আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিছক গল্প: অপেক্ষা

আমি চাইনি এ সুখের সাজানো আসর.!!

২রা জুন,২০১০ কোন এক রেলষ্টেশনের চিত্র। চারিদিকে মানুষের কোলাহল। ট্রেনের বিকট শব্দ। মানুষের আগমন বা বিদায় বেলার কত শত ঘটনা। তারই মাঝে চোখ জোড়াকে আকর্ষণ করে একটি মহিলাকে যে কিনা প্রতিদিনই এখানে এসে দাঁড়িয়ে থাকে।

ঠিক দাঁড়িয়ে থাকেনা,কারও জন্য অপেক্ষা করে। তার হাতে থাকে একগুচ্ছ ফুল আর একটি ছবি। কখনও অর্কিড,কখনও লাল গোলাপ,কখনও বা টিউলিপ। তার শ্যামলা মুখশ্রী,সাদামাটা শাড়ি,লম্বা ছড়ানো চুল,মায়াবী অশ্রুসিক্ত চোখজোড়া তাকে আরও রহস্যময়ী করে তুলেছে। তাকে একপলক দেখলেই বোঝা যায় তার সমগ্র সত্তাকে ঘিরে রয়েছে কোন এক বিষন্নতা,একাকীত্বতা।

খুব ইচ্ছে করছিল তাকে প্রশ্ন করি কি এমন তার কষ্ট যা তার চেহারায় স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। কেন সে প্রতিদিন এখানে আসে?কে সে ব্যক্তি যে তাকে মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে এখনও ফিরে আসছেনা?কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলাম কী দরকার তার কষ্টকে বাড়িয়ে তোলার?সে থাকুক না নিজেকে নিয়ে!!তাইতো আটত্রিশ বছর আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি আমার কাছে অজানাই থেকে গেল!!! আটত্রিশ বছর আগে। ২১শে এপ্রিল,১৯৭১ চারিদিকে যুদ্ধের ভয়াবহতা কেবল শুরু হয়েছে। সবাই যুদ্ধ করতে যাচ্ছে। সেরকমই এক সময়ে রুহি বুঝতে পারলো সে মা হতে যাচ্ছে।

প্রথম মা হওয়ার যে আনন্দ তার বদলে ওর মন অজানা আশন্কায় কেঁপে উঠল। এ ভ্য়াবহতার মধ্যে কিভাবে ও এ সন্তানকে আগলে রাখবে সে?আজই তার স্বামী মুহিনকে সব খুলে বলবে যেন তাকে বাবার বাড়িতে রেখে আসে। কিন্তু কে জানতো তার জন্য আরও ভয়াবহতা অপেক্ষা করছে?কেবল একজন বন্ধুকে জানিয়েই যুদ্ধে চলে গেল মুহিন আর সেই বন্ধুর কাছে দিয়ে গেল রুহির জন্য চিঠি। যে চিঠিতে মুহিন লিখেছিল তাকে ক্ষমা করে দিতে। রুহি হয়তো ক্ষমা করে দিয়েছিল মুহিনকে,কিন্তু তাদের অনাগত সন্তানের খবর কোনদিন মুহিন জানতে পারেনি এরজন্য কি ক্ষমা পেয়েছিল মুহিন? আবার ফিরে আসি বর্তমানে।

২রা জুন,২০১০ মুহিন ফিরে আসবে না একথা বুঝতে পেরেই বাবার বাড়িতেই বাকি জীবনটা পার করেছে রুহি। এবং সত্যিই মুহিন ফিরে আসেনি। আর জানতেও পারেনি তার একটি ফুটফুটে মেয়ে হয়েছিল যে আজও তার বাবার জন্য প্রতিদিন রেলষ্টশনে এসে অপেক্ষা করে। যার হাতে থাকে একগুচ্ছ ফুল আর একটি ছবি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।