আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রমণ সুখ - ২



মর্জিনার বিয়ে ঠিক হয়েছে এ কথা শুনে রফিক মাস্টারের মূর্ছা যাবার দশা। পৃথিবীর সকল কৌতহল নিয়ে জানতে চাইল, তুমি সত্যি বলছো তো করিম? হ্যাঁ স্যার, সত্যি বলছি। অস্ফুট স্বরে রফিক মাস্টার বলে, এতটুকুন মেয়ে সংসার জীবনের কী বুঝবে? ছেলের বয়স তো অনেক বেশী। শাল্লা গ্রামের মফিজ মেম্বারের ছেলে গায়ে গতরেও বেশ সামর্থবান। হবে না কেন? ওদের তো আর খাওয়া-পড়ার কষ্ট নেই।

কয়েক গ্রামের মধ্যে ওরাই বিত্তশালী। মেয়েটির অন্যরকম কষ্টের কথা ভেবে মাস্টার সাহেবের গাঁ শিউরে উঠে। বিয়ের তৃতীয় দিনে সাত সকালে মফিজ মেম্বারের বাড়ীতে গ্রামের মহিলাদের ভিড় পড়ে। মফিজ মেম্বার বাড়ীর লোকদের মত অন্যদেরও মন খারাপ। এদিক সেদিক গোমড়া মুখে কেউ দাড়িয়ে, কেউ বসে।

অন্ধকার রাতে মর্জিনার পলায়ন তাদের কাছে এক বিস্ময়কর ব্যাপার। প্রায় তিন মাইল দূরে সুলতান পুর গ্রামে মেয়েটি একা একা গেল কিভাবে? মধ্য বয়সের কিছু মহিলা বলাবলি করছিল, মেয়েটির না পালিয়ে উপায় আছে? এত বড় তাগড়া ছেলের সাথে এই দুধের মেয়েটিকে বিয়ে দিল কোন আক্কেলে? মর্জিনার দাদি লালবানু শেষ রাতে মর্জিনার ডাক শুনে ভয়ে তটস্ত হয়ে পড়ে। পড়ি পড়ি অবস্থায় দরজা খুলে দেখে সুটকেস হাতে মর্জিনা দাড়িয়ে। অজানা শঙ্কায় লালবানুর বুক ধক ধক করতে থাকে। হারিকেনের আলোতে মর্জিনার ঠোঁটে-মুখে তাগড়া পুরুষের মর্দামির কোন আলামত আছে কিনা, তা খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলো লালবানু।

মনে মনে ভাবছে, বুবু কি সইতে না পেরেই পালিয়ে এলো? লালবানু মর্জিনাকে জড়িয়ে ধরে। সোহাগ করতে করতে বলল, কী বুবু, মানুষটা তোমারে খুব বেশী কষ্ট দিয়েছে? মর্জিনা কোন কথা বলে না। লালবানু মর্জিনার গতরে সোহাগী হাত বুলাতে বুলাতে দরদী গলায় জানতে চাইল, বুবু বলনা কেন পালাইয়া আইছ? এবার মর্জিনা চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলে- দাদি, গোলা ভরা ধান আর গোয়াল ভরা গরু থাকলেই সংসার সুখের হয় না। এর জন্য আরো কিছুর দরকার আছে। ঐ মানুষটার সে জিনিষ নাই! লালবানু বিস্ময়ের ঘোরে ভাবে সপ্ন দেখছি না তো?


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।