আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বহু হয়েছে মানুষ দেখা এই যাত্রায় মাপ চাই

আমি এমন এক সাধারন মানুষ হতে চাই যে অসাধারন হবার পেছনে দৌঁড়ায়না এবং বিনা প্রশ্নে কিছু গ্রহন করেনা ।

আরবান , ডেভেলপিং সিটি । টেকনোলোজির বদৌলতে হাতের মুঠোয় এসে যাওয়া পৃথিবী । ফূর্তির সহজলভ্যতা , আনন্দের মেডইজি একসেস । কর্পোরেট ঝলকানি , মর্ডানাইজেশনের উদার চিত্তে নব্য শহুরে ধনিকদের আপন করে নেওয়া ।

শহরে কাকের সংখ্যার সমানুপাতে শুয়োররুপী জাতির বিবেকদের হররোজ পয়দা হওয়া । এরকমই এক সন্ধ্যায় ক্ষুব্ধ মেজাজে ঝুনোর রাস্তায় চলাচল । ছোট বাচ্চাদের মতো কাগজের কিছু নৌকা বানিয়ে লেকের পানিতে ফেলেও রাগ কমলোনা । ঝুনো বহু কষ্টে নিজেকে পথে ফিরিয়েছিলো । ঝুনো অনেক কসরত করে নিজেকে ট্র্যাকে এনেছিলো ।

তার মনে হচ্ছে শেষ পর্যন্ত এসবের কিছুই কাজে দেয়নি । ঝুনোকে এই শহর আপন করে নিতে পারেনি । নাকি ঝুনো নিজে পারেনি এই শহরকে আপন করে নিতে ? ঝুনো এই বিপরীত ২টি বক্তব্যের কোনটি সত্য তার বিশ্লেষণে যেতে চায়না এখন । প্রচন্ড বিবমিষায় সদ্যই ধরা সিগারেটটি ছুঁড়েই ফেলে দেয় । রাস্তায় মানুষজন একে অপরকে লক্ষ্য করেনা বিশেষ ।

সেই অবকাশই এই ভর সন্ধ্যায় বোধহয় কারো নেই । তবুও যেই গুটিকয়েক ২ - ৩ জন ঝুনোর সিগারেট ফেলে দেওয়ার কান্ড দেখলো তারা বিস্মিত না হয়ে পারলোনা । এই শহরে মানুষ খাবার যোগ্য হলে তো কাকের বিষ্ঠাও ছাড়তোনা । সেখানে আস্ত সিগারেট ? হিসাব মেলাতে পারেনা তারা । তাদের হিসাব মেলাতে না পারার ক্ষণস্থায়ী ব্যর্থতায় ফোকাস না করে আমরা ঝুনোর অতীতে ফিরে যাই ।

১৫ বছর বয়সে তাড়ির নেশায় পেয়ে বসা ঝুনো বেপরোয়া জীবনেই নিজের গন্তব্য খুঁজে নিতে চেয়েছিলো । নর্মস , ভ্যালুজ , সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ ইত্যাদি ইউজলেস , রাবিশ , পাতি সেন্টিমেন্টাল গার্বেজ ক্যাচফ্রেসের পাছায় লাথি দেওয়ার সাহস কিংবা কারেজ যাই বলা হোক অর্জন করেছিলো মার্বেল খেলার বয়সে । নিজের জন্মদাতা বাপকে ৪ - ৫ মাস পরপরই উধাও হয়ে যেতে দেখতো । চারপাশে কানাঘুষা যখন ধীরে ধীরে বুঝতে শিখছিলো তখনই দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে বুঝলো নারায়নগঞ্জের এক বেশ্যার কাছে তার আপাত শক্ত বাপ ডাবের শাঁসের মতোই নরম হয়ে যেতো সেটা ছিলো চশমা ছাড়া জীবন দেখতে শেখার প্রথম পাঠ । তারও বছর দেড়েক পর সেই বেশ্যার ঠিকানাই বাপের পার্মানেন্ট ঠিকানা হয়ে যাবার পর মাকে নিয়ে ঝুনোর বেশী দিন টেনশন করতে হলোনা ।

