আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাস ও জিপিএ ৫ বেড়ছে

জীবনে যা চেয়েছি তাই পেয়েছি কোন চাওয়াই অপূর্ন নেই । বড়লোক হওয়ার খুব সখ

আট বোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষায় এবার উত্তীর্ণের হার ৭১ দশমিক ৮২ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছে ২৫ হাজার ৫১২ শিক্ষার্থী। উত্তীর্ণের হার এবং জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা গতবারের চেয়ে বেড়েছে। এবারে প্রায় সব বোর্ডেই সবচেয়ে ভালো করেছে ক্যাডেট কলেজগুলো।

দেশের আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার। একই সঙ্গে মাদ্রাসা বোর্ডের অধীন আলিম, কারিগরি বোর্ডের অধীন এইচএসসি ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা এবং ঢাকা বোর্ডের অধীন ডিপ্লোমা ইন বিজনেস স্টাডিজ (ডিআইবিএস) পরীক্ষার ফলও প্রকাশিত হয়েছে। এবার আট বোর্ডে এইচএসসিতে পাসের হার ৭১ দশমিক ৮২ শতাংশ হলেও মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ড মিলিয়ে ১০ বোর্ডে এ হার ৭৪ দশমিক ২৮ শতাংশ। গতবার এ হার ছিল ৭২ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আবার ডিআইবিএসসহ ১০ বোর্ডে এই পাসের হার হয়েছে ৭৪ দশমিক ৩১ শতাংশ।

এবার সারা দেশের ৭১৪টি প্রতিষ্ঠান থেকে শতভাগ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। অন্যদিকে ২৫টি প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো শিক্ষার্থীই পাস করেনি। আট বোর্ডের মধ্যে পাসের হার সবচেয়ে বেশি সিলেট বোর্ডে। দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণা করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এর আগে সকালে শিক্ষামন্ত্রী ও বিভিন্ন বোর্ডের চেয়ারম্যানরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ফলাফলের কপি হস্তান্তর করেন।

তবে দুপুরের আগে থেকেই অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফল প্রকাশ হতে থাকে। সেই সঙ্গে বিদ্যালয়গুলোতে ফুটে ওঠে চিরাচরিত হাসি-কান্নার চিত্র। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী, তাদের অভিভাবক ও স্বজনরা উল্লাসে মেতে ওঠেন। একই সঙ্গে মিষ্টি ও ফুলের দোকানগুলোয় ভিড় বাড়তে থাকে। অনেকে ঘরে বসেও ওয়েবসাইট ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ফল জেনে নিয়েছে।

তবে একসঙ্গে অনেক লোক ওয়েবসাইটে সার্চ করায় কাউকে কাউকে ফল সংগ্রহে কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এসএসসির মতো এইচএসসিতেও ই-মেইলের মাধ্যমে ফল পাঠানো হয়েছে কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জ সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ ও সিলেট সরকারি মহিলা কলেজে ই-মেইলে ফল পাঠিয়ে এ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। ফল পাঠানোর পর তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই দুই প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথাও বলেন। এদিকে সংবাদ সম্মেলনে ফল প্রকাশের সময় তথ্য বিভ্রাট দেখা দেয়।

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী শিক্ষামন্ত্রী এইচএসসির ফলাসংক্রান্ত তথ্য জানানোর সময় হিসাবে গরমিল দেখা দেয়। পরে সংশোধন করে আবারও সংবাদ সম্মেলনে তথ্য জানানো হয়। তখনো কিছু ত্রুটি ধরা পড়ে। এ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বেশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। মন্ত্রণালয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কারণেই এমনটি হয়েছে বলে জানা গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ বছর ঢাকা, রাজশাহী, কুমিল্লা, যশোর, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল ও দিনাজপুর_এই আট বোর্ডে কেবল এইচএসসিতে গড় পাসের হার ৭১ দশমিক ৮২ শতাংশ। গতবার এই হার ছিল ৭০ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এবার এইচএসসিতে উত্তীর্ণের হার গতবারের চেয়ে ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেড়েছে। এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে সাত হাজার ২৯০ জন। এ বছর আট বোর্ডে জিপিএ ৫ পেয়েছে ২৫ হাজার ৫১২ জন।

গতবার এ সংখ্যা ছিল ১৮ হাজার ২২২। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবার আট বোর্ডে এইচএসসিতে পরীক্ষার্থী ছিল পাঁচ লাখ ৮০ হাজার ৬২৩ জন। এদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে চার লাখ ১৬ হাজার ৯৮৭ জন। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৭৭ হাজার ৮০৪ জন বিজ্ঞান, কৃষি ও গার্হস্থ্য অর্থনীতি শাখার, এক লাখ ৮৭ হাজার ৪০৭ জন মানবিক ও মিউজিকের এবং এক লাখ ৫১ হাজার ৭৭৬ জন ব্যবসায় শিক্ষার শিক্ষার্থী। বিজ্ঞানে পাসের হার ৭৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ, ৬৫ দশমিক ৪০ শতাংশ মানবিকে এবং ব্যবসায় শিক্ষায় ৮০ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

