আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাই ডটার শান্তা ডায়েড এ্যাট ১১পিএম অন ফ্রাইডে ।। রেজা ঘটক

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

২০১০ সালের ১৩ মার্চ শনিবার সকাল ১১ টা ৩৭ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডে আমার সেলফোনে একটা এসএমএস আসে। সেলফোনটা মাথার কাছে থাকায় মেসেজ রিসিপ্ট রিং টোনেই আমার ঘুম ভাঙে। কাঁচা ঘুমের মধ্যে হাতড়িয়ে মাথার কাছ থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে মেসেজটা ওপেন করি। মেসেজ প্রেরক শামীম ভাই। অনেক দিন শামীম ভাইয়ের সাথে দেখা হয় না।

এতো সকালে শামীম ভাইয়ের ঘুম থেকে ওঠার কথা নয়। সাধারনত জরুরী না হলে শামীম ভাইও আমার মতোই নিশি জাগা পাখী। শামীম ভাই এতো সকালে কী মেসেজ দিলেন। হালকা একটা আতংক মাথার মধ্যে ঘুরপাক খায়। চোখ খুলে আমি মেসেজটা পড়ি।

মাই ডটার শান্তা ডায়েড এ্যাট ১১পিএম অন ফ্রাইড। মাত্র ৮টি শব্দের কী ভয়ঙ্কর দুঃসংবাদের মেসেজ। ভুল পড়লাম না তো। আমি মেসেজটা আবার পড়ি। না কোনো ভুল নেই।

শোয়া থেকে উঠে বিছানার ওপরে বসি। মেসেজটা আবার পড়ি। না কোনো ভুল নেই। আবার মেসেজটা পড়ি। আমার সারা শরীরে একটা কম্পন খেলে যায়।

এটা কী সত্যি কোনো মেসেজ! নাকী জাঙ্ক ই-মেইলের মতো জাঙ্ক এসএমএস। সেলফোনে কী জাঙ্ক মেসেজ আসে? আমি মেসেজটা আবার পড়ি। আমার ধাতস্থ হতে আরো কয়েক মিনিট লাগে। শামীম ভাইকে কলব্যাক করি। ওপাশ থেকে জবাব আসে- দ্য ফোন ইউ ডায়াল ইজ আনরিচএ্যাবল নাউ, প্লিজ ট্রাই ইউ লেটার।

আমি আবার ফোন করি। আবারো জবাব আসে- দ্য ফোন ইউ ডায়াল ইজ আনরিচএ্যাবল নাউ, প্লিজ ট্রাই ইউ লেটার। আমি শামীম ভাইয়ের অপর নাম্বরটায় রিং করি। নাহ! এটাও বন্ধ। তখন দুপুর প্রায় ১২টা।

আমি সময় হিসেব করি। তাহলে কী শান্তার এখন জানাজা হচ্ছে? নাকী অলরেডি মাটি দেয়া হয়ে গেছে? আবার ফোন করি। আবারো একই জবাব। দুটো নাম্বারই বন্ধ। কয়েক মিনিট চুপচাপ বসে থাকি।

চুপচাপ... শান্তার মুখখানা আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। কী মিষ্টি কচি কমলার মতো মুখখানা। চোখ দুটোতে না বলা কতো যে জিজ্ঞাসা! আমার মনে পড়ে গত রমজান মাসে ঢাকা মেডিকেল কলেজের চার তলার মহিলা কেবিনে শাদা বিছানায় শুয়ে থাকা শান্ত চুপচাপ হাজারো কষ্ট লেখা অবুঝ শান্তার নির্বাক সেই ছোট্ট মুখখানা। শান্তার চোখের দিকে আমি সরাসরি তাকাতে পারিনি সেদিন। আমার সাথে ছিল বন্ধু নাহিদ।

আমি নাহিদের পায়ে আস্তে একটা চাপ দেই। নাহিদ আমার ইসারা বুঝতে পারে। প্রায় সমস্বরে নাহিদ আর আমি শামীম ভাইকে বলি- চলেন, বাইরে যাই। শান্তার আসল পরিস্থিতি কী তা ওর সামনে জানতে চাওয়াটা উচিত হবে না। ওর শান্ত নির্বাক চোখের ভাষায় ভয়ঙ্কর কিছু লেখা।

যার অর্থ হয়তো আমরা কেউই জানি না। ঢাকা মেডিকেলের মেইন গেট থেকে রাস্তা ক্রস করে আমরা টোঙ দোকানের সামনে চায়ের অসিলায় বসি। শামীম ভাই একটানা আমাদের শুনিয়ে যায়। গতকাল রাত থেকে যে কী রকম ঝড় গেছে, আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না। রাত দুইটা পর্যন্ত এমার্জেন্সির সামনে মাটিতে শুয়ে আছে মেয়েটা।

