আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সম্ভাবনার বাংলাদেশ [৭ম কিস্তি ]

এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি

সম্ভাবনার বাংলাদেশ [৭ম কিস্তি ] সাইফ বরকতুল্লাহ >>> [সুজলা সুফলা শষ্য শ্যামল আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। এ দেশে রয়েছে অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদ। এ সম্পদ সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক সমৃদ্ধশালী দেশ। এসব সম্ভাবনার কথা নিয়ে এই বিশেষ রচনাটি আরটিএনএন এর পাঠকদের জন্য ধারাবাহিকভাবে লিখছেন সাইফ বরকতুল্লাহ । আজ প্রকাশিত হল এর ৭ম কিস্তি।

] ১. দেশে ৪০ লাখ মিনি ডেইরি ফার্ম গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের ডেইরি খাতের ব্যাপক সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশে প্রায় ৪০ লাখ মিনি ডেইরি ফার্ম গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। আর এ সম্ভাবনা বাস্তবে রূপ দিতে পারলে এর মাধ্যমে দুধ, সার ও বায়োগ্যাস উৎপাদন এবং এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ, পরিবহনসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে প্রায় সোয়া কোটি লোকের কর্মসংস্থান হবে। গভর্নর বলেন, ¯^‡`wk উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নের জন্যই এ বায়োগ্যাস প্লান্ট চালু করা হচ্ছে। দেশের জনসংখ্যা ১৫ কোটি হলেও মানুষ আগের চেয়ে অনেক ভালো রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কর্মক্ষম সব মানুষ কাজ করছে। দেশে অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য নতুন যুদ্ধ চলছে।

গবেষণার ফলাফল উদ্ধৃত করে তিনি জানান, বাংলাদেশে ৪০ লাখ ক্ষুদ্র ডেইরি ফার্মের সম্ভাবনা রয়েছে। যা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে প্রায় ৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন কিউবিক মিটার বায়োগ্যাস, ২৪০ মিলিয়ন টন প্রাকৃতিক সার, ৫ মিলিয়ন টন ভার্মি কম্পোস্ট, ১৭ বিলিয়ন লিটার দুধ, প্রতি ১৪ মাসে ১৬ মিলিয়ন বাছুর, ১ মিলিয়ন টন মাংস এবং ২৬ মিলিয়ন বর্গমিটার চামড়া এবং ৩ লাখ টন হাড় পাওয়া যাবে। গভর্নর বলেন, এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হলে প্রচুর পরিমাণে দুধ, সার ও বায়োগ্যাস উৎপাদন এবং এ খাতের রক্ষণাবেক্ষণ, পরিবহনসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে ১ কোটি ২০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ২. সম্ভাবনাময় সমুদ্র সৈকত সোনারচর সম্ভাবনাময় সমুদ্র সৈকত পটুয়াখালীর গলাচিপার সোনারচর হতে পারে পর্যটকদের জন্য তীর্থস্থান। দীর্ঘ এ সমুদ্র সৈকতের যে কোনো জায়গায় দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয় দেখা যায়।

সেই সঙ্গে বাড়তি আনন্দ দেয় জেলেদের নৌকায় জাল ফেলে মাছ ধরার দৃশ্য। বনাঞ্চলের দিকে তাকালে সহজেই দেখা যাবে বুনোমোষ। ভাগ্য সহায় হলে দেখা হয়ে যেতে পারে হরিণপালের সঙ্গে। এখানে আরো দেখা যাবে বন্য শূকর, বানর, মেছো বাঘসহ নানা ধরনের বন্যপ্রাণী। দেখা যাবে সমুদ্রগামী হাজারো জেলের জীবন সংগ্রামের দৃশ্য।

সোনারচরে সোনা নেই তবে আছে সোনা রঙের বালি। বিশেষ করে শেষ বিকালের সূর্যের আলো যখন সোনারচরের বেলাভূমিতে পড়ে, তখন দূর থেকে মনে হয় পুরো দ্বীপটি যেন একটি সোনার থালা। কাঁচা সোনা লেপ্টে দেয়া হয়েছে এ দ্বীপটিতে। এলাকাবাসীর ধারণা উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যের কারণেই এর নামকরণ করা হয়েছে সোনারচর। মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের চাদরে ঢাকা এ দ্বীপটিতে নদী আর সাগরের জল আছড়ে পড়ে।

