আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নন্দিত-নিন্দিত সাবেক রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ

ইমানের পরীক্ষা হয় সংকট কালে। ইমানের পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত থাকুন।

তিনি আমার অনেক প্রিয় এক জন মানুষ। ১৯৯০ সালে সবাই যেন এক বাক্যে তাকে বেছে নিয়েছিল নিরপেক্ষতার মূর্ত প্রতীক হিসাবে। কিন্তু তিনি কতটা সঠিক ছিলেন সেই প্রশ্ন তো আসতেই পারে।

বিচারপতি এএসএম সায়েম থেকে শুরু করে বিচারপতি কে এম হাসান সবাই ব্যবহৃত হয়েছেন রাজনৈতিক ভাবে। ফলে বিচারপতিগণ সংবিধানের সংরক্ষণের ক্ষেত্রে পুরোপুরি মনোযোগ দিতে পারেন নি। এটা একটা দুঃখের কথা। এ দুঃখ সবার। ১৯৭৫ সালে বিচারপতি সায়েম যেমন পারেননি সংবিধানকে সমুন্নত রাখতে তেমনি বিচারপতি সাহাবুদ্দিনও ১৯৯০ সালে চরম ভাবে উদাসীন ছিলেন সংবিধানের প্রতি।

এই কারণে একই সাথে তিনি ছিলেন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও প্রধানবিচারপতি। তবে মূলত: তিনি ছিলেন এরশাদের উপরাষ্ট্রপতি। ব্যাপারটি কেমন যেন দৃষ্টিকটু লাগে। আমাদের মাননীয় বিচারপতিরা অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক পদ-পদবীর লোভের উর্ধ্বে উঠতে পারেননি। আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের দুভার্গ্য সেখানেই।

ফলে আমরা দেখতে পাই, বিচারপতি সায়েম হন রাষ্ট্রপতি। আরো কয়েক জন বিচারপতি আবার উপরাষ্ট্রপতিও হন। কিন্তু বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ আরো ব্যতিক্রম। নয় বছরের গণআন্দোলনের পর সেনাশাসক এরশাদ ক্ষমতা ছাড়তে রাজী হন ১৯৯০ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে। তিন জোটের নেতারা খুঁজে কোন নিরপেক্ষ লোক পাননি যার কাছে এরশাদ ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে বিদায় নিতে পারেন।

অবশেষে তারা গিয়ে ঠিক করলেন ততকালীন প্রধান বিচারপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদকে। তিনি কিন্তু সাবেক বিচারপতি ছিলেন না। এক জন দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি হিসাবে তিনি যে অপ্রিয় কাজটি করলেন তা হলো, প্রধান বিচারপতি থাকা অবস্থায়ই তিনি এরশাদের উপরাষ্ট্রপতির পদ গ্রহণ করলেন। এটা কি ভাবা যায়! একজন প্রধানবিচারপতির কাছে এটা অপ্রত্যাশিত। তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম, তিনি ছাড়া দেশে আর কেউ নিরপেক্ষ লোক একজনও ছিলেননা।

তাহলেও বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ এর উচিত ছিল প্রধান বিচারপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে তারপর এরশাদের উপরাষ্ট্রপতির পদ নেয়া। তারপর এরশাদ পদত্যাগ করলে তিনিই হতে পারতেন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি। তিনি তা করতে চাননি। তিনি গাছেরও খেতে চেয়েছেন আবার তলারও কুড়াতে চেয়েছেন। একবার ভেবে দেখুন তো, কোন ব্যক্তি যদি ঐ সময়ে তার এই কাজের বিরুদ্ধে রিট করতো তাহলে কি হতে পারত? তাহলে তো আম আর ছালা দুটোই যেত।