আমার মাথায় কিচ্ছু কাজ করছিল না। বড় ছেলেটা আমাকে শান্তনা দিচ্ছিল, জানেন। আব্বু তুমি মাথা ঠাণ্ডা রেখে একবার ভাবো, দেখো সব ঠিক হয়ে যাবে। সঞ্জিব (চৌধুরী) মারা যাবার পর থেকে আমি নিজেও কয়েক দিন ধরে বেশ অসুস্থ। কিচ্ছু ভালো লাগে না।

চোখ বন্ধ করলেই সঞ্জিবকে দেখি। তার মধ্যে শান্তার এই অবস্থা। বলেন, কার মাথা ঠিক থাকে? তারপর মাথা ঠাণ্ডা করে বাইরে আসি। ছেলেটা আমার সঙ্গে আসে। রাস্তা ক্রস করে এইখানটায় আসি।

কাকে বলবো, কীভাবে বলবো, কিচ্ছুই মাথায় আসে না। কয়েক জায়গায় ফোন করি। অতো রাতে আমাগো মতো পাগল ছাড়া আর কে জেগে থাকবে বলেন? যাদের দিয়ে কাজ হতে পারে তাদের কেউ অতো রাতে কী খামাখা জেগে থাকার কথা! কয়েক মিনিট অনেক কিছু ভাবলাম। ছেলেটা বলল- আব্বু তুমি ফোনের বদলে বরং ওনাদের রিকোয়েস্ট করো। ওনারা তোমার কথা শুনতে পারে।

মনে মনে ভাবলাম, ছেলেটার কথাটা যেন সত্যি হয়। মানুষ তো মানুষেরই জন্য, তাই না। সোজা উপরে গিয়ে ডিউটি ডক্টর নার্স আয়া যাকে হাতের কাছে পেলাম, খুব করে বললাম, মেয়েটার কথা। জানেন, পৃথিবীতে যে মানুষ এখনো মানুষের কথার অর্থ বুঝতে পারে, ঠিকঠাক বলতে পারলে যে কাজ হয়, তা কাল প্রমান পেলাম হাতেনাতে। মাত্র পঁয়ত্রিস মিনিটের মধ্যে শান্তাকে এই কেবিন আনার ব্যবস্থা হল।

ওনাদের তাৎক্ষণিক অমোন সুন্দর ব্যবহারে আমি বড়োই কৃতজ্ঞ। শেষের দিকে ওনারা জানতে চাইলেন- আপনি কী করেন? মুখে কিছুই বললাম না। আমার আইডি কার্ডটা তখনো বুকের কাছে এভাবে ঝুলছিল। হঠাৎ সেদিকে নজর পরায় ওটা ওল্টাতেই ওনারা বললেন- আপনার পরিচয়টা প্রথমে দিলে মেয়েটা আরো আগে এখানে আসতে পারতো। আমি এখনো ভেবে পাইনা, ওনারা আমার পরিচয়টা তারপরেও ক্লিয়ারলি কেন জানতে চাইলেন না।

জানেন, সেই রাতের ড্রেসে একটানা এখনো আছি। আম্মা আসছিল সকালে। আম্মাকে নিয়ে ছেলেটা বাসায় গেছে। আম্মার শরীরটাও ভালো না। সারাটা সকাল গেছে এই টেস্ট, সেই টেস্ট।

আর এখন লিভারের টেস্টটা আসার পর ডাক্তাররা বোর্ড মিটিং করে জানাবেন, শান্তার আসলে কী হয়েছে। কিন্তু, আমি ওর এক্সরে রিপোর্ট দেখে খুবই ভয় পেয়েছি। আল্লাহ না করুক, ওইটুকু মেয়ের অতো বড় একটা অসুখ। লিভারে একদম ঘা হয়ে গেছে। সব আসলে আমার দোষ।

দুপুর থেকে আমি নিজেকে নিজে অনেক দোষারোপ করেছি। না আমার ঠিক মতো ওদের দিকে নজর দেয়া হয়নি। এটা আমার ব্যর্থতা। বাচুম না, সঞ্জিবের মতো যে কোনো সময় দেখবেন, আমিও নাই। শালার জীবনে কী করলাম বলেন? তিনটা ছেলেমেয়ে, তাদের দিকে ভালো করে নজর দিতে পারলাম না।

কতো বড় ব্যর্থ বাবা আমি। আম্মাকে আচ্ছামতো গালাগাল করেছি। তুমি থাকতে ওরা এভাবে অসুখ বাধালো। তুমি আমাকে একটা বারও জানালে না, শান্তা খাবারটা পর্যন্ত ঠিক সময়ে খায় না। কোই, প্রতি শুক্রবার-ইতো তোমাদের দেখতে আসি।

