আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিষ দাঁত



প্রথম অংক প্রথম দৃশ্য (গ্রামের রাস্তা। আদিল শেখ ও জমির খাঁ কথা বলছে। ) আদিল: জমির সবকিছু ঠিকমত চলছে তো? গাড়িতে ওঠানোর সময় কোন ফেন্সিডিলের বোতল ভাঙ্গেনিতো? গাঁজা, হেরোইন কতটুকু দিয়েছিস? মাল বোধহয় এখনো পোছাইনি, কারণ করিম সাহেব তো একনো ফোন করল না। জমির: না বস আজ কোন ফেন্সিডিলের বোতল ভাঙ্গেনি। গাজা দিয়েছি আড়াই কেজি আর হেরোইন ২৫০ গ্রাম।

ওস্তাদ ফেন্সিডিলের ব্যবসা করতে আর ভাল লাগে না। মাল বেশি কিন্তু দাম কম। তাই পাচার করতে ঝুকিও বেশি। তার চেয়ে বরং হেরোইনই ভাল। মানিব্যাগের মধ্যেও লাখ লাখ টাকার হেরোইন পাচার করা যায়।

বস চারি দিকে হেরোইনের কাস্টমার তৈরি করতে পারলে আমাদের আয়ও বাড়বে ঝুকিও কমবে। তখন ফেরিওয়ালা সেজেও হেরোইন পাচার করা যাবে। আদিল: হ্যা তুই ঠিকই বলেছিস। এখন থেকে আমাদের হেরোইনের কাষ্টমার বাড়াতে হবে। সাথে কোকেন আমদানি করে যুব সমাজের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে।

(মোবাইলের রিং বেজে ওঠে, আদিল কল রিসিভ করে)। হ্যালো করিম সাহেব। মাল কি পৌছেছে? সব মাল বুঝে পেয়েছেন? শোনেন ভাই আগামী কাল জমির আপনার কাছে টাকা আনতে যাবে। আগের পাওনাগুলো পরিশোধ করে দিয়েন। আর একটা কথা ভাই আস্তে আস্তে ফেন্সিডিলের ব্যবসা ছেড়ে দিতে হবে।

হেরোইনের কাষ্টমার বাড়ান, আর নতুন করে কোকেইন চালু করতে হবে। এসব মালে অল্পতেই ব্যবসা হয়। মাল পাচার করতে ট্রাক পিক আপ লাগে না যে কেউ আন্ডার প্যান্টের মধ্যে পুরেও পাচার করতে পারে। এ্য . . . . . (কয়েক সেকেন্ড থেমে) আরে না না পুলিশকে মাসোহারা দিচ্ছি না? প্রয়োজনে মাসোহারার পরিমাণ বাড়িয়ে দেব। আরে টাকা হলে পুলিশের বউ পর্যন্ত কিনে ফেলা যায়।

(বাইরের দিকে উঁকিঝুঁকি মারতে মারতে) ঠিক আছে তাহলে আগামী কাল জমির আপনার কাছে যাবে। (ফোন রেখে) এই জমির সুন্দরী মালটা কে যায় রে? জমির: বস ও তো আপনার ভাইজি সাবিনা। আদিল: নাউজিবিল্লাহ! তওবা তওবা। জমির: বস আমি আজ বিকালে ট্যারা বিশু আর খুড়া শামসুরে নিয়ে জগদীশপুর বাজারে যাব। ওখানে বেশকিছু বেকার যুবক ছেলে বিকেলে স্কুল মাঠে আড্ডা মারে।

দেখি ওদেরকে হেরোইনের নেশা ধরানো যায় কিনা। আদিল: হ্যা অবশ্যই যাবি। আমি বিকালে আবার একটি শালিশ করতে যাব। কেরামত আলীর মেয়ে নাকি শ্বশুর বাড়ি যেতে চায় না। ওর স্বামী নাকি নেশা করে।

জমির: বস সে তো তাহলে আমাদের কাস্টমার। আদিল: নেশাখোর হলেই তো আর আমাদের কাষ্টমার না। সে যদি আমাদের ব্যবসার আওতাভূক্ত হয়ে থাকে তাহলে বিচার হবে এক রকম, আর যদি দূরের হয় তাহলে বিচার হবে অন্য রকম। হা হা হা হা হা। জমির: হা হা হা।

( দুজনেরই প্রস্থান) দ্বিতীয় দৃশ্য (জাহিদ ও সমীরের প্রবশ) জাহিদ: আদিল শেখ আর তার চামচা জমির খা শুধু আমাদেও নারায়ণপুর গ্রাম নয়। আশেপাশের গ্রামগুলিতেও মাদকের থাবা বিস্তার করেছে। এলকার যুব সমাজ ধ্বংস হতে চলেছে। সমীর, আমরা মুখবুজে এগুলি সহ্য করতে পারিনা। সমীর: তুই ঠিকই বলেছিস জাহিদ।

