আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গাজা-ইউনুস-আবেদ

নিজের বিষয়ে কিছুই বলিবার নাই

আসসালামু আলাইকুম, আমাদের দেশে আর যাহারই অভাব থাকুক সুশীল মার্কা বুদ্ধিজীবীর কোনো অভাব নাই। তাহারা মাঠের ঘাসের মতন বাড়িয়া উঠিয়া থাকেন। কখনো সেনা বাহিনির কাধে চড়িয়া কখনো নির্বাচিত সরকারের মাথায় চড়িয়া জনগণকে কথায়-কথায় হেদায়েত দিয়া থাকেন। আমি হঠাৎ ধান ভানিতে গিয়া মহিপালের গীত কেন গাহিতেছি? গাহিতেছি মনের কষ্টে দুঃখে। তাহা এইখানে বয়ান করিতেছি।

২. ২০০৭ হইতেই জায়ানবাদী ইসরাইল সরকার হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা-বাসীর বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক আবরোধ আরোপ করে। অথচ গাজাবাসী নির্বাচনের মাধ্যমেই হামাসকে ক্ষমতায় বসাইয়াছে। কিন্তু মার্কিন প্রভুদের পছন্দ না-হইলে জনগণের পছন্দেরও তো কোনো দাম থাকে না। এই অবরোধের ফলে গাজাবাসীকে চরম দূরাবস্থার ভিতর দিয়া দিন কাটাইতে হইতেছে। আবার ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নিজেকে রক্ষার নামে তৎকালীন ইসরাইয়েল সরকার গাজার উপর সর্বাত্নক যুদ্ধ ঘোষণা করে।

যাহা ২০০৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত চলিয়াছিলো। ৩ সপ্তাহের এই যুদ্ধে প্রায় ১৫০০ নিরীহ গাজাবাসী নিহত হন। যাহাদের বেশীরভাগই নারী ও শিশু। সেই সময় মিসর যে-ভূমিকা নিয়াছিলো তাহার কথা আরেকদিন বলা যাইবে। তবে এইটুকু বলিয়া রাখি মিসর হইতেছে সেই আনোয়ার সাদাতের দেশ, যিনি কিনা মার্কিন-প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের ধমকে ইসরাইলের মোনাহেম বেগিনের সহিত হাত মিলাইয়া ক্যাম্পডেভিড শান্তিতে চুক্তিতে স্বাক্ষর করিয়াছিলেন।

সাদাতের ডেপুটি হোসেনি মুবারক এখন মিসরের শাসনকর্তা। ২. ২০০৯ সালের যুদ্ধের পর হইতে গাজাবাসী এক অবর্ণনীয় কষ্টের ভিতর দিয়া কালাতিপাত করিতেছেন। বাসভবন ধ্বংস, স্কুল-কলেজ-হাসপাতালের অবস্থা শোচনীয়। খাবারের অভাব, পানীয় জলের কষ্ট। রাফা সীমান্ত দিয়া মিসর হইতে চোরাপথে যাহা আসিতো তাহাও আসা বন্ধ হইয়া গিয়াছে।

এই অবস্থায় সারা দুনিয়ার মানুষ ইজরাইলকে এই অবরোধ তুলিয়া নিতে বলিয়াছে। জাতিসংঘ পর্যন্ত অনুরোধ করিয়াছে। কিন্তু জায়নবাদী সরকার তাহাতে কর্ণপাত করে নাই। অবশেষে মার্কিন-ব্রিটেন সহ ৩৭ টি দেশের ৬৬৩ জন মানবাধিকার কর্মী নিয়া ৬ টি জাহাজের এক বিরাট কাফেলা খাদ্য ওষুধ ভবন নির্মান-সামগ্রী নিয়া গাজার পথে রওয়ানা হয়। ইসরাইল সরকার বরাবরই হুমকি দিয়া আসিতেছিলো যে জাহাজ নিয়া আসিবার পরিণাম ভালো হইবে না।

কিন্তু যাহা কেহ ভাবেন নাই সেই রকম আন্তর্জাতিক সমুদ্র সীমানায় ইসরাইরেল নৌ-বাহিনী সেই জাহাজের কাফেলার উপর নির্মম হামলা চালায়। ইসরাইলের অভিযোগ জাহাজের আরোহীগণই নাকি তাহার সৈন্যদের উপর প্রথমে হামলা চালাইয়াছে। কী দিয়া হামলা করিয়াছে? করিয়াছে চাকু, লাঠি এইসব দিয়া। যাহারা নৌ-জাহাজ, হেলিকপ্টার গানশিপ নিয়া হাজির তাহাদের বিরুদ্ধে এইসব দিয়া হামলা!! গত ৩১ শে মে-র এই হামলায় ৯ জন মানবতাবদী মানুষের নির্মম মৃত্যু হইলো। আহত শতাধিক।

