আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার দেশ ইস্যুতে সুশীল চুলকানী



মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর "মিডিয়া ভাবনা" নামে নিয়মিত প্রথম আলো পত্রিকায় কলাম লেখেন। যতদূর মনে পড়ে তিনি সরকারী প্রেস ইন্সটিটিউটে চাকরী করতেন। এখনও করেন কী না জানি না। মাঝে মাঝে সরকারী বেসরকারী টিভি টক শোতে আলোচক অথবা খোদ এঙ্করের ভুমিকায় নেমে পড়তেও তাঁকে দেখা যায়। না এগুলো তাঁর পরিচয়ের সবটা কেন আসলগুলোই নয়।

তিনি গ্রামীণ ব্যাঙ্কের এমডি মুহাম্মদ ইউনুসের আপন ছোট ভাই। তবে এই সম্পর্কটা নেহায়েত ঘটনা চক্রে রক্তের সম্পর্কের মত নয়। পাঠক জানেন মঈন-ফকু আমলে প্রথম দুই মাসের মাথায় ইউনুসের রাজনৈতিক দল "নাগরিক শক্তি" করার খায়েসের কথা। সেসময় শোনা গিয়েছিল মঈন-ফকুর নাজেল হওয়া সুশীল সরকারে ফকুর ভুমিকায় অভিনয় করার কথা ছিল আসলে ডঃ ইউনুসের। কোন একটা দেশের কিঞ্চিত আপত্তির কারণে ইউনুসকে পরে আসলে বলা হয়, আর কপাল খুলে ফকুরুদ্দিনের।

তো সেই ইউনুস এরপর কী করলেন? ফকুর হাতে একটা পরিবেশ তৈরি হলো; বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল, রাজনীতি তৎপরতা তিনি নিষিদ্ধ করলেন নিজের গায়েবী ক্ষমতার বলে। কারণ এগুলো তাঁর গায়েবী ক্ষমতার জন্য হুমকি। আমাদের আকন্ঠ দুর্নীতিগ্রস্হ রাজনীতিকদের মধ্যে যাকে নিজের খায়েশে কাজে লাগে তাদের বাদ দিয়ে যাদেরকে সমস্যা মনে করেন তাদের ধরে ধরে জেলে পুরে দিলেন। অভিযোগ দুর্নীতির। অভিযোগ যিনি করলেন তাকেও চাপের মুখে রেখে অভিযোগ করতে বাধ্য করা হলো।

ফলে ব্যাপারটা দাড়াল বিদেশী স্বার্থে দুর্নীতি সিলেকশনের মাধ্যমে নতুন একটা রাজনৈতিক ক্ষমতা তৈরির উদ্যোগ। একটা মহড়া। এসব এখন বিস্তারিতে না গিয়ে এককথায় যা বলতে চাচ্ছি তা হলো, সমাজের কোন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বংশ রাখলেন না, সব নির্বাসন দিলেন "জরুরী আইন অধ্যাদেশ" বলে, সব কিছু নিষিদ্ধ হয়ে গেল। এসব ঘটনাবলীর প্রতীকী শব্দ হয়ে দাঁড়ালো "মাইনাস টু ফর্মুলা"। রাজনীতির মাঠ ফাঁকা করে ফেলা হলো।

এবার সেই ইউনুসীয় মশকরা করার পরিবেশ হাজির। মশকরাটা কী? ইউনুস রাজনীতি করবেন, রাজনৈতিক দলের নাম নাগরিক শক্তি। বাংলাদেশের একজন মহান নাগরিক রাজনৈতিক দল করবেন, এটা তাঁর বোনাফাইড নাগরিক অধিকার - এটাকে আমি মশকরা বলছি কেন? বলছি কারণ, মঈন-ফকুর "জরুরী আইন অধ্যাদেশ" বলছে দেশে রাজনৈতিক তৎপরতা নিষিদ্ধ। অথচ এরা নিজেই নিজেদের অধ্যাদেশ ভেঙ্গে কেবল ইউনুসকে একা রাজনীতি করতে দেবার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। আইন নিয়ে এরচেয়েও বড় মশকরা আর কী হতে পারে? তবে বোধহয় আরও বড় মশকরাটা করেছিলেন ইউনুস সাহেব নিজে।

আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ত্ব, ক্লিনটনের বন্ধু, নোবেল হাসিলকারী, সারা দুনিয়ায় গ্লোবাল পুঁজির সমস্যায় পেরেশান পুঁজির মাল্টিন্যাশনাল পোটলা বাহকদের নতুন নতুন বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে বেড়ানো ইউনুস সাহেবের একবারও মনে হলো না ঐসময়ে রাজনীতির দোকান খুলে বসার এই কাজটা শুধু বেআইনী না মারাত্মক অনৈতিকও বটে। রাজনীতির মাঠে বিপক্ষের কোন প্লেয়ার নাই, এই মাঠে নেমে তিনি একাই গোল করতে চান। উনার দেশসেবার নেশা এতই প্রবল হয়ে গেছিল যে দিকবিদিকশুন্য ইউনুস সাবকে আর ঠেকায় রাখা যাচ্ছিল না। পাঠক ঘাবড়ায়েন না। মুহম্মদ জাহাঙ্গীর ইউনুস সাহেবের ভাই এটা কোন দোষের হতে পারে না, আর রক্তের ভাই বনে যাবার পিছনে মুহম্মদ জাহাঙ্গীরের কোন হাত ছিল না, সবই আল্লাহর ইচ্ছা।

ফলে ইউনুস সাহেবের কোন দোষ অথবা নোবেল গুন মুহম্মদ জাহাঙ্গীরের ঘাড়ে চাপানোর কোন সুযোগ নাই, আমি মানি। এতটা অবিবেচকও আমি নই। কিন্তু সমস্যা হলো মুহম্মদ জাহাঙ্গীর নিজেই নোবেল ভাগ নিতে না পারুক ইউনুসের দায়-দোষ নিজের কান্ধে নিজেই টেনে নিয়েছিলেন। ফলে আমার কিছু করার নাই। ইউনুস সাহেব সদ্যপ্রসুত ভাবনার "নাগরিক শক্তি"র কাজকর্ম গুছানোর জন্য একটা সেক্রেটারিয়েট খুলেছিলেন।

উৎসাহী নাগরিকদের অভ্যর্থনা জানানো, কথা বলা উৎসাহগুলোকে নিজের ব্যাগে ভরা একটা খুবই গুরুত্ত্বপূর্ণ কাজ। দুর্নীতির রাজনীতি দেখতে দেখতে অতীষ্ঠ মধ্যবিত্তকে দোষ দেবারও কিছু নাই; তবে তাদের উৎসাহী বিভিন্ন চিঠিপত্র ইত্যাদির যোগাযোগ সামলানো ও তা ব্যাগে ভরার জন্য ইউনুসকে একটা সেক্রেটারিয়েট দোকান খুলতে হয়েছিল। ইউনুসের আপন ভাই মুহম্মদ জাহাঙ্গীর এগিয়ে এসে এই সেক্রেটারিয়েটের মুখ্য কর্মকর্তার দায়িত্ত্ব নিয়েছিলেন। দেশের জন্য মহান এই কর্তব্য কাঁন্ধে করে তিনি ইউনুসের রাজনৈতিক খায়েসকে নিজেরও খায়েস বলে দায়িত্ত্ববোধ করেছিলেন। ভাইয়েভাইয়ে রক্ত সম্পর্কের উর্ধে উঠার এই নতুন সম্পর্কমূলক দৃষ্টান্ত তিনি জগতসংসারে রেখেছিলেন।

বলাবাহুল্য, দেশে মঈন-ফকু, ইউনুস, ষ্টার মিডিয়া গ্রুপ, আর সিপিডি, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ইত্যাদি এনজিও - সব মিলিয়ে বিদেশী স্বার্থের যে সুশীল উদ্যোগ সেসব মহান কর্তব্যের মধ্যে মুহম্মদ জাহাঙ্গীরের আসন গ্রহণ ও অভিষেক হয়েছিল এভাবেই। প্রথম আলোর সাথে তাঁর সম্পর্কেরও ঘনিষ্ঠতার শুরু। ফলে ভাইয়ের দাবিতে নয়, খোদ নিজ গুনে মুহম্মদ জাহাঙ্গীর সুশীল রাজনীতিতে দীক্ষা নিয়েছিলেন। আইন নিয়ে ইউনুসের মশকরাতে হাত লাগিয়ে তাঁর সুশীল রাজনীতিতে প্রবেশ ঘটেছিল। ইউনুস একটা "সুদখোর"।

