আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এই দেশে হিটলার হওন দরকার

যারা উত্তম কে উচ্চকন্ঠে উত্তম বলতে পারে না তারা প্রয়োজনীয় মুহূর্তে শুকরকেও শুকর বলতে পারে না। এবং প্রায়শই আর একটি শুকরে রুপান্তরিত হয়।

সকালে বাসে করে যখন অফিসের দিকে যাচ্ছি তখন সারা পথ জুড়ে মানুষের ভিড়। মানুষের ভির দেখে আমরা অভ্যস্ত, তাই সেদিকে বেশি মনোযোগ দিলাম না, নিত্যদিনের ঘটনা। বাসটা ১০ নম্বর ক্রস করে ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যাচ্ছে...যেতে যেতে কাজীপাড়া, শ্যাওড়া পাড়া এরপর আস্তে আস্তে তালতলা।

এই সময়টাতে আমি সাধারনত আইডিবি ভবনের দিকে তাকানোর জন্য প্রস্তুত হই। যদিও এরপর চোখ আটকে গেল ডানদিকের বিশাল রাস্তাটার দিকে, একটা লম্বা লাইন সোজা পশ্চিমে যেয়ে বা দিকে বেঁকে গেছে। কিসের লাইন ঠিক ঠাহর করতে পারলাম না। রেডিওতে আরজে তখন বর্ননা করছেন এই ঐতিহাসিক দিনে কোন কোন মহারথি জন্ম গ্রহণ করেছেন। ২০শে এপ্রিল আজ হিটলারের জন্মদিন।

জন্মের সময় একজন শিশুই ছিলেন পরে বিকশিত হয়েছেন...দেবতা বা দানব হিসেবে। আইডিবি ক্রস করে বাসটা ডানদিকে ঘুরে গেল, আগারগাঁও এর রাস্তাটায় খোড়াখুঁড়ি চলছে অনেক। বাদিকে শক্তিশালী দুই প্রতিষ্ঠান এডিবি আর ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ঘাপটি মেরে পড়ে আছে। ঠিক তার পাশের পার্কে মড়ার মত শুয়ে আছে মাদকাসক্ত মানুষের দল। এটাও পুরাতন দৃশ্য।

শিশুমেলা পৌছাবার আগেই পঙ্গু হাসপাতালের কাছে নেমে গেলাম, একটা রাষ্ট্র, একটা জাতির, বৈষম্য ও বৈপরীত্যের ভয়াবহ চিত্রের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছি। সবই গা সওয়া হয়ে গেছে। হাঁটতে হাঁটতে রাস্তা পার হলাম ঠিক ওপারেই আশা টাওয়ার, উন্নয়ন এর কর্পোরেট কেন্দ্র, ব্রাক বা গ্রামীনের মতই। নিজেকে প্রশ্ন করছি, এই চাকুরেই কি হতে চেয়েছিলাম??? কোন এক বিদেশী এনজিওর চাকুরে?? উত্তর আসলে না, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চেয়েছিলাম অনেক অনেক ছোটবেলা থেকে। ঠিক এমন সময় কাকাতালীয় ভাবেই পিছনে দেখি জাহাঙ্গীরনগরের সবুজ বাস, শিক্ষক পরিবাহী।

আমি অভ্যাসবশত জানালার ফাঁকে চোখ রাখলাম, দেখি আমার বিভাগেরই চেয়ারম্যান পাশে নতুন জয়েন করা কলিগকে বসিয়ে কি যেন বোঝাতে ব্যাস্ত। এর ফাঁক দিয়েই সেই নতুন শিক্ষক যিনি আমার চেয়ে এক ব্যাচ জুনিয়র, সে আমাকে দেখে চিনতে পারল। ইশারায় শুভেচ্ছা জানালাম, স্বভাবজাত নড করে। একটু যেন কুঁকড়ে গেল সে। আমি জানি ক'দিন পর এই জড়তা কেটে যাবে।

অর্থমন্ত্রীর আত্মীয় হবার সুবাদে পাওয়া চাকুরি নিয়ে থাকা অস্বস্তিতাও কেটে যাবে। একটা অদ্ভুত কষ্ট নিয়ে আমি অফিসে ঢুকলাম। তখনি মনে পড়ল আরে আজকে বিসিএস এর ফর্ম জমা দেবার শেষ দিন। হাজার হাজার যোগ্য মানুষ ছুটছেন অস্তিত্ব আর সম্মানের তাগিদে। অফিস থেকে সময় ম্যানেজ করে ফর্ম নিয়ে ছুটালাম জমা দিতে।

আর তখনি সকালের লম্বা লাইনের কারণ বুঝতে পারলাম। শেষদিন বলে অসংখ্য প্রার্থী এসেছেন ফর্ম জমা দিতে, তখনো প্রায় আইডিবি কাছাকাছি লম্বা লাইন। আজ বিশ তারিখ, আজ বিজয় সরণী আর তেজগাঁও এর যোগাযোগ রাস্তা খুলে দেয়া হবে। রাষ্ট্রে বৈষম্য ও অন্যায্যতার রাস্তাও আরো প্রসারিত হবে। কিন্তু এই দেশে কেউ পরিবর্তন আনবেনা, সুবিধাবাদী না হলে বঞ্চিত হবে।

এরকম বৈষম্য আর অন্যায্যতার চাইতে প্রতিবাদ করে মারা যাওয়া ভাল, এই দেশে আমি মেরুদন্ডহীন ক্লিব হইতে চাইনা, প্রয়োজনে হিটলার হতে চাই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।