আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হিমু জানে আজ তার ডাক আসবেই



ভোরবেলা ঘুম ভেঙে গেছে। খুব ভোরবেলা। কাকরা ডাকতে শুরু করে নাই। হিমু বেশ বেলা পর্যন্ত ঘুমায়। আজ অসময়ে তার ঘুম ভেঙেছে।

তার ভীষন অস্বস্তি হচ্ছে। বুঝতে পারছে ডাক আসবে। আজ অন্যরকম দিন। আজ তার বারবার ডাক আসবে। সে প্রতীক্ষায় বসে আছে।

ডাকের প্রতীক্ষায়। ডাক আসলেই তাকে যেতে হবে। রাহেলা খালা এখন কি করছে? মোড়ের ওষুধের দোকানটা কি খোলা আছে? কাকগুলোর ঘুম ভাঙবে কখন? কতদিন ভোরবেলা দেখা হয়না। আজ ভোরে জেগেও ভোরবেলা দেখা হবেনা। একটু একটু কষ্ট হচ্ছে।

বাবা বেঁচে থাকলে লজ্জা পেতেন। তিনি হিমুকে মহাপুরুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। মহাপুরুষদের কষ্ট থাকতে নেই। অথচ একটা নতুন সকাল দেখতে না পাওয়ার জন্য তার কষ্ট হচ্ছে। সে কি মহাপুরুষ হতে পেরেছে! কেন সে ডাকের জন্য অপেক্ষা করছে! কার জন্য এই অস্বস্তিকর অপেক্ষা! মহাপুরুষদের অপেক্ষা করতে নেই।

তবু সে অপেক্ষা করছে, ডাকের অপেক্ষা। কাল সন্ধ্যা কেটেছে গাবতলী বাস টার্মিনালে। মলম পার্টির বুড়ো মেম্বার জব্বর মিয়া হিমুকে বারাবারি রকমের শ্রদ্ধা করে। হিমুকে দেখতে পেয়েই আনন্দিত চোখে বলল, 'ভাইজান, আইজ আর অপারেশনে যামুনা। ' হিমু অবাক হয়ে জানতে চাইলো, 'কেন?'।

জব্বার মিয়া, 'ভাইজান, মানুষরে ঘুম পাড়াইতে পাড়াইতে পেরেশান হইয়া গেছি। বাদ দেন । বহুত দিন হইলো চটপটি খাইনা। আপনি যদি অনুমতি দেন তবে দুইজন মিলা চটপটি খাই। কাশেম মিয়া বেহেশতি চটপটি বানায়।

' মহাপুরুষদের বেহেশতি চটপটি খেতে নিষেধ আছে কিনা তা বাবা বলে জাননি। সারাদিন কোন কিছু খাওয়া হয় নাই। খালিপেটে বেহেশতি চটপটি খেলে কেমন লাগে এই অভিজ্ঞতা থাকা দরকার। জব্বর মিয়ার সাথে হিমু গাবতলী বাসটার্মিনালের বেহেশতি চটপটির দোকানের দিকে এগিয়ে গেল। একদিন রুপাকে নিয়ে বেহেশতি চটপটি খেতে হবে।

হিমু জানে তার এই ইচ্ছা পূরণ হবেনা। তবু ভাবতে ভালো লাগে। কাকগুলো ডাকতে শুরু করেছে। হিমু ডাকের অপেক্ষা করছে। অস্বস্তিকর অপেক্ষা।

এলোমেলো ভাবনা হচ্ছে। মানব সমাজে মহাপুরুষ আছে। সত্যিই কি আছে? কাকসমাজে কি মহাকাক আছে? তাদের কি মহা কর্ক বলে? ভাবনা শেষ হবার আগেই হিমুর ডাক আসলো। এখন ডাক আসতেই থাকবে। এই ডাকে সকলকে সাড়া দিতে হয়।

মহাপুরুষদেরও সাড়া দিতে হয়। সন্ধ্যায় বেহেশতি চটপটি খেয়ে ভোরবেলা ডায়রিয়ার ডাক এসেছে। ডাকে সাড়া দিতে দিতে হিমু ভাবছে, 'সে ডাকলেই যেতে হবে- কি অসম্ভব ক্ষমতা দিয়েইনা প্রকৃতি এই রোগটিকে সৃষ্টি করেছে। এত ক্ষমতা কে দিলো!!' মেসের বাথরুমের বাইরে সকালবেলার লম্বা লাইন। বিভিন্নজন তাড়া দিচ্ছে।

হিমু ধ্যানমগ্ন। হিমু জানে মহাপুরুষদের সব তাড়ায় সাড়া দিতে নেই, বিচলিত হতে নেই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।