যেমন তেমন না ৩৫-৪৫% সুদ খায় সে। এই অভিযোগ সামলাতে না পেরে ইউনুস বুঝে যান তাঁর রাজনীতিতে এডভেঞ্জারের খায়েস তাঁকে তাঁর গ্রামীণ ব্যাঙ্ক এই শখের হরিণসহ সব শেষ করে দিবে, সাজানো গোপন বাগান তছনছ করে দিবে, জনগণের কাছে সব উদোম করে দিবে। ফলে পলায়নই শ্রেয়, বুদ্ধিমানের কাজ। ঘোষণা দিয়ে তিনি রাজনৈতিক খায়েস ত্যাগ করেন। এর মানে এই নয় যে এতে সুশীলীয় প্রজেক্ট সমাজ থেকে বিদায় নিয়েছিল; অথবা তিনি বা তাঁর ভাই এই প্রজেক্ট ত্যাগ করেছেন।

আমার দেশ পত্রিকার সাথে সুশীলদের সম্পর্ক সাপে নেউলে, মঈন-ফকুর মাঝামাঝি আমল থেকে। আর ব্যক্তি হিসাবে সম্পাদক মাহমুদুর রহমান যখন জ্বালানি উপদেষ্টা ছিলেন সেসময় সম্ভবত ২০০৬ সালের শুরুতে যখন "সৎ প্রার্থীর খুজার আন্দোলনের" নামে সিপিডির দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য মঈন-ফকুর আজীব সরকার ক্ষমতায় আসার রাস্তা বানাচ্ছিলেন। মাহমুদুর রহমান দেবপ্রিয়ের বিরুদ্ধে বোর্ড অফ ইনভেষ্টমেন্টের দেয়া তথ্য-উপাত্ত ভুলভাবে উপস্হাপনের জন্য। সে যাই হোক, আমার দেশ পত্রিকা এমাসের শুরুতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, আর সম্পাদক জেলখানায় পুরে রাখা হয়েছে। এই অবস্হায় তেসরা জুন আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশনা বাতিলের সরকারী সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে প্রথম আলোর সম্পাদকীয়তে লিখছে "প্রকাশনা বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্ত অপরিণামদর্শী ও অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।

সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে এই পদক্ষেপ একটি বড় ধরনের হুমকি। সরকার যে প্রতিপক্ষের গণমাধ্যমের প্রতি সহিষ্ণু নয়, সেটা প্রমাণের ক্ষেত্রে এই ঘটনা দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হবে"। আমরা এখানে দেখছি, সুশীল প্রথম আলো, আমার দেশ পত্রিকাকে সরকারের "প্রতিপক্ষের গণমাধ্যম" মানে বিএনপির পত্রিকা বলে চেনানোর দায়িত্ত্ব নিয়েছে। অথচ আমার দেশ বিএনপির পত্রিকা কী না সেটা এখানে অপ্রাসঙ্গিক। এর ফলে এখান থেকে অনুষঙ্গে যে মানে আসে, তার মানে সরকার যদি আওয়ামী লীগের পক্ষের অন্য পার্টি বা ছায়া সমর্থক অর্থাৎ সরকার "পক্ষীয়" কোন পত্রিকার ক্ষেত্রে একই বাতিলের সিদ্ধান্ত নিত তবে সেই "ঘটনা দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত" হত না? পত্রিকা প্রকাশনা বাতিল, সম্পাদক জেলে এসবই কী ঘটনার ইস্যু হিসাবে যথেষ্ট নয়, মুল ইস্যু নয়? অন্তত প্রথম আলোর কাছে নয়।

প্রতিপক্ষের সমর্থক না পক্ষের সমর্থক, না কী প্রথম আলোর মত ছুপা সমর্থক সেসব ভাগ, বিচার এখন করতে বসার একটাই অর্থ প্রথম আলো যেন বলতে চাচ্ছে, পত্রিকা হিসাবে স্বগোত্রীয় দায়ে পড়ে প্রকাশনা বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের কথা না বলে পারছি না বটে কিন্তু এটা আওয়ামী লীগের শাসনের বিরোধী পত্রিকা ও এই বাতিলের সিদ্ধান্তটা খারাপ হয় নাই। পাঠক লক্ষ্য করবেন, "সরকার যে প্রতিপক্ষের গণমাধ্যমের প্রতি সহিষ্ণু নয়" এই বাক্যে প্রতিপক্ষ শব্দটা কেমন বাহুল্য ও অপ্রাসঙ্গিক। শব্দটা বাদ দিলে বাক্যটা হত, "সরকার যে গণমাধ্যমের প্রতি সহিষ্ণু নয়"। কারণ, সরকার পক্ষ-প্রতিপক্ষ যে কোন গণমাধ্যমের উপর সহিষ্ণু থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক ও এক্সপেক্টেড। বাজারময় করে একজন বলে বেড়াচ্ছেন, ময়রার মিষ্টিতে ইঁদুর পড়েছে তা কিন্তু আমি বলি নাই - এই ধরণের প্রথম আলোর এই সুশীল ও বদ মতলবী লেখা ও দৃষ্টিকোণ বজায় রেখেছেন আমাদের মুহম্মদ জাহাঙ্গীর।

