আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক দিন চলে যাবো...

স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে মায়ের ভাষা বাংলায় মাতৃভূমির কথা বলি।

একদিন চলে যাবো..., চলে যাবো বহু দুরে যেথায় খুজে পাবে না কেউ আমাকে । আমি চলে যাবো -, এই মায়া ভরা পরিবার ছেড়ে; চলে যাবো-.. সবুজ শ্যামলিমা ঘেরা লোকালয় হতে; চলে যাবো-.. মা, মাটি প্রিয়জনকে ছেড়ে; চলে যাবো-.. পোড়া মাটির ঘর, উঠোনের কুয়োঁ আর ধান ভাঙ্গা ঢেকীঁ ছেড়ে। চলে যাবো-.. আম , জাম , ডালিম এবং মেহেদী গাছ বাড়ীর এক কোনে লাগানো পেয়ারা গাছ জানালার পাশ দিয়ে বেড়ে উঠা সু-উচ্চ নারিকেল গাছ ছেড়ে। চলে যাবো-.. সবুজ ধানের বিতৃন্ন প্রান্তর ছেড়ে বাশেঁর ঝাড়, পানের বরজ, গজিয়ে উঠা লাউয়ের মাচাঁ ছেড়ে; চলে যাবো-.. সেই ছোট পুসকুনিটি ছেড়ে যেখানে স্নান করে গায়েঁর বধু, শিশু-কিশোর, আবাল-বৃদ্ধা বণিতা।

দুরন্ত চঞ্চল বালকগুলির জল কেলি করা, হামাগুড়ি দিয়ে অবোধ শিশুটির পানি স্পর্শ করা। কলসিতে করে গায়েঁর বধুর পানি নিয়ে যাওয়া বোধ হয় আর হবে না দেখা। আর কখনো হবে না দেখা -, কৃষানীর নবান্ন উৎসব শীতের খেজুরের রস দিয়ে পিঠে খাওয়া - , ভাপা পিঠা, কুলসী পিঠা, তালের পিঠা সব হবে নিয়মিত কিন্তু আমার উপস্থিতি সেথায় রবে না। একদিন সবই স্বাভাবিক হয়ে যাবে। ঘড়ির কাটা ঠিকই ঘুড়বে - অমোঘ নিয়মে দিন যেয়ে রাত আসবে সূর্য উদিত হয়ে অস্ত যাবে জোসনার চাদঁ আলোকিত করবে এই ধরনীকে মায়ের কোলে বসে শিশু চাদঁ মামার গল্প শুনবে; চাদেঁ বুড়ি কিভাবে চড়কা কাটে - তা ও শুনবে কিন্তু সেথায় আমি থাকবো না।

আমার এই যাত্রায় সাথী হবে না কেউ সবই চলবে পৃথিবীর অমোঘ নিয়মে। সন্ধ্যা হলে রাখালীর গরু নিয়ে গৃহে ফেরা গায়ের বধুদের কলসী কাখে পানি নিয়ে গৃহে ফেরা হারিকেন জ্বালিয়ে ছোট্র বাচ্চাদের পড়া চালিয়ে যাওয়া রাত্রিতে ডাহুকের ডাকে বাচ্চাদের আতঁকে উঠা দ্বি-প্রহরে মোরগের বানে মায়ের ঘুম ভাঙ্গা তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া, মায়ের সুললিত কন্ঠে পবিত্র কোরআন তেলওয়াত শ্রবণ করা-, মসজিদ হতে ভেসে আসা মোয়াজ্জিনের সুমধুর আযানের ধ্বনি, প্রভাতে কোকিলের সুমিষ্ট সুর আর হাসনা হেনার সুবাসিত গন্ধে সকালে ঘুম থেকে জেগে ওঠা হয়তো আর কখন হবে না। হবে না দেখা -, মেঠো পথ ধরে ফেরী ওয়ালার চুড়ি নিবেন চুড়ি বলে চলে যাওয়া পথের ধারের করিম চাচার চায়ের স্টল হতে আর হবে না খাওয়া লেবু চা। স্কুল মাঠে বসে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া-, গ্রামের মুরব্বী আমির দাদুর কাছ থেকে গল্প শুনা ভর দুপুরে বিলে মাছ মারতে যাওয়া বর্ষায় কাদায় পিছলে পরে সকলের হাসিঁর খোরাক হওয়া বট গাছের তলায় বসে আপন মনে বাশিঁ বাজানো; আর হবে না। তবুও আমার বিদায়ে বিস্মৃত হবে না কেউ শুধু সাময়িক শূন্যতার সৃষ্টি করবে- কিছু দিন তারপর সব শূন্যতা পরিপূণ্যতা পাবে স্বোতস্বীনি নদী যেমনি করে বাক নিতে গিয়ে হোচট খায় আমার চলে যাওয়াও তেমনি হবে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।