কিচ্ছু লাগবে কিনা, জানতে চাই। একবারও তো কখনো বলোনি যে শান্তা এভাবে অনিয়ম করছে। জানেন না, মেয়েটা আমার ভারী অভিমানী। আম্মা তবু আমাকে এখনো বকাঝকা করেন। বাট, ওরা কখনোই আমার কাছে কিচ্ছু চায় না।

সবসময় আম্মার ধমক খেয়ে আমার মনে পরে। তারপর ওদের এটাওটা কিনে দেই। এই পর্যায়ে আমি জানতে চাই- শান্তার মা কী ওর এই খবর জানে? শামীম ভাই ফোড়ন কাটেন- ধুস, আমার মাথায় আসলে কিচ্ছু কাজ করছে না। আপনারা যখন কেবিনে গেলেন, শান্তার মা তখন ছিল তো। আপনাদের সাথে পরিচয় করালাম না।

দেখেন কারবার! নাহিদ তখন শামীম ভাইকে স্বরণ করিয়ে দেয়- কেবিনে তো শান্তা ছাড়া আর কেউ ছিল না। শামীম ভাই আবার বলেন- ওর মা বাথরুমে ছিল। আপনাদের আসার কথা ছেলের মুখ থেকে শুনেছে। তাই হয়তো ইচ্ছে করেই বাথরুমে পালিয়ে ছিল। আমি তখন পাল্টা প্রশ্ন করলাম- কত বছর পর ছেলেমেয়েদের দেখতে পেলো? শামীম ভাই জবাব দেন- না, না, বছর হবে কেনো? ওদের সাথে তার নিয়মিতই দেখা হয়।

আমি কিচ্ছু জানতে চাই না। ওরা মুখ ফুটে বললে চুপচাপ শুধু শুনি। বড় হবার পর থেকে আমি ওদেরকে একদিন সব বলেছি। দেখো, তোমরা ইচ্ছে করলে তোমাদের মায়ের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারো। আমি চাই তোমরাও তোমাদের মাকে নিজেরাই দেখে আবিস্কার করো, কে ভুল করেছে? আমি, না তোমাদের মা? প্রথমে ওরা যেতে চাইতো না।

আমিই জোর করে ওদের পাঠিয়ে দিতাম। মাকে দেখতে ইচ্ছে করলে যাও, দেখে আসো। ওরা তেমন আগ্রহ দেখাতো না। আপনারা জানেন না, ওরা কতো লক্ষী। শান্তা তো রীতিমতো এখন আমাকে শাসন করে।

গত সপ্তাহেও আমাকে শাসিয়েছে- তুমি যদি আব্বু সিখারেট খাওয়া না ছাড়ো, আমরা তোমার সাথে কথা বলবো না। জানেন, এখন আমি শুক্রবার শুক্রবার যাত্রাবাড়িতে গেলে সিখারেট খাই না। আর ওদের সামনে তো আগে থেকেও খেতাম না। কিন্তু শান্তা ঠিকই ধরে ফেলতো, আব্বু, তুমি ছাইপাশ খেয়ে ঘরে ঢুকেছো কেনো? যাও, ব্রাশ করে আসো। মেয়েটা দিনদিন আমার আম্মার সব গুনই দখল করছে।

আম্মার পরে এখন আমি ওকেই সবচেয়ে বেশি ভয় পাই। শামীম ভাই তারপর বলতে থাকেন- এখন আল্লাহ জানেন, ওর কী হলো! আপনারা শান্তার জন্য একটু দোয়া করবেন। আর রেজা সবাইকে বলে রাখবেন- ব্লাড লাগবে। ডাক্তার বলেছেন, অনেক ব্লাড লাগবে শান্তার। একেবারে নাকি সিভিয়ার পর্যায়ে।

নিজেকে খুব অপরাধী লাগে। বাবা হয়ে আমি ওদের এইটুকু খোজখবর রাখি না। সারাদিন খালি অফিস আর অফিস। বাচুম না। আমিও আর বাচুম না।

কার বাঁচতে ভালো লাগে কন? আমি মেয়েটার মুখের দিকে তাকাতে পারি না। গত বছর ও গোল্ডেন এ পাবার পর, কী যে খুশি হয়েছিলাম। নাহিদকে ইঙ্গিত করে শামীম ভাই বলেন- আপনি তো ছিলেন না, ওর রেজাল্টের মিষ্টি জাফর আর রেজা পেয়েছিল। আর বুঝি রিয়াজও ছিল। এরপর নাহিদ প্রশ্ন করে- ওকে কোথায় ভর্তি করেছেন? কোন কলেজে? শামীম ভাই জবাব দেন- মতিঝিল আইডিয়াল কলেজে।

