আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নো পবলেম (রম্য রচনা)

∞ দিনের শুরু রাতের শেষক্ষণে যাকে খুজে পাও আমি সেই সকাল ∞
০১. কৃষ্ণপুর স্কুলের সবাই তাকে এক নামে চিনে। আমাদের দলের লিডার। সে হলো চিনু দা। মা মাসিরা বলে এটা কোন নাম হলো ? পাড়ার বুড়ো পটলবাবু বলে বদের হাড্ডি একটা ইচরে পাঁকা। চিনু দা’র অবশ্যি একটা ভালো নাম আছে তা হলো চিন্ময়।

আমাদের ক্ষেপাটে বন্ধুরা বলে চিনিময়। সেবার গোপালপুর জাগরনি ক্লাবের সাথে ফুটবলে হেরে যাবার পর ওরা কোরাস তুলেছিলো চিনিগুড় বলে। ক্ষেপে গিয়ে চিনুদা বললে বাপ শালা আর নাম পেল না রাখলো গিয়ে চিন্ময় একেবারে ময় করে ছাড়বো সব। আমি বলি চিনু দা বাবা আবার শালা হয় কিভাবে ? দাঁত খিচিয়ে বলে হয় এরকম কম্ম করলে হতে হয়। চিনু দা’র একটা স্বভাব হচ্ছে কথা বলার সময় আঞ্চলিক, চলিত, সাধু, ভাষার সংমিশ্রনে কথা বলা।

পাড়া জুড়ে সুখ্যাতি-কুখ্যাতি দুটোই আছে তার। আমাদের দলের কোন নাম নেই পাড়াশুদ্ধু লোক বলে বিচ্ছুর দল। সদস্য সংখ্যা পাচঁ জন। আমি পল্টু,বিলু,চিনু,নিপেশ। আমরা সবাই চিনু দা’র দারুন রকমের ভক্ত।

আজ আমরা বাঞ্ছারাম পুর থেকে ফুটবল খেলায় হেরে বাড়ি ফিরছি। আমাদের কে হায়ার করে এনেছিলো ওরা। এর আগে আর কখনো আসিনি। রাস্তাঘাটও অচেনা। খেলাতে হেরে একেতে মনটা খারাপ তার উপর পকেট গড়ের মাঠ।

ষ্টেশনের পথে হাটছি। হঠাৎ বিলু বলে উঠলো পল্টুর জন্যই তো আজ হারলাম আমরা। মটকু দৌড়াতে পারেনা। পল্টু বললো তোরা খেলতে পারিস না আমাকে দোষ দিবি না; আর মটকু বলবি না। নাদুস-নুদুস বডিটার দিকে তাকিয়ে আমিও বললাম তুই তো মটকুই।

একটা বিচ্ছিরি ঝগরা লাগতে যাচ্ছিল মাত্র তার আগেই চিনু দা বলে উঠলো বিলু পবলেম হলো দেখছি। চিনু দা প্রবলেম কে পবলেম বলে র-ফলা ব্যবহারে তার একটু এলার্জি আছে। আমি বললাম কি পবলেম। মুখ বেকিঁয়ে চিনু দা বললে প্রকৃতির ডাক এসেছে। আতঁকে উঠলাম সর্বনাশ একে তো বাজার তার উপর আশে পাশে কোন মাঠঘাট তো নেই।

তাছাড়া এখানে কাউকে চিনিনা। পল্টু বললো কষ্ট করে ধরে রাখ ; মুখ খিচিয়ে বলে উঠলো শালা বললেই হলো। চিনু দা বলে উঠলো পড়ে গেলো তো; সর্বনাশ! আতঁকে উঠলাম। আমরা আশে পাশে দেখতে লাগলাম টয়লেট কিংবা গনশৈাচাগার আছে কিনা চোখ লাগিয়ে খুজছি পল্টু আর আমি। কোথায় কি !! বিলু আবার ক্ষণে ক্ষণে পিছু চায় রাস্তায় বসে পড়লো না,তো চিনু তাহলে গেছে কম্ম সাড়া ।

খুজে পাইনে টয়লেট। পাচঁতলা বিল্ডিং পার হবার পর হঠাৎ টের পেলাম চিনু দা নেই !! ভাবলাম কোথাও কাজ সাড়তে চলে গেছে হয়তো। থামলাম পাচঁতলা বিল্ডিংটার পাশে যে ডাল-পুড়ির দোকান টা আছে সেখানে। চোখ ঘুড়িয়ে দেখলেম নতুন হচ্ছে ফ্লাট বাড়ি হবে বোধকরি। দাড়িয়ে আছি নিপেশ বললে আমার কাছে পাঁচটি টাকা আছে কিছু খাবি তোরা; আমরা তো অবাক কিপটু আজ খাওয়াতে চায় নিশ্চই বাপের পকেট থেকে টাকা মেরে দিয়েছে।

