আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

'উপজেলার মালিক আমি, না তুই?' খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ : ব্যাংকার ও কলাম লেখক

ভালো থাকার আছে যে উপায়......

শিরোনামটি আমার দেওয়া নয়। ধার করেছি সংবাদপত্র থেকে। তবে সংবাদপত্রও শিরোনামটির রচয়িতা নয়। তারাও উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে আবদ্ধ রেখেছে। শিরোনামটি যার কণ্ঠ থেকে নিঃসৃত, তিনি হলেন দিনাজপুর জেলার অন্তর্গত বিরল উপজেলার ক্ষমতাধর চেয়ারম্যান মোকাররম হোসেন।

বিরল উপজেলার বিরল ব্যক্তিত্ব বটে! ভুল হলো বুঝি! তাকে আমি উপজেলা চেয়ারম্যান বলে পরিচিতি দিয়ে আবার কোন ফ্যাসাদে পড়ি। ঢাকা এসে আমাকেই না আক্রমণ করে বসেন! কারণ তিনি নিজের পরিচয় নিজেই দিয়েছেন। বলেছেন, 'তিনি হলেন উপজেলার মালিক!' 'মালিক' আল্লাহতায়ালার নিরানব্বইটি সিফাতি নামের একটি। অর্থ 'সর্বস্বত্বাধিকারী'। বাংলা প্রতিশব্দ যুতসই হলো না।

'মালিক' যেহেতু আল্লাহর নাম, সেজন্য বিশ্বাসীরা নিজের নাম 'মালিক' রাখেন না। বিনয়ের সঙ্গে নাম রাখেন আবদুল মালেক। অর্থ হলো মালিকের দাস, আল্লাহর দাস। তবে প্রচলিত অর্থে পার্থিব কিছুর মালিকানা থাকলে মানুষ ওই জিনিসের মালিক বলে নিজেকে জাহির করে। যেমন_ 'এ বাড়িটির মালিক আমি', 'এ গাড়িটির মালিক ইয়াসিন সাহেব' ইত্যাদি।

এ ধরনের ছোটখাটো মালিকানার দাবি দূষণীয় ধরা হয় না। মোকাররম হোসেন দাবি করেছেন, তিনি নাকি বিরল উপজেলার মালিক! অবশ্য প্রকাশ করেননি, ক্রয়সূত্রে মালিক, নাকি উত্তরাধিকার সূত্রে? এতবড় একটি উপজেলার মালিক হলে তো বিরাট জমিদার! নাহ্, জমিদারিও অতবড় হতো না। এতবড় জমিদারি থাকলে তাকে বলা হতো 'নবাব'। যেমন ছিলেন ঢাকার ছোটখাটো নবাব সলিমুল্লাহ। বাংলার বড় নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা।

তাহলে মোকাররম হোসেন হলেন বিরলের নবাব বাহাদুর! নবাবি আমল শেষ। নবাবরা এখন ইতিহাসের পাতায়। জমিদারিও উঠে গেছে। জমিদাররা এখন গল্প-উপকথার নায়ক। সমাজের ভিলেন।

কেউ ছিলেন প্রজাহিতৈষী। কেউ আবার অত্যাচারীর প্রতীক। মোকাররম হোসেনের চৌদ্দপুরুষে জমিদারি দূরের কথা দু'একবিঘা জমির মালিকানা ছিল কি-না, আমরা জানি না। তাই বুঝি জমিদারি দাবি না করে এক লাফে 'নবাব' হতে চেয়েছেন! অতবড় 'উপজেলার মালিক' তো নবাব বটেই! নবাব সাহেবকে নিয়ে যখন লিখছি, তখনই টেলিভিশনের সান্ধ্য খবরে শুনতে পেলাম বিরলের মালিক নাকি এখন শ্রীঘরে! বেরসিক পুলিশের যতসব কাণ্ড! বিরল-মালিক নবাব সাহেবকে বন্দি করে ফেলেছে। তাহলে পুলিশ বুঝি শাহেনশাহ।

