আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৩ এপ্রিল, ওল্ড ট্রাফোর্ড, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড vs চেলসি - This is it!

এইখানে শায়িত আছেন বাংলা ব্লগ ইতিহাসের কলঙ্ক...
রেড ডেভিলরা জানে - This is it! আর আরো ভালো করে জানে চেলসি। আগামী ৩ এপ্রিল, শনিবার ওল্ড ট্রাফোর্ডে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড আর চেলসির মধ্যকার খেলাটি এখন অব্দি প্রিমিয়ার লিগের এ সিজনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলা তা নিয়ে কোন সংশয় নেই। কারন ৩২ ম্যাচ শেষে ম্যান ইউ আর চেলসির পয়েন্ট যথাক্রমে ৭২ আর ৭১! প্রতি দলের জন্য যেখানে নির্ধারিত ম্যাচের সংখ্যা ৩৮টি (১৯টি হোম ম্যাচ আর ১৯টি এ্যাওয়ে, মোট দল ২০টি) সেখানে চেলসি ভালো করেই জানে নিজের ভাগ্য নিজে গড়ার এই শেষ সুযোগ - কারন দু' দলের আর বাকি আছে মাত্র ৬টি ম্যাচ। এ সুযোগ ফসকে গেলে নিজেদের শিরোপা ভাগ্য নির্ভর করবে রেড ডেভিলদের ভুলের ওপর - আর চেলসি ভালো করেই জানে যে ধরনের প্রোফেশনালিজম ম্যান ইউ এ সিজনে দেখিয়েছে তাতে করে সে ধরনের ভুলের সম্ভবনা অতি ক্ষীণ। এটা ম্যান ইউয়ের হোম ম্যাচ।

ওল্ড ট্রাফোর্ডের এ মাঠের প্রতিটা ঘাস রেড ডেভিলদের চেনা। এ সিজনে নিজেদের ১৬টি হোম ম্যাচের মধ্যে রেড ডেভিলরা মাত্র একটিতে হেরেছে (এ্যাস্টন ভিলার কাছে ১-০ তে) আর একটিতে করেছে ড্র (সান্ডারল্যান্ডের সাথে ২-২ গোলে) - জিতেছে বাকি ১৪টিতে। নিজেদের ১৬টি হোম ম্যাচে চেলসির পরিসংখ্যানও ঐ একই - ১৪টি জয়, ১টি পরাজয় আর ১টি ড্র। তবে চেলসির হোম ম্যাচের পরিসংখ্যান এখানে গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ হলো তাদের এ্যাওয়ে ম্যাচের পরিসংখ্যান। এ সিজনের ১৬টি এ্যাওয়ে ম্যাচে চেলসি জিতেছে ৮টিতে, হেরেছে ৪টিতে আর ড্র করেছে ৪টি।

চেলসি ভালো করেই জানে কাজটা কঠিন তবে অসম্ভব নয়। পরিসংখ্যান আর হোম এ্যাডভান্টেজ ম্যান ইউকে এগিয়ে রাখছে বটে, কিন্তু হায় শুধু পরিসংখ্যান দিয়ে যদি ফুটবল হতো! ফুটবলে ভাগ্য গড়ে দেয় স্ট্র্যাটেজি, স্কিল, ইন্ডিভিজ্যুয়াল ব্রিলিয়্যান্স, রিসেন্ট ফর্ম আর হ্যাঁ অবশ্যই - ভাগ্য! এ ধরনের বড় ম্যাচে একটা ভুল পেনাল্টির সিদ্ধান্ত অথবা একটা অযথা সেন্ট-অফ ম্যাচের মুখ ঘুড়িয়ে দিতে পারে। বাড়তি প্রেশার থাকবে তাই রেফারীদের ওপরও। দুই দলের রিসেন্ট ফর্ম ঈর্ষণীয়। ম্যান ইউ গত ৬টি ম্যাচের ৫টিতেই জিতেছে আর হেরেছে মাত্র একটিতে।

