আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৪৩ শতাংশ মুনাফার পরও গ্যাপ-ওয়ালমার্টের বাগড়া

Never argue with idiots. They bring you down to their level and then beat you with experience পোশাককলের নিরাপত্তায় চুক্তি বাংলাদেশের তৈরি পোশাকখাতের শ্রমিকদের সুরায় পোশাকশিল্প ভবন ও অগ্নিনিরাপত্তা বিষয়ে আলোচিত চুক্তি নিয়ে ইউরোপের অধিকাংশ ক্রেতা সম্মত হলেও মার্কিন ক্রেতাদের মতানৈক্যের কারণে এটির ভবিষ্যৎ অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বিশেষত মার্কিন ক্রেতা-প্রতিষ্ঠান ‘গ্যাপ’-এর বৈরী মনোভাবে চুক্তিটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের ক্রেতাদের মধ্যে বিভক্তি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকখাতের বড় ক্রেতা ওল্ড নেভি ও ব্যানানা ব্র্যান্ড সরবরাহকারী সানফ্রান্সিসকোভিত্তিক তৈরি পোশাক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান গ্যাপ প্রথম থেকেই ওই চুক্তির বাস্তবায়নে বাগড়া দিয়ে আসছে। এ বিষয়ে গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম হাফিংটন পোস্টে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল, ‘৪৩ শতাংশ মুনাফার পরও বাংলাদেশের কারখানাগুলোর সুরা-চুক্তিবিষয়ক স্বার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করছে গ্যাপ’।

এতে বলা হয়, বাংলাদেশের ৭৮টি পোশাককলের সঙ্গে সম্পৃক্ত গ্যাপ দেশটির সকল পোশাকশ্রমিককে সুরার চেয়ে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন কারখানাগুলো সুরায় অধিকতর আগ্রহী। গ্যাপের বিবৃতিতেও বলা হয়েছে, তৃতীয় কোনও পক্ষ নয়, তারা যেসব কারখানায় কাজ করাচ্ছেন, সেগুলোর কর্মপরিবেশ ঠিক রাখতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রতিষ্ঠানটির গ্লোবাল হিউম্যান রিসোর্স অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ইভা সেজ-গ্যাভিনকে উদ্ধৃত করে হাফিংটন পোস্টের খবরে জানানো হয়, তারা এ চুক্তির কিছু বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করছেন আর বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে নিস্পত্তি চান। এ নিষ্পত্তি শুধু ইউরোপভিত্তিক নয়। এছাড়া গ্যাপের প্রধান নির্বাহী গ্লেন মারফি বলেন, ইউরোপের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আইনগত ঝুঁকি বেশি।

প্রস্তাবিত চুক্তিতে সম্মতি দিলে আমরা সীমাহীন আইনগত দায়বদ্ধতা ও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যেতে পারি। তিনি বলেন, গ্যাপের শেয়ারহোল্ডাররা সতর্কতার অংশ হিসেবেই প্রস্তাবিত চুক্তিতে সম্মতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, গ্যাপ অধিকাংশ পোশাকই আমদানি করে বাংলাদেশ থেকে। ২০১২ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি ৫০ শতাংশেরও বেশি হারে মুনাফা করে আসছে। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে তাদের মুনাফার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৩ শতাংশ।

গ্যাপের সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন- ওয়ালমার্ট, জেসি পেনি, সিয়ার্সও পোশাকশিল্প ভবন ও অগ্নিনিরাপত্তা চুক্তিটি স্বারে অনীহা প্রকাশ করেছে। ইউরোপের অনেক ক্রেতাই ইতোমধ্যে অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনা বন্ধ এবং কারখানার নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। ‘ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ চুক্তির নেপথ্যে কাজ করছে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংস্থা (আইএলও), ট্রেড ইউনিয়ন এবং আন্তর্জাতিক লবিস্টরা। নানা সূত্র উল্লেখ করে কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানায়, ইউরোপের খুচরা বিক্রেতা-প্রতিষ্ঠান সুইডেনের হেন্স অ্যান্ড মরিটজ (এইচঅ্যান্ডএম), আয়ারল্যান্ডের প্রাইমার্ক, নেদারল্যান্ডসের সিঅ্যান্ডএ এবং স্পেনের ইন্ডিটেক্স, প্রিমার্ক ও টেসকো ইতোমধ্যে বাংলাদেশের কারখানার নিরাপত্তাব্যবস্থা উন্নয়নবিষয়ক ওই চুক্তিকে অনুমোদন দিয়েছে। চুক্তিতে পোশাককর্মীদের বেতন বৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের ট্রেড-ইউনিয়ন করার অধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, যেসব কারখানা নিয়মিত শ্রমিকদের বেতন বাড়াবে না বা ইউনিয়ন করার অধিকার দেবে না সেসব কারখানায় ক্রেতারা কাজ দেবেন না। চুক্তি বাস্তবায়নে মার্কিন ক্রেতাদের অসহযোগিতা প্রসঙ্গে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো জানায়, যেহেতু তারা বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রায় ৬০ শতাংশের ক্রেতা সেহেতু মার্কিন ক্রেতারা যদি চুক্তিতে অংশ নাও নেন তাহলেও এটি দেশের পোশাকশিল্পে পরিবর্তন নিয়ে আসবে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক রাষ্ট্র বাংলাদেশের পোশাককলে দুর্ঘটনায় শ্রমিক মৃত্যুর হার সম্প্রতি উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশ্বব্যাপী ভোক্তারা ক্রেতাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। এছাড়া গত ২৪ এপ্রিল সাভারে রানা প্লাজাধসে সহস্রাধিক পোশাককর্মীর মৃত্যুর পর বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ভোক্তারা অভিযোগ করেন, শুধু সস্তায় কাপড় কেনার জন্য ক্রেতারা বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।

কিন্তু যেসব কারখানায় এসব পোশাক তৈরি হয়, সেখানকার শ্রমিকদের অবস্থা খুবই করুণ। ভোক্তাদের চাপে ইউরোপের অধিকাংশ ক্রেতা কারখানা-নিরাপত্তারার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। এদিকে বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাবশালী গণমাধ্যম হিসেবে পরিচিত ব্লুমবার্গের অনলাইন খবরে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা কারখানার নিরাপত্তাব্যবস্থা উন্নয়নে চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন না- এমন সংবাদে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম তৈরি পোশাক আমদানিকারক ওয়ালমার্ট এ চুক্তিতে সই না করার বিষয়ে তাদের বিবৃতিতে জানায়- ক্রেতা, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট সরকারের ওপর এটি ছেড়ে দেওয়া উচিত। ওয়ালমার্ট জানায়, বাংলাদেশের যে ২৭৯টি কারখানায় ওয়ালমার্টের পোশাক সরবরাহকারীরা কাজ দেয়, এর জন্য আলাদা নিরাপত্তাব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছে।

আগামী ৬ মাসের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের আরেক তৈরি পোশাক আমদানিকারকপ্রতিষ্ঠান জেসি পেনির এক মুখপাত্র ব্লুমবার্গকে জানান, কারখানার নিরাপত্তা ইস্যুতে তারা একটি বিকল্প চুক্তি সম্পাদন করতে যাচ্ছেন। এর সুফল শিগগিরই পাওয়া যাবে। যদিও চুক্তির বিষয়বস্তু সম্পর্কে তিনি কিছু জানাতে রাজি হননি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।