চিনু দা না আসলে খাবোনা বলে দাড়ালাম ততক্ষনে দশ মিনিট পেড়িয়ে পনেরতে পড়েছে। চিনু দা তো আসছে না। চিন্তার ব্যাপার !! পল্টু বললো চল পিছু দেখি অগ্যতা আবার হাটা লাগালাম। দুর ছাই পাইনা। মনে মনে বলি চিনু কি কারো বাড়ি গিয়ে কাজ সারবার সময ধরা খেলো না,তো আবার।

বিলু বললো সামনে একটা জটলা দেখা যাচ্ছে রে চল যাই সাপের খেলা মনে হয়। আমি বলি আগে চিনু দা’র খোজ করি পরে সাপ দেখবো । কিন্তু কি ভেবে দিলেম উকি দেখে তো চক্ষু ছানাবাড়া; চিনু দা এখানে দু হাতে কানে ধরে আছে। নিতেশ বললে চিনু দা কি ব্যাপার এখানে কি করে। পল্টু বললে কানে ধরে আছো কেন।

মোটা মতন দুটো লোক বললো তোমরাই বুঝি ওর চ্যালাপ্যালা। হু বলার আর অবকাশ নেই বিলু বললে ওকে বেধেছেন কেন? আমি বললাম কি হয়েছিলো চিনু দা চোখ বড় করে চিনু দা বললে আর বলিস নে, তোরা তো হাটছিস আমার তো প্রাণ যায় হঠাৎ দোতলার একটা সাইনবোর্ডে দেখলাম লেখা টয়লেট। কোন ভাবে সিড়ি পেড়িয়ে উঠলাম ভাবলাম বন্যার কারণে শৈাচাগার বোধহয় আজকাল উপরেই বানানো হচ্ছে। তখনার চাপটা ছিলো কঠিণ উপর তালায় তন্ন তন্ন করে খুজে কমোড জাতীয় কিছু পেলাম না শেষে এক জয়গায় গর্ত মতে একটা জায়গা দেখে বসে গেলাম ওমা পড়ে দেখি এটা পানি যাবার পাইপ করছে। তারপর আর কি !! কাজ শেষ করে পানি খুজলাম পেলাম না হঠাৎ এক বোতল পানি পেলেম সিড়ির গোড়ায় কম্ম শেষ করে দেখি ওটা মিনারেল ওয়াটরের বোতল নো পবলেম পানি তো।

নামতে গেছি এমন সময় ওরা হাজির এই বলে থামলো চিনু দা। আমি বললাম তো কি হলো তারপর? তারপর ওরা আমায় ধরে নিয়ে এলো। পল্টু বললো কেন ? আরে বুদ্ধু ওখানে তো ফ্ল্যাট তৈরির কাজ চলছে আসলে ওটা টয়লেট না লেখাছিলো টু-লেট আমি টয়লেট ভেবে ভূল করেছি। বিলু বললো লে-ঠেলা। চাপ সহ্য করিতে না পারিয়া ছাড়িয়া দিয়াই আজি এই অবস্থা আমার।

মোটা মতন লোকটা বললো ফ্লোর পানির পাইপ নষ্ট করে দিয়েছে তাই একঘন্টা কানে ধরে বসে থাকতে হবে। ০২. সেই টু-লেটের পর কদ্দিন ঝিমিয়ে ছিলাম তার উপর সামনে পরীক্ষা। সেদিন সকালে আমি পড়ছিলেম; এমন সময় চিনু দা জানালার পাশে দাড়িয়ে বললে এই ফকরা বাইরে আয় তো? আমি এলাম কি বলো চিনু দা ? হাবু কাকার চা-ষ্টলে নিয়ে এলো চিনু দা; দেখি বিলু ,নিপেশ, পল্টু সব কটি আছে। চিনু দা বললো আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি বাবা আর মাসীর কাছ থেকে হাজার পাচেঁক টাকা ধান্ধা করেছি এগুলো সৎকাজে ব্যায় করা হইবেক তোরা কি বলিস ? আমরা সমস্বরে বলে উঠলাম ঠিক আছে তার আগে পার্টিটা কবে হচ্ছে (আমাদের মাঝে একটা রেওয়াজ আছে কেউ নতুন কিছু কিনলেই সেই বাবদ একটা খানাপিনা’র ছোট্ট আয়োজন করতে হয়)। চিনু দা বললে হবে আগে সৎকর্মটা করে নিই।

