আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেক্যুলারিজম, রবীন্দ্রনাথ ও রাখাল ছেলের দল

I Love Bangladesh

বাংলাদেশে একথা প্রায়ই বলার চেষ্টা করা হয় যে, রবীন্দ্রনাথ হচ্ছেন আমাদের জাতীয় চেতানার উৎস। বাংলাদেশের অনেক পন্ডিত ও সংস্কৃতি সেবীরা মনে করেন তিনি হচ্ছেন বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রাণশক্তি। আমাদের জাতীয় চেতনার অন্যতম উৎস হলো বাংলা ভাষা। আর রবীন্দ্রনাথ ছিলেন বাংলা ভাষার মহান কবি। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো তার বিশালায়তন সাহিত্য সৃষ্টিতে এমন কিছু নেই যা বিশেষভাবে বাংলা ভাষাভাষী মানুষকে একটি পৃথক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় অনুপ্রাণিত করতে পারে।

রবীন্দ্রনাথ কখনও বাঙালিদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র চাননি। তিনি যা চেয়েছিলেন তা হচ্ছে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের আওতায় বাংলা ভাষাভাষি মানুষের মুক্তি। এই কারনে তিনি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষপাতিও ছিলেন না। রবীন্দ্রনাথ বুহ জায়গায় খোলামেলা বলেছেন, হিন্দি হওয়া উচিত নিখিল ভারতের রাষ্ট্রভাষা। শান্তি নিকেতনের এক অনুষ্ঠানে হিন্দির পক্ষে রবীন্দ্রনাথের এরকম মন্তব্যের প্রতিবাদ করেছিলেন ড. শহীদুল্লাহ।

আবুল ফজল, মোতাহার হোসেন চৌধুরীর মতো প্রগতিশীল ভাবুকরা বহুবার রবীন্দ্রনাথের সাথে নানা সূত্রে যোগাযোগ করে জানতে চেয়েছেন, মুসলমান সমাজ নিয়ে তার উদাসীনতার কথা। এর সদুত্তর তারাও পেয়েছিলেন বলে মনে হয় না। এ কারণেই আওয়ামীলীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং পাকিস্তান আন্দোলনের সাংস্কৃতিক ব্যাখ্যাতা আবুল মনসুর আহমদ লিখেছিলেন, 'বিশ্বকবির বিশ্ব ভারতীয় বিশ্বে কতবার শারদীয় পূজায় আনন্দময়ী মা এসেছে গিয়েছে, কিন্তু একদিনের তরেও সে বিশ্বের আকাশে ঈদ-মোহররমের চাঁদ ওঠেনি। ' আবুল মনসুর সাহেবের তাই সুস্পষ্ট মতামত ছিল, মেজরিটি বাঙালির সঙ্গে নাড়ীর যোগ না থাকলে কেউ জাতীয় কবি হতে পারে না- হতে পারে না জাতীয় চেতনার উৎস। এ কারণেই তিনি মেজরিটি বাঙালির জন্য জাতীয় সাহিত্য নির্মাণের ডাক দিয়েছিলেন।

বৃটিশরা এ দেশ থেকে বিতাড়িত হোক তা রবীন্দ্রনাথ চাননি। যেসব তরুন বল প্রয়োগ করে বৃটিশদের তাড়াতে চান তাদের সমালোচনা করে তিনি চার অধ্যায় উপন্যাস লেখেন। বৃটিশ সরকার এ উপন্যাসের হাজার হাজার কপি বিলি করে স্বাধীনতা আন্দোলনের দায়ে আটক তরুনদের মধ্যে। শরৎচন্দ্র ছিলেন বিপ্লবীদের পক্ষে। তিনি লিখেছিলেন পথের দাবি উপন্যাস।

ফলে বৃটিশ সরকার পথের দাবি বাজেয়াপ্ত করে। অনেকে চেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ এর প্রতিবাদ করুক। তিনি তা না করে উল্টো শরৎচন্দ্রকে র্ভৎসনা করেছিলেন। মোটের উপর রবীন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন বৃটিশ সরকারকে টিকিয়ে রাখতে। অনেক সময়ই তিনি ভারতে বৃটিশ শাসনকে ঈশ্বরের শাসনের সঙ্গেও তুলনা করতেন।

বঙ্গভঙ্গ রদের পর বৃটিশ সরকার ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। এতে বাঙালি হিন্দুরা ক্ষেপে যায়। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করে। এমনকি ঢাকার হিন্দুরাও চায়নি ঢাকায় একটা বিশ্ববিদ্যায় হোক। তারা মনে করেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হবে একটা মুসলমান বিশ্ববিদ্যালয় আর মুসলমানের ছেলেরা লেখাপড়া শিখে তাদের পাতে ভাগ বসাবে।

মজার ব্যাপার হচ্ছে রবীন্দ্রানাথের মতো বিশ্বকবিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন। আজ যেসব রাখাল ছেলেদের রবীন্দ্র বিলাস পেয়ে বসেছে তারা জানে না তাদের দেবতাতুল্য মানুষটি রাখাল ছেলেরা লেখাপড়া শিখে সমাজের উপর তলায় উঠে আসুক এটা কখনোই চাননি। (ফাহমিদ-উর রহমানের লেখা থেকে)

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.