আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্প : শেকড় ৩

জলের অহং

গল্প : শেকড় : শেষপর্ব ১২ দিদার পাশে চেয়ার টেনে বসে টুকু। কাল তুই কী করলি ঐ পাগলটার সাথে? উমাদেবী টুকুসোনার গাল টিপে আদর করে। ছি! পাগল বলছো কেনো, ওতো আমার বন্ধু ! দিদা জানো , মাঠের দুষ্ট ছেলেরা ওকে না ইট ছুঁড়ে মেরেছে। কেনো ওরা এমন করে ? টুকুকে জড়িয়ে ধরে দিদা , ওরা ভালো নয়। তাই বলে তুমি ওর সাথে কোথাও যেও না, তোমার ঐ বন্ধু সবকিছুই ভুলে গেছে।

ওর ছেলের কথা বললো যে। ওর সবই মনে আছে দিদা তুমি জানোনা। মতি মনযোগ দিয়ে ওদের কথা শোনে। সতীশকাকা, আমি আর তপনমামা আমরা কতো জাগা খুঁজছি। টুকু ভাইয়া , আপনার ছবি নিয়া আমরা পুলিশের কাছে গেসি।

মতি , তুমি হারিয়ে গেলে তোমাকে আমি খুঁজে বের করবো। মতি ফিক করে হাসে ! ১২ বারান্দায় নতুন একটা ফুলের টব রেখেছে আরতি। আজ থেকে ওখানে টুকুর বল খেলা নিষেধ। বারান্দায় এসে দাঁড়ায় টুকু। লোকটার সাথে কথা বলে।

তাদের দুজনের একান্ত কথা। টুকুর শুধু হাসি পায়। সেও মিটিমিটি হাসে। ওদের কথা কেউ বোঝে না। মতিও না।

১৩ টিপ টিপ বৃষ্টি পড়ে। টুকু বৃষ্টি দেখে। গাছের ডালে দুটো চড়ুইপাখির ডানা ঝাপটানো দেখে। টিপ টিপ থেকে টাপুর টুপুর, তারপর দমকা হাওয়া। টুকুর গায়ে জলের কণা এসে লাগে।

বৃষ্টিতে বারান্দা থেকে হাত বাড়িয়ে দেয়। লোকটা বৃষ্টিতে ভিজছে। মতি টুকুকে ঘরে নিয়ে যেতে চায়, ভাইয়া তুফান আইসে ঘরে চলেন, মামানি ডাকে। লোকটা শীতে কাঁপছে। প্রচণ্ড কাঁপছে।

চোখের কাপনে ঠিকমতো টুকুকে দেখতে পায় না। টুকু দৌড়ে ঘরে যায়। চুলোয় খিচুড়ি চাপিয়েছে আরতি। রহিমা বুয়া আজ আসে নি। মা, ওকে ঘরে নিয়ে আসি? কাকে? ঐ যে আমার বন্ধুকে! ও কাঁপছে।

আরতি কোন কথা বলে না। টুকু কাঁদে, মার শাড়ি ধরে কাঁদে। দিদার কাছাকাছি যায়, দিদা ওকে ঘরে নিয়ে আসো না, ওর শীত লাগছে। টুকুর গায়ে একটা লাল সোয়েটার পড়িয়ে দিয়ে বললেন, ওকে ঘরে এনো না, টুকু। দরজায় বেলের শব্দ পেয়ে সিঁড়ির দিকে দৌড়ে যায় টুকু।

আমার বন্ধুকে এখানে নিয়ে আসো না, বাবা। টুকুর চোখে জল টলমল। মতি দরজাটা বন্ধ করে দে। টুকু চিৎকার করে কাঁদে। তপন ছেলের হাত শক্ত করে ধরে ওপরে উঠে যায়।

ঝড়ের শব্দ ছাপিয়ে টুকুর কান্নার শব্দ বাড়িময় ঘুরপাক খায়। ক্লান্ত অবশ্রান্ত টুকু একসময় ঘুমিয়ে পড়ে। ১৪ ছোট্ট একটা ফুলের কলি এসেছে নতুন টবে। আজ খুব ভোরে ঘুম ভেঙে যায় টুকুর। লোকটাকে খোঁজে।

কোথাও দেখতে পায় না। রান্নাঘরে এককোণে শুয়ে থাকা মতিকে জাগিয়ে তোলে টুকু। আমার বন্ধুকে দেখেছো? কোথাও দেখি না কেনো ? চোখ মুছতে মুছতে মতি বলে, এতো সকালে উঠসেন কেন, ভাইয়া? টুকু ওর হাত ধরে বারান্দায় নিয়ে যায়। সিড়ি ঘরে, রাস্তায় , দোকানের আশেপাশে কোথাও দেখা যায় না। আরতি রান্নাঘরে ঢোকে।

চিরতার রস গ্লাসে ঢেলে উমা দেবীর হাতে দেয়। আজ এতো সকালে উঠলে যে, সোনা ? মন খারাপ কেনো ? আমার বন্ধুকে খুজে পাচ্ছি না কোথাও দিদা। ইদরিস মিয়া দোকান খোলে। টুকু বলে, এই যে শোনো, ও কোথায় ? কে, ঐ পাগল? ওরে খোঁজো কেন? ও আমার বন্ধু, ওকে পাগল বলবে না। টুকু কাঁদে।

১৫ এতো চেঁচামেচি কিসের? তপন আর আরতি বারান্দায় চলে আসে। ঐ ব্যাডার জন্য কান্দে টুকু ভাইয়া। মতি বলে। আমার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে, আমি যাই টুকু, ও এখানেই কোথাও আছে হয়তো। চলে আসবে।

আমার বন্ধু হারিয়ে গেছে খুঁজে আনো, বাবা। মতিকে বলো খুঁজে আনতে। উমাদেবী মতিকে ইশারা করে। টুকু কান্না থামিয়ে দৌড়ে ঘরে যায়। মতির হাতে একটা কাগজ দিয়ে বলে এই নাও আমার বন্ধুর ছবি।

তুমি এটা নিয়ে থানায় যাও। আমাকে যেমন খুঁজেছিলে। টুকুর কাঁচা হাতে আঁকা ছবি জটাধারি ঐ লোকটা , নতুন ফুলের টব, তার একপাশে আরতি আর লাল সোয়েটার পড়া টুকু। আরতি অবাক হয়ে ছেলের মায়াভরা মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকে। ১৬ মতি রাস্তায় নামে।

জানেনা তার গন্তব্য ! কোথায় খুঁজবে লোকটাকে? উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়ায় সে। চৌরাস্তার পাশে একদল লোকের ভিড়। কিসের এতো ভিড়? অন্যসময় হলে দাঁড়িয়ে পড়তো ওখানে। এখন তার সময় নেই। চোখের দুফোঁটা জল গাল গড়িয়ে পড়ে।

হাতের কাগজটা শক্ত করে ধরে রাখে মতি। সমাপ্ত

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.