আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জলজ বৃক্ষ--শেষ পর্ব

আজ থেকে শুরু হল আমার ধারাবাহিক গল্প...আশা করি আপনাদের সবার ভাল লাগবে। ।

আবার সেই পুরোন পাতাবাহার গুলোকে নতুন করে বাঁচিয়ে তুলতে চাই...আচ্ছা, অইগুল তো বাসা তেই রেখে এসেছিলাম...এখনও কি বেছে আছে ওগুলো? নাকি মরে গেছে ইলার মত? ৩। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম টেরও পাই নি। ঘুম ভেঙ্গে একটু চা খেতে ইচ্ছে করল।

আয়া দের বললেই ওরা বানিয়ে দেয়। কিন্তু আমার ইচ্ছে করছে ইলার হাতের চা খেতে। ইলার চা টা খুব ভাল হত...একবার খেলে কেমন যেন নেশা ধরে যায়। আমি অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পরে জামা কাপর ছাড়ার ফাঁকে ও কেমন করে যেন তাড়াতাড়ি চা টা বানিয়ে ফেলত। বারান্দায় গিয়ে বসার সাথে সাথেই ও চা এর ট্রে নিয়ে হাজির হয়ে যেত।

কোন কোন দিন চা এর সাথে ওর হাতের বানান টা ও থাকত। চা এর কাপ টা হাতে নিতেই চা পাতার মিষ্টি একটা ঘ্রান আমার সারা দিনের সব ক্লান্তি কে এক নিমেষে দূর করে দেয়...আর আমার সবচেয়ে বেশি ভাল লাগত চায়ের উপর ভেসে থাকা দুধের সর। এখন সেই অভ্যাস টা যায় নি...আশ্রমের আয়া দের কে বললেই ওরা বানিয়ে দেয় মালাই চা। কিন্তু সেই চা কি আর ইলা বানায় যে ইলার মত হবে? চায়ের কাপ টা হাতে নিয়ে বসতেই বড় মেয়ে টার মোবাইল ফোন এর স্ক্রিনে ভেসে ওঠে...। ----হ্যালো , বাবা? কেমন আছো? ----হুম মা...ভাল আছি...তুই কেমন আছিস? রাশেদ কেমন আছে? ----হা বাবা...ভালই আছি...রাশেদ ও ভাল আছে...শুধু দিন কে দিন ওর ব্যস্ততা বাড়ছেই...ঘরে একদম সময় দেয় না...ছেলে টা বড় হচ্ছে...কাদের সাথে যে মেশে...দিন কে দিন বেয়াড়া হয়ে যাচ্ছে...।

একটা কথা বলে শুনাতে পারি না... ----শোন মা...এই বয়সের ছেলে রা একটু বেশি আবেগ প্রবন হয়ে থাকে...বকা ঝকা দিবি না...আদর করে বুঝিয়ে বলবি...কথা শুনবে। ---যাক গে বাবা...। সেসন কথা বাদ দাও... তোমার শরীর কেমন আছে সেটা বল। ওষুধ ঠিক মত খাচ্ছো তো? ---হ্যা রে মা...ঠিক মত খাচ্ছি। ---আশ্রম এর ওরা ঠিক মত যত্ন করে তো? ভাল ব্যবহার করে? ---হুম করে...একা ঘরে যাতে মরে পড়ে না থাকি সেজন্যি তো এইকাহেন থাকা...সমস্যা নেই...আমি মরে গেলে তোরা ঠিক এ খবর পাবি।

---ছি ছি বাবা...এসব কি বল তুমি? আমরা কি তোমার মৃত্যু চাই? মা নেই...তোমার যাতে যত্নের কোন ত্রুটি না হয় , যে দিন কাল পড়েছে...বাসায় যে কোন লোক রেখে দেবো তাও তো বিশ্বাস হয় না। কি যে করে...ভয় ই লাগে ----তা অবশ্য ঠিক...কিন্তু মা...নিজের বাসা তে একলা থাকাটাও শান্তি। এই বুড়ো বয়সে কি আর এইখানে থাকতে মন চায়? আমার তো ইচ্ছে করে সব নাতি পুতি নিয়ে, তোদের সবাই কে নিয়ে একসাথে থাক্তে...তোরা দেশে চলে এলেই তো পারিস...শেষ কটা দিন তোদের সাথে কাটাতাম -----বাবা, তুমি কি পাগল হয়ে গেছ? আসলে বয়স হয়ে গেলে নাকি মানুষ বাচ্চাদের মত জেদ করে...তুমি ই বলো, এখন ছেলে মেয়ে গুলোকে এনে কথায় ভর্তি করব? অনেক কষ্টে এখানে এসে সংসার টা গুছিয়েছি...এখন আবার দেশে ফিরে গেলে নতুন করে গোছাতে হবে। -----থাক মা...তোরা যেখানেই থাকিস ভাল থাক এই দোয়া করি... -----বাবা...একটা কথা বলি যদি কিছু মনে না কর। -----কি বলবি মা ? ----তুমি আরেকটা বিয়ে কর বাবা...তাহলে তো তুমি আমাদের পুরোন বাসা তেই থাকতে পারবে... -----এটা তুমি কি বললে মা? ওই বাড়িটা তোমার মায়ের...ওখানে তার স্থান নিয়ে কেউ যেতে পারবে না...আর শোন মা...মানুষের জীবন টা জলজ বৃক্ষের মত...জলের সন্ধান পেলে গজিয়ে ওঠে...আর জলের অভাব হলে মরে যায়...বেশি দিন বাঁচে না...আমার জল ফুরিয়ে গেছে ।

। শীঘ্রই আমিও মরে যাব...। জল ছাড়া কত দিন বাচাঁ যায়?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।