আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দিন বদলের গদ্য

থেমে যাবো বলে তো পথ চলা শুরু করিনি।

দিন বদল এক. সূর্য ডুবিয়া গেলে দিনের শেষ হয়, এবং পুনবায় তাহা না উঠিলে তাহা রাত্রি বলিয়া গণ্য হয়। এমতাবস্থায় রাত্রির শেষে যে সূর্য ওঠে, তাহা নতুন দিকসের সূচনা করে। এ ভাবেই আমাদের দৈন্দিন জীবনে দিন বদল হয়। দিন বদল একটি ভৌগলিক ব্যাপার, কেননা আমাদের দেশে নিম্ন কোন একটি শ্রেনির ভূগোলশাস্ত্রের কিতাবে বিষয়টির ব্যাখ্যা আছে।

পৃথিবীর আহ্নিক গতির কারণে দিন বদল হইয়া থাকে। আবার দিন বদলের কঠিন হিসাবও আছে। মুসলমানরা বলিয়া থাকেন যে সূর্য ডুবিলে একটি দিন শেষ হইয়া যায়, কিন্তু পশ্চিমাদের হিসাব অনুসারে, ঘড়িতে রাত্রি দ্বাদশ ঘটিকার পরেই কেবলমাত্র দিনের পরিবর্তন ঘটে। আমাদের বাঙালাদেশে নতুন সূর্যই নতুন একটি দিনের সূচক। এই নিয়মগুলি পর্যালোচনা করিলে দেখা যাইতেছে যে, রাত্রি গণিকার মতো -- কাহারও একার নয়।

তাহা হইলে কি ভাবে নতুন করিয়া দিনের বদল হইবে? আমাদের দেশে অতিসম্প্রতি বেশ ঘটা করিয়া ‘দিন বদল’ হইয়াছে। লেখাটি পড়িয়া অনেকেই বলিবেন এ কোথাকার বেয়াকুব আসিয়াছে যে আমাদের দিন বদলের কথা বলিয়া অস্থির করিয়া তুলিতে চাহিতেছে। ‘আরে বাবা, তুই থাম তো’, ‘তোর এখন আর জ্ঞান দিতে হইবে না’ - ইত্যকার কথা লেখককে আপনারা বলিতে পারেন। কিন্তু কথক আপনাদের কথা শুনিতে চাহে না। সে তাহার আপন কথা বলিবেই, এমনই তাহার ধর্নুভঙ্গপণ।

আসলে ‘দিন বদল’ কথাটি ছিল একটি আইসখন্ডের উপরি ভাগ। যাহার মূল কথাটি ছিল “ক্ষমতার হাত বদল”। ব্যাপারটা অনেকটা জর্জ বুশের ইরাকের শাসনের ‘পালা বদল’-এর মতোই লাগিতেছে। সেখানেও তো শাসনের হাত বদলের মাধ্যমে দেশটিতে ‘দিন বদল’-এর মহান উদ্দেশ্যে, সৈন্য-সামন্ত লইয়া প্রাক্তন এই মার্কিন-নৃপতি আরবের ধু ধু মরু প্রান্তরে গিয়া হাজির হইয়াছিলেন। আরে গর্ধভগোষ্ঠিভুক্ত সাধারণজন, তোমরা তো দেখি সহজ কথাটাই বুঝিতে পারিলে না।

আমাদের নেত্রী বলিয়াছেন, ‘আমরা ‘দিন বদল’ করিবো। ’ তাহার জন্যে প্রথমে নির্বাচনে জিতিয়া সরকার গঠন করিতে হইবে, তাহার পরই না কেবল ‘দিন বদল’ হইবে। দিনকে বদলাইতেই হইবে [তবে আমরা দ্বীনকে বদলাইবো না], ইহা ভিন্ন আমাদের সামনে কোন পথ খোলা নাই। ‘আমরা যদি ক্ষমতায় না যাই, তাহা হইলে লোভনীয় চাঁদাবাজি, সুমিষ্ট টেন্ডারবাজি, বিদ্যালয়ে-মহাবিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তি ব্যাপারে অধুনা গড়িয়া ওঠা ‘ভর্তি-বাণিজ্য’, ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক লাভজনক কাজ আমাদের হাত ছাড়া হইবে। ’ দিন না বদলাইয়া আমাদের আর কোন উপায় কি ছিল? দুই. প্রিয় পাঠক, স্থুল নির্বাচনী কারচুপির মাধ্যমে আমাদেরকে এর আগের বার পরাজিত করিয়া আমাদের বিরোধীরা ক্ষমতায় আসিয়া আমাদের তুলার মত ধুনিয়া দিয়াছে।