অপরূপ সোনারচর ¯^Y©vjx ¯^‡cœi মতোই বর্ণিল শোভায় ঘেরা। প্রায় ১০ হাজার একর এলাকাজুড়ে ¯^gwngvq প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিলিয়ে যাচ্ছে এ দ্বীপটি। এখানে রয়েছে পাখ-পাখালির কলকাকলিতে মুখরিত বিশাল বনানী। যা শীতের সময় পরিণত হয় বিভিন্ন প্রকার অতিথি পাখির অভয়ারণ্যে। সৌন্দর্য পিপাসু পর্যটকরা এখানে এলে সোনারচরের মনমোহনীয়রূপ তাদের মুগ্ধ করবেই।

১৯৫০-এর দশকে গলাচিপা উপজেলার সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে জেগে ওঠে সোনারচর। পর্যায়ক্রমে চরটি পরিপূর্ণতা লাভ করলে ১৯৭৪ সালে স্থানীয় বন বিভাগ বিভিন্ন ম্যানগ্রোভ জাতের গাছের বাগান গড়ে তোলে এবং এরপরই বন বিভাগ তৈরি করে একটি ক্যাম্প ও গলাচিপা উপজেলা প্রশাসন পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধার জন্য গড়ে তোলে একটি বাংলো। গলাচিপা উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে পানপট্টি লঞ্চঘাট। সেখান থেকে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে আগুনমুখা নদী পেরিয়ে ডিগ্রি নদীর বুকচিরে কিছুদূর এগোলেই বুড়াগৌরাঙ্গ নদী। সামনে গিয়ে বায়ে ঘুরতেই দাঁড় ছেঁড়া নদীর দু’পাশে দাঁড়ানো সারি সারি ঘন ম্যানগ্রোভ গাছের বাগান।

নদীর বুকজুড়ে গাঙ শালিকের অবাধ বিচরণ। সামুদ্রিক হাওয়ার মৃদুছোঁয়া সব মিলিয়ে অন্যরকম এক রোমাঞ্চকর ভালো লাগার অনুভূতি। এভাবে ঘণ্টা তিনেক এগোলেই চোখে পড়বে প্রকৃতির অনন্য সৌন্দর্যমণ্ডিত সববয়সী মানুষের হৃদয় হরণকারী মায়াবী দ্বীপচর তাপসী আর এ থেকে সর্বোচ্চ আধা ঘণ্টা সামনে এগোলেই প্রতীক্ষিত সোনারচরের দেখা মিলবে। এছাড়া প্রকৃতির হাতেগড়া চরমৌডুবি, জাহাজমারা, চরতুফানিয়া, চরফরিদ ও শিপচরসহ বেশকিছু দ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করার মতো। দ্বীপগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করে এবং পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলা সেই সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করতে পারলে দেশের পর্যটন শিল্পে নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে এলাকাবাসী মনে করছেন।

৩. আখের ছোবড়া থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন দেশের চিনিকলগুলোতে চিনির পাশাপাশি আখের ছোবড়া থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চিন্তাভাবনা করছে সরকার। এ লক্ষে চিনিকলগুলোতে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে। গত রোববার শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া শিল্প ভবনে চিনি শিল্প করপোরেশনসহ সংশি¬ষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান। দিলীপ বড়ুয়া জানান, চিনিকলগুলো দ্বৈত (চিনি ও বিদ্যুৎ) উৎপাদন ক্ষমতার সরঞ্জামাদি স্থাপনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই ও সমীক্ষা করতে বলা হয়েছে, যাতে আখের অবশিষ্টাংশ ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়।

মন্ত্রী বলেন, চিনিকলগুলোকে লাভজনক করতে পরিত্যক্ত তরল পদার্থ (চিটা গুড়) ব্যবহার করে মদ উৎপাদনের চিন্তাভাবনাও করছে সরকার। ডিস্টিলারি প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য কয়েকটি চিনিকলকে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অন্তত দুটি কারখানাকে এ জন্য চূড়ান্ত করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, দেশে বর্তমানে চিনির চাহিদা প্রায় ১২ লাখ টন। কিন্তু দেশীয়ভাবে এ বছর চিনির উৎপাদন হয়েছে মাত্র ৬০ হাজার টন।

