আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জল-জ্যোৎস্নার জীবন আর কিছু বোকা বোকা পাখি

ব্ল্যাঙ্ক

****** আমি কেবলি হাওয়ার ভেতর হারিয়ে যাচ্ছিলাম। আর থেকে থেকে এক সমুদ্র গভীর জলে ছেঁড়া কাগজের মত পাক খেতে খেতে ডুবে গিয়ে ফের ভেসে উঠছিলাম। কয়েক মুহূর্ত চোখের পাতা আলতো মেলে আমি সন্তর্পনে জলের তলায় হাত দুটোকে ছড়িয়ে দিলাম। ভেবে নিলাম এই বদ্ধ জলে আমার ছোট্ট দেয়ালের পরিধিটাকে দুহাত দিয়ে মেপে নেব আর একটুখানি গলা বাড়িয়ে চোরাচোখে দেখে নেব তার কূলের সীমানা। ঠিক তখনি এক কাফেলা দমকা হওয়া হুড়মুড়িয়ে আমার চোখের উপর আছড়ে পড়ল।

আর দস্যুর মত তেড়ে আসা দৈত্যসদৃশ ঢেউয়ের তোড়ে আমার দৃষ্টিগুলো অবাক হয়ে হারিয়ে গেল। আমি কখনো সাঁতার কাটা শিখিনি। তবু কেমন করে ঝড়োহাওয়ার এই কিনারাবিহীন সমুদ্রতলায় আমি গুটি পাকিয়ে ভেসে রইলাম ভেবে আমার অবাক লাগলো। আমি ডানা দুটোই গুটিয়ে নিলাম। আর চোখের পাতায় ঝুলিয়ে দিলাম প্রকান্ড এক দৈত্যপুরীর তালা।

এখন অন্ধকারে জলের ভেতর শ্যাওলা হয়ে ভেসে থাকি। আর কান পেতে সব ঝিঁ ঝিঁ পোকার গান শুনি। *********** বৃত্তবন্দী আমি আর আমার ভেতর তুমি। আমি তোমায় বলেছিলাম,তোমার চোখের ভেতর পদ্ম হয়ে জেগে রইব অষ্টপ্রহর আর কাঁটাগুলো তুলে নেব আলতো করে। অবশেষে চন্দ্রনিশির ষোড়শ তিথি পূর্ণ হলে তোমায় ডুবিয়ে দেব জ্যোত্স্নাস্নানে।

গন্ধরাজের তীব্র সুবাস খেলা করবে তোমার শরীর জুড়ে। কেবল তুমি দুহাত দিয়ে আমায় জড়িয়ে রেখো স্বর্ণলতার মত আর অশ্রুরেখা পান করে নিশিরাতে ঘুমপাড়ানি গান শুনিও শিয়র জুড়ে বসে। তুমি তবু ফাঁকি দিয়ে চলে গেলে। আমি তক্ষশীলায় বন্দী হয়ে প্রাসাদপুরীর অলিন্দ সব শক্ত হাতে আটকে দিলাম। বাতাস এসে তার দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে ফিরে গেল।

আমি আগল খুললাম না। আমি ভেবে নিলাম আমি হব জ্বলতে থাকা একলা প্রদীপ আর মধ্যরাতের ভূতুড়ে আকাশের নিঃসঙ্গ চাঁদ। ******************** কেউ কি জানে,নক্ষত্ররা কেন উজাড় হয়? বা ঝড়ের রাতে মাঝ দরিয়ায় কেমন করে একলা হাতে নৌকা বাইতে হয়? আমি মাঝিদের আজ ছুটি দিলাম। দাঁড় টানিয়ে পালে লাগালাম হাওয়া। আর বৈঠা হাতে নিজেই বসলাম মাঝি হয়ে।

এই সমুদ্রের বাতিঘর নেই কোনো। দিকভ্রান্ত কম্পাসের কাঁটাগুলো তাই মতিভ্রষ্টের মত ঘুরতে লাগলো বৃত্তের সারা পরিধি জুড়ে। আমি হাতটা খুলে দিকগুলো সব হাতের রেখায় একে নিলাম আর চোখে জ্বাললাম বাতিঘরের আলো। এখন আমি হাওয়াকে আর ভয় করিনা। মাঝ সমুদ্রে ঝড় উঠলে আমি অশান্ত ওই হাওয়ার দলকে পালে লাগিয়ে পঙ্খিরাজ হয়ে উড়ে যাব ঢেউয়ের শরীর বেয়ে।

তুমি প্রশ্ন করতে পারো, কেন আমি জ্যোত্স্নাকে তীরবিদ্ধ করে শ্যাওড়াগাছের ভূতের মত অমাবস্যার আঁধারে আঙ্গুল ডুবিয়ে বসে রইলাম? আমি বলব,জ্যোত্স্না শুধু রূপকথার আহ্লাদী এক অধরা রাজকন্যা কিন্তু ওই আঁধারটুকু চিরকালই আমার ছিল এবং কেবল আমারই ছিল। সে কখনো তোমার মত আমার চোখ অন্ধ করে পালিয়ে যাবে না ঝড়ের রাতে। **************************** মাঝে মাঝে সবকিছুই খুব অর্থহীন লাগে আজকাল। কেন আমরা নিরর্থক এই সমুদ্রের মাঝে বোকা বোকা মুখ করে একের পর এক ঢেউ ভেঙ্গে দাঁড় বেয়ে যাই কে জানে। আমি জানি এক রাতে আমার কাগজের নৌকোটা ভাসতে ভাসতে থেমে যাবে আর আমার দেহের ভেতর থেকে চঞ্চল চড়ুই পাখিটা ফুড়ুৎ করে বেরিয়ে গিয়ে দূর আকাশে হারিয়ে যাবে।

জলের তীর আর আকাশের সীমানা চিরদিনের মত রয়ে যাবে অদেখা। তবু এই জলের মায়া আমরা ছাড়তে পারি কি কেউ? গভীর জলের ঢেউয়ের বুকে হাবুডুবু খেতে খেতে আমরা তবু জলের মানুষ হয়ে রই আর দূরের আকাশকে মিনতি করে বলি,ক্লান্তি এলে আমার দুচোখ ঢেকে দিও মৃত্যু নামের চাদর দিয়ে শুধু ডানা দুটো ছিঁড়ে দিও না। আমি ঘুমের শেষে চোখ মেলেও ডানা মেলা পাখি হতে চাই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।