আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে চুক্তি হচ্ছে রাশিয়ার সঙ্গে (উৎপাদন দুই হাজার মেগাওয়াট,প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় চুক্তি স্বাক্ষর)

জীবনকে সহজভাবে দেখার চেষ্টা করি

দুই হাজার মেগাওয়াট পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের লক্ষ্যে দুই দেশের সহযোগিতা সম্পর্কিত পাঁচ বছর মেয়াদি চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। চুক্তির আওতায় রাশিয়া এক হাজার মেগাওয়াটের দুটি ইউনিটের মাধ্যমে দুই হাজার মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে সহায়তা করবে। তবে প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে ২০১৬-১৭ সালের আগে এ বিদ্যুৎ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। রাশিয়া তৃতীয় প্রজন্মের রিঅ্যাক্টর স্থাপন করে পারমাণবিক জ্বালানি ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করবে।

পারমাণবিক বর্জ্য হিসেবে চিহ্নিত ব্যবহৃত জ্বালানি তারা ফেরত নেবে। বাংলাদেশ থেকে ইউরেনিয়াম উত্তোলন না করে রাশিয়া দীর্ঘমেয়াদি (কমপক্ষে ২৫ বছর) জ্বালানি সরবরাহ করবে। চুক্তির আলোকে বাংলাদেশ সরকার যেসব পারমাণবিক বস্তু বা যন্ত্রপাতি পাবে তা দিয়ে পারমাণবিক অস্ত্র ও অন্য কোনো পারমাণবিক বিস্ফোরক তৈরি অথবা কোনো সামরিক প্রয়োজনে ব্যবহার করা যাবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাশিয়া সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। তবে এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর রাশিয়া সফরের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়নি।

বাংলাদেশের বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং রাশিয়ার মিনিস্ট্রি অব ন্যাচারাল রিসোর্স অ্যান্ড ইকোলজির মন্ত্রী নিজ নিজ দেশের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন। খুব শিগগিরই চুক্তিপত্রের একটি কপি রাশিয়া সরকারের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এ চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে পাঁচ বছরের জন্য কার্যকর হবে। বাংলাদেশ বা রাশিয়ার মধ্যে কোনো পক্ষ চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার ছয় মাস আগে কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় লিখিতভাবে চুক্তি শেষ করার ইচ্ছা প্রকাশ না করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই এর মেয়াদ আরো পাঁচ বছর বাড়বে। তবে এ চুক্তির সমাপ্তি কোনো কর্মসূচি ও প্রকল্পের বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করবে না।

চুক্তির সমাপ্তি ঘটলেও চুক্তিপত্রের অনুচ্ছেদ ৮, ১০ এবং ১১ অনুসারে উভয় পক্ষের দায়দায়িত্ব অব্যাহত থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী গতকাল শনিবার কালের কণ্ঠকে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে বলেন, 'আমরা এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এ-সংক্রান্ত বিষয়গুলো বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী দেখছেন। ' বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান গতকাল কালের কণ্ঠকে এ বিষয়ে বলেন, 'নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্রজেক্ট করার লক্ষ্য সামনে রেখে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির খসড়া সর্বোচ্চ পর্যায়ের অনুমোদন নিয়েই চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর রাশিয়া সফরের সময় এ চুক্তি স্বাক্ষর হবে।

' তিনি বলেন, রূপপুরে দুটি আলাদা ইউনিটের মাধ্যমে এক হাজার করে দুই হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। তিনি আরো বলেন, 'নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্রজেক্ট করা একটি জাতির জন্য সম্মানের বিষয়। এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে আমরা অনেক দূর এগিয়ে যাব। ' চুক্তির আওতায় রাশিয়া বাংলাদেশকে মোট ১৪টি বিষয়ে সহযোগিতা করবে। পারমাণবিক শক্তি ও গবেষণা রিঅ্যাক্টর, পারমাণবিক কণা ত্বরক যন্ত্রপাতির ডিজাইন করা, ইউরেনিয়াম ও থোরিয়ামের আধার অনুসন্ধান এবং নিষ্কাশন, স্থাপিত পারমাণবিক শক্তি রিঅ্যাক্টরের জন্য পারমাণবিক জ্বালানি সরবরাহ, রুশ উৎপত্তির ব্যবহৃত পারমাণবিক জ্বালানির প্রত্যাগমন, পারমাণবিক বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা, পারমাণবিক নিয়ন্ত্রণবিধি, পরমাণু ও বিকিরণ থেকে নিরাপত্তা, পারমাণবিক ও তেজস্ক্রিয় বস্তু থেকে দৈহিক নিরাপত্তা এবং জরুরি অবস্থায় উদ্ধার কাজে সহায়তা করবে রাশিয়া।

