আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এমন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বাংলাদেশের মানুষ আর কখনো দেখেনি : বিএনপি

বাংলাদেশের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিষয়ে ঐকমত্য পৌঁছাতে সরকারের প্রতি সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শাসুমসুজ্জামান দুদু স্বাক্ষরিত এক বিবৃতি এ আহ্বান জানানো হয়। বিবৃতিতে গতকাল বুধবার রাতে অনুষ্ঠিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় গৃহীত প্রস্তাব তুলে ধরে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, “বিএনপি’র স্থায়ী কমিটি অনতিবিলম্বে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, সহিংসতা, হানাহানি, খুন, নিপীড়ন এবং আক্রমণাত্মক ও অশ্লীল মিথ্যা প্রচারণা বন্ধ করুন। সুস্থ-স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে এনে জনগণের ভোটাধিকার রক্ষা ও শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতা হস্তান্তরের উদ্দেশ্যে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের বিষয়ে ঐকমত্য গঠন করতে বিরোধীদলের সঙ্গে সংলাপের আয়োজনের আহ্বান জানানো হচ্ছে।

” সভায় দেশের চলমান রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়, “সর্বক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতা, অপশাসন, দুঃশাসন, কুশাসন, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, সমন্বয়হীনতা এবং দায়িত্বশীলদের কাণ্ডজ্ঞানহীন উস্কানীমূলক বক্তব্য ও হটকারী আচরণ দেশকে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে ঠেলে দিয়েছে। সর্বগ্রাসী সঙ্কটে জাতি আজ হাবুডুবু খাচ্ছে। এমন সংঘাতপূর্ণ অনিশ্চিত পরিবেশ বাংলাদেশে এর আগে আর কখনো সৃষ্টি হয়নি। জাতীয় সম্পদের এমন নিষ্ঠুর লুণ্ঠন, এমন নির্লজ্জ জঘন্য দলীয়করণ এবং এমন বর্বর পৈশাচিক রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের কোনো অভিজ্ঞতা স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের মানুষ আর কখনো দেখেনি।

” বিবৃতিতে আরো বলা হয়, “জাতীয় স্থায়ী কমিটি গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে, ‘সরকারের এই দুঃশাসন ও সর্বব্যাপী ব্যর্থতার প্রতিবাদে সারা দেশের মানুষ যখন ক্ষোভে ফেটে পড়েছে এবং বিরোধীদল যখন দেশবাসীর অধিকার, জাতীয় স্বার্থ ও গণতন্ত্র রক্ষায় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলন গড়ে তুলছে সেই সময় গণবিচ্ছিন্ন সরকার আরো অস্থির ও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তারা দলীয় সন্ত্রাসী বাহিনীর মতো ব্যবহার করে গণহত্যা চালাচ্ছে। একইসঙ্গে দলীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্যে জনগণের ওপর হামলায় নামিয়ে দেয়া হয়েছে। সভা-সমাবেশ, শোভাযাত্রায় সরাসরি সশস্ত্র হামলা চালানো হচ্ছে। বিরোধীদলের জাতীয় নেতাদের ওপরেও সরাসরি গুলিবর্ষণ করা হচ্ছে।

মিছিল, সমাবেশ থেকে নারীদেরকে পর্যন্ত ধরে নিয়ে তাদের ওপর দৈহিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদের নামে দীর্ঘ সময়ের জন্য রিমান্ডে নিয়ে বিরোধীদলের নেতা-কর্মী ও সম্মানিত নাগরিকদের ওপর পৈশাচিক নির্যাতন চালিয়ে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় এবং বিরোধীদলের বিরুদ্ধে তা অপপ্রচারের উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা বর্তমান সরকারের এ জঘন্য কু-অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ” বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের সক্রিয় নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলায় পাইকারি গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে জাতীয় স্থায়ী কমিটি বলেছে, “দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব থেকে শুরু করে সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে হাস্যকর সব মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করা হচ্ছে। বর্তমান সরকার সারা দেশকেই আজ কারাগারে পরিণত করেছে। ” “বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলায় আটক করে তাদের বিরুদ্ধে সরকারী দলের নেতা ও মন্ত্রীদের পাশাপাশি প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা পর্যন্ত প্রকাশ্যে মিডিয়ায় রাজনৈতিক ধাঁচের উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখছে।

সরকার এই শৃংখলা ও আইন ভঙ্গ এবং এখতিয়ার বহির্ভূত অপততপরতায় মদত দিচ্ছে এবং তাদেরকে নানাভাবে পুরস্কৃত করছে। ” জাতীয় স্থায়ী কমিটির পর্যবেক্ষণে বলা হয়, “সরকার দেশে অঘোষিত একদলীয় বাকশাল পদ্ধতি প্রবর্তন করে গণতন্ত্রের নাম নিশানা মুছে দিতে চায়। এ অসদুদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তারা এক অস্পষ্ট ও বেআইনি নির্দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য সভা-সমাবেশ করার গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেছে। এমনকি দেশের বৃহত্তম বিরোধীদল বিএনপিকে দোয়ার মাহফিল পর্যন্ত করতে বাধা দিচ্ছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় বেশিরভাগ সময়ে পুলিশ-র‍্যাব দিয়ে কার্যত অবরুদ্ধ করে রাখা হচ্ছে।