অর্থাৎ নবাবেরও মালিক! পাঠক, অস্থির হবেন না। ঘটনাটি খোলাসা করে শোনাচ্ছি। সূত্র : ৩০ এপ্রিল, ২০১০ শুক্রবারের সংবাদপত্র। আগের দিন অর্থাৎ ২৯ এপ্রিল বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) যথারীতি বিরল উপজেলা অফিসে বসে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

এক কলেজছাত্র তার বাবার চিকিৎসার জন্য সাহায্যের আবেদন নিয়ে অপেক্ষা করছেন কর্মকর্তার অফিসকক্ষে। কর্মকর্তা নথির কাজ শেষ করে মাথা তুললেই ছাত্রটি আবেদন পেশ করবেন। এরই মধ্যে ঝড়ের বেগে ইউএনওর অফিসকক্ষে প্রবেশ করলেন উপজেলা চেয়ারম্যান মোকাররম হোসেন। ঢুকেই ইউএনওর দিকে একটি কাগজ ছুড়ে মারলেন। সেসঙ্গে ছুড়ে মারলেন মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন, 'উপজেলার মালিক আমি, না তুই?' প্রশ্নটিকে শানিত করলেন আরও একটি প্রশ্ন দিয়ে, 'আমার কথায় উপজেলা চলবে, নাকি তোর কথায় চলবে?' উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়োজিত, সুশিক্ষিত, প্রশাসনিক কাজকর্মে প্রশিক্ষিত।

তিনি চুপ রইলেন। কী জবাবইবা দেবেন? কর্মকর্তার মৌনতায় উপজেলা চেয়ারম্যানের ক্রোধ আরও এক ডিগ্রি বাড়িয়ে দিল। হাতে পিস্তল ছিল না। অগত্যা হাতের কাছে পাওয়া পেপারওয়েটটি ছুড়ে মারলেন। টেবিলের কাচ ভেঙে চৌচির।

ইউএনও তখনও চুপ। তখনও বলছেন না, ' জাঁহাপনা, আপনিই উপজেলার মালিক! আল্লাহ চাহেন তো জেলার মালিক হবেন! দেশের মালিকও হবেন একদিন!' এমন মধুর বচন বেরুল না বেয়াদব অফিসারের কণ্ঠ থেকে। আরও খেপে গেলেন চেয়ারম্যান সাহেব! টেবিলের ওপর ছিল একটি ল্যাপটপ। অগত্যা ল্যাপটপটিকেই তুলে নিয়ে ছুড়ে মারলেন মেঝের ওপর। মানুষ পরম আদরে কোলে রেখে কাজ করে বলে ওর নাম ল্যাপটপ।

মাটিতে আছড়ে পড়ে ভেঙে খানখান। তার মৌনকান্না শুনতে পেল না কেউ। এরপরও জবাব নেই ইউএনওর কণ্ঠে। সহ্যসীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে! চেয়ারম্যান টেবিলের সামনে রাখা চেয়ারগুলোকেই আছড়ে মারলেন। এবার বুঝি ইউএনওকেই ধরে ফেলেন! অগত্যা ইউএনও মুখ খুললেন।

তিনি শান্ত কণ্ঠে চেয়ারম্যানকে জানালেন, 'উপজেলা পরিচালনা বিষয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছেন। ' তিনি চেয়ারম্যানকে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করার পরামর্শ দিলেন। আর যায় কোথায়? এতবড় বেয়াদবি! প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী আবার প্রধানমন্ত্রীর দোহাই দেয়! সহ্যের সীমা আছে তো চেয়ারম্যান সাহেবের! তিনি হলেন নবাব-উল-মূলক! তার মুলুকে প্রধানমন্ত্রী আবার কে? ব্যস্, পেপারওয়েটটি তুলে এবার ছুড়ে মারলেন কক্ষে টানানো প্রধানমন্ত্রীর ছবির ওপর। প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভূলুণ্ঠিত হলো। তারপর বীরদর্পে কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেলেন 'নবাব-উল-বিরল' উপজেলা চেয়ারম্যান মোকাররম হোসেন।

