আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দোয়েল ও যুদ্ধদিনের উপাখ্যান [শেষ পর্ব]



সজল বলে,'ভাইয়া খেলবি না?' -ভাল্লাগছেনা রে। -আমারও না। -তাহলে বললি যে? -এমনি বললাম। সজল ও আমি চুপ করে বসে থাকি। চারপাশ কেমন নিস্তব্ধ হয়ে যায়।

নিরবতা কেমন যেন থম ধরে থাকে। সজল অনেক্ষণ চুপ থাকার পর আর পারে না, বলে-দোয়েলগুলো শিস দিতে শিখছে। আমি তেমন উৎসাহ পাইনা,বলি-তাই! আমি চেয়ে দেখি আমরোজ গাছে লাল ফুল ফুটেছে। এই গাছটি দাদা নাকি বিদেশ থেকে এনেছিলেন। গাছটির ফুল লাল হলে কি হবে ফল হয় ফকফকে শাদা।

পেকে গেলে দারুন মিষ্টি। ফুল খেতে অনেকগুলো বুলবুলি এসে জুটেছে। বুলবুলিদের মাথায় লাল ঝুটি আমরোজ ফুলের লালের সাথে মিশে আছে। একটি কাঠবিড়ালী কাঁঠাল গাছ বেয়ে ডাকতে ডাকতে মগডালের দিকে দৌড়ে যায়। কয়েকটি সোনালী ডানার চিল ওড়ে আকাশে।

আগে আকাশে অনেক শকুন উড়তো। ইদানীং এগুলো উধাও হয়ে গেছে কোথায় যেন। এ সময় কুকুরের ডাক শোনা যায়। সম্মিলিত অনেকগুলো কুকুরের ডাক। খবর শুনে পাশের বাড়ির মালেক ভাই দৌড়াতে দৌড়াতে আমাদের বাড়ি এসে চিৎকার করে বলেন,'পালাও! পাঞ্জাবীরা আসছে।

' আমরা ভয়ে,ত্রাসে মূর্তা ঝোপের ভেতর দিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে পুকুরের ঝোপ ঘেরা অনেকটা খালের মতো ঢালে গিয়ে শুয়ে পড়ি। মা কোনো রকমে পেছনের দরজা দিয়ে পাশের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন। বাবার কয়েকদিন থেকে জ্বর। তিনি শুয়েছিলেন । তিনি কারো কথা শুনলেন না, তিনি বললেন,আমি বুড়ো মানুষ আমার কিছু হবেনা।

কিন্তু শোয়া অবষ্থায়ই তিনি ধরা পড়লেন তাদের হাতে। জগলু ভাই গোয়াল ঘরে ছিল। যখন টের পায় তখন দেরী হয়ে গেছে। বুটের শব্দ শুনে সে যখন দৌড় দেয় তখন সেনারা তাকে দেখে ফেলে। ওরা চিৎকার করে বলে,হল্ট! কিন্তু প্রাণভয়ে সে তখন দৌড়চ্ছে।

ব্রাশ ফায়ারে ঝাঁঝরা হয়ে দৌড়ের মধ্যেই মারা গেল জগলু ভাই। জ্বরাক্রান্ত বাবাকে পেটাতে পেটাতে তারা মন্টু ভাইয়ের খোঁজ করতে থাকে। বাবা কিছু বলতে না পারায় তাকে বুট পায়ে লাথি মারতে থাকে। এক সময় বাবা জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তারা ঘরগুলোয় গান পাউডার ছিটাতে থাকে। ঝোপের ফাঁক গলে আমরা ত্রাসিত চোখে দেখতে পাই মুহূর্তের ভেতর দাউ দঊ করে জ্বলে উঠেছে আমাদের ঘরগুলো।

আগুনের লেলিহান শিখা মুহূর্তের ভেতর গ্রাস করে ফেলে সবকিছু। আমরা চেয়ে চেয়ে দেখি পেয়ারা গাছের সাথে ঝুলানো খাঁচা, খাঁচার ভেতরের দোয়েলের বাচ্চাসহ জ্বলে উঠছে। মুহূর্তের ভেতরে সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। চিৎকারের জন্য সজলের মুখ হা হয়ে গিয়েছিল। আমি চেপে ধরি তার মুখ, ঠেসে ধরি ভেজা স্যাঁতসেঁতে মাটির সাথে।

আর তখন বাবা ও মা দোয়েল দুটো হাহাকারের মতো চিৎকার করতে করতে উড়তে থাকে। আমাদের মনে হয় সারা বাঙলাদেশ যেন কঁকিয়ে উঠেছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।