বেটি দুম করে এক ভরদুপুরে চিরতরে নিভে গেলো । চিৎকার দিয়ে কাঁদবার প্রচন্ড ইচ্ছা হয়েছিলো তবু কান্না আসেনি । ঝুনো তার অনেক আগে থেকেই মায়াদয়াহীন । ঝুনো তখন থেকেই অর্ডারে লাশ নামিয়ে দেওয়া শিখে নিয়েছিলো । হাত আরো পাকাতে পাকাতে যখন থ্রেটনিং হয়ে উঠলো টাউনে তখনই আসন্ন নির্বাচনে এক পক্ষের হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো ক্যাম্পেইনিঙে ।

২ - ৩ টা লাশ ফেলে দিয়ে নামডাক আরো বাড়ানোর পরেও সেটা শেষে কাজে লাগলোনা । নিজের কাজ হয়ে যাবার পর ঝুনোকেই ফাঁসিয়ে দিলো সদ্য নির্বাচিত এমপি । ঝুনো কোনভাবে পালিয়ে ঢাকা এসে পড়েছিলো । ভেবেছিলো ঢাকাতেও তার জালওয়া দেখিয়ে ছাড়বে । মাস ছয়েক যাবত হাভাতে কুকুর - বেড়ালের মতো পার করে বুঝলো ঝুনোর জালওয়া দেখানো তো দূরের কথা হেগে-মুতে পড়ে থাকার অবস্থাই সঙ্গীন হয়ে উঠেছে ।

এই বড় শহরে এতো সহজে কেউ কাউকে নোচেনা । তারপরেই গুড়া - মসলার বিজনেস শুরু করে অতঃপর এখন ইম্পোর্ট - এক্সপোর্টের ব্যবসায়ে থিতু হয়েছে । মনে হতেই মুখে থুথু জমলো তার । বীতশ্রুদ্ধ , রাগান্বিত ঝুনো শাহবাগ টু ফার্মগেট যাবার যাত্রাপথে এক জায়গায় ওভারব্রিজ দেখে ভাবলো উপরে উঠবে । উঠে মানুষের চলাচল দেখবে ।

উপর থেকে প্রায়শই মানুষ দেখবার জন্য কাজটি করে সে । ভাবা মাত্রই দ্রুত উঠে পড়লো । ওভারব্রিজে উঠতে উঠতে নিচে লক্ষ্য করেনি । পায়ে বাড়ি খেতেই সম্বিত ফিরে পেলো । দেখলো ফেনসিডিলের বোতলে গোত্তা খেয়েছে ।

স্ট্রিটল্যাম্পের আলো এই ওভারব্রিজেও পড়েছে দেখে তিনটে চুপসানো কনডমও পড়ে থাকতে দেখলো । মানুষ দেখতে উপরে উঠেছিলো । ফেনসিডিলের বোতল আর কনডমের অভ্যর্থনায় ঝুনো ভাবতে বসলো শহরে মানুষের আর কি কি খাদ্য থাকতে পারে । ঝুনোর হিসাব মোটামুটি এই এস্টিমেশনে এসে থেমে যায়ঃ প্রায় দেড় কোটি মানুষের প্রত্যেকেই ডাস্টবিনের আশেপাশের কুকুর - বেড়ালদের মতো একে অপরের সাথে কামড়াকামড়ি করে বেঁচে আছে , বেঁচে থাকে । প্রত্যেকেই প্রত্যেককে খায় ।

কাক কাকের মাংস খায় । এক মানুষ আরেক মানুষের পাছা চিমসে করে বেঁচে থাকবার রসদ যোগায় । পাতি আমলারা ফাইল খায় আর আম পাবলিকের শরীর নিংড়ে টেবিলের নিচে ফাইল চালাচালি করে । কর্পোরেট হারামজাদাগুলো না খেতে পাওয়া ফকিন্নীর বাচ্চাগুলোকে উপরে উঠবার লোভ দেখাবার ব্যর্থ চেষ্টা করে । বেয়াক্কেলের হদ্দ মধ্যবিত্তগুলাকে অন্ধ করে রাখতে চেষ্টা করে , তাতে সফলও হয় ।