সংক্ষেপে এই হলো ঘটনা। চেয়ারম্যান সাহেব বিএনপিদলীয়। তাই ইউএনও সাহস করে মামলা করতে চেয়েছেন এবং পুলিশও সাহস করে চেয়ারম্যানকে ধরে শ্রীঘরে ঢোকাতে পেরেছে। চেয়ারম্যান সরকারদলীয় হলে উভয়েরই সাহস উবে যেত। চেয়ারম্যান হয়তো উল্টো ইউএনওকেই ধোলাই করে ছাড়ত।

আর পুলিশকে থাকতে হতো নিরাপদ দূরত্বে। ইউএনও আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর পুলিশ হয়তো বীরবিক্রমে ইউএনও অফিস তল্লাশি করে কক্ষ থেকে একটি বিড়ালছানাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যেত! একটি ঘটনা ঘটেছে। বিকল্পটিও ঘটতে পারত। নাগরিক সমাজ কি দেখেও না দেখার ভান করবে? মৌনতা অবলম্বন করবে? অথবা দার্শনিকের মতো উচ্চারণ করবে, 'আইন তার নিজের গতিতে চলবে। ' বিএনপি সমর্থকরা হয়তো বলবেন, 'একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নিয়ে এত বাড়াবাড়ি কেন? জনপ্রতিনিধি একজন আমলাকে শায়েস্তা করেছে তো কী হয়েছে?' আওয়ামী সমর্থকরা হয়তো বলবেন, 'দেখলেন তো বিএনপির চরিত্র? ওদের প্রতিষ্ঠাতা অস্ত্রের জোরে দেশের মালিক বনেছিলেন।

তাদেরই চেলা গায়ের জোরে উপজেলার মালিক বনতে চায়। ' আমরা সাধারণ নাগরিকরা গভীরভাবে মর্মাহত, ভীষণভাবে চিন্তিত। একজন উপজেলা চেয়ারম্যানের এই যদি মনমানসিকতা এবং কার্যকলাপ হয়, তাহলে উপজেলা চেয়ারম্যানদের দাবি অনুযায়ী ক্ষমতা প্রদান করা হলে তারা তো মোগল সুবাদারদের মতো স্বাধীনতা ঘোষণা করে বসবেন। উপজেলার বাসিন্দাদের প্রজা ভেবে কাউকে বসতবাটি থেকে উচ্ছেদ করবেন, কাউকে বিদ্রোহী মনে করে গুম করে দেবেন, কাউকে শাসিয়ে ঠাণ্ডা করবেন। আর রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের 'বহিরাগত' আখ্যা দিয়ে হয় আজ্ঞাবহ হয়ে থাকতে বাধ্য করবেন, না হয় দলীয় গুণ্ডা বাহিনী দিয়ে ঠ্যাঙাবেন।

কেউ হয়তো বলবেন, 'একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নিয়ে এতকথার অবতারণা কি ঠিক?' প্রকাশিত ঘটনা অবশ্য একটিই। অপ্রকাশিত ঘটনা কিন্তু অনেক। প্রধানমন্ত্রীর ছবি না ভাঙলে হয়তো এ ঘটনাটিও চাপা পড়ে যেত। পরিসংখ্যান শাস্ত্রে স্যাম্পল বা নমুনা সংগ্রহের যে তত্ত্বই থাকুক না কেন, বাঙালি গৃহবধূর কিন্তু নমুনাচয়নের অভ্রান্ত রীতি রয়ে গেছে। গৃহবধূ পানির মধ্যে চাল দিয়ে উনুনে হাঁড়ি চড়ান ভাত রান্নার জন্য।

কিছুক্ষণ পর খুন্তির মাথায় কয়েকটি চাল (স্যাম্পল) এনে তার মধ্যে মাত্র একটি চাল হাতে নিয়ে আঙুলে টিপে দেখেন। সিদ্ধ না হলে অপেক্ষা করেন। আর ওই একটিমাত্র চাল যদি সিদ্ধ হয়ে ভাতে রূপান্তরিত হয়, তাহলে রাঁধুনি হাঁড়ি চুলো থেকে নামিয়ে ভাত 'গড়' দিয়ে ফেলবেন। তিনি কিন্তু একটি একটি করে সব চাল টিপে দেখবেন না। এমনকি পরিসংখ্যানের তত্ত্বানুসারে নমুনা-সংখ্যা (স্যাম্পল-সাইজ) নির্ধারণ করে তৎসংখ্যক চালও তিনি টিপে দেখবেন না।