জানেন না, ও খুব ভালো নাচে। নিজে একটা নাচের ইস্কুল খুলেছে। আর ওই নাচের ইস্কুল খোলার পর থেকেই ওর এই পরিণাম। সকালে বাসা থেকে কী খেয়ে বের হতো, কোনোদিন হয়তো কিছুই খেতো না। আম্মা আর কতোক্ষণ খেয়াল রাখতে পারে, বলেন।

সন্ধ্যা পর্যন্ত কলেজ, ক্লাস, প্রাইভেট, নাচের ইস্কুল। কোনোদিন হয়তো সন্ধ্যা পর্যন্ত কিছুই খেতো না। ধীরে ধীরে এভাবে ওর আলচার হয়ে যায়। আম্মাও টের পায় নাই। আর আমি তো শুক্রবার ছাড়া ওদের সাথে দেখাই হয় না।

আগে কাঁঠালবাগান থাকতে সপ্তাহে দু-তিন দিন দেখা হতো। কল্যানপুরে যাবার পর আর শুক্রবার ছাড়া আমি সময় করতে পারি না। ছেলেটা আবার আগামী সপ্তাতে জাপান যাচ্ছে। ওদের নাটকের গ্রুপ যাচ্ছে জাপানে শো করতে। ওর জন্য অনেক কিছু কেনাকাটা করতে হবে।

আমি কয়দিক সামলামো কন? অফিসে কিচ্ছু বলবার জো নেই। শালার নতুন বিল্ডিংয়ে যাবার পর ভাবছিলাম এবার বুঝি বকেয়া বেতনগুলো দিয়ে দেবে। অবস্থার কোনো পরিবর্তন নাই। এখনো ছয় মাসের বেতন বাকী। কন, দুই দুইটা সংসার চালানো কী চাট্টিখানি কথা।

আমাগো ঢাকায় কী আছে কন? শালার মাস শেষে বেতনের পুরোটা না পাইলে চলুম কেমনে? তাও আম্মা এখনো জীবিত, তাই ওদের নিয়া আমার একদম টেনশান নাই। আম্মা সব সামলান। সামনে ঈদ, ওদের জন্য কী কিনবো, আম্মার জন্য একটা শাড়ি কিনতে হবে, গিন্নির অনেক বায়না। তারমধ্যে শান্তুটার এই অবস্থা। কোনদিক সামলামো কন! গত রমজানের ঈদের ঠিক দুই দিন আগে শান্তা ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হয়েছিল।

গোটা ঈদের সময়টা শামীম ভাই হাসপাতালে শান্তাকে নিয়ে। তখন রোজই আমরা বন্ধুরা ঢাকা মেডিকেলে শান্তাকে দেখতে যেতাম। বিশেষ করে ওর যখনই রক্ত প্রয়োজন হতো, তখনই আমাদের যেতে হতো। বন্ধুদের মধ্যে আমিনুর রহমান মুকুল যেদিন রক্ত দিল, শামীম ভাইয়ের মুখে সেদিন কী যে হাসি। শামীম ভাই সেদিন বারবার বলছিলেন- আগামীকাল ওকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দিচ্ছে।

এখন বাকী সময়টা ঠিকঠাক রিকোভার করলে আল্লাহ মাফ করেন। কারো বাচ্চার যেনো এরকম ভয়াবহ অসুখ ধরা না পরে। শান্তার যখন পেটে ব্যথা উঠতো, এমনিতে ও ভীষণ শান্ত। কিন্তু আপনারা জানেন না, সেই রাতের ওর চিৎকার আর কান্না এখনো আমার কানে বাজে। কী কষ্টটা যে আমার মেয়েটার উপর থেকে গেছে।

ডাক্তার, নার্স, আয়া সবাই এই কয়দিনে ওর ভক্ত হয়ে গেছে। যখনই যিনি শোনেন, ও খুব ভালো স্টুডেন্ট, নাচ শেখায়। তখন সবাই ওকে খুব আদর করেন। আমার লাকটাও অনেক ভালো। ঢাকা মেডিকেলে বিনা তদবিরে অতো অল্প সময়ে কেবিন পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার।

এখন ভালোয় ভালোয় ও ভালো হয়ে গেলে বাঁচি। মুকুল, শামীম ভাইকে শান্তনা দেয়- না, ও দেখবেন ঠিকই ভালো হয়ে উঠবে। ও এতো কিছু করে, কোনোদিন তো বললেন না শামীম ভাই। এখন থেকে শান্তার খোজ আপনি না দিলেও আমরা নিজেরা নেবো। ওকে গ্রুপে নিয়ে আসবেন।