এই শহরের মানুষ ক্রসফায়ার কি জিনিস বোঝেনা । ক্ষুদ্র ঋণের বোঝা নিয়ে গ্রাম থেকে শহরে এসে মেথরগিরি , ঝি গিরি করে কিভাবে হোমোসেপিয়ান্সের এক বৃহৎ অংশ তাদের জীবন পার করে দিচ্ছে তার কীয়দংশও জানেনা । পাঁচ বছর পর পর তেল চুপচুপে মাথায় উৎসব করে ভোট দিতে যাবার হারামীপনায় তারা যে বন্যপশুর থেকেও নিচে নেমে যায় তাদের মগজে ঢোকেনা । শুয়োরের যে সাদা , কালো , গ্রে কালার হয়না এই সহজ সত্যও কোন মাস্টারমশাই তাদের শেখায়নি । পেটে দুই পাতা বিদ্যা , পাকস্থলীতে পাঁচ পেগ বিদেশী জিনিস , মগজে গোটা দশেক বিখ্যাত স্কলারের ট্র্যাশ জার্নাল প্রবেশ করায় তাদের কাছে বেঁচে থাকবার সংজ্ঞাই হচ্ছে ঢাকা শহর নামক আন্তর্জাতিকতার লেবেল মারা রেড লাইট এরিয়াতে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করবার নিরন্তর কৌশিশ করে যাওয়া ।

অথচ নিয়ম করেই এদের অনেকে শুক্রবারের জুম্মায় দাঁড়িয়ে যায় সমাবেতভাবে । উপরওয়ালার কাছে আরো একটি দিন উচ্ছিষ্ট খেয়ে বেঁচে থাকতে পারছে এই আনন্দে শুকরিয়া জানায় । উপরওয়ালা সারাটা দিন ঘুমে থেকে কোনভাবে চামচাদের নৈবেদ্য গ্রহণ করে পুনরায় হৃষ্টচিত্তে ঘুমের প্রস্তুতি নেয় । এভাবেই অজস্র মানুষ এমিবা - প্রোটোজোয়া থেকে গ্রামের সামন্ত জমিদার , চিটেগুড়ের ব্যবসায়ী , ছিটে কাপড়ের দর্জির বংশ থেকে বিবর্তনের শেষ পর্যায়ে শহুরে নাগরিক বনে যায় । শেষ বয়সে কোন প্রকারে সমাজসেবার ফ্রি দোকান খুলে মৃত্যুর আগে জাতির বিবেক , রাষ্ট্রের স্তম্ভ , সভ্যতার অতন্দ্র প্রহরী বনে গিয়ে পরকালের যাত্রাপথে ফিতা কেটে ঢুকতে চায় খোদাতায়ালার মেহেরবানীর প্রত্যাশায় ।

ঝুনোর নার্ভ অবশেষে আর নিতে পারেনা । অফিসের টাইপিস্ট মেয়েটার কথা মনে পড়ে যায় । একটা ডিল সাকসেসফুল করতে তাকে শেষমেষ মাগীবাজ হতে হবে ভাবতেই নিজের উপর পুনরায় ঘেন্না ধরে যায় তার । টাইপিস্ট মেয়েটা মাথায় প্রচুর বুদ্ধি রাখে । বসের ব্যবসার অবস্থা , এই ব্যবসা না টিকলে তাকেও যে পথে নেমে যেতে হবে দিব্বি বুঝে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেছে ।

এই সময়ে সেই টাকলা খচ্চরের থলথলে শরীরের নিচেই আছে নিশ্চয়ই । ঝুনো প্রস্তাবটা দেওয়ার সময়ে চোখ তুলেও তাকাতে পারছিলোনা । আচ্ছা ঝুনো কি খুব বেশী সেন্টিমেন্টাল হচ্ছেনা ? এই ঝুনোই না একসময়ে মাকে মরে যেতে দেখেও কাঁদেনি ? তবে কোথাকার কোন টাইপিস্ট মেয়ে কার সাথে শুতে যাচ্ছে তাতে কি এসে যায় তার ? একগাদা প্রশ্ন এসে মাথায় স্টাক হয়ে যায় । কোনটার উত্তরই নিজের কাছে নেই অথবা আসলে উত্তর দিতে চাচ্ছেনা বুঝে ঝুনো ওভারব্রিজ থেকে দ্রুত নেমে যেতে থাকে । বহু হয়েছে মানুষ দেখা এই যাত্রায় মাপ চাই ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।