সব চালেরই ধর্ম এক। একটি সিদ্ধ হলে সব চালই সিদ্ধ হবে। এটি স্বতঃসিদ্ধ। চেয়ারম্যান মোকাররমের ঘটনাটিকেও বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনা বলে উড়িয়ে দেওয়ার অবকাশ নেই। উপজেলা চেয়ারম্যানদের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, 'জাতীয় সংসদে প্রণীত আইনে উপজেলায় জনপ্রতিনিধি হিসেবে চেয়ারম্যানের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব ও ক্ষমতা নির্ধারিত রয়েছে, ভাইস চেয়ারম্যানের ক্ষমতাও লেখা আছে।

আপনারা তদনুযায়ী কাজ করবেন। প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা হিসেবে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তার বিধিবদ্ধ দায়িত্ব পালন করবেন। উভয়ের সহায়তায় উপজেলা পরিষদ গতিশীল হবে। যেমন সুই-সুতা মিললেই সেলাই হয়। সুই একা বা সুতা একা সেলাই করতে পারে না।

' তিনি যথার্থই বলেছিলেন; কিন্তু চেয়ারম্যান মোকাররম হোসেন কি সে কথা বুঝেছেন? শুনেছেন? মেনেছেন? সুশীলবাবুরা (সুশীল সমাজ) উপজেলা শক্তিশালীকরণ প্রশ্নে চেয়ারম্যানদের ক্ষমতায়নে সোচ্চার। চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মেম্বার, নির্বাহী কর্মকর্তা_ সবার ক্ষমতা ও দায়িত্বের সমন্বয়ের কথা তারা বলেন না। সমন্বয়ের কথা উঠলেই সুশীলবাবুরা 'সব গেল, সব গেল' বলে চিৎকার জুড়ে দেন আর বলেন, উপজেলাকে দুর্বল করা হচ্ছে। সুশীলবাবুরা সুই-সুতার সমন্বয়ে সেলাই করা বোঝেন না। তারা বোঝেন, শুধু সুইকে ক্ষমতাবান করা, যাতে করে সুই সবাইকে খোঁচা মেরে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলতে পারে।

আশির দশকে উপজেলা পদ্ধতি প্রচলনের পর চেয়ারম্যানদের দুর্নীতির ব্যাপকতা নিয়ে সমালোচনার অন্ত ছিল না। জনগণের স্মরণশক্তির ক্ষণস্থায়িত্বের বদনাম থাকলেও সেসব কথা পুরনো পত্রিকার পাতায় রেকর্ড হয়ে আছে। তারপরও ক্রমেই উপজেলা নির্বাচনে শিক্ষিত লোকজনের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাচ্ছিল। উপজেলা পরিষদের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ প্রক্রিয়া বেশ সংহত হতে শুরু করেছিল। কিন্তু বিএনপির রোষানলে পড়ে উপজেলা পদ্ধতি বাতিল হয়ে গেল।

ইনস্টিটিউশন গড়া কঠিন ও সময়সাপেক্ষ। কিন্তু ভাঙা সহজ। বিএনপির অর্বাচীন হিংসায় একটি প্রতিশ্রুতিশীল ইনস্টিটিউশনের অকালমৃত্যু ঘটল। যা হোক, এটি আবার যাত্রা শুরু করেছে। বদ্ধ জলাশয়ে ময়লা জমে।

আটকে থাকা উপজেলা পদ্ধতিতেও মরিচা পড়েছে। ঘষে-মেজে ঠিক করতে সময় লাগবে। সাবধানতার প্রয়োজন রয়েছে। অপরীক্ষিত চেয়ারম্যানদের ক্ষমতায়নের নামে ইনস্টিটিউশন ধ্বংস করে কিছু দৈত্য-দানব সৃষ্টির প্রবণতা রোধ করতে হবে। উপজেলা পর্ষদকে ক্ষমতাবান করতে হবে।