এ ছাড়া পারমাণবিক শক্তি স্থাপনার কর্মীদের প্রশিক্ষণ, অনুকরণ যন্ত্রের স্থানান্তর, পানি লবণবিহীন করার স্থাপনা ও তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার যন্ত্রপাতি এবং এগুলো ব্যবহারের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেবে তারা। চুক্তির খসড়ায় মোট ১৬টি অনুচ্ছেদ আছে। খসড়ার শুরুতেই বলা হয়েছে, উভয় রাষ্ট্রই আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সদস্য এবং ১৯৬৮ সালের ১ জুলাই পারমাণবিক অস্ত্রের প্রসার প্রতিরোধ করার সন্ধিপত্রে অঙ্গীকারবদ্ধ। শান্তিপূর্ণ কার্যক্রমের জন্য পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার এবং পরমাণু বিকিরণ থেকে নিরাপত্তার আশ্বাস উভয় রাষ্ট্রের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে দুই রাষ্ট্রের মধ্যে সহযোগিতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন শর্তে দেশ দুটি চুক্তিবদ্ধ হচ্ছে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট সাত-আটটি বিষয়ে আলাদা চুক্তি করতে হবে। সব চুক্তিই মূল চুক্তির আলোকে সম্পন্ন হবে। বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য সরকার ঋণের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি উভয় খাত থেকে অর্থ সংগ্রহ করবে। কাজেই অর্থ সংগ্রহ, কারিগরি, ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্যিক, পরিচালনা ইত্যাদি বিষয়ে আলাদা চুক্তি করতে হবে। দেশের জাতীয় গ্রিড একসঙ্গে এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নিতে পারবে কিনা, সে বিষয়টিও দেখতে হবে।

যদি একসঙ্গে এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ গ্রহণ করতে না পারে তবে গ্রিডেও সংস্কার করতে হবে। সূত্রটি জানায়, এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম এমন রিঅ্যাক্টর তৈরি করতেও এক বছর সময় লেগে যায়। চুক্তির পর নির্মাণকাজ শুরু করলে শেষ হতে সময় লাগবে আরো দেড় থেকে দুই বছর। এ ছাড়াও এমন কিছু আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে যেগুলো শেষ করতেও সময় প্রয়োজন। কাজেই বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদে পারমাণবিক বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হওয়ার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই।

চুক্তির সাত নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, দুই দেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষ দিয়ে তিন নম্বর অনুচ্ছেদে উলি্লখিত সহযোগিতার বিষয়গুলো বাস্তবায়িত করবে। উভয় পক্ষের যোগ্যতাসম্পন্ন কর্তৃপক্ষ নিজ নিজ রাষ্ট্রের অনুবিধি অনুসরণ করে বিভিন্ন চুক্তি সম্পাদন করবে। আট নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও রাশিয়া চুক্তির আওতায় নিজ নিজ দেশের রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য বিনিময় করবে না। এ চুক্তির অধীনে প্রেরিত বা চুক্তি বাস্তবায়নের সময় সৃষ্ট সব তথ্য গোপনীয় হিসেবে আখ্যায়িত হবে এবং সেভাবেই চিহ্নিত হবে। এগার নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, পারমাণবিক বস্তু, যন্ত্রপাতি, বিশেষ অপারমাণবিক বস্তু ও আনুষঙ্গিক প্রযুক্তি এবং এগুলোর জন্য পারমাণবিক ও অপারমাণবিক বস্তু সুবিধা অথবা এগুলো ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি চুক্তির অধীনে লাভ করবে বাংলাদেশ।

তবে এগুলো পারমাণবিক অস্ত্র, বিস্ফোরক তৈরি অথবা কোনো সামরিক প্রয়োজনে ব্যবহার করা যাবে না। চুক্তির অধীনে সহযোগিতা বাস্তবায়নের সময় পারমাণবিক ক্ষতি হলে তার দায়দায়িত্ব এ চুক্তির সাত নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সম্পন্ন হবে। রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক দায়দায়িত্ব বিবেচনায় রেখে প্রকৃত ক্ষতি দ্রুত নিরূপণ করতে হবে সূত্রঃ দৈনিক কালের কন্ঠ এই উদ্যোগ কে সুস্বাগতম আমাদের দেশে যেহেতু গ্যাস ফুরিয়ে আসছে তাই এখন বিকল্প জ্বালানির উৎস খোজা ছাড়া উপায় নেই। আর কোন সরকার-ই এইরকম দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পে হাত দিতে চায় না কেননা তার নিজের আমলে এর সুফল পাওয়া যাবে না,আর পরবর্তী সরকার এসে লাল ফিতা কেটে নিজেদের গুণগান করবে,সব কৃ্তিত্ব নিজেদের দাবি করে(যেমন হয়েছিল যমুনা সেতু নিয়ে)। তবে এই রীতি থেকে বেরিয়ে এসে বর্তমান সরকারের সাহসী পদক্ষেপের জন্য আন্তরিক অভিনন্দন


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।