একই দিনে তিনি আমার দেশ ইস্যুতে প্রথম আলোতে এক কলাম লিখেছেন। একই সুরে তবে আরও সুরেলা করে তিনি বলছেন, "পাঠক জানেন, আমার দেশ একটি বিরোধী দল সমর্থিত পত্রিকা। শুরু থেকেই পত্রিকাটি সরকারের নানা সমালোচনা করছে। বিরোধী দলের পত্রিকা যেমনটি হয়। তা ছাড়া পত্রিকাটি একটি বিশেষ বিরোধী দলের মুখপত্রের মতো সাংবাদিকতা করে থাকে।

সংবাদপত্রে এ ধরনের ‘দলীয় মুখপত্র’ কতটা সমর্থনযোগ্য, সেটা ভিন্ন প্রশ্ন"। মুহম্মদ জাহাঙ্গীর এখানে সরাসরি অভিযোগ তুললেন, "তা ছাড়া পত্রিকাটি একটি বিশেষ বিরোধী দলের মুখপত্রের মতো সাংবাদিকতা করে থাকে"। আগেই বলেছি, মুহম্মদ জাহাঙ্গীর ভাই ইউনুসকে নিয়ে কী করে সুশীল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। মিডিয়া তৎপরতায় মঈন-ফকুর সরকারকে আনা ও সরকার আসীন সময়ে সুশীল সার্ভিস দিয়ে কীভাবে টিকিয়ে রেখেছিল - সবাই জানি। ষ্টার মিডিয়া গ্রুপের মতি-মাহফুজ গং জাঁদরেল উপদেষ্টা ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেনকে পত্রিকা সম্পাদকদের সভায় শাসিয়ে বলেছিল, এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাঁরাই এনেছেন।

তথ্য মন্ত্রনালয়ের ঐ সভা ডাকা হয়েছিল কারণ উপদেষ্টা মইনুল হোসেন পত্রিকার উপরও সেন্সরশীপ জারি করেছিলেন। ফলে সুশীল গংদের মধ্যে মারামারি লেগে গিয়েছিল সুশীল তত্ত্বাবধায়ক সরকার নাজিল করাতে কার ভুমিকা বেশী। আর তা নিয়ে তর্ক-বিতর্কের সভায় ভরা হাটে মুখ ফসকে মতি-মাহফুজের মারফতে নিজমুখে স্বীকারোক্তি বের হয়ে গেছিল। মঈন-ফকুর রাজনীতিতে কাজে লাগে না এমন রাজনীতিকরা দুর্নীতিবাজ হোক অথবা না হোক তাদেরকে সেনাসদস্যরা গ্রেফতার করে অমানুষিক টর্চারে পঙ্গু করে স্বীকারোক্তি আদায় করা এক স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছিল। অথচ গ্রেফতার হেফাজতে নিয়ে টর্চারে পঙ্গু করে স্বীকারোক্তি আদায় করা একটা মারাত্মক অপরাধ।

এই মারাত্মক অপরাধের কালচার চালু করে সেসব স্বীকারোক্তির ভিডিও আবার মিডিয়াতে ফলাও করে প্রচার করার করা হত সুশীল মিডিয়ায়। আর এখন ভাগ্যের পরিহাস, মুহম্মদ জাহাঙ্গীর আমাদের শিখাতে এসেছেন, সরকার ও দলীয় মুখপাত্রের সম্পর্ক কী হওয়া উচিত। বিদেশী স্বার্থের মঈন-ফকুর সরকার ও এর মুখপাত্র ষ্টার মিডিয়ার মতি-মাহফুজ গংয়ের পত্রিকা সম্পর্কের যে দৃষ্টান্ত এরা স্হাপন করে গেছেন এরপর সেই কীর্তিমানেরা এখন এসেছেন, "‘দলীয় মুখপত্র’ কতটা সমর্থনযোগ্য" কী না সেই তর্ক করতে? সত্যি এসব চাম্পিয়ানদের পিঠ চাপড়িয়ে দেয়া দরকার! আমার দেশের প্রাক্তন প্রকাশক হাসমত আলীকে এনএসআই উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ লিখিয়ে নিয়েছেন। মঈন-ফকুর রাজত্ত্বের সাথে মিল থাকা এই কালচারে অভ্যস্ত মুহম্মদ জাহাঙ্গীর ও মতি গং রা কিন্তু একটুকুও বিচলিত হননি। কোন উদ্বেগ প্রকাশ করেননি।