শান্তার কেবিন থেকে বের হয়ে আমরা ঢাকা মেডিকেলের সামনে এসে সেদিন অনেকক্ষণ আড্ডা দেই। শামীম ভাই আমাদের আসস্থ করেন, আর কোনো অসুবিধা না হলে আগামীকাল আমরা ওকে নিয়ে বাসায় যাচ্ছি। আপনারা শান্তার জন্য দোয়া করবেন। তারপর শামীম ভাই ঢাকা মেডিকেলে থেকে যায়। আমরা আমিনুর রহমান মুকুল, অজয় দাশ, কাজী ফয়সাল, ইকতারুল ইসলাম আর আমি হেঁটে হেঁটে দোয়েল চত্বরে আসি।

মুকুল আর আমি বাংলা একাডেমীর রাস্তা ধরে অনেকক্ষণ পায়ে হেঁটে আড্ডা মারি। অজয় ফয়সাল আর ইকতার চলে যায়। ওই রাতেই শেষবার আমি শান্তাকে দেখেছিলাম। তারপর শামীম ভাইয়ের সাথে যতোবার দেখা হয়েছে, যতোবার আমরা ভোরের কাগজে গেছি, যতোবার ফোনে কথা হয়েছে, শান্তার প্রসঙ্গ ঘুরেফিরে আমাদের আলাপে এসেছে। সেই শান্তা এখন নেই।

এটা ভাবতে পারছি না। মনে মনে ভাবলাম অন্য বন্ধুরা কী দুঃসংবাদটা পেয়েছে? ওদের মনের অবস্থা জানার চেষ্টা করি। আর নিজেকে নিজেই শান্তনা দেই। শান্তা মরতে পারে না। ও চিরদিন আমাদের হৃদয়ে বেঁচে থাকবে।

তারপর আমি বন্ধু মোহাম্মদ নাসরুল্লাহ নাহিদকে প্রথমে ফোন করি। নাহিদ ফোন ধরামাত্র আমি জানতে চাই- কোনো খবর জানো কীনা? নাহিদ পাল্টা প্রশ্ন করে- কীসের খবর। বলি, শামীম ভাইর কোনো খবর জানো? নাহিদ জবাব দেয়- না। ক্যানো, কী হইছে? জবাবে বলি- শামীম ভাইর মেয়ে শান্তা গতরাতে মারা গেছে। টের পেলাম ফোনের ওপাশে নাহিদের শ্বাস-প্রশ্বাসও আমার মতো ঘন হয়ে গেছে।

নাহিদ পাল্টা প্রশ্ন করে- তুমি কখন জানলা? : এইতো একটু আগে। : কীভাবে? : শামীম ভাই এসএমএস করেছে। : শামীম ভাইর সাথে কথা হইছে তোমার? : না। শামীম ভাইর দুটো ফোনই বন্ধ। তুমি কী বের হবা? : হ্যা, ঘণ্টাখানেক লাগবে।

: আচ্ছা। শোনো, আজ আবার আমাদের শিল্পকলা একাডেমীতে শো আছে। নোরার তিনকন্যা। চারটা থেকে শিল্পকলায় রিহার্সেল। তার আগে কিন্তু যাত্রাবাড়ি থেকে ফিরতে হবে।

: তুমি কোই থাকবা? : আমি এখন শিল্পকলায় যাবো, তুমি ওখানে আসো। : ঠিক আছে। এরপর আমি আমিনুর রহমান মুকুলকে ফোন করি। ফোনের ওপাশে মুকুলের অবস্থাও একই। বলো কী!! শান্তা মেয়েটা মারা গেছে!!! আহারে... খুব খারাপ সংবাদ।

শামীম ভাইকে কীভাবে শান্তনা দেবো বলো। এটা কী মানার মতো খবর। এরপর জাফর আহমদ রাশেদকে ফোন করি। জাফরের ফোন বন্ধ। তারপর টোকন ঠাকুরকে ফোন করি।

বলি- ঠাকুর, খুব খারাপ একটা দুঃসংবাদ এখন আপনাকে দিতে হচ্ছে। ঠাকুরের পাল্টা প্রশ্ন- কী??? : শামীম ভাইর মেয়েটা, শান্তা গতরাতে মারা গেছে। : বলেন কী?!! কীভাবে??? : শামীম ভাই শুধু একটা এসএমএস পাঠিয়েছে। শামীম ভাইর ফোন বন্ধ পাচ্ছি। : আয় হায় রে, শামীম ভাইকে এসময় কীভাবে শান্তনা দেবো? শামীম ভাইর ওদিকে আপনারা যদি যান, আমাকে জানাইয়েন, আমিও যাবো।