বাকি পুরোটাই আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। চিনি শিল্প করপোরেশনকে এ জন্য আন্তর্জাতিক বাজার যাচাই করে মূল্য নির্ধারণ এবং দ্রুত চিনি আমদানির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শিগগিরই সব প্রক্রিয়া শেষে চিনি আমদানি করা হবে। ৪. বৈদেশিক আয়ের উৎস হতে পারে সুন্দরবনের কাঁকড়া সুন্দরবনের প্রাকৃতিক উৎস থেকে সংগৃহীত কাঁকড়া বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সুন্দরবনের কাঁকড়া আহরণকারীদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, আধুনিক পদ্বতি ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারলে প্রতি বছর এ খাত থেকে কয়েক শ’ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।

প্রতি বছর আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁকড়ার চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি দামও বাড়ছে। আষাঢ় মাস থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত কাঁকড়া আহরণ মওসুম সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার সহস্রাধিক জেলে বন বিভগ থেকে নির্দিষ্ট ivR‡¯^i বিনিময়ে পারমিট সংগ্রহ করে সুন্দরবনে প্রবেশ করে। গহীন সুন্দরবনসহ সাগর মোহনা থেকে জেলেরা কাঁকড়া আহরণ করে। এছাড়া উপকূলীয় জেলা খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার দেড় লক্ষাধিক হেক্টর চিংড়ি ঘেরে প্রাকৃতিকভাবেই কাঁকড়া উৎপন্ন হয়। মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় ১১ প্রজাতির কাঁকড়া পাওয়া যায়।

এর মধ্যে মাইলা, হাব্বা, সিলা ও সেটরা কাঁকড়ার প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকায় চীন, মিয়ানমার, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, হংকংসহ বিভিন্ন দেশে কাঁকড়ার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো- ৬ সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৭-৭৮ অর্থবছরে বিদেশে প্রথম কাঁকড়া রপ্তানি শুরু হয়। এরপর প্রায় তিন বছর বন্ধ থাকার পর ১৯৮২-৮৩ অর্থবছরে আবার বিদেশে কাঁকড়া রপ্তানি শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে বিশ্ববাজারে এর চাহিদা বাড়তে থাকে। পাশাপাশি বাড়তে থাকে এ খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রার আয়।

১৯৯০-৯১ সালে কাঁকড়া রপ্তানি করে আয় হয় ২৭ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে রপ্তানি আয় কয়েকগুন বেড়ে যায়। ওই অর্থবছরে ২৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকার কাঁকড়া রপ্তানি করা হয়। ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে রপ্তানি হয় ১২৫ কোটি ২২ লাখ ৩৯ হাজার টাকার, ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে কাঁকড়া রপ্তানি করা হয় ১৪১ কোটি ৬৬ লাখ ৬ হাজার টাকার। ২০০১-০২ অর্থবছরে এ খাত থেকে আয় হয় ৫৩০ কোটি টাকা।

২০০২-০৩ অর্থবছরে কাঁকড়া রপ্তানি হয়েছে ২ দশমিক ৫২ মিলিয়ন ডলারের ৬৩০ মেট্রিক টন। ২০০৩-০৪ অর্থবছরে এ খাতে আয় গিয়ে দাঁড়ায় ১৪৬ মিলিয়ন টাকায়। কাঁকড়া চাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সুন্দরবন সংলগ্ন সাগর ও নদীগুলোতে যে পরিমাণ কাঁকড়া ধরা পড়ে তা প্রাকৃতিকভাবে রেণু থেকে বড় হয়। এ অঞ্চলে ১২ মাস কাঁকড়ার চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকায় এখন অনেক কাঁকড়া চাষে আগ্রহী হচ্ছে। তাছাড়া চিংড়ি চাষের জন্য প্রচুর জমি ও অর্থের প্রয়োজন হলেও কাঁকড়া চাষের জন্য জমি ও অর্থ দুটোই কম লাগে।

সুন্দরবনে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত প্রচুর পরিমাণে যে কাঁকড়া ধরা পড়ে তা সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানি, কাঁকড়া চাষিদের যথাযথ প্রশিক্ষণ ও সরকারিভাবে ব্যাংকঋণের সুবিধা দেয়া হলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে কাঁকড়া রপ্তানি দেশের সমৃদ্ধির দুয়ার উন্মোচন করতে পারবে। [ চলবে...] তথ্যসূত্র : ১. বিবিসি নিউজ ২. আরটিএনএন ৩.দৈনিক ভোরের কাগজ ৪. দৈনিক যায়যায়দিন লেখক : কবি, গবেষক ও সাংবাদিক ইমেইল : বিস্তারিত পড়ুুন এই সাইটে http://rtnn.net/details.php?id=22911&p=1&s=6

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।