটা হলো সিরিজ কাগজ দিয়ে ঘষে ঘষে এর রং তুলে একে সিলভার কালার করে ফেলি। এটা আসোলে স্টোভটাকে সুন্দর করার স্টেপ। নিচের ছবিতে নিশ্চয় দেখতে পাচ্ছেন কিভাবে চুলাটার ফুটো করা হয়েছে ? একটা থেকে অন্যটার দুরত্ব সমান।
আর সিরিজ কাগজ দিয়ে এই সিলভার কালারটা করা না করা আপনার ইচ্ছে।
ছবি:- পুর্ণ চূলা । ঘষা মাজার পর।
এখন চুলা বানানো শেষ। এটাকে ধরাবেন কি দিয়ে ? ফুয়েল হিসাবে ব্যাবহার করতে পারেন স্প্রিট যেটা কাঠের বার্ণিসে আসবাবে ব্যাবহার করা হয়।
এছাড়া মোবাইলের মাদারবোর্ড পরিস্কার করার জন্য মেকানিক রা যে থিনার ব্যাবহার করে ওটাও ব্যাবহার করতে পারেন। ফুয়েলের ব্যাপারে বিস্তারিত নিচের নোটে লিখা হলো। তো প্রথমে স্টোভটাকে এমন স্থান রাখুন যেখানে অন্য কিছুতে আগুন ধরার চান্স নেই। তার পর পরিমান মত বা স্টোভের পুর্ণ করে ফুয়েল ( স্প্রিট / থিনার ) ভেতরে দিন। এরপর একটা কয়েন দিয়ে ছিদ্র গুলা বন্ধ করে আরেকটু ফুয়েল দিয়ে আশ পাশে একটু ছড়িয়ে দিয়ে আগুন দিন।
ধরে যাবে। প্রথম বার না হলে আবার একি স্টেপে ট্রাই করুন। নিচের ছবি গুলা দেখুন।
ছবি:- এভাবে ফুয়েল দিন।
ছবি:- কয়েন দিয়ে ফুয়েল একটু ছড়িয়ে দিন।
ছবি:- দুর থেকে আগুন দিন।
ছবি:- সরি ফুয়েল একটু বেশি ছড়িয়ে গেছে।
ছবি:- ধরে গেল আপনার গ্যাসের চুলা। যেটা পকেটে নিয়ে ঘুরতে পারবেন।
ছবি:- আধারে।
হয়ে গেছে বানানো ? এবার বলুন কিভাবে পাতিল এর উপর বসাবেন ? নিজে নিজে একটা পট স্টেন্ড এবং ওয়াইন্ড স্ক্রিন বানিয়ে ফেলুন। জংগলে বা পাহাড়ে গেলে আপনি পাথর বা ভজা কাচা গাছ ব্যাবহার করতে পারেন। (তাই বলে আবার দা দিয়ে একটা ভাল গাছ কেটে ফেলবেননা। নেচারে রান্না করতে গিয়ে নেচার নষ্ট করার মানে হয়না। ) আমি সাধারণত নিচের স্ট্যান্ডটাই ব্যাবহার করি।
ছবিটা সিতাকুন্ডের একটা ঝরনার পাশে আমার রান্না করার সময়।
ছবি:- সিতাকুন্ডে রান্না চলছে।
ইউটিউব ভিডিওটাও দেখতে পারেন । কাজ দেবেbr /> [ নোট :- ক্যান হিসাবে আপনি মাউন্টেন ডিউ ক্যান ব্যাবহার করতে পারেন। দাম প্রতিটি ১৬০ টাকা।
পাবেন স্বপ্ল , আঘোরার মত স্টোর গুলায়। দুটা যেহেতু কিনবেন একটা আমাকে খেতে দিতে পারেন। । আর দাম কমে চাইলে বিয়ার ক্যান ব্যাবহার করতে পারেন। দাম ৮০-১২০ টাকা করে।
এটা খেতে পারি লুকিয়ে লুকিয়ে । আর ফ্রি চাইলে যেখানে মানুষ বিয়ার খায় .. এই যেমন পার্ক , বিচের পাশে টোকাই গিরি করতে পারেন।
ফুয়েল:- যে কোন হার্ডওয়্যারের দোকানে গিয়ে বলবেন স্প্রিট দিতে। স্প্রিট অনেক প্রকার ২৫ টাকা থেকে শুরু করে ১৫০ টাকা পাউন্ডের ও আছে । আমি চট্রগ্রামের একটা হার্ডওয়্যার সপ থেকে কিনি ২৫ টাকা পাউন্ড করে।
এক পাউন্ডে একটা ওভার নাইট ট্রিপ চলে যায়। ২৫ টাকার স্প্রিট টাকে ওরা ক্যামিকেল স্প্রিট নামেই চেনে। কোন গন্ধ নেই পস্রাবের মত হলুদ কালারের।
টিপর্স:- বান্দরবান বা টেকনাফের দিকে বিজিবি যদি ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করে বোতলে হলুদ ওটা কি? তখন বলবেন যে এটা পশ্রাব। আশা করি আর চেক করবেনা।
]
এর আগে দুটা দ্বীপে ক্যাম্পিং নিয়ে ব্লগ লিখেছিলাম পড়ে দেখতে পারেন। ১/ সোনাদিয়া দ্বীপে ক্যাম্পিং। ২/ সেন্টমার্টিন দ্বীপে ক্যাম্পিং।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।