আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্প: গুড়িয়ার কত্ত কাজ!

নিশীথ রাতের বাদল ধারা

হ্যালো, তোমরা কেমন আছ? আমি তোমাদের সাথে পরিচিত হতে এলাম। আমার নাম গুড়িয়া। মাত্র দাড়াঁতে শিখেছি—দেখ ব্যালে-ড্যান্সারদের মত আঙ্গুলে ভর দিয়ে কেমন দাঁড়াই আমি। পারবে তোমরা? আজ আমার বয়স এগার মাস ছাব্বিশ দিন--এখনো একও হয়নি। কিন্তু সে কথা আমার বাবামায়ের একদম মনে থাকে না।

ওরা দুজনে পিএইচডি করছে তো, সারাদিন খুব ব্যস্ত থাকে। খুব কষ্ট করে ওরা দুজন -- এত পড়া দিনরাত। আমার খারাপ লাগে ওদের জন্য—তাই অন্য বাচ্চাদের মত কান্নাকাটি করি না--অনেক লক্ষী হয়ে থাকি। সত্যি বলছি। তেল নুন ছাড়া কেমন পানসে --বিচ্ছিরি দেখতে খিচুড়ি আমি হাসিমুখে খেয়ে নেই! গার্বার নামে একটা কোম্পানি আমাদের খাবার বানায়।

এতই খারাপ খেতে, একদিন আমার বাবা আর মা টেস্ট করতে গিয়ে প্রায় ইয়্যাক ইয়্যাক করে ফেলেছিল! আমি সেগুলা পর্যন্ত খেয়ে নেই একটুও বিরক্ত না করে। আমি ওদের লেখাপড়াতেও অনেক হেল্প করি। মাঝে মাঝে রাত জেগে ওদের এসাইনমেন্ট টাইপ করে দেই। এজন্য কত্ত পড়তে হ্য় আমার! আমার অবশ্য মজাই লাগে। আমি বুঝি না ওরা কেন সারাদিন বলে, গ্রাজুয়েট স্কুল অনেক কঠিন! জান, ওদের কাছে ওদের ছাত্র-ছাত্রীরা এলে, পড়া আমিই বুঝিয়ে দেই।

আরো কত কি করে দেই! ওদের ল্যাপটপ নষ্ট হলে আমি ঠিক করে দেই। কি করব বল, ওদের কাজগুলো হারিয়ে গেলে তো আমাদের বাংলাদেশে যেতে দেরী হবে। আমার দাদু-দাদা আর আম্মিটা যে আমাকে অনেক মিস করে! প্রতিদিন স্কাইপে কথা হয় আমার সাথে। আহা, তোমরা মন খারাপ করো না। দেশে গেলে তোমাদের সাথেও দেখা করব।

অনেক মজা করব আমরা, ঠিক আছে? ওহো, তোমাদের কথা আমাকে আমার আম্মি, মানে আমার ফুপ্পি বলেছে। ও আমাদের বাসায় এসেছিল, তখন ওর সব ব্লগ কিন্তু আমিই লিখে দিয়েছি। তোমরা বুঝতে পেরেছিলে? আমার বাবাটা একদম হিসাবে কাঁচা। ওর কোন ক্রেডিট কার্ডে কত লিমিট, কত, কবে ডিঊ সব ওকে আমাকেই তো বুঝিয়ে বলতে হয়। জান, বাসায় যত ফোন আসে সব আমিই রিসিভ করি।

কারন টেলিমার্কেটাররা অনেক যন্ত্রনা করে। আমি না ধরলে বাবা-মার সময় নষ্ট হবে না, বল! আমি না গান শুনতে খুব ভালবাসি—আমার আম্মির মত। আমার আইটাচে অনেক রবীন্দ্রসঙ্গীত, লালনগীতি, নজরুল সঙ্গীত আছে। মাঝে মাঝে আমার বাবা মা আমাকে বাচ্চাদের ছড়াগানও শোনায়! সেগুলাও ভাল লাগে আমার। আমার আম্মি আমাকে একটা গান দিনরাত শোনাত, ও যখন এখানে ছিল।

“চান্দা হে তু, মেরি সুরুয হে তু, ও মেরি আঁখোকা তারা হে তু”। জান, স্কাইপে আম্মি আবার শোনালে আমি খেলা ফেলে শুনি--ওকে মিস করি বলে। তাতে আমার মা-বাবা, দাদা-দাদু খুব অবাক হয়। আম্মি তো চিৎকার করতে থাকে। আচ্ছা দেখ, আমার অনেক বুদ্ধি, আমি সব বুঝি, সব মনে রাখতে পারি—এটা কেন ওরা বুঝে না? স্পেসালি এত কিছু করার পরও! বড়রা না অনেক বোকা- সিম্পল ব্যাপারগুলো মাঝে মাঝে বুঝে না।

ওদের আবার বলে দিও না, মন খারাপ করবে শুধু শুধু। যাক, আজকে আসি। কত্ত কাজ পরে আছে। আর মাত্র কয়েকদিন পর আমার জন্মদিন। তোমরা দোয়া কর আমার জন্য প্লিজ।

আর ভাল থেক সব্বাই। আবার দেখা হবে। বাইইই! ----- আমার ভাইয়ের মেয়েটার ১ম জন্মদিন। সাত সমুদ্দুর তের নদীর ওপারে থাকে আমার জানটা। ওর জন্মদিনের জন্য লিখেছি।

ওর জন্য দোয়া করবেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.