আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হুমায়ূন,হিমু,শুভ্র,মিসির নাকি অবাধ্য পাঠক ?

তাঁকে ধন্যবাদ,এখনো বাঁচিয়ে রাখার জন্য লেখার শুরুতেই এই অধম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছে,হুমায়ূন সাহিত্য নিয়ে লেখার মত যোগ্যতা বা ক্ষমতা(দুইটাই মনে হয় সমার্থক শব্দ ) কোনোটাই এনার নেই । যাই হোক ,সামুর বদৌলতে চামচিকাও এখন লেখক(কাউকে আঘাত করতে নয়,নিজের তুচ্ছতার তুলনা করতে এটা ব্যবহার করলাম । ) তাই সেই সুযোগটাই আমি নিচ্ছি হুমায়ূন আহমেদ এর প্রথম যেই বইটা আমি পড়ি তা হল বাঘ বন্দী মিসির আলী । তখন বইয়ের পোকা ছিলাম । তাই যা সামনে পাইতাম পড়ে ফেলতাম ।

তখন খুবই ছোট ছিলাম বলে গল্পটার কোয়ার্টার ভাগও বুঝেছি কিনা সন্দেহ আছে । যাই হোক গল্প টা কিছুটা মনে থাকলেও পুরোপুরি মনে নাই । তবে একটা কথা মনে আছে ঐ বইটার মাঝা মাঝিতে কয়েকটা পাতা ছিল না । কি বুঝতাম জানি না ,রাগ হয়েছিল খুব । বইটা ছিড়ে ফেলার মত দুঃসাহস দেখাতে না পারলেও বইটা আর পড়িই নাই ।

ধীরে ধীরে হুমায়ূন আহমেদ এর সাথে বেশ ভালো পরিচয় হল । তখন খুবই ভাল লাগত । ডুবে যেতাম । তার যেকোন সিরিজের নতুন বইয়ের খোঁজে থাকতাম । হিমু সিরিজ বেশি পড়তাম ।

মিসির আলী খুব কমই পড়তাম । তবে যতই বড় হতে লাগলাম ততই বুঝতে পারলাম হিমু সিরিজের গল্প গুলা প্রায় একই ধাঁচের । হিমু সিরিজের একটা বই পড়লে বাকি বই গুলাতে কি কি হইতে পারে সেটা বুঝে ফেলা যায় । তো ভাল না লাগা শুরু হল । তারপরেও পড়তাম হিমুর বই ।

তবে যখনই দেখতাম আমার মনের সাথে কাহিনী মিলে যাচ্ছে বাকিটুকু পড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলতাম । গল্পের শুরুতেই ধারণা করে নিতাম যে হুম এই গল্পে হিমুর প্রেমে পড়বে কেউ না কেউ , কেউ তাকে গালি দিবে,সে আজব কিছু কাজ কারবার করবে ইত্যাদি ইত্যাদি । এরকমই আসলে হচ্ছিল বিষয়টা । একঘেয়ে লাগত । যে জিনিসটা বুঝলাম তা হল রিডার যেই হোক না কেন,প্রথমেই সে গল্পের নায়ক আর ভিলেন কে খুঁজে বের করে।

আমরা যে ভাবে ভিলেন কে চিহ্নিত করি,তা হল তাকে শয়তান টাইটেলটা দিয়ে দেই । হিমুর গল্পে তথাকথিত কোন শয়তান ছিল না । গল্পের শেষে এসে সবাই ভাল হয়ে যেত,তাই প্রথমে ভালই লাগত। তবে একসময় একঘেয়ে লাগে,সব গল্পের পরিণতি প্রায় একই রকম । আমাদের মত পাঠকদের ব্যপারটা হল,যে আমরা সবসময়ই চাই যাতে গল্পের নায়ক যাতে সবকিছুতেই জয়ী হয় ।

তার ভাবসাব যাতে থাকে অন্যরকম । সে হয় মহান , ক্ষুদ্র কিছু কাজের মাঝেও যেন তার মহত্ব দেখা যায় । তবে সবগল্পেই যখন একই জিনিসের পুনরাবৃত্তি করা হয় তখন আর ভাল না লাগারই কথা । সবসময় তিনি চমক দেখাতে দেখাতে ঐ বিষয়টাকে স্বাভাবিক বানিয়ে ফেলেছেন । যে একটা গল্পের মাঝামাঝি পর্যায়ে এসে মনে হবে ,স্বাভাবিক ভাবে তো এইরকম হইত,এখন নিশ্চই তার উল্টোটা হবে ,ফলে এ বিষয়টা স্বাভাবিক হয়ে গেল ।

এ ক্ষেত্রে আমার অভিমত ছিল সব বইয়ে একি টাইপের চমক না রেখে মাঝে মাঝে স্বাভাবিক কিছু করা,যেটা বাস্তবতার সাথে যায়। গল্প আর বাস্তব কক্ষনো এক হতে পারে না। । আমি দুঃখিত হুমায়ূন আহমেদের বিশেষ কিছু বই ছাড়া আর কোন বইতেই এই জিনিসটা দেখতে পাই নাই । থোড় বড়ি খাড়া,খাড়া বড়ী থোড় ।

এই জিনিসটা দেখতে দেখতে হিমুর উপর বিরক্ত হয়ে গেলাম । তাই আবার শুরু করলাম মিসির আলী পড়া । বিচিত্র রহস্য সমাধান দেখতে ভালই লাগত । এই সিরিজটাই আমার খুব ভাল লাগে মানে লাগত । তবে মাঝে মাঝে সহজ সমাধান যখন মিসির আলীর সহকারী (লেখক) মিলাতে পারতেন না তখন হতাশ হয়ে যেতাম ।

একটা বই এ সাংকেতিক ভাষাটি ছিল ''আমা রপ ত্রক ন্যা । '' এই সহজ একটা কথা যখন লেখক (গল্পে) মিলাতে পারেন নাই ,রাগে দুঃখে মিসির আলী পড়াই ছেড়ে দিলাম । শুরু করলাম শুভ্র পড়া ,তাও একই রকমই লাগত । এখন সেসব বই আর পড়া হয় না । আর নতুন করে কিছু পড়ব তাও সম্ভব না ।

ডুপ্লিকেট বলতে যেহেতু কিছু নেই(আমার মতে),সেহেতু নতুন হুমায়ূন বলতে আর কিছু আসবে না। আমার খুব ইচ্ছা ছিল উনাকে জিজ্ঞেস করার,কেন উনি পাঠকদের বাস্তবতা আর কল্পনার মাঝামাঝি পর্যায়ে রাখতেন । উনি হয়ত বলবেন ওইটা গল্প তাই । আমার প্রশ্ন হল গল্প যদি মানুষকে বাস্তবতা থেকে দূরে সরিয়ে মায়াজালে জড়িয়ে রাখে,তবে সে গল্প পড়ার দরকার কি? বাস্তবতা কখনো গল্পের সমতুল্ল হতে পারে না । (নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি ।

) আমি আবারো ক্ষমা প্রার্থী । এই লেখার পাঠকদের কেউ আশা করি আমার এহেন কথাবার্তার ত্রুটি মার্জনা করবেন । ভাল থাকেন সবাই । ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৪২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।