এদেরকে সময়মত প্রতিরোধ করা না গেলে এলাকার শতশত যুবকের জীবনই শুধু ধ্বংস হবে না, ধ্বংস হবে তাদের পরিবারগুলিও। আমাদের উচিত এই যুবসমাজ ও তাদের পরিবারগুলিকে বাঁচানো। নইলে মাদকের এই অভিশাপ একদিন আমাদেরকেও গ্রাস করবে। জাহিদ: হ্যা ইদানিং এলাকায় চুরি ছিন্তাই বেড়ে গেছে। এইতো গত পরশু সন্ধায় জাফর আর সঞ্জয় বাজার থেকে ফিরছিল।

বটতলার মোড়ে ওতপেতে থাকা ছিন্তাইকারীরা ওদের কাছে থাকা টাকা মোবাইল সব কেড়ে নিয়েছে। জাফর বলল ছিনতাইকারীদের একজনকে ওর চেনাচেনা মনে হয়েছে। সমীর: চেনাচেনা মনে হয়েছে? চিনতে পারেনি? জাহিদ: তাকে নাকি দেখতে কেরামতের জামাই সদর আলীর মত। জাফর অন্ধকারে ঠিকমত চিনতে পারেনি। শুনেছি সদর আলী নেশা করে।

নেশাখোরেরা নেশার টাকা যোগোড়ের জন্য কোন অপরাধ করতেই দ্বিধা করে না। সদর আলী নেশার টাকার জন্য তার স্ত্রীকে মারধর করে। আজ সন্ধ্যায় এ নিয়ে কেরামতের বাড়িতে সালিশ আছে। সালিশে আদিল শেখ বিচার করবে। আদিল শেখ নিজেই মাদক ব্যবসায়ী, সে কি না বিচার করবে একজন নেশাখোরের।

সমীর: আদিল শেখকে যে করেই হোক প্রতিরোধ করতে হবে। এলাকার যুব সমাজকে সাথে নিয়ে তার বিষ দাঁত ভেঙ্গে দিতে হবে নইলে তার কামড়ে সমাজে পচন ধরবে। (উভয়ের প্রস্থান) তৃতীয় দৃশ্য (জগদীশপুর বাজারের একাংশ: জমির সুমন ও সাকিবের সাথে কথা বলতে বলতে প্রবেশ) জমির: আরে পৃথিবীটা কত বড় তা তোমরা জানো? তোমরা সারাদিন থাকো এই জগদীশপুর গ্রাম আর বাজারে। বাইরের খবর তো তোমরা রাখোই না। কতকিছু যে উপভোগ করার আছে।

আরে পৃথিবীটা হল উপভোগ করার জন্য। এই যে আমার কাছে দুটি মাল রয়েছে। এটা দিয়ে তোমরা জীবনটাকে যেমন খুশি উপভোগ করতে পার। সাকিব: আমি জীবনটাকে উপভোগ করতে চাই। কি আছে আপনার কাছে যা দিয়ে আমি আমার জীবনটাকে উপভোগ করতে পারব।

শালা রোজিনা আমাকে মোটেও পাত্তা দিতে চায় না। আজ তিন বছর ওর পিছনে ঘুরঘুর করছি। কিন্তু কিছুতেই ওর মন জয় করতে পারলাম না। বুকের মধ্যে সবসময় কুলকাঠের আগুণ জ্বলছে। জমির: আরে আমার কাছে ওই আগুণ নেভানোর ওষুধ রয়েছে।

সুমন: কি ওষুধ আছে আপনার কাছে। ওষুধে কোন সাইড এফেক্ট নেই তো? অজ দু’বছর হল একটি চাকরির চেষ্টা করছি। কিছুতেই কিছু হল না। শালার জীবনটাই আর ভাল লাগে না। জমির: (হেরোইনের পুরিয়া দেখিয়ে) শোন এই জিনিস ব্যবহারের পর তোমাদের কাছে পৃথিবীটা হয়ে যাবে রঙিন।

দেখবে তোমাদের চারপাশে হুরপরী নাচানাচি করছে। সাকিব: আমার রোজিনাও কি আমার সামনে নাচানাচি করবে। ওকে ছাড়া আমার জীবন বৃথা। জমির: আলবৎ নাচবে। রোজিনা ,শখিনা সবাই নাচানাচি করবে।

সাকিব: তাহলে দাও দাও বিষয়টি একটু পরখ করে দেখি। জমির: অবশ্যই দেব। কিন্তু তার আগে আমাকে ১০০ করে টাকা দিতে হবে। এই জিনিস তো আমার বাড়িতে তৈরি হয়না। আমাকেও এটা টাকা দিয়ে কিনতে হয়।

সাকিব: কিন্তু আমার কাছে তো ওতো টাকা নেই। সুমন: আমার কাছেও নেই। জমির: আমি তোমাদের জন্য অপো করছি। তোমরা টাকা নিয়ে এসো। সাকিব: চল সুমন দেখি টাকা যোগাড় করা যায় কি না।

(উভয়ের প্রস্থান) জমির: হা হা হা হা। ওষুধ ভালভাবেই ধরাতে পেরেছি। আমার আজকের মিশন প্রাথমিকভাবে সফল। আমাদের ব্যবসা এভাবেই এলাকার সব জায়গায় ছড়িয়ে দেব। (প্রস্থান) চতুর্থ দৃশ্য (জগদীশপুর বাজার: বাজারের থলি হাতে সুবল দাস ও আজগর আলীর প্রবেশ) আজগর: কি খবর সুবল বাবু।