কি,সেই সৎকর্ম । সেটা হলো ভেবে দেখলাম প্রতি সপ্তাহেই তো ফোন করতে হয় দাদা’র কাছে যেতে হয় বিপ্রদা’র বাড়ি; বসে থাকোরে; লাইন পাইনা রে, শব্দ হয়রে, কত কি পবলেম দেখায় ওরা। তাই ঝক্কি ঝামেলা আর না পোহাবার তরে এই পদক্ষেপ; তোরা কি বলিস ? আমি বললাম বুঝলাম কিন্তু নেটওয়ার্ক পাবে কোথায়? (আমাদের কৃষ্ণপুরে এখানে মোবাইলের টাওয়ার নেই জেলা শহরে আছে নেট পেতে হলে বাঁশ দাড় করিয়ে রাখতে হয়) মাথায় চাটি মেরে চিনু দা বললো কানা দেখিস নে রিন্টু দা’র ছাদে যে টাওয়ার ঝুলছে ! টাওয়ার !! আরে টাওয়ার কিসের একটা বাঁশের মাথায় এন্টেনা লাগানো আমি বললাম এটা তো এন্টেনা নেটওয়ার্ক থাকবে কিন্তু তার থাকবে পিছে পিছে । চিনু দা বললো নো পবলেম। বিলু বললো তুমি যখন মোবাইল পকেটে নিয়ে ঘুড়বে তখন তো তোমার পিছু পিছু একজন লোক লাগবে বাশ সমেত এন্টেনা নিয়ে ঘুরার তখন কি করবে ।

চিনু দা চায়ে চুমুক দিয়ে বললে নো পবলেম তোরা আছিস না। আমরা জানি ওর ঘাড়ের রগ একটা ত্যাড়া কিনবেই মোবাইল। তিনদিন পর .................. আমি গেলাম স্কুল মাঠে দেখি চিনু দা বিলু বসে আছে হাতে মোবাইল। জিনিসটা টিভিতে দেখেছি হাতে ধরা হয়নি তাই ধরে নেড়েচেড়ে দেখলাম আর কি। নেট নেই।

আস্তে আস্তে করে সবাই চলে এলো। দেখলো চিরিয়াটাকে। গড়ের মাঠে যাবার সময় হয়ে এলো আমি উঠে যাবো এমন সময় চিনু দা বলে উঠলো ফকরা বাঁশটা নে? বাঁশ !! বলে কি !! পনের হাত লম্বা এন্টেনা লাগানো এক বাঁশ এনে দিলো হাতে। লে ঠেলা । বিলু এমন সময় বলে উঠলো ও তো পারবে না পল্টু কে দে? পল্টু বললো পারবে না।

মাথায় গাট্টা মেরে বললো না নিলে তোর প্যান্ট খুলে নদীতে ফেলে দেব ন্যাংটা হয়ে বাসায় যাবি। শেষে কাচুমাচু হয়ে রাজী হলো। কিন্তু এভাবে কতোক্ষণ টেনে হিচরে নিয়ে যাওয়া যায় হাত লাল হয়ে উঠলো। চোখে পানি আসে আসে ভাব। মাঠে এসে নিপেশ বললো এভাবে হবে না মাথায় হুুডওলা টুপি পড়ে এন্টেনা সেটিং করতে হবে।

তাহলে ঝামেলা বিহীন। দেখিস না গাড়ীর সাইডে যেমন থাকে। চিনু দা বললে আরে তাই তো!! না চিনু দা’র সেটা আর করা হয়নি আমি তো আশায় ছিলেম আহা না জানি কেমন সে দৃশ্য হবে। পিটুনি খেয়েছে বাপের হুড ওলা টুপি চুরি করতে গিয়ে তার উপর বাবা তাকে আহাম্মক বলেছে। ০৩. গড়ের মাঠে আমরা ঘুড়ি উড়াচ্ছি চিনু দা এসে বললে ফকরা গাছটা কেটে দেব? আমি বললাম কোন গাছটা।

