আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাহাড়-অরণ্যের কাছে

আমরা সবাই সবার

View this link নাগরিক জীবন থেকে একটু দূরে, যেখানে হয়তো এখনও বিদ্যুৎ পেঁৗছেনি। স্থানীয় মানুষ হয়তো শুদ্ধ করে কথাও বলতে পারেন না। কিন্তু তারা অন্যরকম এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে বাস করেন। এমনই একটি স্থান তিন্দু। এখানে এলে মনে হতে পারে, বাংলাদেশের বাইরে চলে এসেছেন! দু'পাশে দেয়ালের মতো উঠে গেছে পাহাড়, মাঝে কুয়াশার চাদরে ঢাকা সাঙ্গু নদী ধরে এগিয়ে যাচ্ছে দুটি নৌকা।

চারপাশে নদীজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ছোট-বড় পাথর। হঠাৎ একজন চোখ থেকে ক্যামেরা নামিয়ে বলল, 'এগুলো যে বাংলাদেশের ছবি, অনেকেই বিশ্বাস করবে না। ' আসলেই তাই, বাংলার আসল রূপ আজও প্রায় সব বাংলাদেশির কাছে অচেনা। আমরা যাচ্ছি বড় মদক। বান্দরবানের থানচি থেকে নৌকা করে সাঙ্গুু ধরে উপরে উঠছি।

দলে চার মাঝিসহ তেরোজন। নৌকা দুটির অধিকাংশ জায়গা দখল করে রেখেছে আমাদের জিনিসপত্র। বাংলাট্র্যাকের জন্য তথ্য জোগাড় করতে বছরের শেষ সপ্তাহ অনেক আগেই বরাদ্দ রেখেছিলাম। কিন্তু কোথায় যাওয়া যায়? শেষে ঠিক হলো রামাক্রি। উৎসাহের আতিশয্যে আমি আর রাবি্ব ভাই একবার ঘুরে এলাম থানচি থেকে।

লাভও হলো। পরিচয় হলো থানচির স্থানীয় ফিরোজের সঙ্গে। সে বলল, রামাক্রি ছাড়িয়ে আরও উপরে ঘুরিয়ে আনবে সে, না হলেও বড় মদক পর্যন্ত। ফিরেই শুরু হলো জোগাড়যন্ত্র। ঠিক হলো রওনা দেব ২৪ ডিসেম্বর।

ফিরব ৩ জানুয়ারি। সময়-সুযোগ হলে ঘুরে আসব তাজিংডং। গবেষণা ও জোগাড়যন্ত্রেই ব্যস্ততার মধ্যে কেটে গেল ডিসেম্বর মাস। অবশেষে এলো ২৪ ডিসেম্বর। রাতের বাসে উঠে বসলাম বান্দরবানের উদ্দেশে।

জ্যাম ও কুয়াশা কাটিয়ে বাস পেঁৗছল পরদিন সকাল ৯টায়। আর দেরি নয়, গাড়ি ভাড়া করে রওনা দিলাম থানচির উদ্দেশে। গাড়িওয়ালা আমাদের ব্যাগের বহর দেখে ঘাবড়ে গেল। ব্যাগের চোটে গাড়িতে মানুষের জায়গা হয় না। আর হবেই বা কীভাবে! পুরোপুরি স্বাবলম্বী ট্রিপ করব এবার।

তাই প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় সবকিছু জোগানের ব্যাগ, ছোট তো আর হবে না! সবার বিশাল বিশাল ব্যাগের সঙ্গে স্লিপিং ব্যাগ, তাঁবু, খাবার, রাবার রাপট, সোলার প্যানেল ইত্যাদি নিয়ে লটবহর হয়েছে দেখার মতো। চান্দের গাড়ির ড্রাইভার প্রায় উড়িয়েই নিয়ে গেল আমাদের। বারোটার কিছু আগেই পেঁৗছে গেলাম থানচি। মালপত্র নামিয়ে এগোতে যাব, এমন সময় হাজির ফিরোজ। মালপত্র নদীর পাড়ে রেখে ছুটলাম বাজারের দিকে।

ততক্ষণে আমাদের নিয়োগপ্রাপ্ত ম্যানেজার আবুবকর ভাই লেগে পড়লেন প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র নিয়ে। রাবি্ব ও ফয়সাল ভাই চলে গেলেন বিডিআর পোস্টে অনুমতি নিতে। বাকিরা ঢুকলাম এক খাবারের দোকানে ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নিতে। তাড়াহুড়ো করেও রওনা দিতে দুটো বেজে গেল। আজকের গন্তব্য তিন্দু।

হিসাব বলছে পেঁৗছতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। নদীর পানি কোথাও কয়েক ইঞ্চি, কোথাও বা ত্রিশ-চলি্লশ ফুট। স্রোতের বিপরীতে যাচ্ছি আমরা। কোথাও নদী কিছুটা উঠে গেছে। পাথর বের হয়ে আছে কিছু কিছু জায়গায়।