জাতীয় সংসদে আমাদের মোট জনপ্রতিনিধির সংখ্যা হইতে অধিক সংখ্যক মন্ত্রী-শান্ত্রি নিয়োগ করিয়া আমাদের অপমান করিয়াছে। আমাদের মারিয়া-ধরিয়া-খেদাইয়া দিয়া তাহারা এক নেতার অধীন হইয়া দেশের সর্বপ্রান্ত হইতে হালুয়া-রুটি-মধু আমাদের দেখাইয়া দেখাইয়া গ্রহণ করিয়াছে। আমাদের এক সহায়ক নেতা, যিনি প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিও ছিলেন, তিনি বলিয়া উঠিলেন, ‘এই অবস্থা চলিতে দেওয়া যায় না’। নেত্রীও তাহার সহিত হাত মিলাইলেন। আমরা তাই আমাদেরকেও আমাদের বিরোধীদের সমতুল্য-রূপে পরিবর্তিত করিবার জন্যে প্রস্তুতি লইতে লাগিলাম।

আমাদের ‘পুরাতন মিত্র’ বলিয়া এতোদিন যাহাদের জানিয়াছি, ভোটের মাঠে তাহাদের মোট ভোট ধর্মীয় পুরোহিতদের চাহিতে নগন্য। অতএব এই নগন্য ভোটের দরকার নাই, দরকার নাই এই অর্থহীন সখ্যের। ভালো চাড় দিলে ভাল মৎস্য মিলিবে, একথা যেমন সকলে জানে; তেমনি ভাল ‘ডিল’ করিতে পারিলে ভাল ভোট যে মিলিবে, তাহাও সবাইকে বুঝিতে হইবে। অতএব, আদর্শের সাথে আর সখ্যতা নয়। তাহার জন্যে ঘুষখোর-সুদখোর-জেনাকারী কাহাকেও ছাড়িবো না।

সবাই আমাদের বন্ধু। এমন কি রাজনীতির মাঠের ধর্মীয় পুরোহিতগণও আমাদের সখা হইতে পারে। কেননা আমাদের ভোট পাইতেই হইবে। আর সে জন্যেই তো ‘আমরা ভোটের লাগি করি জোট’। এমতাবস্থায় আমরা আমাদের পূর্বসূরীদের চাহিতে কোন অংশে বুদ্ধিতে কম ধরি না।

আমরা হাইকোর্টে এমন সব লোকদের নিয়োজিত করিতেছি, যাহারা পূর্বে একনিষ্ঠভাবে আমাদের দল করিয়াছে, এবং কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক স¤পাদক মতো উচ্চমানের পদ নহে তাহাদের যোগ্যতা মহকুমা সভাপতি গোছের হইলেও, আমরা তাহাদের বিচারপতি বানাইয়াছি। সেই বিচারপতির আদালতে আমাদের নেত্রী অতি স¤প্রতি মার্জনা পাইয়াছেন। আমরা আশাকরি দুই-হাজার-একুশ সালে সে স্বপ্নময় ‘আওয়ামী-মার্কা’ সোনার বাংলা হইবে, সে সময়কার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসাবে আমাদের মনোনীত বিচারপতিদের মধ্য হইতে একজন অধিষ্ঠিত থাকিবেন। ফলে আমাদের জয় পাইতে আর কোন বেগ সামলাইতে হইবে না। তিনি তো কোথাকার কোন কে-এম-হাসানের মত পাতলা চামড়ার লোক নন যে কয়েকজন বলিলেই ‘বিব্রত বোধ’ করিবেন! ভবিষ্যতের সেই সময়ে ‘আমাদের লোকের’ ত্বক ইনশাল্লাহ গন্ডারের মত পুরু থাকিবে।

সৃষ্টিকর্তার পরে তিনিই আমাদের প্রধান সহায় হইবেন। তিন. আমরা দেখিয়াছি জনগণ উত্তরাধিকার পছন্দ করে। তাই আমরা বাঙালীর শ্রেষ্ঠ সন্তান, আমাদের মহান নেতার নাতিকে বিদেশ হইতে বিদেশিনী ভার্যাসহ দেশে ফিরাইয়া আনিয়াছি। বৌ-মাতা রাজি থাকিলে বাবাজি আমেরিকা ছাড়িয়া বাঙালাদেশে ‘প্রবাসি’ হইয়া আমাদের তৃণমূলে পশ্চাদ্দেশে যৌবনের জয়গান সম্যকভাবে প্রবিষ্ট করাইয়া ছাড়িবে। ঐ যে কবিতায় আছে না ‘তোরা সব জয়-ধ্বনি কর / ঐ নতুনের কেতন ওড়, কালবৈশাখী ঝড়’।