সবই তাঁদের কাছে স্বাভাবিক, সুনশান। "গণমাধ্যমের স্বাধীনতা" কীভাবে রক্ষা ও দায়ীত্ত্বশীল ভাবে ব্যবহার করা যায় এনিয়ে দেশে বিদেশে আলোচনা কম হয়নি। আমাদের দেশে সব সরকারের সময়ে মিডিয়ার উপর দমন নিপীড়ন কম বেশী সবসময়ে বহাল থেকেছে। আবার গণমাধম্যেকে বগলদাবা করে এর সুবিধা নিয়ে বিদেশী স্বার্থের সুশীল রাজনীতিও চলেছে। কিন্তু গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করাটা কার উপর নির্ভর করে? সেই প্রশ্ন প্রশ্ন হিসাবেই থেকে গেছে।

অনেকের মনে হতে পারে এটার জন্য দেশের কিছু ভাল আইনই যথেষ্ট। সেইসাথে খালেদা ও হাসিনা যদি একটু ভাল হয়ে যান। এটা একটা ঘোরতর মিথ্যা ও বিভ্রান্ত ধারণা। কারণ, জনগণ, একমাত্র সচেতন জনগণই সেই স্বাধীনতার রক্ষাকবচ। আমার কথাটা শুনতে অনেকের কাছে একটা আপ্তবাক্য অথবা পল্টনের বকওয়াজের মত লাগলো হয়ত।

কিন্তু আমি মিন করেই বলেছি, আমি মনে করি জনগণের সেই ক্ষমতা দেখিয়েছিল, তৈরিও হয়েছিল একটা সময়ে। কিন্তু হাত ফসকে যায়; রাজনৈতিক দলের দৈন্যদশা, চিন্তার মান, কোটারি স্বার্থ এবং পত্রিকা মালিক ও সংশ্লিষ্ট পত্রিকা পেশাজীবিদের কারণে সেই ক্ষমতা কোটারি স্বার্থে ব্যবহৃত হয়ে গেছিল। এই কোটারি স্বার্থের সুবিধাভোগীরা সকলে মনে করেন, ১. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আর জনগণের স্বাধীনতা দুটো আলাদা জিনিষ। ২. জনগণের স্বাধীনতা না থাকলেও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অর্জন ও তা ধরে রাখা সম্ভব। ৩. পত্রিকা মালিক ও সংশ্লিষ্ট পত্রিকা পেশাজীবিরা বিশেষত প্রথম জনেরা মনে করেন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা দরকার পত্রিকা ব্যবসা ঠিকমত চালানোর জন্য, আর পেশাজীবিরা ভাবেন পত্রিকা চালু থাকলে এতে আরামে নিশ্চিতে চাকরি করা যাবে।

৪. মিডিয়াকে ব্যবসা হিসাবে দেখা মালিক/সম্পাদকেরা নিজ মিডিয়া ব্যবসা না বরং নিজের অন্যান্য লুটপাটের ব্যবসায় প্রভাব প্রতিপত্তি ও উন্নতির হাতিয়ার হিসাবে মিডিয়া ব্যবসাকে সিড়ি হিসাবে ব্যবহারযোগ্যতা আবিস্কার করেছেন এবং মনে করেন তা ব্যবহার করাটাই স্বাভাবিক। আমি জানি আমি একটা শক্ত দাবি করেছি, ১. জনগণ একমাত্র সচেতন জনগণই গণমাধ্যমের স্বাধীনতার রক্ষাকবচ। ২. জনগণে সেই ক্ষমতা দেখিয়েছিল, তৈরিও হয়েছিল একটা সময়ে। ৩. কিন্তু হাত ফসকে গিয়ে সেটা রাজনৈতিক দলের দৈন্যদশা, চিন্তার মান ও পত্রিকা মালিক ও সংশ্লিষ্ট পত্রিকা পেশাজীবিদের কারণে সেই ক্ষমতা কোটারি স্বার্থে ব্যবহৃত হয়ে গেছে। আমার সেসব কথা নিয়ে পরের পর্বে হাজির হব।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।