: নাহিদ রওনা হইছে। আমরা শিল্পকলায় একসাথ হবো। : আচ্ছা, আমিও আসবো। আমাকে একটু সময়টা জানাইয়েন। ঠিক আছে।

এরপর আমি ফিরোজ এহতেশামকে ফোন করি। ফিরোজ ফোন রিসিপ করার পর শুনতে পেলাম- একটা মহিলা কণ্ঠসর থেকে কবিতা ভেসে আসছে। ফিরোজ বলল- আমি একটা প্রোগ্রামে, কী বলবেন দ্রুত বলেন। বললাম, ভোকা শামীম ভাইর বড় মেয়েটা, শান্তা গতরাতে মারা গেছে। ওপাশ থেকে জবাব আসে- কীভাবে, কী হইছিল, কখন, বলেন কী!!! আচ্ছা, আমি পরে কথা বলছি।

প্রোগ্রাম থেকে বের হয়ে। ওকে। এরপর পুলক বিশ্বাসকে ফোন করি। পুলক ফোন রিসিপ করেই জানায়- আমি একটা মিটিংয়ে আছি। ব্যাপার কী বলো? বললাম, ভোরের কাগজের শামীম ভাইর বড় মেয়েটা, শান্তা গতরাতে মারা গেছে।

জবাব আসল- বলো কী??? আচ্ছা, আমি তোমার সাথে পরে কথা বলছি। মিটিংটা শেষ হোক। এরপর ফোন করি খোকন কায়সারকে। ফোন রিসিপ করে খোকন কায়সার জানতে চায়- হ ভাইজান কন, কী কইবেন? বললাম- ভোকা শামীম ভাইর বড় মেয়েটা, শান্তা গতরাতে মারা গেছে। ওপাশ থেকে জবাব আসে- কন কী?!! কী হইছিল??? তারপর!!! শামীম ভাই মানে আমাদের শামীম ভাই তো? বললাম- হ্যা, মেয়েটা তো দীর্ঘদিন ধরে আলচারে ভুগছিল।

একেবারে সিভিয়ার পর্যায়ে ছিল। শামীম ভাইর সাথে আমারও বেশ কয়েকদিন দেখা হয় না। ওপাশ থেকে আবার জবাব আসে- আহারে, শামীম ভাইর এখন কী হবে!!! ইস, বেচারা এরকম একটা আঘাত পাইল। ওর বয়স কত? জবাব দিলাম- এইতো এবছর ইন্টার দেবার কথা ছিল। খোকন কায়সার ওপাশে আফসোস করতে থাকে।

আমি ফোন কেটে দেই। এরপর ফোন করি রোকন রহমানকে। রোকন ফোন রিসিপ করে ঠিকই, কিন্তু পাশে অন্য কাকে যেনো নির্দেশ দিচ্ছে- যা কইতাছি, তাড়াতাড়ি আসবি। হ্যা, কও, টাকা আমি ঢাকা আসলেই পাইবা। জবাবে বললাম- শোনো, তোমাকে একটা দুঃসংবাদ জানানোর জন্য ফোন করেছি।

টাকার জন্য নয়। হ, কও, কীসের সংবাদ। শামীম ভাইর বড় মেয়েটা, শান্তা গতরাতে মারা গেছে। ওপাশের জবাব- তাই নাকি, ক্যান কী হইছিল? ক্যামনে? জবাবে কইলাম- তুমি শামীম ভাইরে ফোন দিয়া জাইনা লইও, চান্দু। সক্কাল বেলায়ই মালের হিসাব করতাছোস, মাগী।

এরপর ফোন করি রাজীব নূরকে। রাজীব দা ফোন ধরে জানতে চায়- হ্যা, বলেন কী বলবেন? রাজীব দা, আমাদের শামীম ভাইর বড় মেয়েটা, শান্তা গতরাতে মারা গেছে। রাজীব নূরের জবাব- বলেন কী!!! তারপর? বলি- না, এই খবরটা দেবার জন্য ফোন করছি। ঠিক আছে রেজা, আমি একটু বিজি আছি। ওকে বাই।

ভিতরে ভিতরে আমি একটা জিনিস টের পাচ্ছি। শামীম ভাইকে আমাদের বন্ধুদের কে কতোটা মুখে ভালোবাসে আর কে কতোটা অন্তরে ভালোবাসে তার একটা নিখাদ চেহারা এই ফোনালাপের মধ্য দিয়ে আমার সামনে ধরা পরতে লাগল। এই সময় কাজী ফয়সাল উকি দেয়। ফয়সালকে বললাম- খুব খারাপ একটা দুঃসংবাদে ঘুম ভাঙল ফয়সাল। কী সংবাদ রেজা ভাই? বললাম- ভোরের কাগজের শামীম ভাইর বড় মেয়েটা, শান্তা গতরাতে মারা গেছে।

