আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৪০ বছর আগের কর্মকান্ডের প্রত্যক্ষ সাক্ষীও পাওয়া যাবে

সৈয়দ মুতনু

বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বিশ্ব মহলে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশের ইতিবাচক সাড়াও মিলেছে। কেউ অপপ্রচার চালিয়ে কিংবা হুমকি ধামকি দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার রুখতে পারবে না। কেউ বাধা সৃষ্টি করলে তাকে গ্রেফতার করা হবে। চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীরা পালিয়েও বাঁচতে পারবে না।

যে ঘটনা ৪০ বছর আগে ঘটেছে তার প্রত্যক্ষদর্শী রয়েছে এখনও । যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনজীবী প্যানেলের প্রধান ভাষা সৈনিক এডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু গতকাল বৃহস্পতিবার যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত পুরাতন হাইকোর্ট ভবনে স্থাপিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নিজ চেম্বারে প্রথম বসেন। কথা বলেন, ট্রাইব্যুনালের কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের সঙ্গে। আশাবাদ ব্যক্ত করেন যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়ে। সাংবাদিকদের তিনি জানান, এর আগে আইনমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিদেশে গেছেন।

বিভিন্ন দেশে যুদ্ধাপরাধীদের দালিলিক প্রমাণ রয়েছে। সেখানে খোঁজ-খবর করা হয়েছে। প্রমাণ হাতে নিয়ে তাদের গ্রেফতারও করা হবে। স্বাধীনতাযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে চিহ্নিত অভিযুক্তরা দেশ থেকে যেন পালিয়ে যেতে না পারে সেই পদক্ষেপ নিতে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। মভাষাসৈনিক গোলাম আরিফ টিপু অনেক আন্দোলন সংগ্রামের সঙ্গে রাজশাহীতে বর্ণাঢ্য জীবনযাপন করছেন।

মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও ক্রিড়াবিদ টিপু রাজশাহীতে ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ভাষা আন্দোলনে ১৯৪৮ সালের প্রথম রক্তঝরে রাজশাহীতে। তা তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন। সেই থেকে রাজশাহীর মাটিতে দেশদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু তার। এর পর থেকে ১৯৫২, ১৯৬৯ এবং ১৯৭১ সালের অনেক কিছুই তিনি নিজে প্রত্যক্ষ করেছেন।

রাজকার-আলবদর ও দেশদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার থাকা বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এ মানুষটি আরেকটি ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত হলেন। ফৌজদারি মামলার দেশব্যাপী স্বনামধন্য আইনজীবী শেষ পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধীর বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের প্রধান আইনজীবী হিসেবে নিযুক্ত হলেন। তার বিশ্বাস, দলমত যাই হোক, সরকারে যেই থাকুক, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত হবে। ট্রাইব্যুনালের সীমাবদ্ধতা থাকলেও বিচার প্রক্রিয়ায় থেমে থাকবে না। বিচার প্রক্রিয়া কতটা এগিয়েছে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে বিচারের জন্য জাতি কমিটেড, আমরা কমিটেড।

যুদ্ধাপরাধীরা ষড়যন্ত্র করলেই বিচার থমকে যাবেনা এমন উক্তি করে তিনি বলেন, '৭১-এ তার মতো অনেকেই রাজাকার, আলবদরদের কর্মকা- প্রত্যক্ষ করেছেন এবং এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাাঁড়িয়েছেন। আবার অনেকে জীবন দিয়েছেন। এ সত্য মানুষের কাছে অস্বীকার করে যুদ্ধাপরাধীরা পালিয়েও বাঁচতে পারবে না। গতকাল তিনি সাংবাদিকদের জানান, গোলাম আজম, নিজামী, মুজাহিদ ও সাঈদীর মতো শীর্ষ অভিযুক্তদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের আইনের আওতায় বিচার করতে কোন সমস্যা হবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি জানান, বিভিন্ন বইপত্র, সংবাদপত্র, স্থিরচিত্র, দলিল, চলচ্চিত্র ও মৌখিক সাক্ষ্যে তাদের বিচার করা যাবে।

১৯৭১ সালে বর্বর পাকিস্তান বাহিনী, রাজাকার, আল শামস, আল-বদর 'পোড়ামাটি নীতি' গ্রহণ করেছিল। এ সম্পর্কে শুধু বাংলাদেশের মানুষ নয়, সারা পৃথিবীর মানুষ জানে। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এইসব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হবে। তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ ৪০ বছর আগের যে ঘটনা সেই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এখনও রয়েছে। তাছাড়া স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যারা পারিপাশ্বর্িক অবস্থাটা দেখেছেন; সেইসব গ্রামবাসী, যাদের খুন করা হয়েছে নির্যাতন করা হয়েছে তাদের আত্মীয়স্বজন তারা সব কিছু ভুলে যাননি।

পাকিস্তান বাহিনী ও এদেশীয় দোসররা যেভাবে সাহসী নারীদের ওপর নির্যাতন করেছে সেটা হয়ত গ্রামবাসীরা জানেন, আত্মীয়স্বজন জানেন, ভুক্তভোগীরা জানেন, প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে সেগুলোর তথ্য এখনও পাওয়া যাবে। গতকাল প্রথম দিন যুদ্ধাপরাধের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান আইনজীবী তার অফিসে সাংবাদিকদের বলেন, চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ছাড়া ঢালাওভাবে কাউকে যুদ্ধাপরাধী বলা যাবে না। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত ঢালাওভাবে কাউকে যুদ্ধাপরাধী বলা যাবে না। তবে যুদ্ধকালীন সময়ে মানবতাবিরোধী কার্যক্রমে যারা অবস্থান নিয়েছে এবং আগে থেকে মানুষের কাছে পরিচিত তাদের প্রথমেই তথ্য-প্রমাণের মাধ্যমে চিহ্নিত করতে তদন্তকারী সংস্থা কাজ করছে। ধীরে ধীরে এগুচ্ছে।

তদন্ত প্রমাণসহ অভিযোগপত্র

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।