আর ওদিকে চেলসি গত ৬টি ম্যাচের ৪টিতে জিতেছে, হেরেছে ১টিতে আর ড্র করেছে ১টি। রিসেন্ট ফর্ম দেখে মনে হতে পারে চেলসি হয়তো ম্যান ইউয়ের চেয়ে পিছিয়ে আছে। হ্যাঁ এটা সত্য যে জয়ের সংখ্যা ম্যান ইউয়ের বেশি কিন্তু শুধু একবার চেলসির ঐ ৪টি জয়ের স্কোর শিট দেখুনতো - চেলসি vs উলভারদাম্পটন ওয়ান্ডারার্স = ২-০ চেলসি vs ওয়েস্ট হ্যাম = ৪-১ চেলসি vs পোর্টসমাউথ = ৫-০ চেলসি vs এ্যাস্টন ভিলা = ৭-১ যদি আপনার ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ সম্পর্কে একটু হলেও ধারণা থেকে থাকে তাহলে আপনার জানার কথা যে এক ম্যাচে ৪, ৫ বা ৭ গোল কোন স্বাভাবিক ঘটনা নয়, সহজ তো নয়ই। এ ম্যাচগুলোয় বড় জয়ের সুবাদে চেলসি একটা কাজের কাজ যেটা করেছে সেটা হলো তাদের গোল ডিফারেন্স বাড়িয়েছে অনেক। এটা গুরুত্বপূর্ণ কারন দু' দলের পয়েন্ট এতো কাছাকাছি যে যদি কোনভাবে পয়েন্ট সমান হয়ে যায় লিগের শেষে তাহলে গোল পার্থক্য দিয়ে শিরোপা নির্ধারিত হবে।

বর্তমানে চেলসির গোল পার্থক্য +৫৩ আর ম্যান ইউয়ের +৫১। এ্যাস্টন ভিলার সাথে শেষ ম্যাচটায় (যেটায় ৭ গোল দিয়েছে চেলসি) চেলসির স্টার খেলোয়াড় দিদিয়ের দ্রগবা পায়ে ফুটবল পর্যন্ত ছোঁয়াননি - বসে ছিলেন বেঞ্চে। তাই পরিসংখ্যান বলছে সাম্প্রতিক সময়ে When Chelsea wins, They win BIG! কিন্তু গত ৬টি ম্যাচের যে একটি ম্যাচে চেলসি হেরেছে (ম্যানচেস্টার সিটির কাছে ৪-২ গোলে) সে ম্যাচটি বিখ্যাত হয়েছিলো জন টেরি আর ওয়েইন ব্রিজের ব্যাক্তিগত জীবনের দ্বন্দ ফুটবল মাঠে অবতারণার কারনে। ইংল্যান্ড ফুটবল দলের সতীর্থ খেলোয়াড় ওয়েইন ব্রিজের এক্স গার্লফেন্ডের সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার ঘটনায় টেরি আগেই হারিয়েছিলেন জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব। আর তারই খানিকটা প্রভাব পড়েছিলো ঐ ম্যাচে।

অতি আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে গিয়ে কাউন্টার এ্যাটাকের শিকার হয়ে ৪ গোল খেয়ে ম্যাচ খোয়ায় চেলসি। চেলসি যেমন করে তাদের সর্বশেষ ম্যাচে তাদের স্টার প্লেয়ারকে ছাড়াই বড় জয় পেয়েছে ঠিক তেমনিভাবেই ম্যান ইউ তাদের সর্বশেষ ম্যাচে বোল্টনের বিরুদ্ধে মোটামুটি বড় জয় পেয়েছে (৪-০) তাদের স্টার প্লেয়ার ওয়েইন রুনিকে না খেলিয়েই। বলাই বাহুল্য নজর থাকবে এ দু'জনের ওপরও - ওয়েইন রুনি আর দিদিয়ের দ্রগবা। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এদের খেলা দেখে শুধু বিস্মিতই হয়েছি। মালুদা আর দ্রগবার কম্বেনিশন অসাধারণ - ম্যান ইউকে ভোগাবে।

কিন্তু রুনির একক নৈপুণ্য আর ন্যানির অসাধারণ সব ক্রস চিন্তায় রাখবে চেলসিকেও। নজর থাকবে দু' দলের কোচের ওপরও - Sir Alex Ferguson আর Carlo Ancelotti। পুরো সিজন ভর ফার্গুসন বার্বেটভকে ট্রাম্পকার্ড হিসেবে হাতে রেখেছেন - খেলিয়েছেন বদলি খেলোয়াড় হিসেবে। তাই শেষ ম্যাচে তার ২ গোল সত্ত্বেও রুনি দলে ফিরে আসায় বার্বেটভ বেঞ্চে বসেই এ ম্যাচটা শুরু করতে যাচ্ছে তা মোটামুটি নিশ্চিৎ। সবমিলিয়ে একটা জমজমাট ম্যাচের আশায় আমি।

হোম এ্যাডভান্টেজ আর সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনা করে আমি রেড ডেভিলদেরই এগিয়ে রাখবো (এবং বলাই বাহুল্য আমি নিজে রেড ডেভিলের জানপ্রাণ সমর্থক.....সুতরাং......এগিয়ে রাখার জন্য কারনের প্রয়োজন নেই!)
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।