দেখলাম ফয়সালের নাকমুখ মুহূর্তে শুকিয়ে খাক। ফয়সাল পাল্টা জানতে চাইল- ঢাকা মেডিকেলে যাকে দেখতে গেছিলাম, ও? বললাম- হ্যা। খেয়াল করলাম, ফয়সাল প্রায় মিনিটখানেক আর কোনো প্রশ্ন করতে পারল না। কারণ, শান্তাকে ফয়সাল ঢাকা মেডিকেলে সর্বশেষ দেখেছিল। আমি শুধু বললাম, তুমি চলে যাও, আমি একটু পরে যাবো।

ফয়সাল শিল্পকলার উদ্দেশ্যে যাবার আগে আরো একবার আমাকে তাড়া লাগায়। রেজা ভাই একটু তাড়াতাড়ি আইসেন। মুকুল ভাই কী জানে? বললাম- হ্যা আমার কাছে শুনেছে। এরপর ফোন করি অশোক দাশগুপ্ত অপুকে। ফোন রিসিপ করে অপু বলে- হ্যা রেজা ভাই বলেন।

ওইদিন কখন চলে গেলেন, টের পেলাম না। বললাম, খুব খারাপ একটা দুঃসংবাদ দেব। শামীম ভাইর বড় মেয়েটা গতরাতে মারা গেছে। অপু ফোনের ওপাশ থেকে বলে উঠল- এইবার আর শামীম ভাইকে বাঁচানো যাবে না। ইস বেচারা... হ্যা শুনছিলাম তো, ও হাসপাতালে, শামীম ভাই তাই নিয়া খুব ব্যস্ত।

কিন্তু এভাবে শেষ পর্যন্ত মারাই গেল। না, শামীম ভাইকে আর বাঁচানো যাবে না। এরপর ফোন করি কবি মাহবুব কবীরকে। হ্যা রেজা বলেন? বললাম, শামীম ভাইর বড় মেয়েটা গতরাতে মারা গেছে। বলেন কী? আয় হায় রে.. শেষ পর্যন্ত বাঁচলো না মেয়েটা।

সত্যি খুব খারাপ খবর এটা। শামীম ভাইকে যে কী দিয়ে শান্তনা দেব এখন! এরপর ফোন করি মঈনুল বিপ্লবকে। ফোন বেজে চলে। কেউ রিসিপ করে না। শুক্র আর শনিবার বিপ্লব এই সময় ঘুমিয়ে থাকার কথা।

বিকালে বিপ্লব পাল্টা ফোন করে বলল- আমি টের পাই নাই। ঘুমাইতেছিলাম। তারপর বলো, কেনো ফোন করছিলা? বললাম- আমাদের শামীম ভাইর বড় মেয়েটা গতরাতে মারা গেছে। বিপ্লব পাল্টা জিজ্ঞাসা করল- মানে যে মেয়েটা হাসপাতালে ভর্তি ছিল, ওইটা? : হ্যা। : আহারে, বাঁচলো না শেষ পর্যন্ত!!! শামীম ভাই তো খুব চেষ্টা করছিল।

ও কি আর ভালো হয় নাই। আয় হায় রে.. না, সত্যি খুব খারাপ লাগছে শুনে। এই রকম খবর মানাটা খুব কষ্টের। শামীম ভাইর খুউব কষ্ট হবে। খুউব।

বুঝলা, আমার না, এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না, ইস, ওর কথা শামীম ভাই প্রায়ই বলতো। এখন কী হবে!!! এরপর ফোন করি রিয়াজ হককে। হ্যা রেজা বলো? বললাম- শামীম ভাইর মেয়েটা মারা গেছে। : কখন? তুমি জানলা কীভাবে? : শামীম ভাই এসএমএস করেছে। কিন্তু শামীম ভাইর দুটো ফোনই বন্ধ।

তুমি চেষ্টা করো দেখো পাওয়া যায় কীনা। : শামীম ভাই এখন কোথায়? : কিছুই জানি না। আচ্ছা তুমি কী যাত্রাবাড়ির বাসা চেনো? : ধোলাইখাল সিনেমা হলের পাশে। বেটার তুমি যাবার সময় ভোরের কাগজ থেকে এ্যাড্রেস কালেক্ট করে নিও। ওরা বলতে পারবে।

: নাহিদের ঘণ্টাখানেক লাগবে বলল। তুমি কী বের হতে পারবা? : আজ তো আবার আমাদের বোর্ড মিটিং পড়ছে। দেখি। তোমরা যাবার সময় একটু জানাইও। আর ভোরের কাগজ হয়ে আসো, ওরা এ্যাড্রেস দিতে পারবে।