চেয়ারম্যানকে নয়। আমাদের মতো সামন্ততান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন সমাজে নির্বাচিত পরিষদের একক ব্যক্তির অধিক ক্ষমতা তাকে গণতান্ত্রিক নেতা বানায় না; বরং তাকে গড়ে তোলে 'মালিক' হিসেবে, 'নবাব' হিসেবে, 'জমিদার' হিসেবে। সেজন্যই ক্ষমতার এমন বণ্টন প্রয়োজন, যাতে করে কেউ 'মালিক' বনে না যান। সম্মিলিতভাবে ক্ষমতাবান হন। সমন্বয় গড়ে ওঠে।

একজনের স্বেচ্ছাচারিতায় অন্যরা রাশ টেনে ধরতে পারে। নতুন ক্ষমতা পেলে তা কুক্ষিগত করা এবং স্বীয় স্বার্থে অপপ্রয়োগের প্রবণতা থাকে প্রবল। ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও অপপ্রয়োগ না করা এবং ন্যায়ানুগ প্রয়োগ করা অত্যন্ত পরিশীলিত একটি কৃষ্টি, যা ক্রমাগত চর্চা, অনুশীলন এবং 'চেক অ্যান্ড ব্যালান্স' পদ্ধতিতে ধীরে ধীরে সংহত হয়। উদাহরণ হিসেবে, সংসদীয় গণতন্ত্রের পীঠস্থান ব্রিটেনের কথা ধরা যাক। রাজার একক ক্ষমতা রাতারাতি জনপ্রতিনিধিরা পাননি।

রাজার ক্ষমতা খর্ব হলেও ক্ষমতা গেল ছোট রাজাদের হাতে অর্থাৎ হাউস অব লর্ডসের কাছে। লর্ডরা অভিজাত জমিদার শ্রেণীর। রাজার ছোট সংস্করণ। ধীরে ধীরে ক্ষমতা হাউস অব কমন্সে হস্তান্তরিত হলো। তাও আবার 'চেক অ্যান্ড ব্যালান্স' ঠিক রেখে।

হাউস অব কমন্সের সিদ্ধান্ত পরীক্ষা করে দেয় হাউস অব লর্ডস। হাউস অব কমন্সের জনপ্রতিনিধিরা কখনও চিৎকার করেন না তাদের ওপর লর্ডদের ক্ষমতা প্রয়োগের। এটিই 'চেক অ্যান্ড ব্যালান্স'। আজ কত শত বছর পর কথা উঠেছে হাউস অব লর্ডস সংস্কারের। গণতন্ত্র জারি করা যায় না।

গণতন্ত্রকে সাবধানতা ও যত্নের সঙ্গে লালন করতে হয়। জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হয়। অতি ধীরে ধীরে গণতন্ত্র সংহত হতে শুরু করে। জঙ্গি, সন্ত্রাসী, উচ্চাভিলাষী সেনাদের হাত থেকে গণতন্ত্রকে যত্ন সহকারে রক্ষা করতে হয়। মা-মুরগি যেমন তার ছোট বাচ্চাদের রক্ষার জন্য ভয়াল মূর্তিতে আক্রমণকারী পশুপাখিকে ধাওয়া করে, তেমনি অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকায় থাকতে হয় গণতন্ত্রমনা নাগরিকদের।

যেন জনপ্রতিনিধিরা 'নবাব' না হয়ে ওঠেন। মালিক বনে না যান। নবযাত্রার শৈশবকালে উপজেলা পরিষদে যেন 'মালিক' বা 'নবাব' সৃষ্টি না হয়, মাফিয়াদের উদ্ভব না ঘটে, সেদিকে তীক্ষষ্ট দৃষ্টি রাখতে হবে সবার। পরিষদে 'চেক অ্যান্ড ব্যালান্স'-এর মাধ্যমে চেয়ারম্যানদের 'মালিক' বনার সামন্ততান্ত্রিক প্রবণতার রাশ টেনে ধরা যেতে পারে। সুশীলবাবুদের তাত্তি্বক হৈচৈ শোনার সময় বা অবকাশ কোনোটিই জাতির নেই।

সুশীলবাবুরা ইচ্ছা করলে উপজেলায় গিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে পারেন। তাহলেই টের পাবেন কত ধানে কত চাল।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।