দলের পক্ষ থেকে যে নেতাই মিডিয়ায় কথা বলছেন, তাকেই মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে। বিরোধীদলের প্রতিটি কর্মসূচিতেই সশস্ত্রভাবে বাধা দেয়া হচ্ছে, হামলা চালানো হচ্ছে। জামিনে মুক্ত নেতা-কর্মীদের জেলগেট থেকে ধরে আবারো জেলে ঢোকানো হচ্ছে। বিরোধীদলের ঘোষিত কমসূচি প্রতিরোধ করতে সরকারি দল পুলিশ, র‍্যাব, বিজি’বির পাশাপাশি দলীয় সশ্স্ত্র সন্ত্রাসীদের মাঠে নামাচ্ছে। তাদের সশস্ত্র হামলার চিত্র গণমাধ্যমে প্রচারিত হলেও গ্রেফতার করা হচ্ছে না।

এমনকি বিরোধীদলের প্রচারপত্র ছাপা ও বিলিতে পর্যন্ত পুলিশ বাধা দিচ্ছে। এভাবে বিরোধীদলের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা কার্যত অসম্ভব করে তোলা হচ্ছে। ” জাতীয় স্থায়ী কমিটি বলেছে, “গত ৫ মে ঢাকার শাপলা চত্বরে অবস্থানরত হেফাজতে ইসলামের লাখ লাখ নেতা-কর্মীকে হঠাত আলো নিভিয়ে গভীর রাতে যে রক্তক্ষয়ী অভিযান চালাবার পর দেশে-বিদেশে সরকার যে ভয়ঙ্কর চেহারায় আবির্ভূত হয়েছে তা আড়াল করতে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে শাসকদলের বিভিন্ন নেতা বিরোধীদল, বিশেষ করে বিএনপি এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এক ঘৃণ্য প্রচারাভিযান শুরু করেছে। গণহত্যাকারী সরকার এখন সন্ত্রাস, ধ্বংস ও হত্যার পথ ছেড়ে বিরোধীদলকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানাচ্ছে। একই সঙ্গে তারা বলছে, সংবিধান বদল করে ক্ষমতা থেকে নির্বাচন করার যে অসৎ ও গণবিরোধী পদক্ষেপ তারা নিয়েছে তা বহাল থাকবে এবং শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে।

অর্থাত আলোচনার কথা বলে আলোচনার সব পথ তারাই রুদ্ধ করছে। ” হেফাজতে ইসলামের ৫ মে’র ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি নিয়ে সরকার পক্ষের অভিযোগের জবাবে বিএনপি বলেছে, “বিএনপি কোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রম কিংবা সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে কখনো বিশ্বাস করে না। এগুলো আওয়ামী লীগেরই মজ্জাগত অভ্যাস। তারাই সরকার উৎখাতের জন্য “ট্রাম্পকার্ড ষড়যন্ত্র” করেছিল। তারাই বিগত দিনে লগি-বৈঠা সন্ত্রাসের মাধ্যমে তাদের “আন্দোলনের ফসল” বলে একটি অসাংবিধানিক সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল।

” বিএনপির স্থায়ী কমিটির বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, “বিতর্কিত মন্ত্রীদের বাদ দিয়ে ভালোভাবে দেশ চালাবার জন্য দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গত ৪ মের ঢাকার জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, জাতীয় নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের ব্যাপারে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আলোচনায় বসুন। এ ব্যাপারে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে চায়ের আমন্ত্রণও জানিয়েছিলেন। সরকার সে আহ্বানে সাড়া না দিয়ে সমঝোতা প্রতিষ্ঠার এক গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেছে বলে জাতীয় স্থায়ী কমিটি মনে করে। ” ‘ইসলামী টিভি ও দিগন্ত টিভিকে রাতের অন্ধকারে বন্ধ করা, আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধের উদ্দেশ্যে ছাপাখানায় তালা দেয়া ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদককে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ করায় দৈনিক জাতীয় পত্রিকার ১৫ জন সম্পাদককে হুমকি, দৈনিক যুগান্তরের ওপর চাপ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে মালিকানার সঙ্গে যুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের, টিভি টক শোতে সরকারের সমালোচকদের বিরুদ্ধে ভীতি প্রদর্শনমূলক বক্তব্য, ৯০ শতাংশ নাগরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে এ জনমত জরিপ প্রকাশের দায়ে পত্রিকার সম্পাদকের বিরুদ্ধে বিষোদগারের তীব্র নিন্দা জানিয়ে স্থায়ী কমিটি বলেছে- গণমাধ্যম ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সরকার শৃংখলিত করেছে। এভাবে কোনো স্বৈরাচার দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না।

এখন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী, তার পরিবার ও সরকারের নানান অপকীর্তি ও দুর্নীতির খবর প্রকাশ হয়ে পড়ছে’। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণে সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জাতীয় স্থায়ী কমিটি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। http://www.instantnews24.com ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।