ওদিকে ফাঁকে ফাঁকে আমি শামীম ভাইর দুটো নাম্বারে আর জাফরকে ফোন করতে থাকি। শামীম ভাইকে একটা এসএমএস করে রাখি। যাতে ফোন খোলা মাত্র ওটা পায়। আরো অনেককেই জানানোর ইচ্ছে হচ্ছিল। আবার আমার শিল্পকলায় যাবার তাড়া।

কোনটা রেখে কোনটা করি। শান্তার শান্ত চুপচাপ মুখটা বারবার চোখের সামনে ভাসতে থাকে। কিছুতেই আর ওকে ভুলতে পারছি না। ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ঠিক চারটায় শিল্পকলা একাডেমীর এক্সপারিমেন্টাল হলে আমাদের রিহার্সেল শুরু হয়। এর কিছুক্ষণ পর বিপ্লবের ফোনটা পাই।

না, রিহার্সেলে মন বসছে না আমার। অথচ ঠিক সাতটায় নোরার তিনকন্যার শো। বাইরে এসে একটার পর একটা সিখারেট ফুঁকছি। শামীম ভাইকে ফোন করে যাচ্ছি। এই সময় কবি জাফর আহমদ রাশেদের ফোন।

হ্যা রেজা, আপনি ফোন দিয়েছিলেন, আমার ফোনটা ওই সময় বন্ধ ছিল। জাফর বলতে থাকে- আয় হায় রে, শামীম ভাইর এখন কী হবে। ইস, মেয়েটা কতো ভালো ছিল। এরকম একটা দুঃসংবাদ, বলেন এটা কী মানার মতো। আপনারা এখন কোথায়? বললাম- শিল্পকলা একাডেমী।

আজ পালাকারের শো আছে। আমি এখন রিহার্সেলে। ৭টায় শো। পারলে চলে আসেন। জাফরের জবাব- দেখি, আমি চেষ্টা করব।

শামীম ভাইকে কী যে বলবো, বুঝতে পারছি না। খুউব খারাপ লাগছে খবরটা শুনে। রিহার্সেলে আবারো ঢুকে পরেছি। এইসময় দেখলাম শামীম ভাইকে যে এসএমএস করে রেখেছিলাম, ওটা ডেলিভারড ওকে মেসেজ আসল। তারমানে এখন শামীম ভাইর ফোন খোলা।

আমি আবার হলের বাইরে এসে শামীম ভাইকে ফোন করলাম। ফোন রিসিপ করলেন ভাবী। জানতে চাইলেন- কে? বললাম- ভাবী, আমি রেজা। শামীম ভাই কি পাশে আছেন? ভাবী বললেন- ওর তো ফোন বন্ধ। আর এই ফোনটা বাসায় ফেলে গেছে।

গতরাত থেকেই ওর অবস্থাও খুব খারাপ। কী বলব বুঝতে পারছি না। বললাম- ভাবী, এই সময়টা আপনাকে খুউব শক্ত হতে হবে। শামীম ভাইকে দেখে রাখার সকল দায়িত্ব এখন আপনার উপর। আপনি ভেঙে পড়লে তাকে কে সামলাবে।

আরো জানতে চাইলাম- মারা গেছে কোথায় বসে? জবাবে ভাবী বললেন- ঢাকা মেডিকেলে। আমি আর কথা বাড়াতে পারছিলাম না। শুধু চোখের সামনে ভাসছিল শান্তার চুপচাপ শান্ত নির্বাক সীমাহীন দুর্লঙ্ঘনীয় কষ্ট মাখানো না বলতে পারা মায়াবি দুটো চোখ, যে চোখের ভাষা বোঝার সাধ্য আমাদের কারো নেই। সেই দুঃসাধ্য চোখের ভাষা পৃথিবীর কোনো ভাষায় অনুবাদ করার সামর্থও আমরা আর কোনো দিন পাবো না। শুধু নির্জন কোনো ক্ষণে বা গমগমে কোনো আড্ডায় যখনই শান্তার কথা আমাদের মনে পড়বে, তখন আমরা চিরায়ত সহ্যের সীমাকে কেবল এই বলে বুঝ দেব- শান্তা তুমি আমাদের অন্তর দখল করেছো ঠিক যেমনটি তোমার করার কথা ছিল।

তুমি বেঁচে আছো আমাদের সকলের হৃদয়ে ঠিক শান্ত নদীটার মতোন। আমাদের শান্তা মা-মনি হয়ে। । ১৩ মার্চ ২০১০ রাত ৪.৩০ মিনিট গাবতলা, ঢাকা।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।