-তালগাছটা নিপেশ বললে কেন ঘুড়ি বার বার আটকে যায় তাই। চিনু দা বললো হ্যা; দেখিস না আমার সবকটা ঘুড়ি ওখানে গিয়ে আটকায়। বিলু বললো সরকারী গাছ কাটা যাবেনা। নিপেশ বললো কাটাবার আগে মেয়র বরাবর একটা দরখাস্ত করতে হবে তাহলে সমস্য হবেনা। চিনু দার এক কথা অত ঝামেলা করতে পারবোনা দরক্ষেস্ত করার টাইম কম আমার।

এই সকালে আবার যখন চিনু দা’র ঘুড়িটা গেল তাল গাছে আটকে চোখমুখ লাল করে বললো এই পল্টু তুই দরখাস্ত লেখবি? পল্টু বললো না। আমি তো আগেই না; বানান ভূলের কারিগর কি,না। নিপেশ বলে সরি বাবা। বিলু বলে আমার সমস্য আছে বাবা জানলে আচ্ছা পিটুনি নিশ্চিত। দাতঁ খিচিয়ে চিনু দা বললো শালারা হাদাঁরাম সবকটা ভীতুর ডিম্ব; আমিই লিখবে বলে চলে গেল সে।

পরদিন সকালে চিঠি বাক্সে ফেলে এসে চিনু দা হাজির। কি লিখলে চিনু দা? চিনু দা বললে লিখলাম মহাশয়, গড়ের মাঠে যে তালগাছ নামক একটা বিদঘুটে প্রানী আছে সেটার জন্য আমাদের ঘুড়ি উড়াতে পবলেম হয়। বৃথায় ইহাকে কাটুন নয়তো আমরা আইন হাতে তুলিয়া নিব এবং এরপর ঘুড়ি ওখানে গিয়া আটকাইলে কেটে দেব। নিবেদান্তে- চিনু ,বিলু, পল্টু,ফকরা,নিপেশ। আমি বললাম এই রে আমাদের ভালো নাম গুলো দাওনি কেন? মাথায় গাট্টা মেরে চিনু দা বললে তাহলে তো পড়ে আমাদের খুজে পাবে সহজেই।

ওরা গাছ আজকের মধ্যে না কাটলে কাল আমরা কেটে দেব। আমরা সব কটা নিশ্চিন্ত মনে ঘুড়ি উড়াতে লাগলাম। এই চিঠি পেলে মেয়র মশাই বোধকরি সেপাইদের পাঠিয়ে খবর নেবে। পরদিন তখন সন্ধ্যে। না কেউ আসেনি উল্টো নিপেশের ঘুড়ি আটকে যাওয়াতে ওর মাথা হট এবার কাটতে হবেই কুড়োল নিয়ে পল্টু হাজির।

বিলু বললো পরে যদি কোন সমস্য হয়। আমি বললাম হবেনা চিনুদা তো দরখাস্ত দিয়েছেই অগত্যা কাটা স্টার্ট। চিনু দা হাতে কুড়োল নিয়ে শুরু করলো; গাছ কাটার শব্দে আশে পাশের সন্ধ্যার নিস্তব্ধতা ভেদ করাতে ক’জন অবশ্যি ইতিমধ্যে উকিঁ দিয়েছে; কিন্তু আমরা থামছি না। চিনুদা’র পরে বিলু তারপর আমি কাটছি অর্ধেক হয়ে গেছে আবার যখন চিনু দা কাটা শুরু করেছে হঠাৎ কর্পোরেশনের গাড়ীর আওয়াজ এ মাঠের দিকেই। চিনু দা বললে নো পবলেম আসুক।

আমরা তো আইন হাতে নিয়েছি দরখাস্ত দিয়ে। হেডলাইট নিভিয়ে থামলো আস্তে আস্তে লোক জড়ো হচ্ছে আগে কেউ জানতো না এখন সবাই জানবে ইশ্ ভৎসর্নার একশেষ। পাড়াশুদ্ধু লোকের সামনে। পাড়ার কমিশনার বললেন আচ্ছা কেটে যখন ফেলেছো তখন ওটা কেটে ফেলা হবে তবে তার আগে শাস্তি স্বরুপ তোমাদের কে নীলডাউন কানেধরা প্রক্রিয়ায় দেয়া হবে। সবকটা কান ধরে লাইন বেধে দাড়িয়ে আছি তবে নীললাল ডাউনটি আর হতে হয়নি।

হিহি করে হাসছে ছোট বড় সব কি,যে লজ্জা চিনু দা বলছে লজ্জায় একটু লাগছে বৈকি কিন্তু গাছটা তো কাটা হলো। এবার আর ঘুড়ি আটকানোতে নো পবলেম। ============সমাপ্ত===============
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।