আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘মজা করব, ইভটিজিং করব, প্রতিবাদ করলে হাসপাতালে পাঠাব’



‘ইভটিজিংয়ের মজাই আলাদা। ইভটিজিং করব। মজা করব। তাতে যদি কেউ বাড়াবাড়ি করে, তবে তাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেবো। কে কী করে দেখে নেবো।

পুলিশও আমাদের। সরকারও আমাদের। ’ রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি রফিকুল ইসলামের পুত্র মিঠু তার এহেন দম্ভোক্তি পুরোটাই বাস্তবায়িত করেছে। রোজিনা নামের এক স্কুলছাত্রীকে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদে মামা এগিয়ে আসায় মিঠু তার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। বীরদর্পে দোকানপাট ভাঙচুর করেছে, করেছে লুটপাট।

আর এরই মধ্যে সম্মান বাঁচাতে ছাত্রীটি দুই দফা আত্মহত্যার চেষ্টা করে। রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ ইউনিয়নের খানসামা গ্রামের হতদরিদ্র রুহুল আমীন ও বেলা বেগম দম্পতি দীর্ঘদিন থেকে ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করছেন। তারা কন্যা রোজিনা বেগমকে (১৩) নানার বাড়িতে রেখে পড়াশোনা করাতেন। রোজিনা স্খানীয় ইমামগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী। রোজিনা জানায়, ‘স্কুলে যাওয়ার পথে স্খানীয় ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতির পুত্র মিঠু প্রতিদিনই তাকে বিভিন্ন অশালীন ভাষা ও অঙ্গভঙ্গিতে উত্ত্যক্ত করত।

গায়ে হাত দেয়ার জন্য এগিয়ে আসত। কুপ্রস্তাব দিত। প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় শরীরে অ্যাসিড মারার হুমকি দিত। ’ রোজিনা আরো বলে, মিঠু উত্ত্যক্ত করার সময় তার বìধুদের ডেকে আনত এবং বলত, ‘উত্ত্যক্ত করার কথা কাউকে বলে কোনো লাভ নেই। আমার বাবা সরকারি দলের লোক।

পুলিশও আমাদের। আমরা ইভটিজিং করব না তো কে করবে? আমরাই তো মজা করব। আর এ কথা কাউকে বলেও কোনো লাভ হবে না। তার পরও যদি ‘কাউকে’ বিচার দাও তবে তোমার গোষ্ঠীসুদ্ধ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেবো। ’ মিঠুর দ্বারা এভাবে উত্ত্যক্ত হওয়ার কথা রোজিনা ঢাকায় মোবাইল ফোনে তার বাবা-মা এবং নানা একরামুল হক ও মামা লাবলুকে জানায়।

তারা বিষয়টি একাধিকবার মিঠুর পিতা রফিকুল ইসলামের কাছে জানিয়ে প্রতিকার দাবি করেন। কিন্তু তিনি গায়ে লাগাননি। তারপর গত এক সপ্তাহ থেকে মিঠুর উত্ত্যক্ত করার মাত্রা বেড়ে যায়। সম্মান বাঁচাতে রোজিনা এরই মধ্যে দুইবার গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে বলে নানার পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন এ প্রতিবেদককে। এ প্রসঙ্গে রোজিনার দাবি ‘মরে গিয়েও যদি এ রকম পরিস্খিতি থেকে রেহাই পাওয়া যায় তবে সেটাই ভালো’! এ দিকে নানার পরিবার বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে।

বিষয়টি নিয়ে পারিবারিকভাবে বৈঠকের মাধ্যমে আবারো মিঠুর পরিবারের কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় রোজিনার নানার পরিবার। গত শুক্রবার নানা একরামুল হকসহ মামারা যান মিঠুর পিতা রফিকুল ইসলামের সাথে খানসামা হাটে বিষয়টি নিয়ে আবারো আলাপ করতে। কিন্তু এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন মিঠু ও মিঠুর পিতা রফিকুল ইসলাম। রোজিনার মামা লাবলু জানান, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু করতেই সেখানে উপস্খিত মিঠু, মিঠুর বাবা আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করতে থাকেন। এক পর্যায়ে সেখানে উপস্খিত আরো কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাসহ আমার ওপর হামলা চালায়।

এ সময় মিঠু আমার মাথায় দা দিয়ে কোপ দেয়। এ সময় আমার পরিবারের লোকজন ও আশপাশের লোকজন আমাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা তাদেরও বেদম মারধর করে। এক পর্যায়ে তারা আমার চাচা ইউসুফ আলীর ডেকোরেটরের দোকানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। ইউসুফ আলী জানান, ‘এ সময় মিঠু ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সন্ত্রাসীরা তার উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম ডেকোরেশনের সব কিছু লুট করে নিয়ে যায়। ’ এ ঘটনায় গুরুতর আহত লাবলুকে কাউনিয়া স্বাস্খ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

এ ঘটনায় নানা একরামুল হক কাউনিয়া থানায় মামলা করেন। সরেজমিন এলাকাবাসী আব্দুল কুদ্দুস জানিয়েছেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার ছেলে বলে কথা। ওদের জন্য এখন সব কিছুই জায়েজ! ওদের কিছুই বলা যাবে না? তাহলে আমরা কি আমাদের মানসম্মান নিয়ে বাঁচতে পারব না? তিনি বলেন, ঘটনাটি দীর্ঘদিন থেকে ঘটছে। ওর পরিবারের কাছে দফায় দফায় নালিশও করা হয়েছে। কিন্তু নালিশের ফল দেখলাম চোখের সামনে হামলা করা হলো।

ভাঙচুর হলো। লুটপাট হলো। মামলা হলো। কিন্তু পুলিশ কাউকেই খুঁজে পাচ্ছে না। বিষয়টি রহস্যজনক।

কাউনিয়া থানার ওসি রাফিউল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে। অপরাধী যে দলেরই হোক না কেন তাদের কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। তথ্যসূত্র: এখানে ক্লিক করুন

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।