কেমন আছ? সুবল: ভালই আছি। তুমি কেমন আছ? আজগর: ভা---ল। তবে ছেলেটার জন্য চিন্তা হয়। সে দিন দিন যেন কেমন হয়ে যাচ্ছে। আইএ পাশ করার পর তো আর পড়াশোনাও করল না।

সারাদিন কোথায় কোথায় যেন ঘুরে বেড়ায়। তা সুমন এখন কি করছে। ওর পড়াশোনা তো শেষ হয়েছে। কোন চাকরি-বাকরি পেল? সুবল: সুমন এমএ পাশ করেছে দু’বছর হর। এখনও কোন চাকরি পায়নি।

আজকাল ঘুষ আর যোগাযোগের লোক না থাকলে চাকরি পাওয়া মুশকিল। আমার কোন যোগাযোগের লোকও নেই, ঘুষ দেওয়ার মত টাকাও নেই। জানিনা ওর ভবিষ্যৎ কি হবে। (সুমন ও সাকিবের প্রবেশ) সাকিব: বাবা আমার একশ টাকা দরকার। এখনই লাগবে।

আজগর: এখন একশ টাকা কি করবি? সাকিব: রশিদ মামা একটি রেঞ্চ বিক্রি করবে। আমি ওটা একশ টাকা দিয়ে কিনে নেব। আমি স্যালো মেশিন মেরামতের কাজ শিখবো। আমি একশ টাকা দিয়ে রেঞ্চটি না কিনলে সে অন্যলোকের কাছে বিক্রি করে দেবে। নতুন রেঞ্চের দাম অনেক বেশি।

আজগর: ঠিক আছে নাও। (একশ টাকার একটি নোট সাকিবের দিকে এগিয়ে দিল, সাকিব তা গ্রহণ করল) তোমার যদি আরও কিছু টাকা লাগে আমি দেব। কিন্তু আমি তোমাকে বেকার দেখতে চায় না। সুমন: বাবা আমারও একশ টাকা লাগবে। সুবল: তোমার আবার কিসে টাকা লাগবে? সুমন: বিভিন্ন জায়গায় চাকরির দরখাস্ত করার জন্য টাকা লাগে।

সুবল: গতকাল তো একশ টাকা দিলাম। আজ আবার একশ টাকা লাগবে? সুমন: হ্যা গতকালের একশ টাকা ফুরিয়ে গেছে। অনেক জায়গায় দরখাস্ত পাঠাচ্ছি তো, তাই আজ আবার একশ টাকা লাগবে। সুবল: ঠিক আছে নাও একশ টাকা দেখ বেকারত্ব ঘোচাতে পার কি না? (সুবল একশ টাকার একটি নোট সুমনকে দিল) সুমন: চল সাকিব যাই। (সুমন ও সাকিবের প্রস্থান) আজগর: আজ আর বাজার করা হবে না।

একশ টাকা নিয়ে বাজারে এসেছিলাম, সাকি কে দিয়ে দিলাম। তবু যদি ওই একশ টাকা কাজে লাগিয়ে যদি স্যালোমেশিন মেরামতের কাজটি শিখতে পারে তাহলে কিছু রোজগার করতে পারবে। সুবল: আমিও তো সেই আশায় আছি সুমন একটি চাকরি পেলে সংসারে একটু স্বচ্ছলতা আসবে। আজ আমারও আর বাজার করা হবে না। আজগর ভাই চল চা খেয়ে বাড়ি যাই।

(উভয়ের প্রস্থান) পঞ্চম দৃশ্য (ঢুলতে ঢুলতে সাকিব ও সুমনের প্রবেশ) সুমন: সাকিব আসার সময় তো এখানে কোন পুকুর ছিল না। এই আধা ঘন্টার মধ্যে একানে পুকুর খুড়লো কারা। দেশের অনেক উন্নতি হয়েছে দেখছি। শালা আমার একটি চাকরি হতে এত সময় লাগছে কেন? সাকিব: আরে গাধা ঐ পুকুরপাড়ে আমার রোজিনা আসবে। দেখছিস না চারিদিকে কত ফুলের গাছ।

এই ফুল দিয়ে আমার আর রোজিনার ফুলশয্যা সাজানো হবে। সুমন: মনে হচ্ছে আমার ওজন কমে গেছে। কেমন যেন হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছি। সাকিব চল তো বাতাসে সাঁতরাতে সাঁতরাতে চাঁদে চলে যায়। দেখি ওখানে কোন চাকরি যোগাড় করতে পারি কি না।

সাকিব: আরে ব্যাটা সবুর কর। রোজিনা আগে আসুক। ওকে নিয়ে না হয় চাঁদেই ফুলশয্যা করব। ওইতো রোজিনা লাল শাড়ি পরে আসছে মনে হয়। চল ওকে নিয়ে চাঁদের দেশে চলে যাই।

(উভয়ের প্রস্থান) (চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।