সারা দুনিয়ার মানুষ প্রতিবাদে ফাটিয়া পড়িলেন। তেহরান হইতে নিউইয়র্ক, লন্ডন হইতে লিমা সর্বত্রই মানুষের প্রতিবাদ। তাহাতে যোগ দিয়াছেন হাজার-হাজার সাধারণ মানুষ , মানবতাবাদীকর্মী, যাহাদের ভিতর সাহিত্যিক রাজনৈতিক নোবেলজয়ী ব্যক্তিত্বগণও রহিয়াছেন। শুধু আমাদের ''ঢাকা'' নীরব রহিলো। ৩.ঢাকার মানবতাবাদীগণ টু-শব্দটি পর্যন্ত করিলেন না।

এই হত্যাকন্ডের প্রতিবাদে মালয়েশিয়া হইতে ১১ জন মানবাধিকার কর্মী নিয়া ‘এম ভি রাচেল কোরি’( MV Rachel Corrie)নামক একটি জাহাজ গাজার পথে রওয়ানা হয়। এই রাচেল কোরি নামটির একটির বিশেষ তাৎপরয রহিয়াছে। মার্কিন মানবাধিকার কর্মী রাচেল কোরি( Rachel Aliene Corrie) ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল সলিডারিটির মুবমেন্টের (ISM) একজন মার্কিন কর্মী। যাহাকে ২০০৩ সালে গাজায় ইজরাইলী সৈন্যরা বুলডোজারের নিচে চাপা দিয়া হত্যা করে। রাচেলের আপরাধ ছিলো তিনি গাজায় ইসরাইলী সৈন্যদের সাধারণ মানুষের বাড়িঘর ভাঙ্গিবার প্রতিবাদ করিয়াছিলেন।

এম ভি রাচেলে যাহারা রহিয়াছেন তাহাদের ভিতর দুইটি নাম বিখ্যাত। একজন হইতেছে শান্তিতে নোবেল জয়ী মেইরিড করিগান ম্যাগুইর( Máiread Corrigan-Maguire), অন্যজন হইতেছেন জাতিসংঘের সাবেক সহকারী মহাসচিব ডেনিশ হলিডে ( Denis Halliday)। এই জাহাজটিকেও ইসরাইলের সৈন্যরা গাজায় ভিড়িতে যাইতে দেয় নাই। তবে সেখানে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটে নাই। ৪. এতোসব বয়ান করিবার উদ্ধেশ্য কি? আমাদের দেশেও একজন নোবেল জয়ী ব্যক্তিত্ব রহিয়াছেন।

তাহাকে নিয়া পত্র-পত্রিকায় বিস্তর মাতামাতি হইয়া থাকে। তিনি যোগ্য বলিয়াই তাহাকে নিয়া এই মাতামাতি। তাহা আমরা অস্বীকার করিতেছি না। কিন্তু প্রশ্ন হইতেছে : শান্তিতে যিনি নোবেল পাইয়াছেন তিনি এতোসব ঘটনার পরেও কেমন করিয়া চুপ থাকেন?। দুনিয়াবাসীর নিকট লজ্জায় আমাদের মাথা নিচু হইয়া গিয়াছে।

শুধু এইখানেই নয়। নিজের দেশের পার্বত্য এলাকায় বিস্তর মানুষ নিহত হইলেও মানুষ গৃহহারা হইলেও তিনি মুখে কুলুপ দিয়া বসিয়া থাকেন। তাহাদের দেখিতে যাইবার তাগিদ পর্যন্ত অনুভব করেন না। ক্রস-ফায়ারে নিরীহ মানুষের মৃত্যুও তাহাকে বিচলিত করে না। তিনি মুনাফার সন্ধানে সারা দুনিয়া চষিয়া বেড়ান।

ব্রাকের ফজলে হোসেন আবেদ মার্কিন-দখলকৃত আফগানিস্তানে ত্রাণ পাঠান কিন্তু অবরুদ্ধ গাজায় নয়। তিনিও মুনাফা খুজিতে দ্বিধা করেন না। তা তাহারা খুজুন। মুনাফাখোর মুনাফা খুজিবেন তাহাতে আমাদের আপত্তি নাই। কিন্ত মানুষের প্রতি দায়বোধের কথা তাহারা ভুলিয়া থাকেন কী করিয়া? মানুষের জন্যই আজ তাহাদের এতো সম্মান এতো মর্যাদা।

এতো পুরস্কার। এতো তকমা। শ্রদ্ধেয় ইউনুস শ্রদ্ধেয় ফজলে হাসান আবেদ আপনার মুনাফার দিকে বিস্তর তাকাইয়াছেন। এইবার অন্তত মানুষের দিকে একটু ফিরিয়া তাকান। সকলে ছহি-ছালামতে থাকিবেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।