ইংরেজিতে এসব জায়গাকে বলে র‌্যাপিড। স্থানীয় মাঝিরা বলল চং। বেশিরভাগ জায়গা লগি ঠেলে, কোথাও বৈঠা বেয়ে, চংগুলোতেও কম পানিতে ঠেলে আবার অনেক সময় চংগুলোতে বাস্তবিক অর্থে নৌকা উঠিয়ে নিয়ে পার করে চলল এগিয়ে যাওয়ার পালা। পানি স্বচ্ছ। অনেক জায়গায় পরিষ্কার নদীর তল দেখা যায়।

ইয়ারি থেকে পদ্মা পর্যন্ত কিছু মাছের ঝাঁকও দেখলাম। সবচেয়ে মজার হলো, ছোট এক প্রজাতির মাছ, হঠাৎ হঠাৎ লাফিয়ে লাফিয়ে যেতে দেখলাম নৌকার পাশ দিয়ে। মাঝিদের প্রায় অমানুষিক খাটুনির পর তিন্দু পেঁৗছলাম সাতটা নাগাদ। সবাইকে একপ্রস্থ চা খাইয়ে ফিরোজ লেগে গেল রান্নার কাজে মাঝিদের নিয়ে। আমরা লেগে পড়লাম ক্যাম্প দাঁড় করাতে।

ক্যাম্প দাঁড় করানোর ফাঁকেই রান্না শেষ। খেয়েদেয়ে ক্যাম্পফায়ারের পাশে বসে পড়লাম আড্ডায়। শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একজন একজন করে ঢুকে গেল যে বার স্লিপিং ব্যাগে। ২৬ তারিখ সকাল শুরু হলো ফিরোজের ডাকে। বাকিদের উঠিয়ে ফিরোজকে লাগিয়ে দেওয়া হলো সকালের নাশতা তৈরিতে।

সবকিছু গুছিয়ে রওনা দিতে বেজে গেল ৯টার বেশি। আবার নৌকাযাত্রা। মিনিট চলি্লশেক পর পেঁৗছলাম বড় পাথর। নদীজুড়ে চারদিকে পড়ে আছে বিশাল বিশাল পাথর। মাঝিকে নৌকা এগিয়ে নিতে বলে পুরো দলের ঘুরে বেড়ানো শুরু পাথর থেকে পাথরে।

একসময় এগোলাম। সামনে একটি খোলা জায়গায় রান্নার ব্যবস্থা হয়েছে। রান্না হতে হতে নেমে পড়লাম গোসলে। স্রোতের চোটে ভেসে যাওয়ার অবস্থা। বরফশীতল পানিতে গোসল করে উঠতেই টের পেলাম ক্ষুধায় পেট চোঁ-চোঁ করছে।

খেয়ে আবার যাত্রা শুরু। এদিকে বসতি একদম কম। স্যাটেলাইট ইমেজে দেখা গ্রামগুলোর নাম জেনে নিচ্ছিলাম মাঝিদের কাছ থেকে। এভাবেই একসময় পেঁৗছলাম রামাক্রি বা ইয়াংরাই। রাইথাং ঝিরি উচ্চতায় ছোট কিন্তু প্রশস্ত এক প্রপাত হয়ে পড়েছে সাঙ্গুতে এখানেই।

ফিরোজকে রান্নার ব্যবস্থা করতে বলে ক্যাম্প দাঁড় করা হলো আবার। বিডিআর একপ্রস্থ জিজ্ঞাসাবাদ করে গেল। এ সুযোগে আবদুল্লাহ ভাই ভাব পাতিয়ে ফেলল বিডিআর সদস্যদের সঙ্গে। এরপর থেকে প্রতিদিন বিকেলের চা ও সকালের নাশতা তিনি করেছেন বিডিআর ক্যাম্পে কয়েকজনকে নিয়ে। রান্না হওয়ার মাঝে সবাই ক্যামেরা ট্রাইপডে লাগিয়ে একে একে গত দু'দিনের ছবি দেখা হলো।

সোলার প্যানেল থাকায় চার্জের চিন্তা কারও নেই। ২৭ তারিখ সকালে শুরু হলো সবচেয়ে বড় যাত্রা। ছোট মদক পেরিয়ে বড় মদক যেতে বিকেল হয়ে গেল। নামতেই বিডিআর সদস্যরা হাজির নাম-ঠিকানা নিয়ে। একদল গেল তাদের ক্যাম্পে।

ক্যাম্প থেকে অনুরোধ করা হলো আমরা যেন আর না এগোই। সুতরাং এবারের যাত্রা এখানেই শেষ। স্থানীয় মাঝিদের গানে রাতটি ভালোই কাটল। ২৮ তারিখ রামাক্রি থেকে ২৯ তারিখ বিকেলে পেঁৗছলাম আবার থানচি। মধ্যে ছোট মদকের পর থেকে রামাক্রি পর্যন্ত রাফটিং করলাম দু'জন।

বড় পাথরের দেখা হলো ভ্রমণ বাংলাদেশের দলের সঙ্গে। থানচি পেঁৗছেই পরদিন নতুন খুঁজে বের করা পথে তাজিংডং যাওয়ার প্ল্যান করলাম সবাই View this link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।