আট বোর্ডের মধ্যে এবার পাসের হার সবচেয়ে বেশি সিলেট বোর্ডে। এ বোর্ডে ১৯ হাজার ৮২০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ১৫ হাজার ৮৭ জন। পাসের হার ৭৬ দশমিক ১২ শতাংশ। জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫৯৭। পাসের হার সবচেয়ে কম দিনাজপুর বোর্ডে ৬৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

এ বোর্ডে ৭২ হাজার ৮৫২ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ৪৯ হাজার ২০২ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছে এক হাজার ৮১৪ জন। ঢাকা বোর্ডে গড় পাসের হার ৭২ দশমিক ১০ শতাংশ। এ বোর্ডে মোট এক লাখ ৯৪ হাজার ৯২৫ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে এক লাখ ৪০ হাজার ৫৪৮ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছে সর্বাধিক ১১ হাজার ২০ জন।

রাজশাহী বোর্ডে পাসের হার ৭৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এ বোর্ডে ৮২ হাজার ১৭৪ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ৬১ হাজার ৯৮৭ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছে পাঁচ হাজার ৬০২ জন। কুমিল্লা বোর্ডে পাসের হার ৭৩ দশমিক ১৩ শতাংশ। ৫৩ হাজার ৯৩৪ জন পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে ৩৯ হাজার ৪৪৪ জন।

জিপিএ ৫ পেয়েছে এক হাজার ১৬৮ জন। যশোর বোর্ডে ৭৮ হাজার ৮০১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৫৩ হাজার ৩৭০ জন। এ বোর্ডে পাসের হার ৬৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ। জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা দুই হাজার ২৩৬। চট্টগ্রাম বোর্ডে ৪২ হাজার ৯৭৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৩১ হাজার ২২৪ জন।

এ বোর্ডে পাসের হার ৭২ দশমিক ৬৫ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছে এক হাজার ৬১৮ জন। বরিশালে ৩৫ হাজার ১৪১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ২৬ হাজার ১২৫ জন। পাসের হার ৭৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছে এক হাজার ৪৫৭ জন।

ঢাকা বোর্ডের অধীন বিদেশের পাঁচটি কেন্দ্রে মোট ১৪৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ১২০ জন। তাদের মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৯ জন। পাসের হার ৮২ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এবার পরীক্ষা চলাকালে নকল করার অপরাধে মোট ৬০৮ জন পরীক্ষার্থী বহিষ্কৃত হয়েছিল। গতবার এ সংখ্যা ছিল ৬৬৪ জন।

এবার বহিষ্কারের সংখ্যা কমেছে ৫৬ জন। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, 'এবার পাসের হার ও জিপিএ ৫ উভয় দিক থেকেই ফল গতবারের চেয়ে ভালো হয়েছে। নকলমুক্ত পরিবেশের পাশাপাশি ভালো করার জন্য বিভিন্ন প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ নেওয়ার কারণেই ফল ভালো হয়েছে। আগেরবার যারা ফল খারাপ করেছিল, তাদের দিকে বাড়তি নজর নেওয়া হয়েছে। এসব কারণেই ফল গতবারের চেয়ে ভালো হয়েছে।

' তিনি জানান, পরীক্ষার ফলাফলে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এবারও ওয়েবসাইট ও মোবাইল ফোনের পাশাপাশি কলেজগুলোয় ই-মেইলের মাধ্যমে ফল পাঠানো হয়েছে। এসএসসির মতোই এইচএসসিতেও নতুন নিয়মে সেরা প্রতিষ্ঠান বাছাই করা হয়েছে বলে জানান তিনি। এ পদ্ধতিতে একাদশ শ্রেণীতে শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন থেকে শুরু করে চারটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে সেরা প্রতিষ্ঠান বাছাই করা হয়েছে। আগে সেরা প্রতিষ্ঠানে কিছু ত্রুটি ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, নতুন পদ্ধতিতে সবাই মূল্যায়নে আসতে পারে।

এবারে বোর্ডওয়ারি সেরা ২০ প্রতিষ্ঠান এবং জেলাওয়ারি সেরা ১০ প্রতিষ্ঠান বাছাই করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত শিক্ষাসচিব মো. সিরাজুল ইসলাম, আন্ত শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফাহিমা খাতুনসহ বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। গত ১ এপ্রিল এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়। লিখিত পরীক্ষা শেষ হয় ১৮ মে। দুই মাসের মধ্যে ফল প্রকাশের কথা থাকলেও তিন দিন আগে ৫৭ দিনের মাথায় ফল প্রকাশ করা হলো।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ফল পাওয়া যাচ্ছে। ওয়েবসাইটের ঠিকানা হলো মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমেও ফল জানা যাচ্ছে ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।