আসলের এখানে ‘জয়ের জন্য ধ্বনি’ দিবার কথাই কবি নির্দিষ্ট করিয়া ‘জয়-ধ্বনি’ হিসাবে বলিয়া দিয়াছেন। দুই-এক বার শ্বশুড়বাড়ি গেলেও বাবাজি যে দেশে থাকিবেন, তাহা মোটামুটি ধারণা করা যায়। তিনি কর্মবান লোক, কাজ ছাড়া থাকিতে পারেন না। ইতোপূর্বে আমাদের বিগত শতাব্দির শাসন আমলে তিনি নিজ যোগ্যতায় কর্ম করিয়া খইয়াছেন। তাঁহার তো আবারও সেই সুযোগ আসিয়াছে।

তিনি যদি দুই-এক পয়সার মুখ দেখিতেই চান, তাহা হইলে কি তাহার কোন দোষ হইতে পারে? যদি পূর্বসূরির মত তিনি যদি ‘সর্ব-বিষয়ে-যোগ্য’ না হইতেই পারিলেন, তাহা হইলে তাহার নিজের যোগ্যতা লইয়া প্রশ্ন উঠিবে। এমনিতেই তাহার শিক্ষাগত যোগ্যতা লইয়া প্রশ্ন উঠিতেছে। এমন কি বলা হইতেছে যে তিনি কম্পিউটার কি জিনিষ তাহা চিনেন না, শুধু ‘ভয়েপ’ চিনেন; হার্ভাডে যে বিষয়ে স্নাতকোত্তর পাঠ গ্রহন করিয়াছেন, তাহাতে নাকি পাগল-ছাগলও ভর্তি হইতে পারে! আমাদের সামনে বিগত জমানার উদাহরণ জ্বলজ্বল করিতেছে। আমরা কোন ভবন তৈরী করি নাই, আমাদের মজ্জায় তাহা নাইও। আমাদের নেত্রীর পতি যে বিশাল ইমারত বানাইয়া রাখিয়া গত হইয়াছেন, তাহার সুধা সেবন করিলেই আমাদের চলিবে।

আমরা তো আর অন্যের দেওয়া সম্পত্তিতে ভোগদখল করিতেছি না। আমরা আইন দ্বারা নির্ধারিত এবং উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত আমাদের ন্যায্য সম্পত্তিতে বাস করিতেছি। এতক্ষণ যাহা বয়ান করিলাম, তাহার সারমর্ম হইল ‘দিন বদল’। ঐ যে একটি মুঠো ফোনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আহমদীয়-শাসন কালকে প্রশংসা করিয়া বলিয়াছিল না: “দিন কি আগের মতো আছে, দিন বদলাইছে না?” আসলেই দিন বদলাইয়াছে। দিন বদল না হইলে কি আমরা আজ নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে আমাদের পূর্বসূরীদেরকে শিক্ষা দিবার মওকা পাইতাম? দিন বদলে সবচেয়ে বড় প্রমাণ হইল আজ জনগনের সরকার ক্ষমতায় আছে।

তাহারা কোন খারাপ কাজ করিতে পারে না। আমাদের কোন নেতার নামে কোন দূর্নীতির অভিযোগ নাই; তাঁহারা সকলেই সাধু। এর বড় প্রমাণ হইল এখন আর কম্বল চুরি হয় না। আমরা কম্বল হইতে প্রস্তুতকৃত হাত-কাটা-খাটো কোট পরিধান করি না, আর নেত্রী তো পরিধান করিতেই পারেন না। আমরা যাহারা পরিধান করি তাহারা এখন উন্নতমানের জাপানী স্যুটের কাপড় হইতে প্রস্তুতকৃত হাত-কাটা-খাটো কোট পরিধান করিয়া থাকি।

মনে রাখিবেন, যত তস্কর, যত দূর্নীতিবাজ, চোর, জঙ্গি -- সকলে ঐ পক্ষে। ইহার অধিক বলিবার অনুমতি নাই। আপনারা আমার কথা শুনিলেন। আর কোন প্রশ্ন নয়। এলাকায় যাইয়া সাধারণদের বুঝান যে ‘দিন বদল’ হইয়াছে।

অবশ্যই সরকার আপনাদের মত সৎকর্মশীলদের সহিত আছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।