ভাগ্য ভাল যে, কেউ রিট করেনি। অন্যেরা কি মনে করেন জানি না। তবে আমি বিচারপতিদেরকে অনেক মর্যাদার আসেন শ্রদ্ধা করি। তাদের কোন ত্রুটি মেনে নেয়া আমার কাছে অনেক কঠিন মনে হয়। কেননা, তারা জাতির শেষ ভরসার স্থল।

তাদের কাছে সবার প্রত্যাশা অনেক। তারপরও মেনে নিলাম তিন জোট এটা জেনেশুনেই হয়তো করেছে। কারণ জোটের কেউ মামলা না করলে আর কে করব? কার এতো সাহস আছে? কিন্তু ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর তিনি যখন সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে আবার প্রধানবিচারপতি পদে ফিরে গেলেন তখন ভাবলাম, না সব বোধ হয় ঠিকই আছে। কিন্তু আমার ভুল ভাঙ্গল ১৯৯৬ সালে ১২ ই জুনের নির্বানের পর। ঐ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে।

এই সরকারের কয়েক মাসের মধ্যেই তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাসের মেয়াদ শেষ হয়। নতুন নির্বাচনে আওয়ামীলীগের রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হন বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ। ব্যাপারটা মানতে কষ্ট হয়। ১৯৯০ সালে তিনি নিরপেক্ষ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসাবে নির্বাচন পরিচালনা করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি একটি দলের হয়ে কেন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করলেন? এতে কি তার নিরপেক্ষতার ইমেজ আর বজায় থাকে? আবার নির্বাচিত হবার পর ও তিনি যেই দল তাকে রাষ্ট্রপতি বানাল সেই দলের সরকারকে অনেক নাকানী-চুবানিও খাইয়েছেন।

যেটার থেকে বিএনপি দেরীতে শিক্ষা নিয়ে ইয়াজ উদ্দিন আহমেদকে রাষ্ট্রপতি বানায়। বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ এক মাত্র রাষ্ট্রপতি যিনি সংসদে পাস হওয়া বিলে স্বাক্ষর না করে আবার সংসদে ফেরত পাঠান। এই রকম সাহস অবশ্য বি চৌধরী বলুন আর ইয়াজ উদ্দিনই বলুন কেউ দেখাতে পারতেন বলে মনে হয় না। বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় ৫ বছরে একবারো তার দলের ( যে দল তাকে নির্বাচিত করেছে) শ্লোগান “জয় বাংলা” বলেননি। কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনের পর গঠিত সংসদের প্রথম অধিবশেন প্রদত্ত ভাষণে বেশ আবেগ সহকারেই “বাংলাদেশ জিন্দবাদ” বলেন যা মানুষের দৃষ্টি এড়ায়নি।

দোষে-গুণে মানুষ। তবে অনেক বড় মানুষ যারা তাদের দোষ-গুণের ব্যাপারে সচেতন থাকা উচিত। কারণ তাদের গুণের কারণে যেমন অনেক মানুষ উপকৃত হয় আবার তাদের দোষের কারণে লাখ লাখ মানুষ অবলীলায় ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। শুধুমাত্র এক জন্য ব্যক্তির জন্য সংবিধান সংশোধন ভাবা যায়! বাংলাদেশে তাও হয়েছে। জিয়ার মৃত্যুর পর উপরাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তার যাতে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে পারেন তার জন্য সংবিধান সংশোধন করা হয়েছিল।

আবার একই কাজ ১৯৯১ সালে করা হল যাতে বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ আবার তার আগের পদে ফিরে যেতে পারেন যা একাদশ সংশোধনী নামে পরিচিত। আমাদের সংবিধানের একটি বড় দোষ আছে আছে অবৈধ সামরিক শাসকরা কাজে লাগাতে সফল হয়েছেন । তাহল পাপ করে পরে পাপকে জায়েজ করার সুযোগ । অর্থাৎ সব অসাংবিধানিক কাজ করার পর নিবাচন করে নতুন সংসদে সব জাযেজ বলে পাস করে নেয়া।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।